Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাংলাদেশের পোশাক কারখানায় শ্রমিকরা নিপীড়নের শিকার

মার্কিন প্রতিবেদন

কূটনৈতিক সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৭ মার্চ, ২০২০, ১২:০১ এএম

বাংলাদেশে রানা প্লাজা ধসের সাত বছর পরও গার্মেন্ট কারখানাগুলোতে শ্রমিক নিপীড়ন বেড়েছে। বিশেষ করে নারী শ্রমিকরা নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন রিলেশন্স কমিটির প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনটি তুলে ধরেছেন প্রভাবশালী ডেমোক্র্যাট সিনেটর বব মেনেন্দেজ।
মার্কিন সিনেটের প্রতিবেদনে ‘শ্রমিকদের রক্তের দাগ লেগে থাকা’ এসব পোশাক ব্যবহার না করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের সতর্ক করা হয়েছে। এই প্রতিবেদন এমন সময় প্রকাশিত হলো যখন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ কার্যালয়ও শ্রমিকদের অধিকার ও নিরাপত্তা মানের সংস্কার কার্যক্রমের গতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। স¤প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তির (টিকফা) পঞ্চম সভায় মার্কিন প্রতিনিধি দল এই উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছে।
প্রতিবেদন উন্মোচন অনুষ্ঠানে সিনেটর মেনেন্দেজ বলেন, গত সাত বছরে ভবন নিরাপত্তার অগ্রগতি হলেও আমরা জানতে পেরেছি কারখানার ভেতরে শ্রমিকরা এখনও নিরাপদ নয়। ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর আরও বলেন, দুর্ভাগ্যজনক হলেও ব্যাপক মাত্রায় নিপীড়ন হচ্ছে এবং শ্রমিকরা ফ্যাশন শিল্পের কোটা পূরণে প্রায়ই নিজেদের বলি দিচ্ছে।
নিউ জার্সির কারখানায় মেয়ে দর্জি হিসেবে কাজ করা মায়ের সন্তান সিনেটর মেনেন্দেজ বলেন, আমি সত্যিকার অর্থে বিশ্বাস করি শুধু পণ্য উৎপাদন নয়, তা নিরাপত্তা ও নৈতিকভাবে করার সোনালী মানদন্ড স্থাপনে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, কারখানারা মালিকরা শ্রমিকদের যৌন হয়রানি ও নিপীড়নে এখনও জড়িত। বাংলাদেশ সরকার কোনও অপরাধীদের আইনের মুখোমুখি করতে পারেনি। তৈরি পোশাক শিল্পের সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমশক্তি নারী শ্রমিকরা বেশি নিপীড়িত হচ্ছে বলে সিনেটের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।


প্রতিবেদনে ২০১৯ সালে বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার সলিডারিটির এক জরিপের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। যাতে গার্মেন্ট কারখানায় লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার অনেক নজির রয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, মেশিন কীভাবে চালাতে হয় তা দেখিয়ে দেওয়ার সময় লাইন চিফের শ্রমিকের বুকে হাত দেওয়া থেকে শুরু করে সুপারভাইজার শ্রমিকদের অফিসের টেবিলের নিচে শুতে বাধ্য করার পর সেখানে ধর্ষণ করা।
মার্কিন সিনেটের প্রতিবেদনে অ্যাকশনএইড ইউকে’র ঢাকায় ২০০ গার্মেন্ট শ্রমিকের ওপর পরিচালিত একটি জরিপের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ওই জরিপের ফলাফলে উঠে এসেছে যে, ৮০ শতাংশ নারী কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির মুখোমুখি বা শিকার এবং নিপীড়িত হয়েছেন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে আগুন ও ভবন নিরাপত্তায় অ্যাকর্ডের হটলাইনে নিয়মিত যৌন হয়রানির অভিযোগ গ্রহণ করা হয়। এই অ্যাকর্ড হলো ইউরোপীয় ইউনিয়নভিত্তিক নজরদারি সংস্থা। এতে বিখ্যাত ফ্যাশন ব্র্যান্ড এইচ অ্যান্ড এম, মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সার ও ইউনাইটেড কালার্স অব বেনেটনের প্রতিনিধিত্ব করে। রানা প্লাজার দুর্ঘটনার পর আন্তর্জাতিক উদ্যোগ অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের ফলে ২৩০০ কারখানার নিরাপত্তার গুরুত্বপূর্ণ উন্নতি হয়েছে। কিন্তু কয়েক হাজার অনিবন্ধিত কারখানায় নিরাপত্তা মান বজায় রাখছে না। এতে পশ্চিমা পোশাক কোম্পানিকে দায়ী করে বলা হয়েছে, তারা কম মূল্যে পোশাক কেনার কারণে কারখানা মালিকরা শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও অধিকারকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে।
কারখানায় শ্রমিকদের যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের ঘটনার তদন্ত ও জড়িত ব্যবস্থাপনাকে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি সুপারিশ করা হয়েছে। এতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্নবা জানানো হয়েছে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতাসহ শ্রমিকদের নিপীড়নের ঘটনায় তদন্ত শুরু করার জন্য।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মার্কিন

১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ