Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি

অবৈধ গ্যাস সংযোগ লাইন উচ্ছেদে মাঠে নামবে তিতাস

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ৭ মার্চ, ২০২০, ১২:০১ এএম

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিতে চলছে অবৈধ লাইনের পুকুরচুরি। দীর্ঘদিন ধরে এ চুরি বন্ধ হচ্ছে না। রাষ্ট্রীয় এই কোম্পানি চুরি বন্ধে এবং অন্যান্য অনিয়মের বিরুদ্ধে নিরবচ্ছিন্ন অভিযান পরিচালনার জন্য স্থায়ীভাবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ পেলেই এ মাসে অবৈধ গ্যাস সংযোগ লাইন উচ্ছেদে মাঠে নামবে তিতাস।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন ইনকিলাবকে বলেন, সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চাইলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দেয়া হয়। তিতাস যদি সেই নিয়ম পালন করে থাকে তাহলে তাদেরকে দেয়া হবে। এছাড়া স্থায়ীভাবে পেতে হলে তাদের পদসৃজন করতে হবে। ইতোমধ্যে একজন কর্মকর্তাকে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী মো. আল মামুন ইনকিলাবকে বলেন, গ্যাসের অবৈধ সংযোগ ও পাইপলাইন ঠেকাতে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হচ্ছে। নিরবচ্ছিন্ন অভিযান পরিচালনার জন্য স্থায়ী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের প্রয়োজন এজন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। তবে ইতোমধ্যে ডিএমপি থেকে একজন পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেট দিয়েছে। শুনেছি জনপ্রশাসন একজন উপ-সচিবকে ক্ষমতা দিয়ে জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় বদলি করা হয়েছে। সেই উপ-সচিব এখনো আমাদের অফিসে আসেননি। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট না থাকার কারণে অভিযান পরিচালনা করা যায় না। তিতাসের জন্য স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেয়া হলে অব্যাহতভাবে অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হবে। এতে করে গ্যাস চুরি রোধ করা সম্ভব হবে। কিছুদিন পূর্বে গ্যাসের সবগুলো বিতরণ কোম্পানির জন্য একজন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। মাস দেড়েক থাকার পর তাকে তুলে নেয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ইনকিলাবকে বলেন, আবাসিকে নতুন করে গ্যাস সংযোগের আর কোনো পরিকল্পনা নেই। তার পরও কিছু এলাকায় চুরি করে সংযোগ দেয়া হচ্ছে। এগুলো বন্ধে কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
জানাগেছে, স্বাধীনতার পর থেকে তিতাসে চলে আসছে নানা অনিয়ম দুর্নীতি। ২০১৪ সালে এসে পেট্রোবাংলার এক আদেশে বলা হয় যারা অবৈধভাবে সংযোগ পেয়েছেন তাদেরগুলো বৈধ করা হবে। সে সংযোগগুলো পরে বৈধ করা হয়। একই কায়দার লাখ লাখ চুলায় চোরাই গ্যাস নিচ্ছে তিতাসের করার কিছু নেই। সারা দেশে ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানি রয়েছে। এগুলো হলো তিতাস, কর্ণফুলী, পশ্চিমাঞ্চল, জালালাবাদ, বাখরাবাদ ও সুন্দরবন। সারা দেশে বৈধ আবাসিক গ্রাহক প্রায় ৩৮ লাখের মতো। এর মধ্যে তিতাস গ্যাসের অধীনে রয়েছে ২৮ লাখ ৪৬ হাজার গ্রাহক। গ্যাসের সরবরাহ কমের কারণে ২০০৯ সালের জুলাইয়ে শিল্প ও বাণিজ্যিকে গ্যাগ সেংযোগ বন্ধ করা হয়। পরের বছর ১৩ জুলাই বন্ধ করা হয় আবাসিকেও নতুন গ্যাস সংযোগ। ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে জ্বালানি উপদেষ্টার নেতৃত্বে বিশেষ কমিটি করা হয়। কমিটি যাদের সুপারিশ দেয়, তাদের শিল্পে সংযোগ দেয়া হয়। দীর্ঘদিন পর ২০১৯ সালের মে মাসে শিল্পে গ্যাস সংযোগ উন্মুক্ত করা হয়।
দীর্ঘদিন ধরে আবাসিকে গ্যাস সংযোগ বন্ধ। নতুন নতুন এলাকায় স¤প্রসারিত হচ্ছে গ্যাসের পাইপ লাইন। তিতাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে চুরি করে পাইপলাইন সংযোগ দেয়া হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন গ্যাস চুরি হচ্ছে অন্যদিকে পুরো সিস্টেম ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে তিতাস। নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, আশুলিয়া-সাভার, কেরানীগঞ্জ এবং রাজধানী ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী বিশাল এলাকা জুড়ে এই কোম্পানিটি অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদে নাকাল অবস্থা। এছাড়া কতগুলো অবৈধ সংযোগ রয়েছে তার কোনো তথ্য নেই। অতীতে শুধু অবৈধ চুলা জ্বললেও এখন কিলোমিটারের পর কিলোমিটার অবৈধ পাইপলাইন বসিয়ে গ্যাস চুরি করা হচ্ছে। তার কোনো ব্যবস্থা নিতে পাচ্ছে না। এমন অনেক এলাকা রয়েছে যেখানে তিতাস নিজেরা গ্যাস সংযোগ দেয়নি। কিন্তু গ্রামের পর গ্রাম চুলা জ্বলছে তিতাসের অবৈধ গ্যাসে। আবার দেখা গেছে সকালে উচ্ছেদ করা হয়েছে বিকেলেই আবার পাইপ লাইন বসানো হয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে তিতাসের কর্মকর্তরা হাতিয়ে নিচ্ছে নগদ কোটি কোটি টাকা। অবৈধ লাইন বিচ্ছিন্ন এবং অভিযানের বিষয় আসলেই তিতাসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের শুরু হয় নানা রকম টালবাহানা। বলা হয়ে থাকে ম্যাজিস্ট্রেট নেই, বাহিনী নেই। এসব টালবাহানা দূর করতে কোম্পানির ব্যবস্থপনার পরিচালক নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিতে চায়। ম্যাজিস্ট্রেট থাকলে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করতে পারেন। কিন্তু তাতে সায় মিলছে না জনপ্রশাসন বিভাগের। এ কারণে আটকে আছে তিতাসের পরিকল্পনা। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিলে আগামী সপ্তাহ থেকে অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা শুরু করবে তিতাস।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মন্ত্রণালয়


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ