পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সাদাকালো যুগের একটি জনপ্রিয় বাংলা ছবি ‘মানুষের মন’। ছবিটি ১৯৭২ সালে মুক্তি পায়। পর্দায় নায়ক রাজ্জাক চার চাকার ভ্যানগাড়িতে বিভিন্ন জিনিস নিয়ে শহরে ফেরি করে বিক্রি করতেন। আর সেই চার চাকার গাড়ি তার জীবনের ভাগ্য বদলে দিয়েছিল। গানটির কয়েকটি লাইন ‘এই শহরে আমি যে এক নতুন ফেরিওয়ালা। হরেক রকম সওদা নিয়ে ঘুরি সারাবেলা, ফেরিওয়ালা। আয়না আছে চিরুনি আছে নেবে যদি এসো কাছে। চার চাকাতে ভাগ্য বিধি বুঝে নিলাম ভাই। সব জিনিসের ম‚ল্য আছে মানুষের দাম নাই’।
পর্দার সেই দৃশ্য বাস্তব হয়ে ফিরেছে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহারে। পর্দার বাইরে বাস্তব জীবনের নায়ক হচ্ছেন একজন গৃহবধূ। জীবনযুদ্ধে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে তিনি রাস্তায় নেমেছেন। সিনেমার সেই চার চাকা নয়, তিন চাকার রিকশা ভ্যানে বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র নিয়ে পুরো শহরের অলিগলি ঘুরেন। তার সংসারের অভাব নামক শব্দটি বিদায় দিয়ে তিন চাকার রিকশা ভ্যানে এসেছে স্বচ্ছলতা।
গৃহবধূর নাম পেয়ারা বেগম। বাড়ি গাইবান্ধা জেলার মহিমাগঞ্জের গড়গড়িয়া গ্রামে। তিনি কি করে বগুড়ার আদমদীঘিতে এসে ফেরওিয়ালা হলেন সে কাহিনী আপনারা শুনবেন একটু পর। তার আগে তিনি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কিভাবে জীবনযুদ্ধে লড়াই করেন সেটি জেনে নিন।
সকাল হলেই পেয়ারা বেগম বেরিয়ে পড়েন তার প্রিয় তিন চাকার রিকশা ভ্যান নিয়ে। নারী কণ্ঠে ভেসে আসে, ‘লাগবে নাকি জগ, মগ, টিফিন বক্স, চিরুনি, বালতিসহ হরেক রকমের প্লাস্টিকের জিনিসপত্র। আছে সিলভারের হাড়ি-পাতিল। এছাড়াও আমার কাছে পাবেন স্টিলের চামচ ও বাটিসহ সংসারের জন্য দরকারি অনেক জিনিস। লাগবে নাকি আপা। আসুন কম দামে পছন্দের জিনিস বেছে নিন।’
এভাবেই সান্তাহার শহরের অলিগলি, আশপাশ গ্রামের পথে তিন চাকার রিকশা ভ্যান নিয়ে গলা ছেড়ে পরিবারের জন্য দরকারি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ফেরি করে বিক্রি করেন। পেয়ারা বেগম বলেন, কখনো দুই থেকে তিন হাজার কিংবা আরো কম টাকার জিনিসপত্র বিক্রি হয়। খরচ বাদ দিয়ে দিনে যা লাভ হয় তাতেই তিনি খুশি। সংসারের অভাব অনটন এখন ইতিহাস। স্বামী ও ছেলে-মেয়ে নিয়ে বর্তমানে অনেক সুখে আছেন। সংসারের সকল খরচ বাদ দিয়ে কিছু টাকা সঞ্চয়ও করছেন।
তিনি আরো বলেন, তিন চাকার রিকশা ভ্যানে ফেরি করার ব্যবসা তো আর সারা বছর একইভাবে হয় না। বর্ষায় গ্রামে যাওয়া যায় না। অসুস্থ্য হলে ঘরেই বন্দি থাকতে হয়। তবুও তিনি অনেক ভালো আছেন। মানুষের দরজায় গিয়ে অসহায়ের মতো হাত পাততে হয় না। মন্দ কোনো কাজ করতে হচ্ছে না। শুধু ভ্যানগাড়ি ঠেলে বিভিন্ন গ্রামে যেতে হয়।
তিনি বলেন, যতদিন বেঁচে আছেন ততদিন এই ব্যবসাকে ধরে রাখার চেষ্টা করবেন। ব্যবসা করে হালাল আয় দিয়েই জীবন-যাপন করতে চান। কাজকে ছোট করে না দেখে অনেক নির্যাতিত ও স্বামী কর্তৃক অবহেলিত নারীরা ইচ্ছে করলেই নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেন। মানুষের বাঁকা কথায় কান কান না দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় গ্রহণ করতে হবে। তবেই সমাজে কোনো নির্যাতিত ও অবহেলিত নারীকে আর পেছনে থাকতে হবে না।
সান্তাহারে কি করে এলেন? এই প্রশ্নে পেয়ারা জানান তার ফেলে আসা কষ্টকর অতীতের সেই কাহিনী। দরিদ্র পিতা-মাতা তাকে বিয়ে দেন একই গ্রামের এক যুবকের সঙ্গে। যুবক যে মাদকাসক্ত সে কথা পেয়ারা ও তার দিনমজুর বাবা জানতেন না। বিয়ের পর পেয়ারার ওপর শুরু হয় টাকার জন্য স্বামীর নির্যাতন।
এক পর্যায়ে তিনি স্বামীর সংসার ছেড়ে পা বাড়ান বাবার বাড়িতে। একদিন বগুড়ার দুপচাচিয়া উপজেলার তালোড়া গ্রামের ফেরিওয়ালা ফজল উদ্দিন মহিমাগঞ্জের গড়গড়িয়া গ্রামে ফেরি করে জিনিস বিক্রি করতে যান। সেখানেই পরিচয় হয় পেয়ারা বেগমের সঙ্গে। পরিচয় এক পর্যায়ে প্রেমের সম্পর্কে গড়ায়। পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় তাদের।
বিয়ের পর তারা সান্তাহার রেলওয়ে জংশন স্টেশন শহরের রেলওয়ে কলোনীর সাহেবপাড়ায় ভাড়া বাসায় সংসার শুরু করেন। এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে সুখেই কাটছে দিন। বিয়ের পর থেকে স্বামী ফেরি করে যা আয় করতেন তাতে সংসারের চাকা সচল রাখাই কঠিন হয়ে পড়ে। সংসারে স্বচ্ছলতা ফেরানোসহ সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তু করে স্বামীর সাথে পরামর্শ করেন। স্বামীর সম্মতি পেয়ে তিন চাকার রিকশা ভ্যান নিয়ে রাস্তায় বের হন। এরপর থেকে তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সংসারে কোনো অভাব নেই। আর নিজে কাজ করে হালাল রুজি করতে পেরে পেয়ারা বেগম ভীষণ খুশি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।