Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দেশে ফিরলেই ঘরে থাকার পরামর্শ

করোনাভাইরাস নিয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক বাংলাদেশ : আইইডিসিআর’র

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ মার্চ, ২০২০, ১২:০১ এএম

নতুন করোনাভাইরাস অর্ধশত দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। তাই সংক্রমণ এড়াতে এসব দেশ থেকে কেউ উপসর্গ ছাড়া দেশে ফিরলেও ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রন ও গবেষণা ইনস্টিটিটউট (আইইডিসিআর)। করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল রোববার প্রতিষ্ঠানটির নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এই পরামর্শ দেন পরিচালক প্রফেসর ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ৫৪ দেশে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এখনো আমাদের দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঘটেনি। কেউ যদি সংক্রমিত হয় তাহলে অবশ্যই কোন না কোন দেশ থেকেই তিনি আসবেন। তাই কেউ যদি বিদেশ থেকে ফেরে, যে দেশ থেকেই আসুক না কেন তাকে অবশ্যই হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। খুব প্রয়োজন না হলে বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না।
প্রফেসর ফ্লোরা বলেন, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ৮৮টি নমুনা পরীক্ষা করে কারও মধ্যে এই রোগের জীবাণু পাওয়া যায় নি। তবে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার উপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। কেননা যেখানে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঘটেছে, সেখানে দ্রুত সেটি ছড়িয়ে পড়ছে। এজন্য আমরা সবাইকে পরামর্শ দিচ্ছি, যারা বাইরে থেকে আসবেন, তারা বিমানবন্দর থেকে বাসায় যাওয়ার পথে গাড়িতে মাস্ক ব্যবহার করবেন। সম্ভব হলে গণপরিবহনে না গিয়ে নিজস্ব যানবাহনে যাবেন, এ সময় পরিবহনের জানালা খোলা রাখবেন। আমরা অনুরোধ করছি, আপনারা আবশ্যিকভাবে বাড়িতে অবস্থান করুণ। জনসমাগম এড়িয়ে চলুন। যদি বাইরে যাওয়া খুবই দরকার হয়, তাহলে মাস্ক ব্যবহার করবেন। আক্রান্ত হয়ে কেউ এলে বিমানবন্দরে স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমেই তাকে শনাক্ত করে চিকিৎসা প্রদানের ব্যবস্থা আছে বলে জানান আইইডিসিআর পরিচালক। বাংলাদেশে নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণ না ঘটলেও সিঙ্গাপুরে পাঁচ বাংলাদেশি এবং আরব আমিরাতে একজন বাংলাদেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ডা. ফ্লোরা জানান, সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে ভর্তি থাকা পাঁচজনের মধ্যে দুজন সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন। আরও দুজন সুস্থ হয়ে বাসায় ফেরার অপেক্ষায় আছেন। তবে একজন এখনও সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন।
বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার : করোনাভাইরাসে বিশ্বজুড়ে প্রায় তিন হাজার জনের। আক্রান্তের সংখ্যা ইতিমধ্যে ৮৫ হাজার ছাড়িয়েছে। নতুন এ ভাইরাসটিতে মৃত ও আক্রান্তদের অধিকাংশই চীনের নাগরিক। গত বছরের শেষ দিনে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে প্রথম প্রাণঘাতী এ ভাইরাসটি শনাক্ত হয়। তারপর থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বের ৫৩ দেশে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়েছে। চীনের মূল ভূখন্ডে মৃতের সংখ্যা এখন ২ হাজার ৮৭০ জনে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন। চীনের বাইরে এ পর্যন্ত ১০৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে চীনসহ বিশ্বজুড়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা ২ হাজার ৯৭৬ জনে দাঁড়িয়েছে।
২৯ ফেব্রুয়ারি চীনের মূলভ‚খন্ডে নতুন করে আরও ৫৭৩ জন ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছে। আগের দিনের ৪২৭ জনের তুলনায় এ দিন নতুন আক্রান্তে সংখ্যা আবার বেড়েছে। যারমধ্যে ৫৬৫ জন সনাক্ত হয়েছে উহান সিটিতে। এর বাইরে হুবেই প্রদেশজুড়ে আরও ৫ জন নতুন করে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হন। গত শনিবার করোনাভাইরাস সংক্রমণে সৃষ্ট রোগ কভিড-১৯ এ চীনের মূলখন্ডে ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ৩৪ জনই হুবেই প্রদেশে। অপরজন মারা গেছেন পাশ্ববর্তী হেনান প্রদেশে। নতুন আক্রান্তদের নিয়ে চীনের করোনাভাইরাসে আক্রান্তের মোট সংখ্যা ৭৯ হাজার ৮২৪ জনে দাঁড়িয়েছে। চীনের বাইরে আক্রান্তের সংখ্যা ৬ হাজার ৬৭৬ জন। সবমিলিয়ে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৮৬ হাজার ৫০০ বলে জানিয়েছে সিএনএন। চীনের স্বাস্থ্য কমিশন জানিয়েছে, মূলভূখন্ডে আক্রান্তদের মধ্যে ৪১ হাজার ৬২৫ জন রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছে। যা মোট আক্রান্তের ৫২ শতাংশ।
মৃত্যুর আশঙ্কা কতটুকু: গবেষকরা বর্তমানে মনে করছেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রতি এক হাজার জনের মধ্যে ৫ থেকে ৪০ জনের মৃত্যু হতে পারে। তবে বিজ্ঞানীরা জোরালোভাবে মনে করেন, প্রতি এক হাজার জনের মধ্যে ৯ জনের হয়তো মৃত্যু হয়। অর্থাৎ এই হার এক শতাংশের সমান। গতকাল রোববার প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। সেখানে বলা হয়, মৃত্যুর বিষয়টি আরো অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে, যেমন বয়স, লিঙ্গ এবং স্বাস্থ্যগত অবস্থা এবং আপনি যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় রয়েছেন তার অবস্থা কেমন সেটিও দেখার বিষয়। তবে মৃত্যুহার বের করাটা বেশ কঠিন। এমনকি কতজন মারা গেলো তা গণনা করাটাও জটিল। বেশিরভাগ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা হিসাবের বাইরে থেকে যায়। কারণ মৃদু উপসর্গ থাকলে কেউই চিকিৎসকের কাছে যেতে চায় না। ইম্পেরিয়াল কলেজের এক গবেষণা বলছে, মৃদু সংক্রমণ শনাক্তের ক্ষেত্রে কিছু দেশ পারদর্শী হলেও অনেক দেশে আবার তেমন কোন ব্যবস্থা নেই। যার কারণে আক্রান্তের হিসাব রাখাটা কঠিন। চীনে সংক্রমণের শিকার ৪৪ হাজার মানুষের তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রথম বড় আকারে যে বিশ্লেষণটি পাওয়া গেছে, সেখানে দেখা যায়- মধ্য বয়সীদের তুলনায় বয়ো-বৃদ্ধদের মধ্যে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুহার ১০ গুণ বেশি। ৩০ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে মৃত্যুহার সবচেয়ে কম- সাড়ে চার হাজার জন আক্রান্তের মধ্যে মাত্র ৮ জন। আর যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ বা শ্বাসকষ্ট রয়েছে তাদের মধ্যে মৃত্যুহার ৫ গুণ বেশি। এমনকি নারীদের তুলনায় পুরুষের মৃত্যুহার কিছুটা বেশি।
বিশ্ব পরিস্থিতি : চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সংখ্যা দক্ষিণ কোরিয়ায়। দেশটিতে নতুন করে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন আরও ৩৭৬ জন। সব মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার ৫২৬ জন। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ১৭ জনে দাঁড়িয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র। ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে ইতালি ও ইরান, প্রাদুর্ভাব ছড়ানোর নতুন উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতালিতে আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার ১২৮ জনে এবং মৃতের সংখ্যা ২৯ জনে দাঁড়িয়েছে। এখানে আক্রান্তদের ১০ শতাংশ চিকিৎসা কর্মী। ইতালি থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এবং দক্ষিণ আমেরিকায় ভাইরাসটি ছড়িয়েছে। ইরানে আক্রান্তের সংখ্যা ৫৯৩ জনে এবং মৃতের সংখ্যা ৪৩ জনে দাঁড়িয়েছে। চীনের বাইরে ইরানেই কভিড-১৯ রোগে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এখান থেকে মধ্যপ্রাচ্যের অন্তত ১০টি দেশে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে।
স্কুলে যাচ্ছে না লাখ লাখ শিশু : নতুন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বজুড়ে দশটিরও বেশি দেশের লাখ লাখ শিশুর স্কুল বন্ধ হয়ে আছে। প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে চীনজুড়ে স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে দেশটির প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ শিশু ঘরে বদ্ধ জীবন যাপণ করছে বলে জানিয়েছে সিএনএন। চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার হংকং, ম্যাকাও, ভিয়েতনাম, মঙ্গোলিয়া, জাপান, ইরান, পাকিস্তান, ইরাক ও ইতালির স্কুলগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে লাখ লাখ শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এর মধ্যে কয়েকটি দেশ অনলাইলন ক্লাশ চালু করার প্রস্তুতি নিলেও অপর দেশগুলোর ক্লাশ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে আছে। প্রাদুর্ভাব পরিস্থিতি নাজুক হয়ে উঠলে তারাও স্কুল বন্ধেরে দিতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে যুক্তরাস্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্য।



 

Show all comments
  • Mohammed Kowaj Ali khan ২ মার্চ, ২০২০, ১:৫৬ এএম says : 0
    আমি সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলাম রোহিঙ্গা মোসলমানদের উপর যে হত্যাযজ্ঞ বারমা চালাইতেছিল বিশ্ব নীরব বিশ্বের উপর আল্লাহ তা'আলার গজব আসিবে। আজ তাহা সত্যে পরিণত হইয়াছে। এখনও ও সময় আছে। বারমা, চায়না, এবং ভারতকে সায়াস্থা করা হোক।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Kowaj Ali khan ২ মার্চ, ২০২০, ১:৫৬ এএম says : 0
    আমি সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলাম রোহিঙ্গা মোসলমানদের উপর যে হত্যাযজ্ঞ বারমা চালাইতেছিল বিশ্ব নীরব বিশ্বের উপর আল্লাহ তা'আলার গজব আসিবে। আজ তাহা সত্যে পরিণত হইয়াছে। এখনও ও সময় আছে। বারমা, চায়না, এবং ভারতকে সায়াস্থা করা হোক।
    Total Reply(0) Reply
  • নীল আকাশ ২ মার্চ, ২০২০, ২:০৫ এএম says : 0
    করোনা ভাইরাস প্রদিরোধে সরকারের জোরালো ভূমিকা আশা করছি।
    Total Reply(0) Reply
  • নাসিম ২ মার্চ, ২০২০, ২:০৬ এএম says : 0
    আক্রান্ত দেশগুলোর সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেওওয়া হোউক।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ