পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
চীনের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে যাতে বিঘ্ন না ঘটে, সে জন্য ঋণসহায়তা ও ঋণপত্রের মূল্য পরিশোধের বিষয়ে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। এফবিসিসিআই বলেছে, চীনের করোনাভাইরাসের কারণে এক মাসের মতো ব্যবসা-বাণিজ্য বিশেষ আমদানি সরবরাহ বিঘœ হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিস্থিতি তুলে ধরতে গতকাল শনিবার এফবিসিসিআই সংবাদ সম্মেলন করেছে। মতিঝিলের ফেডারেশন ভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন সংগঠনের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম। এ ছাড়া ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া একটি জাতীয় সরবরাহকৌশল প্রণয়নের সুপারিশ করেছে এফবিসিসিআই।
সংবাদ সম্মেলনে শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, চীন থেকে পণ্য আমদানির জন্য আগে যেসব ঋণপত্র খোলা হয়েছিল সেগুলো জাহাজিকরণ ও দলিলপত্র (ডকুমেন্টস) হাতে পাওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিয়েছে। নতুন ঋণপত্রও খোলা যাচ্ছে না। প্রায় এক মাস ধরে আমদানি প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হওয়ার ফলে ব্যাংকের পেইমেন্ট ওভারডিউ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় আমদানি-রপ্তানি কাজ যাতে কোনো ক্রমেই বাধাগ্রস্ত না হয় সেজন্য ঋণ সহায়তা ও ঋণপত্রের মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। পণ্য আমদানির ঋণপত্র খোলার সময় টাকা পরিশোধের জন্য একটি সময় বেঁধে দেয় ব্যাংক। ওই সময় পেরিয়ে গেলে তাকে বলে ‘পেইমেন্ট ওভারডিউ’। এরকম হলে নতুন পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলার সময় ব্যাংক বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দেয় অথবা এলসির সুযোগ কমিয়ে দেয়।
আমদানি পরিস্থিতি কতটা নাজুক হয়ে উঠেছে তা বোঝাতে জানুয়ারি মাসের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন শেখ ফজলে ফাহিম। তিনি জানান, এ বছর জানুয়ারি মাসে চীন থেকে ৬ দশমিক ৭২ লাখ টন পণ্য এসেছে। অথচ আগের বছর একই মাসে ৮ দশমিক ৫১ লাখ টন এবং ২০১৮ সালে ৮ দশমিক ৯২ লাখ টন পণ্য এসেছিল। করোনাভাইরাসের কারণে এলসির শিপমেন্ট যে বিলম্বিত হচ্ছে, তা জানিয়ে কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (ডকুমেন্ট) জমা দিতে দেরি হলে তাদের অ্যাকাউন্ট যেন কোনোভাবেই ‘ক্লাসিফায়েড’ ঘোষণা করা না হয় এবং অতিরিক্ত চার্জ অথবা শাস্তিমূলক সুদ যাতে আরোপ করা না হয়- সেদিকেও ব্যাংকগুলোকে নজর রাখার আহবান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি। তিনি বলেন, যেসব ঋণপত্র খোলা হয়েছে কিন্তু শিপমেন্ট হচ্ছে না, কিংবা সময় লাগছে, তাদের ক্ষেত্রে অন্য কোনো উৎস থেকে আমদানির সুযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক সেসব প্রতিষ্ঠানকে এলসি লিমিটের বাইরে স্বল্প মেয়াদী ঋণ দিতে পারে। এলসির টাকা পরিশোধে বিলম্বের কারণে তা যেন ‘ফোর্সড লোন’ হিসেবে গণ্য করা না হয়, সে বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে ‘নমনীয়’ থাকতে অনুরোধ করেন ফজলে ফাহিম। এলসির টাকা পরিশোধে বিলম্ব হলে সেই টাকা ঋণ হিসেবে গণ্য করে তার বিপরীতে নির্ধারিত হারে সুদ ধার্য করা হয়। ব্যাংকের ভাষায় এটাই ‘ফোর্সড লোন’।
করোনাভাইরাসের প্রভাবে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যে ‘স্থবিরতা দেখা দিয়েছে’ মন্তব্য করে সংবাদ সম্মেলনে শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, বস্ত্র, তৈরি পোশাকসহ সব ম্যানুফ্যাকচারিং খাত, চামড়া চামড়াজাত পণ্য, প্লাস্টিক, ইলেক্ট্রিকাল, ইলেকট্রনিক্স, পাদুকা, প্রসাধনী, হাসপাতাল যন্ত্রপাতি, কম্পিউটার, পানির পাম্প, পরিবহন ও যোগাযোগসহ প্রায় সব ধরনের খাতে স্বাভাবিক সরবরাহে বাধা সৃষ্টি হয়েছে।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, আমাদের অর্থনীতির ম্যানুফ্যাকচারিং ভ্যালু চেইনে ৮০ শতাংশের মত চালান প্রায় এক মাস ধরে স্থগিত আছে। ২৪ ফেব্রুয়ারির পর এসব শিপমেন্ট চালু হবে বলে চীনের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে দেশের কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে জানতে চাইলে শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, এখনই নয়, আাগামী মার্চেও শেষে সেই ক্ষতি নিরূপণ করা সম্ভব হবে। তবে আমাদের দেশের অর্থনীতি আক্রান্ত হয়েছে এটা নিশ্চিত। তিনি বলেন, জানুয়ারিতে চীনে নববর্ষের ছুটি থাকে বলে অনেক ব্যবসায়ী আগাম আমদানি করে রেখেছিলেন। ফলে সঙ্কট কিছুটা কম হয়েছে, পরিস্থিতি এখনও আতঙ্কজনক পর্যায়ে যায়নি। এফবিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম ও বর্তমান সহ-সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানসহ সংগঠনের নেতারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।