পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঐতিহ্যবাহী ঝালকাঠি নেছারাবাদ দরবার শরীফের বার্ষিক ঈছালে ছওয়াব ওয়াজ মাহফিল গতকাল শুরু হয়েছে। বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ হযরত মাওলানা আযীযুর রহমান কায়েদ ছাহেব হুজুর (রহ.) এর একমাত্র ছাহেবজাদা আমীরুল মুছলিহীন হযরত মাওলানা মুহম্মদ খলীলুর রহমান নেছারাবাদী হুজুরের সভাপতি হিসেবে উদ্বোধনী ভাষণের মধ্য দিয়ে মাহফিল শুরু হয়। মাহফিলে যোগদান করেছেন দেশের সকল মহানগর, জেলা ও উপজেলার কায়েদ ছাহেব হুজুরের ভক্ত ও লক্ষাধিক ধর্মপ্রাণ মুসলমান।
উদ্বোধনী বয়ানে আমীরুল মুসলিহীন হযরত মাওলানা খলীলুর রহমান নেছারাবাদী হুজুর বলেন, মুসলিম মিল্লাতের আজ চরম দুর্দিন, একদিকে নাস্তিক, যালেম, ভন্ডসহ ইয়াহুদী খ্রিস্টান চক্রের ক্রমবর্ধমান ষড়যন্ত্র, অপরদিকে সীমাহীন অনৈক্য। এমতাবস্থায় জাতির এ সঙ্কটময় মুহূর্তে আপনারা এ মাহফিলের গুরুত্ব উপলদ্ধি করে উপস্থিত হয়েছেন, এ জন্য আমরা আল্লাহ পাকের দরবারে লাখো শোকর আদায় করছি। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এর বিনিময় দানে কোন অবস্থাতেই মাহরূম করবেন না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি আল্লাহ কোন অবস্থাতেই মুছলিহীনের আমলের ছওয়াব বিনষ্ট করব না’। অন্য আয়াতের মর্ম অনুযায়ী নেক আমলের ছওয়াব গুণে গুণে বৃদ্ধি করে দেয়া হবে। এ আত্মবিশ্বাস আমাদের আছে।
নেছারাবাদী হুজুর বলেন, আল্লাহ তায়ালার রেজামন্দি ও সন্তুষ্টি অর্জনই আমাদের জীবনের লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার জন্য একামতেদ্বীন ও তাবলীগেদ্বীন তথা ইসলামী জীবন যাপন ও ইসলাম প্রচারের ফরজ দায়িত্ব আজীবন পালন করে যেতে হবে। এ মহান দায়িত্ব পালনের জন্য ঐক্য ও সংহতির প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য বলেই আল্লাহ কেন্দ্রীক ঐক্য আমাদের ওপর ফরয। কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তোমরা ঐক্যবদ্ধ হবে আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’। দ্বীনি কাফেলা থেকে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তি জাহান্নামের জ্বালানি, যদিও সে নামাজি এবং রোযাদার হয়। ইসলামের মূলমন্ত্র কলেমায়ে তাইয়্যেবার শিক্ষণীয় বিষয়ের অন্যতম হলো তাওহীদের ভিত্তিতে ঐক্য। যে কলেমার ভিত্তিতে বিশ্ব মুসলিম এক ও অবিচ্ছেদ্য জাতিতে পরিণত হয়েছিল, আজ তারা বিভিন্ন দল-মত, ছেলছেলা, ফেরকা ও ভৌগলিক সীমায় বিভক্ত। দলীয় রাজনীতি, ইখতেলাফী মাসায়েল, মাযহাব ও ছিয়াছী মতাদর্শে শতধা বিচ্ছিন্ন এ জাতি আজ বিশ্বব্যাপী বিপদগ্রস্ত।
বিচ্ছিন্নতার ফলেই যে, ব্যক্তি পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলাম বিলুপ্তির পথে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। হিযবুল্লাহ জমিয়াতুল মুছলিহীন প্রচলিত কোন দলের নাম নয়, এ তো ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ফরয এবাদত আদায়ের এক মহৎ উদ্যোগ। এ হল জীবনটাকে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী গড়ে তোলার প্রত্যয়। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে ইসলামী আদর্শে গড়ে তোলার এক বিশেষ সাধনা। ইসলামী জিন্দেগী গঠনের এ সাধনা তখনই মকবুল হবে, পার্থিব জীবনে সফল তখনই হবে যখন একজন মুমিন শুধু মৌখিক স্বীকৃতিই নয়; কলেমার শিক্ষায়, ঈমানের দাবিতে দ্বীনের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ জীবন যাপনের ব্রত নিয়ে সাধনায় লিপ্ত থাকবে।
হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর (রহ.)-এর উদ্ভাবিত ইত্তেহাদ মায়াল ইখতেলাফ-মতানৈক্যসহ ঐক্যের দর্শন উপস্থাপন করলে যে আশার আলো সকলে দেখেছিলেন, যে স্বপ্নে সকলে বুক বেধেছিলেন তা বাস্তবে রূপ দিতে আমরা সচেষ্ট থাকব।
দেশ, জাতি ও ইসলামের এ ক্রান্তিলগ্নে দল, মত, ছেলছেলার ঊর্ধ্বে উঠে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করতে শক্তি সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করা মুসলমান হিসেবে আমাদের পবিত্র দায়িত্ব। সুতরাং বিভিন্ন দ্বীনি সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গের মধ্যে পারস্পরিক ঐক্য গড়ে তুলতে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে, এজন্য প্রয়োজন তাদের প্রত্যেকের খেদমতের স্বীকৃতি ও মূল্যায়ন।
উল্লেখ্য, মাহফিল শেষ হবে আগামীকাল বাদ ফজর আখেরি মোজানাতের মধ্য দিয়ে। মাহফিলে ভারতসহ সারা দেশ থেকে আগত ওলামায়ে কেরাম গুরুত্বপূর্ণ নসীহত পেশ করবেন। প্রকাশ থাকে যে, নেছারাবাদের মাহফিল কেবলমাত্র ওয়াজ-নসীহতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং ইসলামী জিন্দেগী যাপনে প্রয়োজনীয় সকল বিষয়ের বাস্তব তা’লীম ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও গৃহীত হয় এখানে। কর্তৃপক্ষ মাহফিল শুরুর আগেই এ ব্যাপারে সকল ব্যবস্থা সম্পন্ন করে রেখেছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।