পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এ কে এম ফজলুর রহমান মুনশী : আনন্দময় ঈদুল ফিতর
মুসলিম মিল্লাতের ঈদের সূচনা এক বরকতময় ও চমকপ্রদ ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট। হযরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন, নবী করীম (সা.) যখন মদীনায় উপস্থিত হলো তখন তিনি দেখতে পেলেন মদীনাবাসীরা দু’টি জাতীয় উৎসব পালন করছে। আর এই উপলক্ষে তারা খেলা-তামাসা ও আনন্দ অনুষ্ঠান করছে। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা এই যে দুটি দিন জাতীয় উৎসব পালন কর, এর মৌলিকত্ব কি? তারা বলল, ইসলামের পূর্বে জাহেলিয়াতের যুগে আমরা এই উৎব হাসি-আনন্দের মধ্যেই উদযাপন করতাম। এখন পর্যন্ত তাই চলে আসছে। ইহা শুনে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন: আল্লাহ পাক তোমাদের এই দু’টি দিনের উৎসবের পরিবর্তে তা হতে অধিক উত্তম দুটি দিন ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা দান করেছেন। অতএব পূর্বের নিছক উৎসব বন্ধ করে এই দুই দিনের নির্দিষ্ট অনুষ্ঠানাদি পালন করতে শুরু কর। (সুনানে আবু দাউদ; মুসনাদে আহমাদ)
ঈদ সার্বজনীন উৎসব। হযরত উম্মে আতিয়া (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: রাসূলুল্লাহ (সা.) দুই ঈদের নামাজের ময়দানে নাবালেকা, পূর্ণ বয়স্কা, সাংসারিক ও হায়েজ সম্পন্না মহিলাদেরও উপস্থিত করতেন। তবে ঋতুবতি মহিলারা নামাজ হতে দূরে সরে থাকত। কিন্তু সব সাধারণ মুসলমানদের যখন দীনি দাওয়াত দেওয়া হত, তখন তারা এতে পুরোপুরী অংশগ্রহণ করত। (জামেতিরমিজী)
ঈদের খুতবা খুবই বরকতময়। হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন: আমি এক ঈদে নবী করীম (সা.)-এর সাথে নামাজে শরীক ও উপস্থিত হয়েছিলাম। দেখলাম, তিনি কোনরূপ আজান ইকামত ছাড়াই এবং খুতবা দেয়ার পূর্বে নামাজ শুরু করে দিলেন। নামাজ শেষে তিনি হযরত বিলাল (রা:)-এর কাঁধে ভর করে ভাষণ দেয়ার জন্য দাঁড়ালেন এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অনেক উপদেশ দিলেন। (সুনানে নাসাঈ)।
ঈদের নামাজে অতিরিক্ত তাকবীর দেয়ার বিধান আছে। প্রথম রাকাতে তাকবীরে তাহরীমার পর তিনটি, দ্বিতীয় রাকাতে কুরআন পাঠের পর তিনটি তাকবীর দিতে হয়। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, আবু মূসা আশায়ারী, আবু মাসউদ আনসারী এমন আমলই করতেন।
ঈদের দিনের কর্মসূচির মধ্যে সুন্নত তরীকার অনুসরণ করা একান্ত দরকার। হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন: ঈদের নামাজের জন্য পায়ে হেঁটে যাওয়ার পূর্বে (ঈদুল ফিতরে) কিছু খাওয়া সুন্নাত, রাসূলে করীম (সা.)-এর রীতি। (জামে তিরমিজী) হযরত ইবনে ওমর (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: রাসূলুল্লাহ (সা.) ঈদের নামাজের ময়দানে পায়ে হেঁটে যেতেন এবং পায়ে হেঁটে প্রত্যাবর্তন করতেন। ঈদের নামাজের জন্য ময়দানে যাতায়াতকালে রাসূলে করীম (সা.) যাতায়াতের পথ পরিবর্তন করতেন। অর্থাৎ এক পথে গমন করতেন এবং অন্যপথে প্রত্যাবর্তন করতেন। পথ চলার সময় তিনি ঈদুল ফিতরে অনুচ্চ শব্দে এবং ঈদুল আজহায় উচ্চ শব্দে ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ’ তাকবীর পাঠ করতেন।
বস্তুত ঈদের নামাজের ধরন ও রীতি খুবই উৎকৃষ্ট। হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে: তিনি বলেছেন, নবী করীম (সা.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিন ঈদের ময়দানে চলে যেতেন। সর্বপ্রথম তিনি নামাজ পড়াতেন। নামাজ পড়ানো শেষ করে লোকদের দিকে ফিরে খুতবা দেয়ার উদ্দেশ্যে দাঁড়াতেন। তখন লোকেরা যথারীতি নিজেদের কাতারে বসে থাকত। এ সময় নবীকরীম (সা.) লোকদের ওয়াজ-নসিহত করতেন। শরীয়তের আদেশ নিষেধ শোনাতেন। তখন যদি কোন সৈন্যবাহিনী গড়ে তুলে কোন দিকে পাঠাবার ইচ্ছা করতেন তাহলে তিনি (দু’ ঈদের খুতবার পরে) তা পাঠিয়ে দিতেন। কিংবা কোন বিশেষ বিষয়ে কোন নির্দেশ জারি করা তার লক্ষ্য হত তবে এ সময় তিনি তাও সম্পন্ন করতেন। অতঃপর তিনি ঈদগাহ হতে প্রত্যাবর্তন করতেন। (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।