Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঝাঁকে ঝাঁকে মশা!

কামড়ে কাবু চট্টগ্রামবাসী : ডেঙ্গু জ্বরে ৪১ জনের মৃত্যু আক্রান্ত ৫৩৯২

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ৪ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

মশার কামড়ে অতিষ্ট চট্টগ্রামবাসী। ঘরে বাইরে, রাতে দিনে মশার উৎপাত। চারিদিকে ঝাঁকে ঝাঁকে মশা। হত দরিদ্রের বস্তি থেকে শুরু করে অভিজাত এলাকার বাসিন্দারাও মশার কামড়ে দিশেহারা। এডিস মশার কামড়ে মাত্র চার মাসেই প্রাণ গেছে ৪১ জনের। আর এক বছরে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন পাঁচ হাজার ৩৯২ জন।
ডেঙ্গুতে মৃত্যু এবং আক্রান্ত অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। তবে এতকিছুর পরও মশা নিধনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিটি কর্পোরেশন ঘুমিয়ে। নারী, শিশুসহ ৪১ জন মানুষের মৃত্যুতেও তাদের টনক নড়েনি। ডেঙ্গুর বাহক এডিসসহ মশা মারতে দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ নেয়নি কর্পোরেশন। অতিক্ষুদ্র এ প্রাণির কাছে মেয়রসহ জনপ্রতিনিধিদের এমন অসহায় আত্মসমর্পন আগে কখনো দেখেনি চট্টগ্রামবাসী। মশা তাড়াতে বাসা বাড়িতে নানা উদ্যোগ নিয়েও কাজের কাজ কিছ্ইু হচ্ছে না। কয়েল, স্প্রে, ধুপ-ধোঁয়া কোন কিছুর পরোয়া করছে না মশার ঝাঁক।

নগরীর জমে থাকা নালা, নর্দমা আর জলাশয় এখন মশা প্রজননের উপযুক্ত স্থান। মহানগর ছাড়িয়ে গ্রামেও মশার দাপট। এডিস মশার কামড়ে মহানগরীর মতো গ্রামেও মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন অনেকে। অন্যান্য বছর অক্টোবরের পর থেকে ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহতা কমতে থাকলেও এবারের চিত্র পুরোপুরি উল্টো। এ বছর নভেম্বর মাসেই রেকর্ড দুই হাজার সাতজন আক্রান্ত হয়েছেন। এ মাসে এই রোগে প্রাণ গেছে সর্বোচ্চ ১৯ জনের।

নগরীর আগ্রাবাদ, হালিশহর, পতেঙ্গা, জামাল খান, এনায়েত বাজার, পাথরঘাটা, বাকলিয়া, চান্দগাঁও, খুলশী, পাহাড়তলী, পাঁচলাইশসহ সর্বত্রই চলছে মশার দাপট। এসব এলাকাকে ডেঙ্গুর হটস্পট হিসাবেও চিহ্নিত করা হয়েছে। নগরীতে দিনের বেলায়ও মশার উৎপাত। বিকেল হতেই বাসা-বাড়িতে ঝাঁকে ঝাঁকে মশক রীতিমত হামলে পড়ছে। অফিস, আদালত, ব্যাংক-বীমায় দিনের বেলায়ও মশার কামড় খেতে হচ্ছে। কয়েল জ্বালিয়েও রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না। সন্ধ্যার পর মশার দখলে চলে যায় বাসা-বাড়ি থেকে শুরু হোটেল, ক্লাব, কমিউনিটি সেন্টার, হাসপাতাল। বিমানবন্দর, বাস টার্মিনাল, রেল স্টেশন সর্বত্রই মশা আর মশা। সিটি সার্ভিসের বাসেও মশার কামড় খাচ্ছেন যাত্রীরা। নাকে-মুখে ঢুকে পড়ছে মশা। শিশুদের রক্ষায় অনেকে দিনের বেলাও মশারি টাঙ্গিয়ে রাখছেন।

নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বড় বড় খাল, নালা, নর্দমায় জমে থাকা ময়লা পানিতে মশার প্রজনন হচ্ছে। কিলবিল করছে মশা। ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার না করায় বাড়ছে মশার উৎপাত। ডেঙ্গু মশার প্রজননও থেমে নেই। নগরীর প্রায় প্রতিটি এলাকায় চলছে ডেঙ্গু জ্বরে প্রকোপ। ডেঙ্গু জ্বরে এবার প্রাণহানি ও আক্রান্তের হার অতীতের সব সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে। পাঁচ বছর আগেও চট্টগ্রামে ১২ মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৬৬ জন। তবে ২০২২ সালে এ সংখ্যা ছিল সাড়ে ৫ হাজারের বেশি। এটা এ যাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। বিদায়ী বছরের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত রেকর্ড পাঁচ হাজার ৪৩৯ জন এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে দুই হাজার ৮০৮ জন সরকারি হাসপাতালে এবং দুই হাজার ৬৩১ জন বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। ৮০ শতাংশের বেশি রোগীকে দীর্ঘ সময় ধরে হাসপাতালে থাকতে হয়েছে।

গত কয়েক মাস ধরে নগরীতে মশার উৎপাতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে থাকলেও মশা মারতে সিটি কর্পোরেশনের কার্যকর কোন তৎপরতা দেখা যায়নি। ভ্রাম্যমাণ আদালতের কিছু ভবন মালিককে জরিমানা আর কিছু এলাকায় নালা, নর্দমায় মশার ওষুধ ছিটানোর মধ্যে সীমিত রয়েছে তাদের তৎপরতা। মশার ওষুধ কিনতে ২০২১-২২ অর্থবছরে কাগজে-কলমে এক কোটি পাঁচ লাখ টাকা ব্যয় করেছে কর্পোরেশন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ খাতে ছয় কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে টাকা খরচ হলেও মশা মরছে না। এতে রীতিমত ক্ষুব্ধ নগরবাসী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঝাঁকে ঝাঁকে মশা!

৪ জানুয়ারি, ২০২৩
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ