পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নিষেধাজ্ঞা আছে। অথচ নিষিদ্ধযানে সয়লাব সারাদেশ। রাজধানী ঢাকায় এখন নিষিদ্ধ ইজিবাইক ও মোটরচালিত রিকশার ভিড়ে চলা দায়। অথচ নিষিদ্ধ যান ইজিবাইক রাজধানীতে যাতে চলতে না পারে সেজন্য কঠোর নির্দেশনা আছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের। খোদ পুলিশ সেই নির্দেশ মানছে না। এর আগে হাইকোর্ট এক আদেশে মহাসড়কে এসব যান চলাচল নিষিদ্ধ করেছিলেন।
কিছু অংশ বাদ দিয়ে সারাদেশে মহাসড়কে এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, নসিমন, করিমন, ভটভটিসহ ব্যাটারিচালিত রিকশা। পুলিশকে ম্যানেজ করেই চলছে এসব। ঢাকায় চলাচলরত ইজিবাইক থেকে প্রতিদিন তোলা হচ্ছে লাখ লাখ টাকা চাঁদা। যার সিংহভাগ যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতার পকেটে। একটি বেসরকারি সংস্থার হিসাবে ঢাকায় চলাচলরত ইজিবাইকের ব্যাটারি রিচার্জ করার জন্য কমপক্ষে ৬শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুতের অপচয় হচ্ছে। এর মাশুল দিচ্ছে ভোক্তা আর বিদ্যুত চুরির টাকা লুটেপুটে খাচ্ছে বিদ্যুত বিভাগের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারি।
মহাসড়কে ইজিবাইক ও মোটরচালিত রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করার আগে থেকেই রাজধানীর অলি-গলিতে ইজিবাইক চলাচল শুরু করে। ২০১৫ সালের ১ আগস্ট দেশের ২২টি মহাসড়কে সব ধরণের থ্রি-হুইলার চলাচল নিষিদ্ধ করার পর পুলিশ অনেকটা তৎপর হয়ে ওঠে। সে সময় ঢাকার বাইরে থেকে বেশ কিছু ইজিবাইক ঢাকায় চলে আসে। আইনের প্রয়োগ না থাকায় এখন মৌমাছির মতো ইজিবাইকে ভরে গেছে পুরো রাজধানী। নগরীর যে কোনো এলাকায় বের হলে ব্যটারীচালিত এসব যানের ভিড়ে হাঁটাই দায়। সাথে যোগ হয়েছে মোটরচালিত রিকশা। এই দুইয়ে মিলে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা ।
জাতীয় রিকশা ভ্যান শ্রমিক লীগের হিসাব অনুযায়ী, ঢাকায় ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা এক লাখেরও বেশি। আর অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের হিসাবে ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় ইজিবাইকের সংখ্যা এখন দুই লাখের কাছাকাছি। রাজধানীর প্রতিটি থানা এলাকার অলি-গলিতে এখন ব্যাটারীচালিত ইজিবাইক ও মোটরচালিত রিকশার ছড়াছড়ি। এগুলো চলাচলে বাধা না দেয়ায় দিন দিন সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এখন পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে এগুলোর ভিড়ে রাস্তায় পায়ে হাঁটাও দুস্কর হয়ে পড়েছে। জাতীয় রিকশা ভ্যান শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদব মো. ইনসুর আলী ইনকিলাবকে বলেন, এসব যানবাহন কোনো মানসম্মত যানবাহন নয়। প্রতিনিয়ত এসব যান দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে, পঙ্গু হচ্ছে। আবার এসব যান থেকে প্রভাবশালীরা মাসে কমপক্ষে ১০ কোটি টাকা চাঁদাবাজি করছে। তিনি বলেন, আমি এসব অবৈধ যান বন্ধের জন্য বহু চেষ্টা করেছি। সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। প্রতিবাদ করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছি। অথচ কোনো এক অশুভ শক্তির জোরে এগুলোর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। যা মানুষের জন্য হুমকী।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নগরীর মিরপুর-১, ১০, পল্লবী, দারুস সালাম, বিমানবন্দর, তুরাগ, দক্ষিণখান, উত্তরখান, বনশ্রী, আজিমপুর, জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড ও বাসাবো-মাদারটেক, যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, ডেমরা, জুরাইন, শ্যামপুর, মোহাম্মদপুর, আদাবর, রামপুরা, খিলগাঁও, সিপাহীবাগ, বনশ্রী, বাড্ডা, মেরুল বাড্ডা, মেরাদিয়াসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে অবৈধ ইজিবাইক ও মোটরচালিত রিকশা চলাচল করছে নির্বিঘ্নে। ঢাকায় এসব চলাচলের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকায় গড়ে উঠেছে চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট। ক্ষমতাসীন দলের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতারা এই সিন্ডিকেটের হোতা। তারা প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা চাঁদা তুলছে। এই চাঁদার টাকায় অনেকেই বাড়ি-গাড়ির মালিক বনে গেছেন। এই সিন্ডিকেটের বদৌলতে বিদ্যুতের এক শ্রেণির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও পুলিশের পেটেও যাচ্ছে লাখ লাখ টাকা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বার বার নিষিদ্ধ এসব যান বন্ধ করার কথা বলা হলেও বাস্তবে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এতে দিন দিন এসব যানের সংখ্যা বাড়ছেই। বাড়ছে দুর্ঘটনা, প্রাণহানি। সাথে পরিবহন সেক্টরের বিশৃঙ্খলাতো আছেই। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এর আগে বলেছেন, করিমন, নসিমনসহ তিন চাকার কোনো যানবাহন মহাসড়কে চলতে পারবে না। এ সব যানবাহনের আমদানি বন্ধে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। নম্বরবিহীন সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধে প্রশাসনকে আগে থেকেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রী বহুবার এসব যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধের কথা বললেও কার্যত এর কোনো ফল মেলেনি। বরং রাজনৈতিক কারণেই এগুলো ব্যাঙের ছাতার মতো বেড়েই চলেছে। শুধু তাই নয়, এর আগে ২০১৭ সালে আইন করে মহাসড়কে এসব যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। হাইকোর্টও এক আদেশে এসব যান চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে পুলিশকে কিছু নির্দেশনা দেয়। কিন্তু কোনো নিষেধাজ্ঞাই কার্যকর হয়নি। সিন্ডিকেটের কারণে বরাবরই ভেস্তে গেছে সরকারের উদ্যোগ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের মহাসড়কগুলোতে এসব যান চলাচলের কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনায় মানুষের প্রাণহানী ঘটছে। ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-মাওয়া, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে এখনও সদর্পে চলছে এসব নিষিদ্ধ যান। চালকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পুলিশের দেয়া টোকেন নিয়ে এসব যান চলাচল করে। এক হাজার টাকা দিয়ে টোকেন নিলে মহাসড়কে পুলিশ আর বাধা দেয় না।
রাজধানীর প্রতিটি থানা এলাকার অলি-গলিতে এখন ব্যাটারীচালিত ইজিবাইক ও মোটরচালিত রিকশার ছড়াছড়ি। এগুলো চলাচলে বাধা দেয়ার উপায় নেই। কারণ এর নেপথ্যে আছে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতারা। আছে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ। নগরীর শ্যামপুর, কদমতলী ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় হাজার হাজার ইজিবাইক ও মোটরচালিক রিকশার পরিচালনার নেপথ্যে রয়েছে স্থানীয় নেতা ও প্রভাবশালীরা। কদমতলী থানা এলাকায় ইজিবাইকের বেশ কয়েকটি রুটের মধ্যে রায়েরবাগ ও মোহাম্মদবাগ রুটে চলাচল করে পাঁচ শতাধিক ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা। রায়েরবাগের এই রুট নিয়ন্ত্রণ করে জাহাঙ্গীর নামে এক ব্যক্তি। মোহাম্মদবাগে নিয়ন্ত্রণ করে লিটন ও তার দুই ভাই। প্রতিদিন এখানে ইজিবাইক প্রতি ১৫০ টাকা রিকশা প্রতি ৬০ টাকা হারে চাঁদা তোলা হয়। এলাকাবাসীর হিসাব মতে, শুধু এই দুই রুট থেকেই মাসে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা ওঠে। এছাড়া বড়ইতলা থেকে বিক্রমপুর প্লাজা, পোস্তগোলা থেকে পাগলা, ধোলাইরপাড় থেকে শনিরআখড়া, জুরাইন মেইন রাস্তা থেকে মুরাদপুর হয়ে কোদারবাজার পর্যন্ত আছে একটি করে রুট। প্রতিটি ইজিবাইক থেকে প্রতিদিন দেড়শ’ টাকা করে চাঁদা তোলা হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সহস্রাধিক ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশার ব্যাটারির চার্জ দেয়ার জন্য মুরাদপুর এলাকাতেই আছে কয়েকটি গ্যারেজ। যেগুলোতে অবৈধ বিদ্যুতের সংযোগ নেয়া আছে বিদ্যুত বিভাগের স্থানীয় প্রকৌশলীতে ম্যানেজ করে। স্থানীয়রা জানান, এই এলাকায় বিদ্যুত চুরির নেপথ্যে নাসির ও তার সিন্ডিকেটের লোকজন। ব্যাটারিচালিত রিকশা তৈরী করা হয় পাটেরবাগ, দনিয়া, রায়েরবাগ, ডেমরা, কাজলা, ভাঙ্গাপ্রেসসহ বিভিন্ন এলাকায়। দনিয়া এলাকায় চলাচলকারি ৬ শতাধিক ইজিবাইক ও রিকশার চাঁদা তোলে মরণ নামে একজন। প্রভাবশালীদের হয়ে সে চাঁদার টাকা তোলে। সেখান থেকে মোটা অঙ্ক যায় থানায়।
অন্যদিকে, নগরীর মিরপুর ১০ নং গোলচক্কর থেকে ইজিবাইক,প্রাইভেট সিএনজি ও চ্যাম্পিয়ন নামের কিছু বাস চলাচল করে। ১৫০ টাকা থেকে শুরু করে প্রতিদিন ৪০০ টাকা হারে চাঁদা দিয়ে চলছে এসব অবৈধ যানবাহন। স্থানীয় যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতারা এসব অবৈধ যান থেকে চাঁদা তোলে। স্থানীয়রা জানান, এই এলাকায় ৪ শতাধিক যান চলাচল করে। এর মধ্যে কিছু চলে ১০ নং গোলচক্কর থেকে মিরপুর ১৪ হয়ে ভাষানটেক এবং কিছু মিরপুর ১৪ হয়ে কচুক্ষেত পর্যন্ত চলাচল করে। এ ছাড়া শতাধিক প্রাইভেট সিএনজি ও চ্যাম্পিয়ন বাস ফিটনেস, রুট পারমিট ও চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়াই চলাচল করে। মিরপুর ১১ নং সেকশনের পল্লবী মিডটাউন শপিং মলের সামনে থেকে রূপনগর আবাসিক এলাকা পর্যন্ত চলাচল করে প্রায় একশ’ ইজিবাইক। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন স্থানীয় সরকারদলীয় কয়েকজন নেতা। মিরপুর ১ নম্বর থেকে আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় চলে ১০০-১৫০টি ইজিবাইক। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন স্থানীয় শ্রমিক লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন। তার নিয়োগকৃত লাইনম্যানরা প্রত্যেক ইজিবাইক থেকে টাকা আদায় করে।
ঢাকা বিমানবন্দর রেলস্টেশনের পাশে আশকোনা এলাকায় কয়েকশ’ ইজিবাইক চলাচল করছে। স্থানীয়দের মতে, এখানে ইজিবাইকের সংখ্যা ৭ শতাধিক ছাড়িয়ে গেছে। বিমানবন্দর রেল ক্রসিং থেকে আশকোনা হয়ে বউড়া ও হলান পর্যন্ত চলাচল করে তিন শতাধিক ইজিবাইক। বিমানবন্দর রেল ক্রসিং থেকে দক্ষিণখান ও কাঁচকুড়া পর্যন্ত চলাচল করে প্রায় চারশ’।
এই এলাকায় ইজিবাইক চালানোর জন্য প্রতিদিন ১৫০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। স্থানীয়রা জানান, নিষিদ্ধ এ যানগুলো মাঝে মধ্যেই উত্তরার প্রধান সড়কে উঠে যায়। পুলিশকে টাকা দিয়ে চলাচল করে বলে এরা প্রধান সড়কে উঠতেও দ্বিধা করে না। চালকরা জানান, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার লোকজন এই টাকা তোলে। চালকরা জানান, এই এলাকায় ইজিবাইক নামানোর সময় ১৬শ’ টাকা করে দিতে হয়। রামপুরা টিভি সেন্টারের কাছ থেকে বনশ্রী হয়ে সিপাহীবাগ চলাচল করে শতাধিক ইজিবাইক। এ ছাড়া বেশ কিছু লেগুনা চলাচল করে। যেগুলোর কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই এবং সেগুলোর ফিটনেসও নেই। লেগুনাগুলো রামপুরা টিভি সেন্টারের কাছ থেকে বনশ্রী হয়ে মাদারটেক প্রজেক্টের মুখ পর্যন্ত যায়। একজন ইজিবাইক চালক জানান, বাইক চলাচলের জন্য তারা প্রতিদিন ৫০ টাকা করে দেন। এ টাকা নেয় সিপাহীবাগের এক নেতা। এ ছাড়া তারা মাসে ২০০ টাকা করে ট্রাফিক পুলিশকে দিতে হয়। সবুজবাগ থানার খিলগাঁও বিশ্বরোড থেকে বাসাবো হয়ে মাদারটেক, নন্দীপাড়া ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় দু’শ ইজিবাইক চলাচল করে। প্রত্যেকটি ইজিবাইক থেকে প্রতিদিন ৮০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। পরিবহন শ্রমিক নেতারাই স্বীকার করেছেন, গোটা রাজধানীতে ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা থেকে দিনে লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজি হচ্ছে। এই চাঁদার টাকার ভাগ অনেকেই পায়। যে কারণে সরকার বার বার উদ্যোগ নেয়ার পরেও এগুলো বন্ধ হচ্ছে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।