পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নানা অনৈতিক কাজের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকার মালিক হওয়ার পর সংসদ সদস্য হওয়ার সাধ জেগেছিল যুব মহিলা লীগের নরসিংদী জেলা কমিটির বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউয়ের। এজন্য তিনি ১০ কোটি টাকা বিনিয়োগও করেছিলেন। কিন্তু সফল হতে পারেননি পাপিয়া। শুধু তাই নয়, জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক হতে খরচ করেছিলেন এক কোটি টাকা। এছাড়া উপকৌটন হিসেবে কথিপয় দুনীতিবাজ প্রভাবশালী কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাকে দিয়েছিলেন বিশেষ উপহার। পাপিয়াসহ অন্যান্যদের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে আইন-শৃংখলা বাহিনীর কর্মকর্তারা এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছেন বলে একটি সংস্থার দায়িত্বশীল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। মামলাটি গতকাল ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়েছে।
ওই সূত্র আরো জানিয়েছে, গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলের প্রেসিডেনশিয়াল স্যুইট ভাড়া নিয়ে ‘অসামাজিক কার্যকলাপ’ চালিয়ে যে আয় করতেন, তা দিয়ে মাসে হোটেলে বিল দিতেন কোটির টাকার উপরে। পাপিয়ার ভাড়া করা প্রেসিডেনশিয়াল স্যুইটে কারা যাতায়াত করতেন তা জানার জন্য এরই মধ্যে ওই হোটেলের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছে একটি সংস্থা। তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখার পাশাপাশি পাপিয়াকে এ বিষয়ে কৌশলে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
র্যাব জানায়, পাপিয়া গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলের প্রেসিডেনসিয়াল স্যুইটে গত ১২ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত টানা ২০ দিন ছিলেন। গত ৫ জানুয়ারি থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ওই হোটেলে অবস্থান করছিলেন। বিমানবন্দরে যখন গ্রেফতার হন, তখনও তার নামে ওই স্যুইট ভাড়া করা ছিল। দ্বিতীয় দফায় স্যুইটের ভাড়া বাবদ পাপিয়া ৮১ লাখ ৮২ হাজার টাকা পরিশোধ করেন বলেও তার বিরুদ্ধে করা মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। এই খরচের উৎস অবৈধ বলে র্যাবের কর্মকর্তাদের ধারণা।
পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, ২৩ তলা বিশিষ্ট ঢাকা ওয়েস্টিন হোটেল বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ম্যারিয়ট বনভয়‘র চেইনভুক্ত। ওই হোটেলের লেভেল-২২ এ ১ হাজার ৪১১ বর্গফুট জায়গাজুড়ে বিলাসবহুল প্রেসিডেনসিয়াল স্যুইট। একটি সংস্থার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাপিয়া এমপি হওয়ার চেষ্টায় বড় অংকের টাকা বিনিয়োগ করেন। কিন্তু যারা এ দায়িত্ব নিয়েছিলেন তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিত্ব ও সততার কারনে পাপিয়ার বিষয়টি উপস্থান করতে সাহস পাননি বলে ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন। যার ফলে বড় অংকের টাকা বিনিয়োগটি বিফলে যায়।
অন্যদিকে যুব মহিলা লীগের নরসিংদী শাখার বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউয়ের সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধান করবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বুধবার বিকেলে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সংস্থাটির সচিব দিলওয়ার বখত এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, বড় দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে দুদক ব্যবস্থা নিচ্ছে। পাপিয়ার ঘটনারও অনুসন্ধান করা হবে। এর সূত্রে কারো নাম আসলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যাবস্থা নেবে কমিশন। সূত্র জানায়, ১৫ দিনের পুলিশি রিমান্ডের দ্বিতীয়দিনে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন শামীমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ। তাতে ওঠে এসেছে তার গডফাদার-গডমাদারদের তথ্য। তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়েই বেপরোয়া হয়ে ওঠেন পাপিয়া। বিস্তার ঘটান অপরাধ জগতের। আর তার এ কাজে সহযোগিতা করেন তার স্বামী মফিজুর রহমান সুমন ওরফে মতি সুমন।
বিমানবন্দর থানার পরিদর্শক ও পাপিয়ার বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কায়কোবাদ কাজী সাংবাদিকদের বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়ার অপরাধজগৎ সম্পর্কে চমকপ্রদ তথ্য বেরিয়ে আসছে। চাকরি দেয়ার কথা বলে কিংবা বিদেশে পাঠানোর নামে অনেকের কাছ থেকে তিনি বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সূত্র জানায়, রিমান্ডে তার উচ্ছৃঙ্খল জীবন, আচরণ, অবৈধ অর্থ, যোগাযোগ, নরসিংদীতে তার কর্মকান্ডের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে পাপিয়া। পাপিয়ার অপরাধ জগতের কাহিনি অনেক লম্বা। সে ক্যাসিনো সিন্ডিকেটের একটি পার্ট ছিল। যেকোনো কারণে এত দিন ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল। আন্ডারওয়ার্ল্ডের অনেক শীর্ষ সন্ত্রাসীর সঙ্গেও পাপিয়ার যোগাযোগ ছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে তথ্য মিলছে।
পাপিয়ার ঘটনার তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, পাপিয়া অস্ত্র, মাদক এবং সুন্দরী তরুণীদের দিয়ে অনৈতিক ব্যবসা করলেও তিনি বেশ কিছু প্রভাবশালীর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতেন। ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের সাথে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে সুন্দরী তরুণীদের দিয়ে অনৈতিক কাজ করাতেন। তবে প্রভাবশালী রাজনীতিক এবং সরকারি কর্মকর্তাদের টাকা ছাড়াও নারী দিয়েই ম্যানেজ করতেন। পাঁচ তারকা হোটেলে নারী ও মাদক ব্যবসাই তার আয়ের মূল উৎস। পাপিয়ার মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকটি ভিডিও রয়েছে। সেসব ভিডিওতে সুন্দরী তরুণীদের সঙ্গে উঠতি শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী ছাড়াও আমলা এবং কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার অন্তরঙ্গ মুহূর্তের দৃশ্য রয়েছে।
প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংস্থার দুনীতিবাজ কর্মকর্তারা। থানায় বসে ভিকটিমকে হুমকি
তদন্তের সাথে জড়িত একটি সূত্রে জানা গেছে, পাপিয়ার পাপের রাজ্যে বিচরণ ছিল প্রশাসন ও বিভিন্ন সংস্থার দুনীতিবাজ কর্মকর্তাদের। যুব মহিলা লীগের তিনজন নেত্রী ছিল তার খুবই ঘনিষ্ঠ। ওয়েস্টিন হোটেলের সংশি¬ষ্ট কর্মকর্তারাও জানতো তার অপকর্মের বিষয়গুলো। ধনাঢ়্য ব্যসায়ী, আমলা এবং বিভিন্ন সংস্থার লোকদের পাপিয়া হোটেল ওয়েস্টিনে দাওয়াত দিতেন। সেখানে লাঞ্চ-ডিনার করাতেন। এরপর নিয়ে যেতেন নিজের নামে বরাদ্দকৃত কক্ষগুলোতে। রাজধানীর বিমানবন্দর থানার একটি মামলায় রিমান্ডের দ্বিতীয় দিনে তদন্ত সংশি¬ষ্টদের এসব তথ্য জানিয়েছেন পাপিয়া। এসবের বাইরে তিনি নতুন নতুন এমন অনেক তথ্য দিচ্ছেন যা শুনে রীতিমতো অবাক আই শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও। তাই তার বক্তব্যের সত্যতা নিশ্চিত করতে হোটেলের সিসি ক্যামেরের ফুটেজ পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তদন্ত সংশি¬ষ্ট সূত্র জানিয়েছে, হোটেলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করলেই বেরিয়ে আসবে কক্ষগুলোতে কার কার যাতায়াত ছিল, কাদের ছত্রছায়ায় ছিলেন পাপিয়া। তাই তার দেয়া তথ্য যাচাই করতে বুধবার গুলশানের প্রাণকেন্দ্র অবস্থিত হোটেল ওয়েস্টিনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা বিমানবন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কায়কোবাদ কাজী। জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন হোটেলের সংশি¬ষ্ট কর্মকর্তাদেরও। এদিকে গ্রেফতারের পর ওসির রুমে বসেই ভিকটিমকে হুমকি দিয়েছে পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমান সুমন ওরফে মতি সুমন।
তদন্তের অগ্রগতি জানতে চাইলে বিমানবন্দর থানার ওসি বিএম ফরমান আলী বলেন, আমরা যেসব তথ্য পাচ্ছি তাতে অবাক হচ্ছি। যাচাই করা ছাড়া ওই বিষয়ে কিছু বলা যাবে না। তিনি বলেন, পাপিয়ার অপকর্মের সঙ্গে হোটেলের কে কে জড়িত ছিল, তার অস্ত্র ও ইয়াবা ব্যবসায় কারা পার্টনার ছিল, তার সঙ্গে পাওয়া জাল টাকার উৎস কী, কাদের আশ্রয়-প্রশয়ে তিনি এ পর্যায়ে এসেছেন- সব বিষয়েই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কয়েকজন ভিকটিম থানায় এসে আমাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে গেছেন। আমরা সবকিছুই তদন্ত করে দেখছি।
তিনি আরো বলেন, পাপিয়া, তার স্বামী ও দুই সহযোগীর বিরুদ্ধে তার থানায় বিদেশী মুদ্রা ও জাল টাকার মামলা হয়েছে। অস্ত্র এবং মাদকের পৃথক মামলা হয়েছে শেরেবাংলানগর থানায়। নরসিংদীতে আরও একটি মামলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত বিমানবন্দর থানার একটি এবং শেরেবাংলানগর থানার ২টি মামলায় ৫ দিন করে মোট ১৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এই মুহূর্তে জাল টাকা ও বিদেশী মুদ্রা মামলায় রিমান্ড চলছে। মামলার আলামত এরই মধ্যে র্যাব উদ্ধার করেছে। শিগগিরই এসব আলামত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিশেষজ্ঞ মতামত নিতে সিআইডিতে পাঠানো হবে।
র্যাব লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার-বিন-কাশেম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, মামলাটি এখন থানা পুলিশ তদন্ত করছে। র্যাবের পক্ষ থেকে তদন্তের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। অনুমতি পাওয়ার পর র্যাব বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত করবে। তিনি জানান, পাপিয়ার অপকর্মের সঙ্গে যে বা যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। হোটেল ওয়েস্টিনের কেউ পাপিয়ার অনৈতিক কাজে জড়িত ছিল কিনা সে বিষয়টিও তদন্ত করে েেদখা হবে।
উল্লেখ্য, গত ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে দেশত্যাগের সময় পাপিয়াসহ চারজনকে গ্রেফতার করে র্যাব। গ্রেফতার অন্যরা হলেন, পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন (৩৮), সাব্বির খন্দকার (২৯) ও শেখ তায়্যিবা (২২)। এরপর তাদেরকে নিয়ে ফার্মগেট ও নরসিংদীর বাসায় অভিযান চালানো হয়। র্যাব অভিযান চালিয়ে ১টি বিদেশি পিস্তল, ২টি পিস্তলের ম্যাগাজিন, ২০টি পিস্তলের গুলি, ৫ বোতল দামি বিদেশি মদ, ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, ৫টি পাসপোর্ট, ৩টি চেকবই, বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা, বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি ভিসা ও এটিএম কার্ড উদ্ধার করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।