Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পেঁয়াজ চাষিরা শঙ্কায়

এবার দেশের ১১ জেলায় বাম্পার ফলন

মহসিন রাজু | প্রকাশের সময় : ৫ মার্চ, ২০২০, ১২:০০ এএম

এ বছর সবচেয়ে আলোচিত পণ্যের নাম পেঁয়াজ। ভারত হঠাৎ বাংলাদেশে রফতানি বন্ধ করে দেয়ায় পণ্যটির মূল্য মূল্য ৮ থেকে ১০ গুণ বেড়ে যায়। মশলা জাতীয় এই পণ্যটি অনেকদিন ছিল খবরের শিরোনাম। বন্ধুরূপি ভারত রফতানি বন্ধ করে বাংলাদেশের ভোক্তাদের বুকে ছুঁরি চালানোর পর দেশকে ‘পেঁয়াজে স্বাবলম্বী’ করতে মাঠে নামেন কৃষকরা। ব্যাপক ভাবে বেড়ে যায় পেঁয়াজের চাষাবাদ।
দেশের চাহিদা মেটাতে ফরিদপুর, যশোর, ঢাকা, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, সিলেট, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, রাজশাহী, বগুড়া, রংপুর, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, খুলনা, বরিশালের কৃষকরা জমিতে পেঁয়াজের চাষ করেছেন। প্রত্যাশিত বাজার মূল্য থাকায় পেঁয়াজ চাষিরা স্বপ্ন বোনেন উৎপাদিত পণ্য নিয়ে। কিন্তু দেশি পেঁয়াজ বাজারে উঠতে না উঠতেই হঠাৎ করে ভারত ঘোষণা দেয় ১৫ মার্চের মধ্যেই পেঁয়াজ রফতানি শুরু করবে। ভারতের এই ঘোষণায় শঙ্কায় পড়ে গেছেন চাষিরা।
তাদের শঙ্কা ভারত পেঁয়াজ রফতানি করলে বাংলাদেশের বাজার ভারতীয় পেঁয়াজে ছয়লাব হয়ে যাবে। তখন দেশের কৃষকরা উৎপাদিত পণ্যের মূল্য থেকে বঞ্চিত হবেন। বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পেঁয়াজে দেশকে স্বাবলম্বী করতে হলে ভারতীয় পেঁয়াজ যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য। কারণ কৃষকরা যদি এবার পেঁয়াজের মূল্য না পায় তাহলে ধানের মতোই পেঁয়াজ চাষে তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।
অবশ্য গতকাল কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, পেঁয়াজের দাম কেন কমেনি আমরা তা পর্যবেক্ষণ করছি। ধানে আমরা যেমন স্বয়ংসম্পূর্ণ পেঁয়াজেও দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। কেবিনেট বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানিয়েছি কৃষকরা যাতে ন্যায্য দাম পায় এজন্য উত্তোলন মৌসুমে পেঁয়াজ আমদানি যেন বন্ধ রাখা হয়। তিনি আরো বলেন, ভারতের পেঁয়াজ এসে যেন বাজার ভাসিয়ে না দেয়। যাতে আমাদের চাষিরা ভালো দাম পায়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ ব্যপারে যথেষ্ট সজাগ। ভালো পেঁয়াজ হলে চাষিদের স্বার্থটা দেখতে হবে।
বাজারে আসতে শুরু করেছে নতুন পেঁয়াজ। দেশের পাইকারী বাজারগুলোতে দেশী পেঁয়াজের দর ৬০/৭০ টাকায় নেমে এসেছে। আর ঠিক এই সময়কেই বেছে নিয়ে ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য দফতর ভারত থেকে পেঁয়াজ রফতানির বিধি নিষেধ তুলে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
গত বছর ভোক্তা চাহিদার প্রায় কাছাকাছি ২০ লাখ ১৮ হাজার ৪৪৯ টন পেঁয়াজ উৎপাদনের বিপরীতে চলতি মৌসুমে কৃষি বিভাগ ২৩ লাখ ৮১ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদনের টার্গেট নিয়েছে। এছাড়াও কৃষি বিভাগ এ বছর সারাদেশের মোট ১৪টি কৃষি অঞ্চলে অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে ২ লাখ ১১ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে।
এমন অবস্থার মধ্যে গত সোমবার ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য বিভাগের ডিজি অমিত যাদব স্বাক্ষরিত এক পত্রে উৎকৃষ্ট মানের ‘ব্যাঙ্গালুরু রোজ’ ও ‘কৃষ্ণ পুরম’ নামের দুটি জাত ছাড়া সব ধরনের পেঁয়াজের ওপর রফতানি বিধি নিষেধ তুলে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আগামী ১৫ মার্চ থেকে আসা শুরু করবে ভারতীয় পেঁয়াজ।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ভারত তার কৃষি, কৃষক ও অর্থনীতির স্বার্থে সঠিক সময়ে পেঁয়াজ রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ আবার তা প্রত্যাহার করে দুরদর্শিতারই পরিচয় দিয়েছে। এই মুহুর্তে ভারত পেঁয়াজ রফতানি না করলে তাদের চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। একইভাবে বাংলাদেশের বাজারে ভরা মৌসুমে ভারতীয় নিম্নমানের পেঁয়াজ ঢুকলে গুটি কয়েক আমদানিকারক লাভবান হলেও পেঁয়াজ চাষিদের মহা সর্বনাশ হবে। দেশ থেকে অযথাই চলে যাবে বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা ।
দেশের শীর্ষ স্থানীয় আমদানিকরক প্রতিষ্ঠান আজমীর ভান্ডারের স্বত্ত্বাধিকারী আব্দুল গফুর বলেছেন, মার্চ থেকে মে’র মাঝামাঝি পর্যন্ত দেশে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলে দেশের পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীলই থাকবে। না হলে বাজারে কম দামের ভারতীয় পেঁয়াজের কারণে দেশি পেঁয়াজেরও দরপতন ঘটবে, ক্ষতিগ্রস্ত হবেন দেশের পেঁয়াজ চাষিরা।
তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ফড়িয়াদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য মোতাবেক গত বছরের তুলনায় এবার অতিরিক্ত ৩ লাখ টন পেঁয়াজ বাজারে আসবে। আর সে পেঁয়াজে আগামী ঈদের বাজার পর্যন্ত ভোক্তা চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে। ঈদের পরে পেঁয়াজ আমদানির সুযোগ অবারিত করে দিলে ঈদুল আযহা ও পরবর্তী ডিসেম্বর পর্যন্ত পেঁয়াজের বাজার আর অস্থিতিশীল হবে না।
এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, চলতি মৌশুমে ঢাকা, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা,সিলেট, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, রাজশাহী, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর, যশোর, খুলনা, বরিশাল ও ফরিদপুর কৃষি অঞ্চলে বিভক্ত জোনে ২ লাখ ১১ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
এ বছর উত্তরাঞ্চলে যমুনার চরাঞ্চলেও গম, ভুট্টা, যব, বিভিন্ন ডাল ও তেলবীজের পাশাপাশি পেঁয়াজেরও চাষ হচ্ছে বলে লক্ষ্য করা গেছে। অনেক সচেতন পেঁয়াজ চাষিই এখন আর বিএডিসি, বিভিন্ন এনজিও বা বহুজাতিক কোম্পানির ওপর নির্ভর না করে নিজেরাই জমিতেই পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করছে বলে মাঠ পর্যায়ে লক্ষ্য করা গেছে।
যমুনার দুর্গম চরাঞ্চলের চাষিরাও হিসেব করে বলছেন, বিঘা প্রতি পেঁয়াজ ফলছে গড়ে ৪৫ মন। আর কেজি প্রতি উৎপাদন খরচ পড়ছে ১৩ টাকা। ২৬ টাকা কেজি দরে কৃষকের কাছে ধান কেনার মত সরকার ২০ টাকা দরে পেঁয়াজ কিনতো তাহলেই তারা বর্তে যেত কৃতার্থ হত। চাষের এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে পেঁয়াজ উৎপাদিত হবে ২৩ লাখ ৮১ হাজার মেট্রিক টন।
গত বছর অকাল বর্ষার ক্ষতির মধ্যেই দেশে ২০ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। কনজ্যুমার এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন জরিপে জানা যায়, দেশে ভোক্তা পর্যায়ে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা ২৫/২৭ লাখ টনের মত।
গত এক দশক ধরেই দেশে নানান প্রতিক‚লতার মধ্যেই গড়ে পেঁয়াজ উৎপন্ন হচ্ছে ২০ লাখ টনের মত। দেশের অভ্যন্তরে ফরিদপুর, পাবনা, বগুড়া, রাজশাহী অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয়ে থাকে। এর মধ্যে এক কোয়ার তাহেরপুরি জাতের পেঁয়াজ ঝাঁজ ও গুনে মানে সেরা। বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চলের পেঁয়াজও উৎকৃষ্ট মানের ও দীর্ঘ সময় সংরক্ষণযোগ্য ।
সঠিক পদক্ষেপ নিয়মিত বাজার ও আমদানি রফতানি বাণিজ্য মনিটরিং এবং নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে দেশ পেঁয়াজে স্বয়ংস¤পূর্ণ হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন সকলেই। ##



 

Show all comments
  • মেহেদী ৫ মার্চ, ২০২০, ১:১৬ এএম says : 0
    দেশের চাষীদের বারবার ডেকে এনে ক্ষতি করা হয়। দরিদ্র কৃষকের সাথে এই ধরনের প্রাতারণা করা ঠিক নয়।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ তোফায়েল হোসেন ৫ মার্চ, ২০২০, ১:১৭ এএম says : 0
    আমি সরকারের কাছে দাবি জানাবো, পেঁয়াজ আমদানি নিষিদ্ধ করা হোক। তাহলে দেশের কৃষক বাঁচবে।
    Total Reply(0) Reply
  • জাহিদ খান ৫ মার্চ, ২০২০, ১:১৮ এএম says : 0
    পেঁয়াজ চাষীরা শঙ্কায় তো থাকবেই। দেশে যখন কোনো কিছু পর্যাপ্ত উৎপাদন হয় তখনই তা আমদানি করে কৃষকদের পথে বসিয়ে দেওয়া হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • জোবায়ের আহমেদ ৫ মার্চ, ২০২০, ১:১৯ এএম says : 0
    যখন আমাদের পেঁয়াজ প্রয়োজন ছিল তখন যেহেতু আমরা পাইনি তাই ভারত থেকে আমদানি না করাই ভালো হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • নাসিম ৫ মার্চ, ২০২০, ১:২০ এএম says : 0
    সরকারের কাছে জোর দাবি পেঁয়াজ চাষীদের দিকে নজর দিন। তারা ভালে াদাম পেলে দেশ পেয়াজ সঙ্কটের হাত থেকে বাঁচবে।
    Total Reply(0) Reply
  • ash ৫ মার্চ, ২০২০, ২:৪৫ এএম says : 0
    VAROT THEKE GORU ROFTANI BONDO KORE DIASE, KINTU AJ BANLADESH GORU PALONE, MANGSHO WTHPADONE SHOYONG-SHOMPURNO ! VAROT HOTAT PIAJ ROFTANI BONDHO KORE DIESE, DESHER SHAHOSHI KIRISHOKRA KASA DIE MATHE NEMESE PIAJ WTHPADONE, AI SHOB SHAHOSHI KIRISHOKDER SHARTHO JODI ROKHA HOY? AGAMITE BANGLADESHER R PIAJ AMDANI KORTE HOBE NA ! INSHALLAHHH
    Total Reply(0) Reply
  • halum ৫ মার্চ, ২০২০, ৪:৪০ এএম says : 0
    বাংলাদেশ ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে পারে, যদি বিনামূল্যে হয়।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পেঁয়াজ

১৩ এপ্রিল, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ