Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শত তদ্বিরসহ নানা সমীকরণ

ঢাকা মহানগর আ.লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি শিগগিরই

ইয়াছিন রানা | প্রকাশের সময় : ৪ মার্চ, ২০২০, ১২:০০ এএম

ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদ পেতে দৌড়ঝাপ করছেন নেতারা। কমিটি গঠনে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ ত্যাগী ও যোগ্য নেতাদের স্থান দিতে হবে কমিটিতে। বিতর্কিত, চাঁদাবাজ, ভূমিদখলবাজ, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত কাউকে যেন কমিটিতে না রাখা হয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কাজ করছেন মহানগর দুটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা, মন্ত্রী, মেয়র, এমপিদের শত তদবির ও মহানগর কমিটির কিছু সমীকরণের হিসেব মিলিয়ে কমিটি করতে ঘাম ঝড়াচ্ছেন নগর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। অল্প কিছু দিনের মধ্যে এই কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানা গেছে।

মহানগর আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, গত কমিটির বেশিরভাগ সক্রিয় নেতা পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান পাবেন। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা যে যার মত কমিটি গঠনে কাজ করছেন। কাকে কোন পদে রাখবেন এখন চলছে শেষ মুহূর্তের হিসেব নিকেষ। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মহানগর কমিটিতে না রাখতে কিন্তু বিগত কমিটির কয়েকজন নেতা কাউন্সিলর হয়েছেন এবং কয়েকজন কাউন্সিলর কমিটিতে পদ পাবার ক্ষেত্রে এগিয়ে আছেন। এমনাবস্থায় কাউন্সিলরদের পদ দেয়া বা কমিটিতে না রাখা নিয়ে সমস্যা চলছে। এছাড়া কাউন্সিলরদের জন্য অনেক মন্ত্রী, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের সুপারিশ রয়েছে।

নেতারা জানান, মহানগর কমিটিতে পদ দেয়ার জন্য এতো সুপারিশ হয়তো অন্য কোথাও হয় না। সিনিয়র নেতাদের অনেক সুপারিশ আছে কিন্তু কমিটিতে পদ তো কম। কাকে রাখি আর কাকে বাদ দেই তা নিয়েই মুশকিল অবস্থা। প্রথম সহ-সভাপতি ও প্রথম যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে সবচেয়ে বেশি তদবির বলে জানান নেতারা।

এদিকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ ও উত্তর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান এর নিজস্ব লোক বলে পরিচিতদের মহানগরি কমিটিতে রাখা না রাখা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা।

এছাড়া মহানগর দক্ষিণে হানিফ-মায়া কমিটি থেকে হাসনাত-মুরাদ কমিটিতে যেসব নেতারা অতি মেকানিজমে ব্যস্ত ছিলেন তারা এবার পদ পাচ্ছেন না। মহানগর কমিটি থেকে ভাইরাস দূর করা হবে বলে জানিয়েছেন মহানগর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। মহানগরের সাবেক সহ-সভাপতি ও মতিঝিল মডেল স্কুলের গভর্নিং বডির সাবেক সভাপতি আওলাদ হোসেন, সাবেক কোষাধ্যক্ষ ইমতিয়াজ জামিল লাভলু, সাংগঠনিক সম্পাদক হেদায়েতুল ইসলাম স্বপনসহ কয়েকজন নেতাকে নিয়ে বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের এলার্জি রয়েছে।
এদিকে মহানগর দক্ষিণের কমিটিতে সাবেক ছাত্রনেতা, সহযোগী সংগঠনের নেতা, থানা পর্যায়ের বয়সে তরুণ কয়েক নেতাকে মহানগর কমিটিতে দেখা যেতে পারে। কয়েকজন বিতর্কিত ও ক্যাসিনো সংশ্লিষ্ট নেতা কমিটিতে স্থান পেতে পারে জানা গেছে। এই নেতাদের জন্য বেশ বড় আকারের সুপারিশ রয়েছে। একজন বিদ্রোহী কাউন্সিলরকে পদে রাখা নিয়েও চলছে জটিলতা।

মহানগর উত্তরের কমিটি অনেক আগেই খসড়া করে জমা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সভাপতি শেখ বজলুর রহমান। তিনি ইনকিলাবকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ হুবহু পালন করেছি। কারো মন রক্ষা করতে যেয়ে সংগঠনের ক্ষতি করি নাই। কমিশনারদের পদে রাখা হয়নি। সাবেক ছাত্রনেতা, সহযোগী সংগঠনের কয়েকজনকে স্থান দেয়া হয়েছে।

ঢাকা মহানগরীর সাবেক নেতারা বলছেন, নগর নেতারা খসড়া কমিটি চূড়ান্ত করলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চূড়ান্ত অনুমোদনের সময় সব যচাই বাছাই করবেন। কাউকে অন্যায়ভাবে বাদ দিলে তখন ঠিক হয়ে যাবে। আর যারা মাঠে সক্রিয়, দলের জন্যই তাদেরকে কমিটিতে রাখতে হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফি ইনকিলাবকে বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে কার সাথে কে ছিলো তা দেখা হবে না। তবে কারো কারণে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়, এমন লোকজনকে কমিটিতে না রাখার চিন্তা আছে। তবে সবদিক বিবেচনা করেই কমিটি গঠন করা হবে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন কবির ইনকিলাবকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় কমিটি গঠন করা হচ্ছে। খসড়া তালিকা করে তা আবার উনার (শেখ হাসিনা) কাছে পাঠানো হবে। এতে ভুল থাকলে প্রধানমন্ত্রী সংযোজন-বিয়োজন করবেন। ফলে কোনো সক্রিয় নেতাকে বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। শুধুমাত্র দলে শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী, বিশেষ করে সদ্য সমাপ্ত ঢাকা সিটি নির্বাচনে যারা দলের নির্দেশ অমান্য করেছেন তাদেরকে বাদ দেওয়া হবে। আর ওয়ার্ড কাউন্সিলররা যেহেতু একটি পদ পেয়েছেন, তাদেরকে গুরুত্বপূর্ন পদে না রাখার ব্যাপারে নেত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। সে আলোকেই কমিটির খসড়া তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বলেন, আগের কমিটির সক্রিয় প্রায় সব নেতাই থাকবেন। দলের জন্য কাজ করছেন এমন কাউকেই বাদ দেওয়া হবে না। শুধুমাত্র যারা মারা গেছেন, দলীয় কর্মকান্ডে দীর্ঘদিন ধওে নিষ্ক্রিয় এবং বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িত- তাদেরকে বাদ দেওয়া হবে। সাবেক কমিটির দুই তৃতীয়াংশ ও নতুন করে বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের সক্রিয় নেতাদের সমন্বয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে। যাতে থানা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের মধ্য থেকেও ৫/৬ জন থাকবেন।

গত বছরের ৩০ নভেম্বর সম্মেলনের মাধ্যমে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। এতে উত্তরে সভাপতি হন শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি। আর দক্ষিণে সভাপতি হন আবু আহমেদ মন্নাফি, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন কবির। #



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আ.লীগ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ