Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

করোনাভাইরাসের উপস্থিতি নেই বাংলাদেশে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০০ এএম

নতুন করোনাভাইরাসে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে জাতীয় রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) পরিচালক প্রফেসর ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেছেন, এখন পর্যন্ত দেশে ভাইরাস আক্রান্ত রোগী মেলেনি। ভাইরাস সন্দেহে যাদের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে তাদের মধ্যে করোনার উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।

গতকাল মহাখালীর আইইডিসিআর ভবনে করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। প্রফেসর ফ্লোরা বলেন, এ পর্যন্ত আমরা ৭২ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছি। এরমধ্যে ৩ জন চীনা নাগরিক। আমরা কোনও নমুনায় করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পাইনি। সুতরাং আমরা বলতে পারি বাংলাদেশে কোনও করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি নেই। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৬ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে বলেও জানান তিনি। সিঙ্গাপুরে আরও দুটি নতুন কেস শনাক্ত হয়েছে উলে­খ করে তিনি বলেন, তারা কেউ বাংলাদেশি নন। এখন পর্যন্ত আক্রান্ত বাংলাদেশীর সংখ্যা পাঁচ জনই আছে।

চীনে করোনা সংক্রমণ কমছে, আশাবাদী হু : চীনে ধীরে ধীরে নোভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমে আসছে। ড়শ সোমবার সেখানে আরও ৯৮ জনের মৃত্যু হলেও আশার কথা, গত কয়েক দিনের তুলনায় মৃতের সংখ্যা অনেকটা কম। আবার নতুন আক্রান্তদের সংক্রমণও অনেক কম। সব মিলিয়ে সধতের সংখ্যা ১৮০০ ছাড়িয়েছে। এ থেকেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) কর্মকর্তা আশার আলো দেখছেন। গতকাল চিনের স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাস সংক্রমণে ৯৮ জন সহ মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৮৬ জনে। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৭২ হাজার ৪৩৬ জন। তবে উল্লেখযোগ্য ভাবে গতকালই বেইজিং প্রথম জানাল, করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে ৪৫ হাজার মানুষই আক্রান্ত হয়েছেন চীন থেকে। চীনের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে জানিয়েছে, এই ৪৫ হাজার আক্রান্তের বেশিরভাগেরই সংক্রমণ ছিল সামান্য। তা ছাড়া সংক্রমণের সংখ্যা বেশি থাকার কারণ চিকিৎসা সংক্রান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার আগে সন্দেহের ভিত্তিতে চিকিৎসকরা রিপোর্ট দিয়েছিলেন। সম্পূর্ণ রিপোর্ট আসার পর এই পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে। তাদের নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে, ৮০ দশমিক ৯ শতাংশ রোগীর অবস্থা গুরুতর নয়। এছাড়া ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ তীব্র এবং ৪ দশমিক ৭ শতাংশ গুরুতর বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অপরদিকে, ৮০ বছর বা তার বেশি বয়সী লোকজন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন। অপরদিকে, ৪০ বছর বয়সী লোকজনের ঝুঁকি ০ দশমিক ৪ শতাংশ, ৫০ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে এক দশমিক ৩ শতাংশ, ৬০ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ৭০ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি ৮ শতাংশ। এছাড়া এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নারীদের তুলনায় পুরুষদের মৃত্যুর হার বেশি। পুরুষদের মৃত্যুর হার দুই দশমিক ৮ শতাংশ এবং নারীদের ক্ষেত্রে এক দশমিক ৭ শতাংশ। চীনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ১২ হাজারের বেশি। এর পরেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কী ভাবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে, তার উৎস কী, সে সব সম্পর্কে একটি পরিষ্কার চিত্র পাওয়া গেল। হু-এর ডিরেক্টর জেনারেল টেড্রোস আধানম ঘেব্রেইসুস বলেন, ‘আমরা আশাবাদি। তবে এখনই এটা নিশ্চিত করে বলা যাবে না, সংক্রমণের হার কমতেই থাকবে। প্রতিটি অবস্থাতেই আলোচনার অবকাশ রয়েছে।’ এদিকে, আগামী মাসে চীনে বার্ষিক কংগ্রেস স্থগিত রাখা হতে পারে। সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে, এই আশঙ্কাতেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

করোনাভাইরাসে নতুন চিকিৎসায় ১২ ঘন্টায় সফলতা : রক্তের প্লাজমা ব্যবহার করে করোনা ভাইরাস চিকিৎসায় নতুন একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে চীন। এ পদ্ধতিতে করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরে সুস্থ হয়ে গেছেন এমন ব্যক্তির দেহ থেকে রক্তের প্ল­াজমা সংগ্রহ করে নতুন আক্রান্তদের দেহে সেই প্লাজমা ব্যবহার করা হচ্ছে। তাতে অভ‚তপূর্ব ফল পাওয়া গেছে। মাত্র ১২ থেকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে এতে সাফল্য আসছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে বৈধ উপায় বলে আখ্যায়িত করেছে। মালয়েশিয়ার অনলাইন দ্য স্টারে এ খবর প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একজন শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞ বলেছেন, প্লাজমা ব্যবহার করে এই চিকিৎসার পরীক্ষা খুবই কার্যকর পদ্ধতি। সময়মতো রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সর্বোচ্চে পৌঁছে দেয়া এখন খুব গুরুত্বপূর্ণ।

সাংহাই পাবলিক হেলথ ক্লিনিক্যাল সেন্টারের প্রফেসর ও সহ-পরিচালক লু হং ঝৌ বলেছেন, ১৮৪ জন এখনও হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার মধ্যে ১৮ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার হাসপাতাল প্লাজমা থেরাপি ব্যবহারের জন্য একটি বিশেষায়িত ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মসূচির প্রধান ড. মাইক রিয়ান বলেছেন, র‌্যাবিস এবং ডিপথেরিয়া সহ অন্যান্য সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে প্লাজমা পদ্ধতি প্রমাণিত হয়েছে কার্যকর ও জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসা হিসেবে। হাইপার ইমিউন গ্লোবিউলিন যা করে তাহলো, আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ একজন ব্যক্তির দেহে এন্টিবডি ঘনীভ‚ত করে। নতুন করে আক্রান্ত ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে আরো শক্তিশালী করতে দেয়া হয় এন্টিবডি। এটা দেয়া হলে কঠিন অবস্থা থেকে তারা বেঁচে উঠতে পারেন। তবে তা দিতে হবে উপযুক্ত সময়ে। চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতিতে বলেছে, প্লাজমা পদ্ধতিতে ১২ থেকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে। এ পদ্ধতিতে আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। প্রথমে রক্তের প্লাজমা নেয়া হয় গত ১ ফেব্রুয়ারি। ৯ ফেব্রুয়ারি দেয়া হয় এক রোগীর দেহে। উহানের জিয়াংসির একটি হাসপাতালে ওই রোগীকে এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেয়া হয়। এতে ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়। ফলে আরো ১০ জন রোগীকে একই চিকিৎসা দেয়া হয়। তারা মারাত্মক অবস্থা থেকে এখন অনেক সুস্থ হয়েছেন।

চীনের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী হস্তান্তর : চীনের রাস্ট্রদূত লি জিমিংয়ের হাতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী হস্তান্তর করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এসব শুভেচ্ছা উপহার তুলে দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহেদ মালেক ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে মাস্ক পাঁচ লাখ, গাউন আট হাজার, ক্যাপ দেড় লাখ, হ্যান্ড গ্লোভস ১০ লাখ এবং এক লাখ হ্যান্ড সেনিট্যাইজার। এর আগে গত রোববার ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিংয়ের হাতে দেশটির প্রধানমন্ত্রীকে লেখা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি চিঠি হস্তান্তর করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। তিনি বলেন, চীনে করোনাভাইরাসে প্রাণহানির ঘটনায় শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভাইরাসের সংক্রমণে স্বজন হারানো চীনা পরিবারগুলোর প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে চীন সরকার কর্তৃক দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশী নাগরিকদের সঠিকভাবে সেবা প্রদানেরও প্রশংসা করেন। এছাড়া মুজিববর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন শেখ হাসিনা



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ