পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অস্ত্র, মাদক ও জাল টাকার পৃথক তিনটি মামলায় গ্রেফতারৃকত নরসিংদীর জেলা যুব মহিলা লীগের বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়ার ১৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তার স্বামী মফিজুর রহমানেরও ১৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত এই আদেশ দেন। এছাড়া জাল টাকার মামলায় পাপিয়া ও তার স্বামীর দুই সহযোগীর ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। মামলার অপর আসামিরা হলেন-মফিজুরের ব্যক্তিগত সহকারী সাব্বির খন্দকার ও পাপিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী শেখ তায়্যিবা।
তদন্তের সাথে জড়িত একটি সংস্থার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, এ চক্রের সাথে প্রশাসন ও রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ কারা জড়িত সে বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। কারা পাপিয়ার সাথে যোগাযোগ রক্ষা ও তার আড্ডায় যাতায়ত করতো সে বিষয়েও তদন্ত হচ্ছে। পাপিয়াসহ ওই চারজনকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে উত্থানের সাথে জড়িতসহ সকল বিষয় বেরিয়ে আসবে বলে ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন। এর আগে পাপিয়াসহ চারজনকে ঢাকার আদালতে হাজির করে পুলিশ। বিমানবন্দর থানায় দায়েরকৃত জাল টাকার মামলায় পাপিয়া ও তার স্বামীসহ চারজনকে ৫ দিন করে রিমান্ডে নেয়ার অনুমতি দেন আদালত। এ ছাড়া শেরেবাংলা নগর থানায় দায়ের করা অস্ত্র ও মাদক মামলায় পাপিয়া ও তার স্বামীকে ৫ দিন করে মোট ১০ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন আদালত। আদালতে দেখা যায়, পাপিয়াসহ চারজনকে ঢাকার সিএমএম আদালতের হাজতখানা থেকে এজলাস কক্ষে তোলা হয়। এরপর তাদের আসামির কাঠগড়ায় রাখা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, আসামিদের কাছ থেকে জাল টাকা, অবৈধ অস্ত্র ও মাদক পাওয়া গেছে। আসামিদের বিরুদ্ধে নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগে মামলা হয়েছে। এসব ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি। তবে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আদালতের কাছে দাবি করেন, এসব রাষ্ট্রপক্ষের সাজানো নাটক। আদালত উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আসামিদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গ্রেফতারের পর পাপিয়াকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুব মহিলা লীগ। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়াকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হলো।
পাপিয়াকে দেখতে আদালতে ভিড়
জাল টাকা সরবরাহ, মাদক ব্যবসা ও অনৈতিক কাজের অভিযোগে গ্রেফতার যুবলীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়াকে দেখতে আদালতে ভিড় করেন অনেকেই। গতকাল ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে রিমান্ড শুনানির সময় এমন দৃশ্য দেখা গেছে। এসময় পাপিয়াকে দেখতে আদালতে ভিড় করেন বিচারপ্রার্থী, আইনজীবী, আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এদিন বিকাল ৩টা ২৫ মিনিটে আদালতের এজলাসে হাজির করা হয় পাপিয়াকে। এরপর কাঠগড়ার পাশে একটি চেয়ারে বসে থাকতে দেখা যায় তাকে। এসময় পাপিয়াকে না দেখতে পেয়ে সেখানে উপস্থিত বিচারপ্রার্থী, আইনজীবী, আদালতের কর্মকর্তা কর্মচারীরা বলেন, তাকে কাঠগড়ায় উঠানো হচ্ছে না কেন?’ বিচারক এজলাসে আসেন ৩টা ৪৫ মিনিটে। এরপর পাপিয়াকে কাঠগড়ায় উঠানো হয়। ছবি তুলতে চাইলে আসামি শেখ তায়্যিবা এক সাংবাদিককে বলেন, ‘আপনি ছবি উঠাচ্ছেন কেন?’
পাপিয়ার ক্যাসিনো সস্পৃক্ততার খোঁজে র্যাব
পাপিয়ার অর্থের উৎস বিভিন্ন উপায়ে জানার চেষ্টা করা হলেও কোনো সদুত্তর মেলেনি। র্যাব কর্মকর্তাদের অনুসন্ধানে কিছু তথ্য বেরিয়ে এলেও অজানা রয়ে গেছে বিপুল পরিমাণ টাকার উৎস। তবে র্যাব এবার চোখ দিয়েছে ক্যাসিনোকান্ডের দিকে। আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী এই বাহিনীর ধারণা, গুলশান কেন্দ্রিক অনলাইন ক্যাসিনোকান্ডে জড়িত থাকতে পারে পাপিয়া দম্পত্তি। সেখান থেকে অধিকাংশ টাকা অবৈধ উপায়ে আয় করে থাকতে পারে।
গতকাল র্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল সাংবাদিকদের বলেন, পাপিয়ার অপরাধ সম্পর্কে জানতে সব জায়গায় খোঁজ নেয়া হচ্ছে। ক্যাসিনোকান্ডে তার সম্পৃক্ততা থাকতে পারে। সে বিষয়েও আমরা খোঁজ খবর নিতে শুরু করেছি। যেহেতু সে টাকার উৎস সম্পর্কে কোনো কিছু বলছে না, সেজন্য আমরা এর মূল রহস্য বের করতে কাজ করে যাচ্ছি। শুধু ক্যাসিনো নয় আরও কোথা থেকে সম্পদ অর্জন করেছে সেদিকেও আমরা নজর দেবো।’
র্যাবের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী অনলাইন ক্যাসিনোর গডফাদার সেলিম প্রধানের গুলশানের বাসায় ক্যাসিনো খেলতেন। সেলিম প্রধান ধরা পড়ে কারাগারে গেলেও অনেকেই কৌশলে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। এদের মধ্যে পাপিয়া ও সুমন চৌধুরী অন্যতম।
র্যাব আরও জানায়, স্কুল-কলেজের সুন্দরী মেয়েদের ধরে এনে তাদের অশ্লীল ভিডিও করে তা বিভিন্ন ক্লায়েন্টের কাছে পাঠিয়ে দিত পাপিয়া। পছন্দ হলে তাদের ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়ার কাজটি করতো সুমন চৌধুরী ও সাব্বির আহমেদ। আবার কেউ পাঁচ তারকা হোটেলে আসতে চাইলেও কোনো বাধা থাকত না। এমন অনেক ক্লায়েন্ট আছে, হোটেলে যাদের অন্তরঙ্গ ভিডিও ধারণ করে ব্লাকমেইল করে মোটা অংকের টাকা আদায় করত। এছাড়া চাঁদাবাজি, মাসোহারা আদায়, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসার মাধ্যমেও টাকা উপার্জন করেছে পাপিয়া দম্পত্তি।
র্যাবের দুদিনের অপারেশনে ছিলেন এমন একজন কর্মকর্তা বলেন, বিমানবন্দরে যখন পাপিয়া, তার স্বামী সুমন চৌধুরী, সহকারী সাব্বির আহমেদ ও শেখ তায়্যিবাকে আটক করা হচ্ছিল তখন তারা যেভাবে ভয়ভীতি দেখানো শুরু করেছিল, তাতে র্যাব সদস্যরা হতভম্ব হয়ে যায়। তাদের প্রথমে বুঝিয়ে বহির্গমন পথ আটকানো হয়। এ সময় পাপিয়া বেশকয়েকজন মন্ত্রীকে ফোন করার জন্য মোবাইল বের করেন। তবে তার সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। কারণ কেউ তার ফোন ধরেননি। এমনকি কয়েকজন প্রভাবশালী সংসদ সদস্যকেও ফোন করেন পাপিয়া। তাতেও কাজ হয়নি। আদৌ ওইসব ব্যক্তি তার ফোন ধরেন কি-না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে বলে জানায় র্যাব।
৫ বছরে শতকোটি টাকার মালিক
পাপিয়া রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সব কিছুর আড়ালে ধীরে ধীরে গড়ে তোলেন অপরাধের সাম্রাজ্য। কোনো কাজ বাগিয়ে নিতে পাঁচ তারকা হোটেলে সুন্দরী নারীদের পাঠিয়ে মনোরঞ্জন করতেন সংশ্নিষ্টদের। জড়িয়ে পড়েন অবৈধ অস্ত্র ও মাদক ব্যবসায়। ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন অপরাধ সাম্রাজ্যের রানি। সেই সাম্রাজ্যে তিনি পরিচিত ‘পিউ’ নামে। সরেজমিনে পাপিয়ার বাড়ির আশপাশের স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাপিয়া একজন অটো গ্যারেজের মালিকের মেয়ে। এক সময় তাদের তেমন কিছুই ছিল না। গত ৫ বছরে বিপুল অর্থবিত্ত হাতিয়ে রাতারাতি বনে গেছেন শত কোটি টাকার মালিক। গাড়ি, বাড়ি, ফ্ল্যাট- কি নেই তার। দেশে গাড়ির ব্যবসার পাশাপাশি বিদেশে দিয়েছেন বারও।
জানা যায়, নরসিংদীর বাগদী এলাকায় পেট্রোবাংলার অবসরপ্রাপ্ত গাড়িচালক সাইফুল বারীর মেয়ে পাপিয়া। বর্তমানে তার বাবার নিজ এলাকায় একটি অটো গ্যারেজ রয়েছে। সেখানে বেশ কয়েকটি অটো গাড়ি ভাড়া দিয়ে চলে তাদের সংসার। সম্প্রতি পাপিয়া দোতলা আধুনিক একটি বাড়ি করেছেন। তার স্বামী মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমন গানের শিক্ষক মতিউর রহমান চৌধুরীর বড় ছেলে। মতিউর রহমান স্থানীয় নজরুল একাডেমির প্রিন্সিপাল।
পাপিয়ার স্বামী সুমনের উত্থান। একসময় সুমনেরও তেমন কিছুই ছিল না। আধাপাকা টিনশেড ঘরেই কেটেছে তার শৈশব। এসএসসির গন্ডি পার হওয়ার পর থেকেই জড়িয়ে পড়েন অপকর্মে। ২০০০ সালের দিকে নরসিংদী শহর ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমনের উত্থান শুরু। চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও ব্ল্যাকমেইল সুমনের প্রধান পেশা। সুমন ২০১১ সালের ২৬ এপ্রিল প্রেমের সম্পর্কের পর বিয়ে করেন পাপিয়া চৌধুরীকে। তাদের ঘরে মাদহাত চৌধুরী ইসাব নামে আট বছরের একটি ছেলে রয়েছে। ২০১২ সালের অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে নরসিংদী শহরের বাসাইল এলাকায় ভাড়া বাসার সামনে শহর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক থাকা অবস্থায় সুমনের ওপর হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। তখন সন্ত্রাসীদের ছোড়া গুলি বিদ্ধ হয় তার স্ত্রী পাপিয়ার পেটে। এরপর তারা নরসিংদী ছেড়ে ঢাকায় পাড়ি জমান। ঢাকায় এক সংসদ সদস্যের সঙ্গে গড়ে ওঠে সখ্য। এরপর থেকে পাপিয়া চৌধুরী ও তার স্বামী সুমন ওরফে মতি সুমন রাজধানীর সাবেক এক সংরক্ষিত এমপির আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। ওই এমপির সঙ্গে তার গাড়ির ব্যবসা রয়েছে বলে জানা যায়।
স্বামী-স্ত্রীর যত সম্পদ
নরসিংদী জেলা শহরে বাগদী মারকাজ মসজিদ এলাকায় একটি পাকা ও আরেকটি সেমিপাকা টিনশেড বাড়ি রয়েছে পাপিয়ার। েেসমিপাকা টিনশেড বাড়িটি তিনি এবং তার অনুসারীরা বিরোধীদের শায়েস্তা করার জন্য টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করেন। একই এলাকার বেলদী মোড়ে দুই কোটি টাকা মূল্যের ১০ শতাংশ এবং আরেকটি ৬ শতাংশের মূল্যবান দুটি প্লট রয়েছে। তার শ্বশুরবাড়ি ব্রাহ্মণদীতে স্বামীর দোতলা একটি বাড়ি রয়েছে। রাজধানীর ফার্মগেট ইন্দিরা রোডে ‘রওশন ডমিনো রিলিভো’ বিলাসবহুল ভবনে পাপিয়া ও তার স্বামীর নামে রয়েছে দু’টি ফ্ল্যাট। এছাড়া তার কালো ও সাদা রঙের দু’টি মাইক্রোবাস, একটি হ্যারিয়ার, একটি নোহা ও একটি ভিজেল কার রয়েছে। নরসিংদী শহরে পাঁচটি মোটরসাইকেল রয়েছে বলে জানা যায়। মোটরসাইকেলগুলো তার অনুসারীরা ব্যবহার করেন। পাপিয়ার বাড়িনরসিংদী জেলা শহরে সুমন চৌধুরীর কেএমসি কার ওয়াশ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কার ওয়াশ ব্যবসার আড়ালে এখানে মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চলে। তার স্বামীর মালিকানায় থাইল্যান্ডে একটি বারও রয়েছে। নরসিংদীর এসএমই শাখায় গত বছরের জুন পর্যন্ত ১ লাখ ২৩ হাজার ৮২৯ টাকা জমা ছিল। শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের নরসিংদী শাখায় পাপিয়ার হিসাবে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৭৭০ টাকা ছিল। সিটি ব্যাংকে তার তিনটি হিসাব নম্বরের খোঁজ পাওয়া যায়। এর একটিতে ১ লাখ, অন্য দু’টিতে ৫০ হাজার ও ১ লাখ ২০ হাজার টাকার ডিপোজিট পাওয়া যায়। তার সিটি ব্যাংকের একটি অ্যামেক্স গোল্ড ক্রেডিট কার্ড ও একটি এমেক্স গ্রিন ক্রেডিট কার্ড রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।