পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ফেব্রæয়ারী মাসব্যাপী অনুষ্ঠিত হওয়া বাঙালির প্রাণের মেলা অমর একুশে গ্রন্থমেলা এবার একদিন পরে শুরু হলেও নিদিষ্ট সময়েই শেষ হবে বলে জানা গেছে। ফলে আজই পর্দা নামছে বইমেলার। প্রতিবছর ফেব্রæয়ারির ১ তারিখ থেকে শুরু হলেও ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের কারণে এবারের গ্রন্থমেলা শুরু হয় দুই তারিখ থেকে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং মেলা শেষ হওয়ার একদিন আগে হওয়ায় গ্রন্থমেলার বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে পাঠক-লেখক-দর্শনার্থীদের ভিড়ে তিল ধরণের ঠাঁই ছিল না।
এদিন মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর সড়ক দ্বীপের মাঝ বরাবর চলছে মেট্রোরেলের কাজ চললেও ফুটপাত থেকে শুরু করে রাস্তায় যেটুকু জায়গা রয়েছে, সবখানে মানুষ আর মানুষ। দূর থেকে দেখলে মনে হয় জনসমুদ্র। সবার গন্তব্য একই; অমর একুশে গ্রন্থমেলা। বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বইমেলায় প্রবেশে দীর্ঘ লাইন। বইমেলার ভেতরেও গিজগিজ করছে মানুষ আর মানুষ। মেলার শেষ শুক্রবার ছিল গতকাল। তাই সকাল থেকেই মেলায় ভিড় ছিল। মেলা শুরু হয়েছিল বেলা ১১টায়। দুপুর একটা পর্যন্ত ছিল শিশুপ্রহর। এই সময়টাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিশু চত্বরে হালুম, ইকরি আর শিকুদের দেখতে শিশু কিশোরদের উচ্ছ¡াসের কমতি ছিল না। দুপুর একটা থেকে তিনটা পর্যন্ত মেলায় লোকসমাগম কিছুটা কম ছিল। জুমার নামাজ ও মধ্যাহ্নভোজে ব্যস্ত ছিলেন বইয়ের ক্রেতারা। দুপুর গড়াতে শুরু করতে না করতেই ঢল নামে মেলায়। বিকাল নাগাদ মেলা টইটম্বুর। শুক্রবারে মেলায় বিক্রিও হয়েছে আশানুরূপ। ক্রেতাদের সামলে বিক্রয় কর্মীদের দম ফেলার ফুরসত নেই যেনো। দেখতে দেখতে একদম শেষের দিকে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। প্রথম দিন থেকেই দর্শনার্থীদের ভিড় থাকলেও মেলায় বেচা-বিক্রি ছিলো না তেমন। পরে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে বই বিক্রি।
গতকাল গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, মেলায় আসা বেশির ভাগ দর্শনার্থীদের হাতে নতুন কেনা বইয়ের ব্যাগ। কারো দু’হাতে আবার কারো পরিবারের সবার হাতে বইয়ের ব্যাগ। মেলা ঘুরে ঘুরে পছন্দের লেখকের বই কিনছেন তারা। আগে থেকেই পছন্দ করে রাখা বইয়ের পাশাপাশি মেলায় দেখে পছন্দ করে বই কিনছেন অনেকে।
বিকেলে বইমেলা এসেছিলেন রাজধানীর সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী কবির হোসেন। তিনি বলেন, শেষ সময়ে এসে পাঠকরা বেশি বেশি বই কিনছে, কারণ বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে বেশি ছাড় দিচ্ছে। আমি প্রায় ৩০ টি বই কিনেছি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দু’হাতে বইয়ের ব্যাগ নিয়ে এক স্টল থেকে আরেক স্টলে ঘুরছিলেন তানজির। আলাপকালে তিনি বলেন, কেবলমাত্র বই কেনার জন্য সিরাজগঞ্জ থেকে রাতের ট্রেনে ঢাকায় এসেছি। সারা বছর পড়ার জন্য বইগুলো মেলা থেকে সংগ্রহ করব। উদীচীর সদস্য তানহা বলেন, বইমেলার শেষ শুক্রবার ছিল আজ। মেলায় যারা এতদিন ব্যস্ততার জন্য আসতে পারেননি তাদের অনেকেই আজ এসেছেন। কিনি নিচ্ছেন পছন্দের বই। ছুটির দিন হওয়ায় অনেকেই পরিবার পরিজন নিয়ে মেলায় এসেছেন। তাদেরই একজন ইশতিয়াক আলম। তিনি বলেন, স্ত্রী এবং দুই ছেলেকে নিয়ে মেলায় এসেছি। ওদের জন্য বই কিনবো। ছুটির দিনটা মেলায় কাটিয়ে দিতে চাই।
তবে বই মেলায় প্রকাশিত বইয়ের মান নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেক দর্শনার্থী। অসম্পাদিত বইয়ের পাশাপাশি মানহীন গল্প এবং রচনার বই ছেয়ে গেছে বই মেলা। ফলে ভালো বইগুলো জনপ্রিয়তা পায় না বলে অভিযোগ অনেকের। ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আইরিন সুলতানা বলেন, মেলায় মানসম্পন্ন বইয়ের বড় অভাব। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর প্রচারণার ফলে এ সব বই বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও অসম্পাদিত এবং অতি উৎসাহী নামমাত্র কিছু শৌখিন প্রকাশকরা বই প্রকাশ করছেন।
তবে শেষ সময়ের বেচাকেনায় সন্তুষ্ট প্রকাশকরা। তারা বলছেন, অন্যবারের তুলনায় এবারের বই অনেক মানসম্পন্ন। মুক্তিযুদ্ধের স্টলের কর্মী শুভ বলেন, সারা দেশে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে। এর ছোঁয়া লেগেছে মেলায়ও। বইমেলায় এবার মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত বইয়ের চাহিদা বেশি। মুক্তিযুদ্ধের বইয়ের পাশাপাশি এবারের মেলায় শিশু সাহিত্য, রম্য গল্প, সায়েন্স ফিকশন, ভ্রমণের বই বেশি বিক্রি হয়েছে। যদিও বাংলা একাডেমির দেয়া তথ্য মতে এবারের মেলায় সবচেয়ে বেশি প্রকাশ হয়েছে কবিতার। এর পরপরই আছে গল্প এবং উপন্যাসের বই।
শিশুপ্রহরে শিশুদের মেলা: বইমেলার শেষ শুক্রবারে গতকাল শিশুদের কলকাকলীতে মুখর ছিলো শিশুপ্রহর। মেলার শেষ সময়ে নিজের পছন্দমত বই কেনে ছোট্ট সোনামনিরা। অভিভাবকরা মনে করছেন, মাসজুড়ে এ বইমেলার রেশ শিশুদের বইপ্রেমী করে তুলবে। আর শিশুদের মনন অনুযায়ী বই যোগান দিতে পেরে খুশি বই বিক্রেতারাও। গতকাল গ্রন্থমেলার শিশু চত্বর ঘুরে দেখা যায়, বাবা-মায়ের হাত ধরে শিশুরা নিজের পছন্দের বই দেখছে ও কিনছে। শেষ সময়ে ঢাকার বাইরে থেকেও অনেক বাবা-মা তাদের সন্তানদের নিয়ে এসেছেন বইমেলায়। শিশু চত্বরে বই কেনার পাশাপাশি আগত সোনামোণিরা উপভোগ করছে সিসিমপুরের আয়োজনে বিশেষ পরিবেশনা। শিশুদের সঙ্গে সঙ্গে তাদের বাবা-মায়েদেরও বেশ আনন্দ ও উদ্দীপনা নিয়ে সিসিমপুরের আয়োজন উপভোগ করতে দেখা গেছে।
এদিকে ছুটির দিনের সকাল থেকেই শিশুচত্ত¡রে বইয়ের বিকিকিনি ভালো বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন প্রকাশক। এ প্রসঙ্গে পঙ্খিরাজ প্রকাশনীর প্রকাশক দেওয়ান আজীজ বলেন, সকাল থেকেই শিশুদের উপস্থিতির পাশাপাশি বইয়ের বিক্রিও বেশ ভালো। মেলা এখন শেষ সময়ে থাকায় যারাই মেলা আসছেন, তারা সবাই প্রায় বই কিনছেন। আর ছোটদের বইগুলোর মধ্যে গল্পের বইয়ের প্রতিই শিশুদের ঝোঁক বেশি।
ছুটির দিন উপলক্ষে গতকাল মেলা চলে বেলা ১১টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উৎসর্গ করে এবারের বইমেলার আয়োজন করা হয়েছে। রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে এবার ২ ফেব্রæয়ারি বিকালে মেলা শুরু হয়, উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লিপ ইয়ার উপলক্ষে এবার ফেব্রæয়ারি মাস ২৯ দিনের। তাই আজ ২৯ ফেব্রæয়ারি রাত নয়টায় পর্দা নামছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০-এর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।