পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ধুলো-দূষণ থেকে শুরু করে এমন কোনো দুর্ভোগ নেই যা নগরবাসীকে পোহাতে হচ্ছে না। এর সঙ্গে গেল বছর ছিল রাজধানীসহ দেশবাসীর জন্য ডেঙ্গু আতঙ্কের বছর। মশক নিধন অভিযানসহ নানা প্রচারণায় বছর শেষে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব কমানো গেলেও নতুন করে ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কে আছেন রাজধানীবাসী। কারণ এবার আগেভাগেই মশার ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ায় আগামী বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কায় আছেন সবাই। গত কিছুদিন থেকে বাসাবাড়ি, রাস্তাঘাট, পার্ক উদ্যান বা মাঠ সব জায়গায় বড় হয়ে দেখা দিয়েছে মশার উপদ্রব। লোকজন অতিষ্ঠ মশার অত্যাচারে। কোথাও মশার যন্ত্রণায় শান্তিমতো একটু বসার উপায় নেই। রাজধানীর অনেক স্থানেই দিনে দুপুরেই মশার উৎপাতে মশারি লাগিয়ে অথবা মশার কয়েল জ্বালিয়ে রাখতে হচ্ছে। আবার সন্ধ্যা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দরজা-জানালা সব বন্ধ করে কয়েল ব্যবহার করে বদ্ধভাবে থাকতে হচ্ছে। তাতেও মশার উপদ্রব কমছে না। গবেষণায়ও উঠে এসেছে রাজধানীতে মশার আধিক্য বেড়েছে। তাই এখনই জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। অন্যথায় এ বছরও রাজধানীসহ সারাদেশে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সূত্র মতে, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় গত ৩১ জানুয়ারি। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আগে ও পরে দুই সিটি কর্পোরেশনের কাজ ছিল অনেকটা ধীর গতির। তবে এই সময়ে রাজধানীতে মশার ওষুধ ছিটানো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। গত জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে রাজধানীতে ফের শুরু হয়েছে মশার উপদ্রব। এতে মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ নগরবাসী। পাশাপাশি তাদের মধ্যে ফের বিরাজ করছে ডেঙ্গু আতঙ্ক। আর এই সময়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা পরিচালিত ‘এডিস বাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির’ ডেঙ্গু মৌসুম পরবর্তী জরিপের ফলাফলে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের ১১টি এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ মাত্রায় ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক এডিস মশার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
রাজধানীর সুবজবাগের বাসিন্দা আব্দুর রহিম জানান, গত ডেঙ্গু মৌসুমে (আগস্ট-নভেম্বর) মশার ভয়াবহতায় দুই সিটি কর্পোরেশন যেভাবে কাজ করেছিল এখন আর সেভাবে চোখে পড়ে না। নাখালপাড়ার বাসিন্দা আব্দুল বাসেত বলেন, গত কিছুদিন থেকে মশার উৎপাত বেড়েছে। কিছু মশা ছোট আকারের এবং কিছু মশা বড়। এসব মশার কামড়ে প্রচন্ড ব্যথা হয়। তিনি বলেন, গত মাসে একদিনও মশার ওষুধ দিতে দেখিনি।
যদিও সিটি কর্পোরেশন দাবি করছে, ওষুধ ছিটানো মানে রাস্তায় ধোঁয়া ওড়ানো । তবে নগরবাসীর মতে, এগুলো আসলে লোক দেখানো ছাড়া আর কিছুই নয়।
কীটতত্ত¡বিদ ও গবেষকরা বলছেন, এ বছর রাজধানীতে যেভাবে বাড়ছে মশার উপদ্রব, শিগগিরেই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আগামী দুয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। শুষ্ক মৌসুমের কারণে সৃষ্ট মশার লার্ভা যদি বৃষ্টির পানির সংস্পর্শ পায় তবে মশার ভয়াবহতা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে নজরদারি বাড়ানোর তাগিদ দেন তারা।
তাদের মতে, এখন নগরে মূলত কিউলেক্স মশার উপদ্রব চলছে। স্ত্রী কিউলেক্স মশার মাধ্যমে অসুস্থ ব্যক্তির শরীর থেকে সুস্থ ব্যক্তির শরীরে ফাইলেরিয়া সংক্রমণ হতে পারে। ‘গোদ’ নামে পরিচিত এই রোগের কারণে হাত-পা ফুলে যায়। বারবার জ্বর হয়। বৃষ্টি হলে কিউলেক্স মশা কমে যাবে। তবে এডিস মশা বাড়বে। এটা স্বাভাবিক চিত্র। সিটি কর্পোরেশনগুলোর কাজে দেখা যায় এক সপ্তাহ বা দুই সপ্তাহব্যাপী কাজের প্রবণতা থাকে। এমনটা করলে চলবে না। দীর্ঘ মেয়াদে পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে। আর কাজের পর ফলাফল পর্যালোচনা করতে হবে। একই সঙ্গে মশার প্রজননস্থল ধ্বংসের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। এর সঙ্গে ফগিং যোগ করলে প্রজননস্থলের বাইরে যে মশা আছে সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
এদিকে ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে সারাদেশে তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছে, যা মশা জন্মানোর জন্য উপযুক্ত সময়। এখন যদি বৃষ্টিপাত হয় তাহলে কিউলিক্স মশা কিছুটা কমবে। কিন্তু ঘটবে উল্টো ঘটনা; বেড়ে যাবে এডিস বা ডেঙ্গু মশার প্রবণতা।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. আফসানা আলমগীর খান গবেষণাপত্র উপস্থান করে জানান, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১২, ১৬, ২৮, ৩১ ও ১ এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৫, ৬, ১১, ১৭, ৩৭ ও ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে এডিসের ব্রুটো সূচক মিলেছে ২০ পয়েন্টের বেশি। উত্তরের শুধু ১২ নম্ব^র ওয়ার্ডে এই সূচক মান ৩০। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১২ শতাংশ ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১০ শতাংশ ওয়ার্ডে এডিসের ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতি রয়েছে বলে জরিপে উঠে এসেছে।
মশার লার্ভার উপস্থিতি হিসাব করা হয় ব্রুটো ইনডেক্স বা সূচকের মাধ্যমে। জরিপে প্রতি একশ প্রজনন উৎসের মধ্যে ২০টি বা তার বেশিতে যদি এডিস মশার লার্ভা বা পিউপা পাওয়া যায়, তাই সেটাকে ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতি বলা হয়ে থাকে। উত্তরে ৪১টি ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৫৯টি ওয়ার্ডে এ জরিপ পরিচালিত হয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর কবিরুল বাসারের নেতৃত্বে একদল গবেষক মশা নিয়ে গবেষণা করছেন। গবেষক দল এ বছরের জানুয়ারি মাস থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে (ঝুঁকিপূর্ণ মশার প্রজনন স্থল) গবেষণা চালাচ্ছেন। তারা মশার জন্মস্থান পর্যবেক্ষণ করে সেখান থেকে মশা সংগ্রহ করেন এবং ল্যাবে নিয়ে এসে শনাক্ত করেন। এর মাধ্যমে তারা কিউলেক্স মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপ করেন তারা। সর্বশেষ জরিপে তারা দেখেছেন যে, ঢাকার বেশিরভাগ জায়গায় কিউলেক্স মশার ঘনত্ব ২০০-এর উপরে। সেই সঙ্গে ড্রেন, ডোবা ও নর্দমাতে রয়েছে প্রচুর লার্ভাও।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার প্রাক্তন পরিচালক প্রফেসর ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, জরিপের ফলাফল পর্যালোচনা করে যদি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয় তাহলে এবছরও ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটতে পারে। বিশেষ করে প্রজণনক্ষেত্র যদি স্বমূলে ধ্বংস করা না যায়।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত¡ বিভাগের প্রফেসর কবিরুল বাসার বলেন, গত কয়েকদিনে মশা যে পরিমাণে ডিম দিয়েছে সেগুলো আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ রূপ নেবে। যদি জরুরি ভিত্তিতে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম হাতে নেয়া না হয় তবে বড়ধরনের বিপর্যয় সৃষ্টি হবে। একই সঙ্গে মশা জন্মানোর স্থানগুলোতে লার্ভিসাইড ছিটানো না হলে মার্চ মাসে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা দেখা দিতে পারে। স্বাস্থ্যসেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ মশা নিয়ন্ত্রণে মশার প্রজনন উৎসে নজর দেয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, যদি পানি জমতে দেয়া না হয় তাহলে মশার লার্ভাই জন্মাতে পারবে না। একই সঙ্গে মশার উৎস ধ্বংস না করা হলে শুধু লার্ভিসাইডিং করে মশা কমানো যাবে না। নাগরিকদের এসব বিষয়ে সচেতন হতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে বর্তমানে কিউলেক্স মশার প্রকোপের জন্য আবহাওয়াকেও দায়ী করছেন অনেকে। তবে কারণ যাই হোক, নিজেদের সাধ্যমত মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান মামুন। মশা নিধনে বছরব্যাপী পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ডিসেম্বরের দিকে মশা বেশ নিয়ন্ত্রণে ছিল। জানুয়ারিতে এসে এর প্রকোপ বেড়েছে। এরজন্য আবহাওয়া অনেকখানি দায়ী। তবে মশা নিয়ন্ত্রণে আমরা বছরব্যাপী পরিকল্পনা নিয়েছি এবং সেই অনুযায়ী কাজ করছি।
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে একটি সার্ভে প্রতিবেদন এসেছে আমাদের কাছে। সেখানে যেসব ওয়ার্ডকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করা হয়েছে। আমরা এগুলোকে ‘প্রায়োরিটি’ দিয়ে কাজ করব। তারপর আমরা আবার একটা সার্ভে করব। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে মিলেও করা যায় কি না সেটাও ভাবছি। সেই সার্ভে রিপোর্টে আমরা বুঝব যে, পরিস্থিতির উন্নতি হল কি না। প্রতিবেদন বুঝে আবার কাজ করব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।