Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

করোনা মহামারী ও বিশ্ব অর্থনীতি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৭ মার্চ, ২০২০, ১২:০১ এএম

বিশ্বের নতুন মহামারী কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াউয়ে বহু দেশ একইরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে যাচ্ছে। এই মহামারীটি প্রতি ৫ থেকে ৬ দিনে দ্বিগুণ হারে বিস্তার লাভ করছে। সরকারগুলি চাইলে কোভিড-১৯ এর বিস্তারের হার কমিয়ে দিতে পারে। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক সময় ভাইরাসের মতো দ্রুতগতির নয়। এবং পরিস্থিতির আকষ্মিকতায় এই মূহুর্তে পুরো বিশ্ব হতবিহ্বল হয়ে পড়েছে।

বর্তমানে বিশ্বের ৮৫ টি দেশ এবং প্রাদেশিক অঞ্চলগুলিতে এই মহামারী ছড়িয়ে পড়েছে। সপ্তাহখানেক আগেও এই সংখ্যা ছিল ৫০। এ পর্যন্ত ৯৫,০০০ এরও বেশি সংক্রমণ এবং ৩,২০০ মৃত্যুর তথ্য নথিবদ্ধ হয়েছে। চীনে আসা-যাওয়া এবং ভ্রমণের ধরণের বিশ্লেষণ করে দ্য ইকোনমিস্ট আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, দেশগুলো ১০জনেরও বেশি আক্রান্ত শণাক্ত করেছে, সেসব দেশে এর বাইরেও শতাধিক করোনা আক্রান্তের অবাধ চলাফেরা থাকতে পারে। ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ইতালির মাধ্যমেও ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। আমেরিকা ১৪ টি রাজ্যে ১৫৯ টি সংক্রমণ নথিভুক্ত করেছে। তবে ১ মার্চ অবধি দক্ষিণ কোরিয়া যখন ১০ হাজার পরীক্ষা করছিল তখন আমেরিকা মাত্র ৪৭২ জনের পরীক্ষা সম্পন্ন করেছিল। এখন যখন আমেরিকা পরীক্ষার কাজটি যথাযথভাবে শুরু করেছে, এতে করে নিশ্চিতভাবেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সংক্রমণের সন্ধান পাবে।
তবে ভাইরাস সংক্রমণ যে পর্যায়েই যাক না কেন, এর প্রভাব কমাতে ও এটিকে নির্মূল করতে শুধুমাত্র ডাক্তার এবং প্যারামেডিকরাই যথেষ্ট নয়। স্বাস্থ্যসেবা সিস্টেমগুলি কীভাবে এই মহামারী মোকাবেলা করবে, সে বিষয়ে চীনের কাছ থেকে পাঠ নিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তারা বলছে, বিশ্বের বাকি দেশগুলোর একই ধরণের চিন্তাভাবনা করা প্রয়োজন, বিশেষত কীভাবে জনগণ ও সংস্থাগুলিকে আর্থিক সুরক্ষা দেয়া যায় যাতে ভুক্তভোগী এবং অসুস্থরা নিজেদের দূরে সরিয়ে না রাখে। এখানে অসুস্থ ভাতার বিষয়টি আসে, একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, গ্যারান্টিযুক্ত অসুস্থ ভাতা আমেরিকাতে ফ্লুর সংক্রমণ ৪০ শতাংশ কমিয়ে দেয়।
তবে মহামরী সংক্রান্ত চিকিৎসা ব্যয়, অসুস্থ ভাতা সরবরাহের ধাক্কা এবং মহামারী আতঙ্ক বিশ্ব অর্থনীতিতে আঘাত হানতে শুরু করেছে। চীনে মাও সেতুংয়ের মৃত্যুর পর প্রথমবারের মতো মার্চ মাসে পুরো অর্থনীতি সঙ্কুচিত হয়ে যেতে পারে। ওইসিডি আশংকা করছে যে, চলতি বছরে বিশ্বব্যাপী প্রবৃদ্ধি ২০০৯ সালের পরে সবচেয়ে ধীর গতির হবে। অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষাবিদদের মডেল সমীক্ষা বলছে, আমেরিকা এবং ইউরোপের জিডিপি মহামারীর কারণে গতানুগতিকের থেকে ২ শতাংশ কম হতে পারতো। কিন্তু মৃত্যুর হার বেশি হলে তা ফেব্রুয়ারি ১৯ তারিখের শীর্ষ অবস্থান থেকে ৮ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। আর্থিক বাজার ভয়ে ম‚ল্য নির্ধারণ করা হয়। ওয়াল স্ট্রিটে কর্পোরেট ঋণ প্রদান কমবেশি বন্ধ হয়ে গেছে। সেখানে কোষাগারগুলিতে বিগত দশ বছরে প্রথমবারের জন্য মূলধন ১ শতাংশেরও এর নিচে নেমে গেছে।
সমৃদ্ধ দেশগুলিতে, বেশিরভাগ অর্থনৈতিক প্রচেষ্টা অর্থনৈতিক বাজারকে শান্ত করার জন্য পরিচালিত হয়েছে। গত ৩ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ তার মুদ্রা-নীতি বৈঠকের পক্ষকাল আগে অর্ধ শতাংশের বেশি হারে মূল্য হ্রাস করে। অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এবং ইন্দোনেশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলিও এই বিষয়ে কছিু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড এবং ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক উভয়ই তাদের নীতিমালা শিথিল করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত সরকারগুলিকে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। তবে, আজ তারা করোনার গতির থেকেও এত পিছিয়ে রয়েছে যে এই মহামারীর বিস্তার রোধের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। সূত্র : দ্য ইকোনমিস্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ