Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

থার্মাল স্ক্যানার নিয়ে প্রশ্ন

৩ বিমানবন্দরে মাত্র একটি সচল

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ৯ মার্চ, ২০২০, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:২০ এএম, ৯ মার্চ, ২০২০

বাংলাদেশে তিনজন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে একজন নারী ও দুইজন পুরুষ। সম্প্রতি ২ জন ইতালি থেকে এসেছেন। একজন পরিবার থেকে সংক্রমণের শিকার হয়েছেন। এদিকে ইতালী ফেরত দুইজনের করোনাভাইরাসের উপসর্গ থাকলেও তা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্মাল স্ক্যানারে ধরা পড়েনি। তাই প্রশ্ন উঠেছে থার্মাল স্ক্যানারের মান নিয়ে।
একই সঙ্গে প্রতিদিন প্রায় ৩০ হাজার যাত্রী আসা-যাওয়া করেন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মাধ্যমে। তাই থার্মাল স্ক্যানার পেরিয়ে আসা ওই দুই যাত্রীর মধ্যে থাকা করোনার উপসর্গ উঠে না আসায় শঙ্কিত অন্যান্য যাত্রীসহ সাধারণ মানুষ। কারণ বিদেশ ফেরত যাত্রীরা স্বাভাবিকভাবেই সব কাজ করছেন তাই তাদের মাধ্যমে অন্যদের আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। শুধু বিমানবন্দরগুলোতেই নয়; ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশনেও নেই থার্মাল স্ক্যানিং মেশিন। যে পথ দিয়ে ভারত থেকে যাত্রীরা দেশে আসেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কারো অবহেলায় বিদেশ থেকে আগত কোন যাত্রীর মাধ্যমে দেশে করোনাভাইরাস ছড়ালে তা হবে দুর্যোগ। তাদের মতে, করোনাভাইরাস আতঙ্কে যাত্রী কমলেও এখনো যারা আসছেন তাদের মাধ্যমে যাতে ভাইরাস না ছড়ায় সে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, ভাইরাস নির্ণয়ে বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্যানার আছে মাত্র তিনটি। যার দুটিই নষ্ট। এর একটি ভিআইপি গেইটে। যেপথে যাতায়াত করেন মন্ত্রী ও এমপিসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা।
সিভিল এভিয়েশন জানিয়েছে, করোনাভাইরাস ঠেকাতে শুধু চীন নয় এখন সব দেশের যাত্রীদেরই স্ক্যানিং করা হচ্ছে। এতে করে করোনা শনাক্তে কেনো প্রভাব পড়বে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, একবার ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে, নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে। তাই সব বন্দরেই নিতে হবে বিশেষ সর্তকর্তা।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) পরিচালক প্রফেসর ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা ইনকিলাবকে বলেছেন, দেশের কোনো বিমানবন্দরের থার্মাল স্ক্যানারে করোনা উপসর্গ ধরা পড়েনি। আক্রান্তরা নিজেরাই আইইডিসিআর হটলাইনে নিজেদের ব্যাপারে তথ্য দিয়ে জানান। আর তাই হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে থাকা একমাত্র সচল থার্মাল স্ক্যানার নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তবে সারাদেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে উল্লেখ করেছেন ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় বাংলাদেশ প্রস্তুত বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
এদিকে হযরত শাহজালালসহ দেশের তিন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বর্তমানে মাত্র একটি থার্মাল স্ক্যানার সচল রয়েছে। বাকি চারটিই অচল। তাই বিমানবন্দরগুলোতে থার্মাল স্ক্যানার না থাকায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত যাত্রী প্রবেশের ঝুঁকি বাড়ছে। শনাক্ত রোগীরা তারই প্রমাণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, দ্রুত বিমানবন্দরগুলোতে থার্মাল স্ক্যানার না বসালে দেশে করোনার প্রকোপ বাড়তে পারে।
যদিও চীনসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বাংলাদেশে সব ধরনের প্রস্তুতি ইতোমধ্যে গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি ইনকিলাবকে বলেন, এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেলে যাতে তার চিকিৎসায় কোনো সমস্যা না হয় সেজন্য ঢাকায় দুটি হাসপাতালে বিশেষ প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি জেলা-উপজেলায় পৃথক কমিটি গঠন করা হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরো বলেছেন, চীনে করোনার উপসর্গ ধরা পড়ার পর থেকেই মন্ত্রণালয় বিশেষভাবে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছে। আমাদের সব ধরণের প্রস্তুতি আছে। আশা করছি করোনায় দেশের কোন ক্ষতি হবে না। আক্রান্ত ৩ জনকে কোয়ারেন্টিনে নিরাপদে রাখা হয়েছে, তারা সুস্থ আছেন। একই সঙ্গে সবসময় তাদের খোঁজ-খবর রাখছি।
বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্যানারে চিত্র : হযরত শাহজালালসহ দেশের তিন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বর্তমানে মাত্র একটি থার্মাল স্ক্যানার সচল রয়েছে। বাকি চারটেই অচল। এতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত যাত্রী প্রবেশের ঝুঁঁকি বাড়ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা যাত্রীদের স্ক্রিনিং কার্যক্রমে বর্তমানে ভরসা শুধু হাতে ধরে ব্যবহারের স্ক্যানার। এ স্ক্যানার সঙ্কটে সব যাত্রীকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। সরজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে- হযরত শাহজালালে তিনটি থার্মাল স্ক্যানারের মধ্যে দুটিই নষ্ট হয়ে গেছে। এ সম্পর্কে বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রæপ ক্যাপ্টেন এ এইচ এম তৌহিদ-উল-আহসান জানিয়েছেন, শাহজালালে তিনটি থার্মাল স্ক্যানারের মধ্যে একটি চালু আছে। বাকিগুলো স¤প্রতি নষ্ট হয়েছে। এগুলো দ্রæত আনার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরকে জানানো হয়েছে। তবে এখন হ্যান্ডহেল্ড স্ক্যানার দিয়েও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে হযরত শাহজালালে কর্মরত স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারি পরিচালক ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ বলেন, আগের মতোই রুটিনমাফিক কাজ চলছে। কিছু এয়ারলাইন্স হেলথ ডিক্লারেশন ফরম ঠিকমতো পূরণ করছে না। তারা অবতরণের পর বোর্ডিং ব্রিজে এসব ফরম পূরণ করছে। এতে বিশৃঙ্খলা হচ্ছে। তিনটে থার্মাল স্ক্যানারের মধ্যে মাত্র একটি চালু থাকায় এর সঙ্গে ইনফ্রারেড হ্যান্ডহেল্ড থার্মোমিটার দিয়ে পরীক্ষা করছি। এখন পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছি। দিন দিন এ সংখ্যা বাড়ছে। কাজের চাপও বাড়ছে।
এদিকে চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরেরও একই অবস্থা। ওই বিমানবন্দরে বিপুলসংখ্যক আন্তর্জাতিক যাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য থাকা আধুনিক থার্মাল স্ক্যানারটি ৯ মাস ধরেই বিকল। এখন দূর থেকে ইনফ্রারেড থার্মোমিটার দিয়েই হচ্ছে স্বাস্থ্য পরীক্ষা। এই পরীক্ষা করতে গিয়ে যাত্রীদের দীর্ঘলাইন লেগে যাচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়ছে যাত্রীরা। এই সুযোগে অনেকেই স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করেই বিমানবন্দর ছাড়ছে। প্রতিদিন ভোর থেকে সকাল ১০টার মধ্যে শিফটে স্বাস্থ্য পরীক্ষার লোকবল থাকে দু’জন। ফলে সেই শিফটে বেশির ভাগ যাত্রীকে স্ক্রিনিং সঠিকভাবে করা সম্ভব হয় না। এই সুযোগে অনেক যাত্রী স্ক্রিনিং না করেই পার হয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে গত ২৬ জানুয়ারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্তকরণে প্রয়োজনীয় জনবলের ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বরাবর একটি চিঠি দিয়েছিলেন শাহ আমানত বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার এ বি এম সারওয়ার-ই-জামান। কিন্তু এক মাসেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও প্রয়োজনীয় সংখ্যক লোকবল পাননি তিনি।
সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরের থার্মাল স্ক্যানার মেশিনটি প্রায় দেড় বছর ধরে বিকল। যদিও এখানে চীনের যাত্রী সরাসরি আসছে না। কিন্তু লন্ডনসহ অন্যান্য দেশ থেকে যাত্রীরা নিয়মিত যাতায়াত করছেন। সেদিক থেকে এখানেও মানতে হচ্ছে বিধিনিষেধ। আর এমনস কথা জানিয়ে সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন বলেছেন, এটি সচল করার জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানানো হয়েছে। কিন্তু ব্যয়বহুল হওয়ায় সেটি এখনও সচল করা যায়নি।
দেশের প্রধান হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক প্রবেশপথগুলোতে করোনাভাইরাস ইস্যুতে যথেষ্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি আগত যাত্রীদের দেয়া হেলথ ডিক্লারেশন ফরমও ঠিকমতো না পড়া, থার্মাল স্ক্যানারের সব যাত্রীর ইমেজ ঠিকমতো না দেখার অভিযোগ রয়েছে। গত ২১ জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শাহজালাল বিমানবন্দরে ২ লাখ ৬ হাজার ১০ জন যাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৬১ জনের জ্বর ছিল। আর ৫ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সূত্র মতে, রোগের লক্ষণ ছাড়াও, যাত্রীদের শরীরে থাকতে পারে করোনা ভাইরাস। তাদের শনাক্তে সমাধান নেই কারও কাছেই। শুধু বিমানবন্দর নয়, রেলপথে ভারত থেকে আসা যাত্রীদের ইমিগ্রেশন হয় ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে। করোনা শনাক্তে সেখানে নেই কোনো থার্মাল স্ক্যানার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ