পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এক ব্যবসায়ীকে আটকে রেখে এক কোটি ২৫ লাখ টাকার পৃথক দু’টি চেক নেয়ার ঘটনা তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। ডিএমপির রমনা বিভাগের ডিসি সাজ্জাদুর রহমানের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ করেছেন মেহেদী শেখ নামে এক ব্যবসায়ী। ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ব্যবসায়ী মেহেদী শেখ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, গত ২২জানুয়ারি গুলশানের কালা চাঁদপুরের বাসা থেকে তাকে দু’জন এসআই ধানমন্ডি থানায় নিয়ে যান। নেয়ার আগে তাকে বলা হয় পাওনা টাকার বিষয়ে তাকে থানায় যেতে হবে। ধানমন্ডি থানায় নেয়ার পর সেখানে একটি কক্ষে সারারাত আটকে রাখা হয় মেহেদীকে। পরদিন দুপুর ১২টার দিকে তাকে জানানো হয়, বাসা থেকে চেক বই এবং ট্রেড লাইসেন্সের মূল কপি আনতে হবে। পরে তার দুই স্বজন এগুলো নিয়ে থানায় হাজির হন। পরে বিকেল ৫টার দিকে ধানমন্ডি থানা থেকে ওই ব্যবসায়ীকে পুলিশের গাড়িতে করে নেয়া হয় পুলিশের রমনা অঞ্চলের উপকমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমানের কার্যালয়ে। মেহেদী শেখের তথ্য অনুযায়ী, পুলিশের ওই কর্মকর্তার সঙ্গেই তার মূল বিরোধ। ডিসি সাজ্জাদুর রহমান নিজের ডায়েরিতে কবে কোন চেক ক্যাশ হবে, সেই তারিখ লিখিয়ে নেন। নিচে মেহেদীকে তারিখসহ সই করতে বলা হয়। আর একটি চেকে ৬৫ লাখ, আরেকটি চেকে ৬০ লাখ টাকা লেখেন ডিসির শ্যালক মাসুদ হোসেন ওরফে শুভ্র।
তিনি আরো বলেন, গতকাল সোমবার এ বিষয়ে একটি জাতীয় দৈনিকের প্রথম পাতায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ ঘটনার পর তিনি আরো আতংকে রয়েছেন। সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম গতকাল সোমবার দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ব্যবসায়ীর অভিযোগ আমরা পেয়েছি। তবে প্রাথমিক অবস্থায় ওই ব্যবসায়ীর কাছে অন্য একজন টাকা পাওয়ার বিষয়টির সত্যতা পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
ব্যবসায়ী মেহেদী শেখ জানান, গত ১২ ফেব্রুয়ারি পুলিশের মহাপরিদর্শক এবং ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এতে তিনি জীবনের নিরাপত্তা ও আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
তিনি অভিযোগ করেন যে, পুলিশ কর্মকর্তা সাজ্জাদুর রহমানের সঙ্গে তার বিরোধের সূত্রপাত টাকা লেনদেন নিয়ে। তিনি বিদেশ থেকে গুঁড়া দুধসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি করতেন। সাজ্জাদুর রহমান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে কর্মরত থাকা অবস্থায় তাকে নগদ ৫০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। প্রতি মাসে এর বিনিময়ে আড়াই লাখ টাকা দিতে হতো। মেহেদী নগদ টাকা বুঝে নিয়ে ৫০ লাখ টাকার একটি চেক দিয়েছিলেন। প্রতি মাসে লাভের টাকা নিতেন পুলিশ কর্মকর্তার শ্যালক মাসুদ হোসেন।
ব্যবসায়ী মেহেদী শেখ জানান, ব্যবসায় লোকসান হওয়ায় গত বছরের মাঝামাঝি লাভের টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেন। এরপর জামানত হিসেবে দেয়া ৫০ লাখ টাকার চেকটি ব্যাংকে জমা দেয়া হয়। চেক প্রত্যাখ্যাত (ডিজঅনার) হলে মামলা করেন সাজ্জাদুর রহমানের শ্যালক মাসুদ হোসেন। সেই মামলায় জামিনে আছেন তিনি। এরই মধ্যে তাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে আটকে রেখে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকার দুটি চেকে সই নেয়া হয়। এরপর সোয়া কোটি টাকার ওই চেক দুটি প্রত্যাখ্যাত হলে গত ফেব্রুয়ারি মেহেদীকে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন সাজ্জাদুর রহমানের শ্যালক মাসুদ ও নিকটাত্মীয় হাদিউজ্জামান।
গতকাল সোমবার একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও ডিসি সাজ্জাদুর রহমানকে পাওয়া যায়নি। ফলে তার বক্তব্য দেয়া সম্ভব হয়নি। তবে গত রোববার তিনি একটি গণমাধ্যমকে বলেছেন, টাকা আমি দিইনি, দিয়েছিল আমার শ্যালক। একজন মানুষ যখন টাকা দিয়ে ফেরত পায় না, তখন আমাদের কাছে আসে। আমার শ্যালকও আর ১০ জনের মতো এসেছিল। সে টাকা দিয়ে এখন ফেরত পায় না, লাভও পায় না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তার মনে হয় যা কিছু হয়েছে, তা আইনের মধ্যেই হয়েছে। তা ছাড়া অভিযোগকারীর আমলনামা দেখলে বুঝতে পারবেন, সে কতটা খারাপ প্রকৃতির লোক। এমন লোকের সঙ্গে একজন পদস্থ কর্মকর্তা হয়ে আর্থিক লেনদেন করার বিষয়ে জানতে চাইলে ডিসি বলেন, তার শ্যালক এই লেনদেন করেছে।
মেহেদী শেখকে তুলে আনা, পুলিশ হেফাজতে রেখে চেক লিখিয়ে নেওয়া এবং হয়রানি-হুমকির অভিযোগ প্রসঙ্গে উপকমিশনার বলেন, এসব অভিযোগ মোটেও সত্য না। আমি বরং তাকে জিজ্ঞেস করেছি, কোনো চাপ দেওয়া হয়েছি কি না। সে জানিয়েছে, যা কিছু হয়েছে তা আলোচনার ভিত্তিতে আপসে হয়েছে। আমি আপস-মীমাংসায় সহায়তা করেছি।
৫০ লাখ টাকা নিয়ে তা পরিশোধ না করা প্রসঙ্গে মেহেদী বলেন, আমি প্রতি মাসে আড়াই লাখ টাকা হিসাবে মোট ৬৭ লাখ টাকা দিয়েছি। আমি এক ব্যক্তির কাছে ৭০ লাখ টাকা পেতাম। সেই টাকা আদায় করে নিয়েছেন সাজ্জাদুর রহমান ও তার শ্যালক। এএসআই রাজু সেই টাকা তুলেছেন, যার তথ্যপ্রমাণ সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে রয়েছে। এ পর্যন্ত তারা আমার কাছ থেকে মোট ১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা নিয়েছেন। তারপরও আমার কাছ থেকে নেওয়া ৫০ লাখ টাকার চেকটি তারা আমাকে ঘায়েল করতে ব্যবহার করেছেন, এখন আবার সোয়া কোটি টাকার দুটি চেক নিয়ে আমাকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করছেন।
ব্যবসায়ী মেহেদী আরো বলেন, ফাইভ ওয়ান বিডি নামের একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মালিক সাজ্জাদুর রহমানের শ্যালক ও নিকটাত্মীয়রা। ওই প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সে তিনি গুঁড়া দুধ আমদানি করে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েন। একটি চালান নিয়ে মামলা হয়, আরেকটি ছাড় করাতে করাতে মেয়াদ প্রায় শেষ হয়ে আসে। সব মিলিয়ে তার পুঁজি চলে যায়। পুরো বিষয়টি তারা জানেন। তারপরও তাকে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।