পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের সাথে সড়কপথে যোগাযোগর একমাত্র পথ কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক। এ মহাসড়কের সংস্কার কাজ চলছে কচ্ছপ গতিতে। মহাসড়কটির সংস্কার কাজে বিভিন্ন স্থানে খুঁড়ে রাখায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন চলাচলরত শত শত যানবাহনের চালকসহ অসংখ্য যাত্রীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
বেহাল সড়কে ক্ষণে ক্ষণে যানজটের কারণে ভোগান্তি বেড়েই চলছে। সড়কের ধুলাবালিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। ধুলায় বিপন্ন সড়কে বিশেষ ব্যবস্থায় নিয়মিত পানি না ছিটানো, অপরিকল্পিতভাবে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি ও যেখানে সেখানে নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখার মতো অনিয়ন্ত্রিত কর্মকান্ডের ফলে পুরো সড়কে ধুলিদূষণ নিত্যদিনের ঘটনা। গন্তব্যে পৌঁছার অনিশ্চয়তার শঙ্কা নিয়ে রাত-দিন যাত্রী ও মাল পরিবহনগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কেই কাটাতে হচ্ছে। সড়কের চরবাকর থেকে কোম্পানীগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ৮ কিলোমিটার জুড়ে দু’পাশে কখনো কখনো ৭/৮ ঘণ্টা স্থায়ী জ্যামে শত শত পরিবহন আটকে থাকতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
জানা যায়, গত বছরের জুন মাসে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের কুমিল্লা ময়নামতি ক্যান্টনম্যান্ট থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল অংশ পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার কাজের দরপত্র আহবান করা হয়। উক্ত দরপত্রে হাসান টেকনো বিল্ডার্স ও মেসার্স সোহাগ এন্টারপ্রাইজ ২৩ কোটি টাকার প্রাক্কলন ব্যয় হিসেবে কাজটি পায়। দরপত্রে কাজটি সম্পন্ন করায় ২০১৯ সালের ৯ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাস সময় সীমা বেঁধে দেয়া হলেও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মন্থর গতিতে কাজ চালিয়ে যাবার কারণে চলাচলকারীদের দুর্ভোগের সীমা নেই।
সরেজমিনে দেখা যায়, ধুলায় সরকারি হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতাল, স্কুল-কলেজের কোমলমতী শিক্ষার্থীসহ রোগীদের দুর্ভোগ বাড়িয়েছে চরমে। ভাঙাচোরা সড়কে ধুলার কবলে পড়ে এ সড়কে চলাচলকারীরা সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীরা নাকে হাত দিয়ে চলাচল করতে হয়।
বড়আলমপুর গ্রামের ঠিকাদার নজরুল ইসলাম সরকার দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, কুমিল্লা ময়নামতি থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল পর্যন্ত সড়কের বেহালদশা নতুন নয়, যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। সড়কের বিভিন্ন জায়গায় পিচ উঠা, দেবে যাওয়া, খানাখন্দ, ভাঙাচুড়া, গর্তের কারণে শুধু যানজটই নয়, প্রায়ই সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের কংশনগর বাজার, দেবীদ্বার সদর এলাকার বানিয়াপাড়া মাটিয়া মসজিদ থেকে নিউমার্কেট দৈনিক কাঁচাবাজার, হাসপাতাল গেইট ও থানা গেইট হয়ে জোবেদা খাতুন মহিলা কলেজ পর্যন্ত এবং মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ বাজার এলাকায় নিত্যদিনের যানজট রুটিনে পরিণত হয়ে আছে। এসব এলাকায় সড়ক ও জনপদের জায়গায় অবৈধ স্থাপনা, দৈনিক বাজার, হকার এবং পৌরসভার ইজারায় সিএনজি চালিত অটোরিকশা স্টেশন, ব্যটারিচালিত অটোরিকশা, মাইক্রোবাস, ট্রাক্টরের দখলে থাকায় যানজট থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
দেবিদ্বারে কথা হয় অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক আকসেল খুদ নামের এক ব্যক্তির সাথে; তিনি দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, অস্ট্রেলিয়া থেকে গত কয়েক সপ্তাহ আগে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। এদেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, দরিদ্র মানুষের জীবনচক্র নিয়ে গবেষনা এবং অগ্রগতির পথ খুঁজতে এসেছি। গত কয়েক সপ্তাহে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ট্রাফিক জ্যাম, ঘনপপুলেশন, বেকারত্ব, অনিয়ম-দুর্নীতি, দূষণ পরিবেশ দেখে হতাশ হয়েছি। এদেশের কর্মজীবী মানুষ ট্রাফিক জ্যামের কারণে সময়ের সঠিক ব্যবহার করতে পারছে না। এখন সময় বাঁচাতে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে রওয়ানা হলাম। ওইদিনই নবীনগরের প্রোগ্রাম শেষে আখাউড়া স্থলবন্দর হয়ে তিনি ভারতে চলে যাবেন বলে জানান।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে নিয়মিত চলাচলকারী মাইক্রোবাস চালক কামরুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, এ সড়কটি দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, বিশেষ করে দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের মানুষের একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম। চট্টগ্রাম বন্দরসহ বাখরাবাদ, গোপালনগর, বাঙ্গরা, তিতাস, হবিগঞ্জ প্রভৃতি গ্যাস ফিল্ডের সঙ্গে এবং আখাউড়া বন্দরের সাথে যোগাযোগে সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখছে। ভারী যানবাহনের চাপে সড়কটির বিভিন্ন অংশে দেবে যাওয়ায় যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে ওঠেছে। সড়কটি দ্রæত সংস্কার করা প্রয়োজন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. আলমগীর সরকার বলেন, বিগত এক যুগ ধরে সড়ক ও জনপদ বিভাগের উদ্যোগে সড়কটি কখনো সিক্স লেইন, কখনো ফোরলেইন কখনো টু’লেইনে করার পরিকল্পনার কথা শোনলেও বাস্তবায়নের আশ্বাস ফাইলবন্দি হয়ে আছে। গত কয়েক বছরে একাধিক সার্ভেয়ার টিম, এলও অফিসের কর্মকর্তারা সড়ক ও জনপদ বিভাগ জরিপ, লেভেলিং মেসিন, দূরবীণ দিয়ে সার্ভে করা, জমি অধিগ্রহণের সাইড নির্ধারণ ও পরিকল্পনা, মাপঝোপ সম্পন্ন করতে দেখা গেলেও সবই এখন ফাইলবন্দি। বর্তমানে আপদকালীন সময়ে ময়নামতি থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার এলাকায় সড়ক সংস্কারের কাজ চলছে।
দেবিদ্বার উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবুল কাশেম ওমানী বলেন, ধুলা ও ধোঁয়ার কারণে পরিবেশ বিপদের মুখে পড়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের তেমন কোনো ব্যবস্থা দেখা যাচ্ছে না। পরিবেশ বিষয়ে নাগরিক সচেতনতা তৈরির জন্য সরকার, বেসরকারি সংগঠন ও সচেতন মহলকে আরো দায়িত্বশীল হবার কথা জানান। ন্যাশনাল সার্ভে অ্যান্ড ডিজাইন কনসালটেন্টের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মাহবুব মোরশেদ ভূঁইয়া বলেন, বিকল্প সড়ক তৈরি, সড়কের দু’পাশের জায়গা উদ্ধার এবং সড়কের উপর থেকে বৈদ্যুতিক খুটিগুলো না সরিয়ে সড়ক সংস্কারের কাজ করা ঠিক হয়নি। অপরিকল্পিতভাবে কাজের জন্য দায়সারা কাজ করাটাই তাদের মূখ্য উদ্দেশ্য মনে হচ্ছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হাসান মিল্লাত বলেন, দেবিদ্বার ও বুড়িচংয়ের দুটি স্থানে কাজ চলছে। বায়ুদূষণ রোধে সড়কে নিয়মিত পানি দিচ্ছি। কাজের জন্য কিছুটা দুর্ভোগ তো হবেই।
তবে সড়ক ও জনপদ বিভাগ কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী ড. মোহাম্মদ আহাদ উল্লাহ জানান, জনদুর্ভোগ বিবেচনা মাথায় রেখেই সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের বলেছি ৩ মাসের মধ্যে সংস্কার কাজ সম্পন্ন করতে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারসহ বৈঠকে বসেছিলাম। ওই বৈঠকে সর্বোচ্চ দ্রুততার সাথে কাজ সম্পন্ন করার বিষয়ে বিশেষ করে দেবীদ্বার নিউমার্কেট এলাকার ১ হাজার ১ শত মিটার সড়ক ঢালাইয়ের কাজটি ৩ মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছি। বিকল্প সড়ক থাকলে এক মাসের মধ্যেই কাজটি সম্পন্ন করা সম্ভব ছিল। বিকল্প সড়ক না থাকায় বর্তমানে এক পাশের ১২ ফুট সড়ক সম্পন্ন করা হবে, অপর পাশের কাজ শুরু করার সময় ওই পাশের সড়কের অংশ উন্মোক্ত করে দেয়া হবে। এ সাময়িক সময়ের দুর্ভোগটা মেনে নিতে হবে। আগামী দু’বছরের মধ্যেই সড়কটি ফোর লেন থেকে সিক্স লেনে উন্নিত করা হবে বলে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।