Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার দখলে সিন্ডিকেট চক্র এখনো তৎপর এজেন্সিগুলো চরমভাবে ক্ষুব্ধ : দ্বার উন্মুক্ত হয়নি

প্রকাশের সময় : ১১ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শামসুল ইসলাম : মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার দখলে নিতে সিন্ডিকেট চক্র এখনো তৎপর। সিন্ডিকেট চক্রের তৎপরতা সফল হলে সহ¯্রাধিক রিক্রুটিং এজেন্সি মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে। একাধিক জনশক্তি রফতানিকারক এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
মালয়েশিয়ার জনশক্তি রফতানির দ্বার এখনো উন্মুক্ত হয়নি। অথচ বছরই মালয়েশিয়ার আর জয়েন রিসোর্সেস এসডিএন বিএইচডি’র মালিক দাতো শ্রী মোহাম্মদ আমিন বিন আবদুল নুর ও ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী রুহুল আমিনসহ দ্বিতীয় পক্ষের মধ্যে কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পর্কিত একটি সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয়েছে বলে জানা গেছে। এ নিয়ে বাংলাদেশী জনশক্তি রফতানি কারকদের মাঝে তোলপাড় শুরু হয়েছে। মালয়েশিয়ার বিভিন্ন সেক্টরে প্রচুর বাংলাদেশী কর্মীর চাহিদা রয়েছে। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার পুনরুদ্ধারে সর্বোচ্চ পর্যায়ে কূটনৈতিক উদ্যোগ নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। অভিজ্ঞমহল এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
আগামী ১৩ জুলাই জনশক্তি রফতানিকারকদের একমাত্র সংগঠন বায়রার কার্যনির্বাহী পরিষদ গঠিত হবে। এ মুহূর্তে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে সিন্ডিকেট সংক্রান্ত খবর ছড়িয়ে পড়ায় এজেন্সিগুলোর মধ্যে নানা কানাঘুষা শুরু হয়েছে।  ক্যাথারসিজ ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ রুহুল আমিন স্বপন গতকাল ইনকিলাবের সাথে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, একটি মহল প্লান করে বিভ্রান্তি ছড়ানোর লক্ষ্যে আমাদের সাইন কাট করে গত ১৬ জুনের একটি সমঝোতার স্মারকে বসিয়ে তা ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রচার করছে। উল্লেখিত সমঝোতা স্মারকে কোন দেশে লোক পাঠানো হবে তার কোনো উল্লেখ নেই। কোনো সিল-ছাপ্পর নেই। মালয়েশিয়া-বাংলাদেশ সরকারের কোনো অনুমতিও নেই। রুহুল আমিন স্বপন বলেন, কোনো সিন্ডিকেটের সাথে আমাদের চুক্তি হয়নি। বায়রার একজন সাবেক সভাপতি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ন্ত্রণে নিতে গত ১৬ জুনে স্বাক্ষরিত একটি সমঝোতা স্বারকের কথা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার সিন্ডিকেটের কবল থেকে মুক্ত রাখতে আমরা দীর্ঘ দিন যাবত সংগ্রাম চালিয়ে এসেছি। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খুললে তা’ নিয়ে একতরফা কাউকে নিয়ন্ত্রণের সুযোগ দেয়া হবে না।  
উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ থেকে ১৫ লাখ শ্রমিক নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল মালয়েশিয়া। মাত্র একদিন পরেই মালয়েশিয়া শ্রমিক নিয়োগের উপর নিষেধাজ্ঞা। যে কারণে স্থগিত হয়ে যায় ১৫ লাখ শ্রমিকের ভাগ্য।
২০১৫ সালে বিশ^ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পূর্ব এশিয়া প্যাসিফিকের দেশগুলোর মধ্যে বিদেশি শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে মালয়েশিয়া চতুর্থ অবস্থানে।
মালয়েশিয়া সাধারণত ইলেক্ট্রিক যন্ত্রাংশ একত্রিকরণ, পাম অয়েল চাষ, রেস্তোরাঁ এবং নির্মাণ খাতে বিদেশি শ্রমিকদের নিয়োগ দেয়। সরকারি হিসাব মতে, দেশটিতে ২১ লাখ বৈধ বিদেশি শ্রমিক রয়েছে। তবে সারা দেশে ছড়িয়ে রয়েছে প্রায় ২০ লাখ অবৈধ শ্রমিক। বিদেশি শ্রমিকদের একটি বড় অংশ ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, বাংলাদেশ এবং নেপালের। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরস্থ ভেস্ট মার্কেটিং এস ডি এন-বিএইচডি’ (৭৬৯২২৪-এ)-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর রুহুল আমিন জানিয়েছেন, মালয়েশিয়ার বিভিন্ন সেক্টরে প্রচুর বাংলাদেশী কর্মীর চাহিদা রয়েছে। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার বিভিন্ন ডিস্ট্রিকের কারাগার ও ডিটেনশন ক্যাম্পগুলোতে প্রচুর অবৈধ বাংলাদেশী কর্মী মানবেতর জীবন-যাপন করছে। প্রবাসী  ব্যবসায়ী রুহুল আমিন মালয়েশিয়ার কারাগার ও ডিটেনশন ক্যাম্পে আটককৃত কর্মী এবং সাগরপথে মালয়েশিয়ায় আসা হাজার হাজার  অবৈধ  বাংলাদেশী কর্মীদের বৈধতা লাভের সুযোগ সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।
 উল্লেখ্য,  ২০০৯ সালের মার্চ মাস থেকে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি বন্ধ রয়েছে। বহু কূটনৈতিক তৎপরতার পর ২০১২ সালে মালয়েশিয়ার সাথে বাংলাদেশের জি টু জি প্রক্রিয়ায় শুধু প্লানটেশন খাতে সরকারি উদ্যোগে কর্মী যাওয়ার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। জি টু জি প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়া কর্মী প্রেরণের জন্য ডাক-ঢোল পিটিয়ে দু’দফায় সারা দেশ থেকে প্রায় ২২ লাখ কর্মীর নিবন্ধন করা হয়েছিল। কিন্ত জি টু জি প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল থেকে স্বল্প অভিবাসন ব্যয়ে এ পর্যন্ত মাত্র ১০ হাজার  কর্মী জি টু জি প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়া গেছে। বায়রার একজন সাবেক নেতা বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার পুনরুদ্ধারে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে কূটনৈতিক উদ্যোগ নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মালয়ে

৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ