পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বহির্বিশ্বে বাংলাদেশি অবৈধ কর্মীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সউদীসহ অন্যান্য দেশে আকামার চড়া নবায়ন ফি সময় মতো পরিশোধ করতে না পেরে এবং ভিজিট ভিসা ও স্টুডেন্ট ভিসায় গিয়ে প্রতিনিয়তই প্রবাসী কর্মীরা অবৈধ হয়ে যাচ্ছে। এতে জনশক্তি রফতানির খাত হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বায়রার একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র এতথ্য জানিয়েছে। ভিজিট ভিসা স্টুডেন্ট ভিসায় এবং দালালদের মাধ্যমে ঋণ করে বিদেশে গিয়ে অনেকেই অনাহার অনিদ্রায় দিন কাটাচ্ছে। দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পাওয়ায় অভিবাসী কর্মীরা সর্বশান্ত হচ্ছে পদে পদে। ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে অনেক প্রবাসী কর্মীর আত্মীয়-স্বজনরা বাড়ী-ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এক কোটিরও বেশি নারী-পুরুষ বাংলাদেশি কর্মী বিভিন্ন দেশে কাজ করছে। বিদায়ী বছর প্রবাসী কর্মীরা ১৮ দশমিক ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছে। প্রতারণার শিকার শত শত কর্মী বিদেশে গিয়ে অবরুদ্ধ জীবন যাপন করছে।
মধ্যপ্রাচ্যের বৃহৎ শ্রমবাজার সউদী আরবে ফ্রি ভিসার নামে চড়া অভিবাসন ব্যয়ে গিয়ে আকামা নবায়ন করতে না পেরে হাজার হাজার বাংলাদেশি কর্মী অবৈধভাবে পালিয়ে পালিয়ে কাজ করছে। দেশটিতে প্রায় ২০ লাখ বাংলাদেশি কর্মী কঠোর পরিশ্রম করে প্রচুর রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছে। ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ অবৈধ প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর সুযোগ দিতে সউদী সরকার গত বছরের ২২ ডিসেম্বর স্পেশাল এক্সিট প্রোগ্রাম ঘোষণা করেছে। এই কর্মসূচির আওতায় রিয়াদ, জেদ্দা ও দাম্মাম কনস্যুলেটের অধীনে প্রায় ২০ হাজার অবৈধ কর্মী দেশে ফেরার জন্য নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। সউদী কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেলেই এসব অবৈধ কর্মী দেশে ফিরতে শুরু করবে। সউদী আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসের একটি সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।
দ্বিতীয় বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে দীর্ঘ সাড়ে সাত বছর যাবত জনশক্তি রফতানি বন্ধ রয়েছে। দেশটিতে হাতে গোনা কিছু নারী কর্মী যাচ্ছে। বর্তমানে ৮০ হাজার অবৈধ বাংলাদেশি পালিয়ে পালিয়ে কাজ করছে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদ ও প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নাসরিন জাহান এক সপ্তাহের সফরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে গেছেন। তারা দেশটিতে অবস্থানকালে বাংলাদেশি শ্রমবাজার উন্মুক্তকরণে জোর প্রচেষ্টা চালাবেন বলে জানা গেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবৈধ অভিবাসীদের জন্য ঘোষিত সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ গত ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়েছে। দীর্ঘ পাঁচ মাসে প্রায় ৪৫ হাজার অবৈধ বাংলাদেশি কর্মী দেশটিতে বৈধতা লাভ করেছে। সাধারণ ক্ষমার সুযোগ গ্রহণ করে আউট পাশ নিয়ে অনেক অবৈধ কর্মীই দেশে ফিরেছে।
ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রায় ৮০ হাজার প্রবাসী কর্মী অবৈধ হয়ে পড়েছে। এছাড়া কুয়েতে পাঁচ হাজার, ইরানে দেড় হাজার, মিসরে চার হাজার ও দক্ষিণ কোরিয়ায় আড়াই হাজার প্রবাসী কর্মী রয়েছে। যাদের ভিসার মেয়াদ এরই মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে। সরকারি দলের সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে সম্প্রতি জাতীয় সংসদে পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এসব তথ্য জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ অবৈধ প্রবাসীদের বৈধভাবে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর সুযোগ দিতে সউদী সরকার গত বছরে ২২ ডিসেম্বর স্পেশাল এক্সিট প্রোগ্রাম ঘোষণা করেছে। এ প্রক্রিয়ায় যেসব প্রবাসী ফেরত আসবেন, তারা পরবর্তীতে বৈধ ভিসা নিয়ে আবার সউদী আরব যেতে পারবেন। মন্ত্রী জানান, গত ২০১৬-১৮ সাল পর্যন্ত ছয় লাখ বাংলাদেশি কর্মী বৈধ হওয়ার আবেদনের সুযোগ পান। এর মধ্যে চার লাখ কর্মী বৈধতা লাভ করেন। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় বৈধ হওয়ার কোনো প্রক্রিয়া চালু নেই। অবৈধ অবস্থানকারীদের জন্য মালয়েশিয়া সরকার ঘোষিত সাধারণ ক্ষমার আওতায় গত পাঁচ মাসে প্রায় ৫২ হাজার বাংলাদেশি দেশে ফিরে এসেছেন। এছাড়া মালয়েশিয়ায়ও বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী অবৈধ হয়ে পালিয়ে পালিয়ে কাজ করছে। দেশটির পুলিশি অভিযানও অব্যাহত রয়েছে। মাঝে মধ্যেই অবৈধ বাংলাদেশিরা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হচ্ছে।
কথিত ফ্রি ভিসার নামে এবং ভিসা ট্রেডিংয়ের বেড়াজালে পড়ে বিপুল সংখ্যা প্রবাসী কর্মী সর্বশান্ত হচ্ছে। জনশক্তি আমদানিকারক দেশগুলো অবৈধ অভিবাসী কর্মীদের আর ঠাঁই দিতে চাচ্ছে না। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি লেবানন থেকে অবৈধ বাংলাদেশি কর্মীরা স্বেচ্ছায় দেশে ফিরতে শুরু করবে। লেবাননেও প্রায় ২০ হাজার অবৈধ নারী-পুরুষ পালিয়ে পালিয়ে কাজ করছে। বৈরুতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি দেশটি থেকে সর্বমোট ৬টি ফ্লাইট যোগে ৪৭০ জন অবৈধ পুরুষ-নারী কর্মী স্বেচ্ছায় দেশে ফিরবে। লেবাননস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব আব্দুল্লাহ আল মামুন গতকাল সোমবার এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। দূতাবাসে নিবন্ধিত আরো আড়াই হাজার অবৈধ নারী-পুরুষ কর্মী দেশে ফিরতে অপেক্ষা করছে। দেশটিতে বর্তমানে দেড় লক্ষাধিক নারী-পুরুষ কাজ করছে। এদের মধ্যে প্রায় ২০ হাজার অবৈধভাবে কাজ করছে। এসব অবৈধ কর্মীদের বৈধতা লাভের কোনো সুযোগ সৃষ্টি হয়নি।
জনশক্তি রফতানির অন্যতম দেশ ব্রুনাইয়ে প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীরা দালাল চক্রের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। এক শ্রেণির দালাল চক্রের হাতে দেশটির বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৫ হাজার কর্মী অবরুদ্ধ অবস্থায় অনাহার অনিদ্রায় দিন কাটাচ্ছে। এসব কর্মীদের কোনো কাজ দিতে পারছে না দালাল চক্র। ভাড়া করার অস্বাস্থ্যকর ঘর থেকে তাদেরকে বের হতে দেয়া হচ্ছে না। গতকাল ব্রুনাই দারুস সালামস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রথম সচিব জিলাল হোসেন এসব তথ্য জানিয়েছেন।
ব্রুনাই থেকে টাঙ্গাইল জেলার নজরুল ইসলাম ও মোফাজ্জল গতকাল কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, মধুপুর থানার দালাল সাইফুল ইসলাম ঢাকার এক কুখ্যাত দালালের মাধ্যমে টাঙ্গাইলের সুরুজ, খাদেমুল, ফজল, ফরিদকে জনপ্রতি ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা করে ব্রুনাইতে নিয়ে প্রায় ৮/৯ মাস যাবত কোনো কাজ দিতে পারেনি। প্রতারণার শিকার এসব কর্মীদের ব্রুনাইতে ফেলে দালাল সাইফুল দেশে পালিয়ে গেছে। ব্রুনাই হাইকমিশনে দালালদের বিরুদ্ধে শত শত অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
বায়রার ইসির অন্যতম সদস্য গোলাম মাওলানা রিপন প্রবাসে অবৈধ কর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বলেন, বন্ধ শ্রমবাজারগুলো দ্রুত উন্মুক্ত করতে হবে। সরকার ও বায়রার যৌথ উদ্যোগে নতুন নতুন শ্রমবাজার চালু এবং বন্ধ বাজার উন্মুক্ত করার বাস্তবমুখী উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বলেন, বিদেশে গিয়ে প্রতারণার শিকার এবং আকামার ফি পরিশোধ করতে না পেরে অনেকেই অবৈধ হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বিদেশে স্টুডেন্ট পাঠানোর নামে অনেকেই মানবপাচারের সাথে জড়িত। বিমান বন্দরের ইমিগ্রেশন ও বিদেশে স্টুডেন্ট প্রেরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নজরদারির আওতায় আনতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে রিপন বলেন, প্রতি বছর শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। বিদেশে অবৈধ কর্মীর সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকলে বৈধ কর্মী প্রেরণের পথরুদ্ধ হবার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স রেকর্ড পরিমাণ বাড়ছে। ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৪৮ কোটি ৩৭ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে প্রবাসী কর্মীরা। ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এক হাজার ৬৬৩ দশমিক ৯০ কোটি (১৬.৬৪ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। সবমিলিয়ে বিদায়ী বছরের ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত এক হাজার ৮১২ দশমিক ২৭ কোটি (১৮.১২ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছে প্রবাসী কর্মীরা। এই অংক ২০১৮ সালের রেমিট্যান্সের চেয়ে ১৬ দশমিক ৩০ শতাংশ বেশি। এর আগে এক বছরে এতো রেমিট্যান্স বাংলাদেশে আসেনি।
ফিমেল ওয়ার্কার রিক্রুটিং এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ফোরাব)-এর সভাপতি টিপু সুলতান গতকাল সোমবার ইনকিলাবকে বলেন, দালাল চক্রের মাধ্যমে অনেকেই ভিজিট ভিসা স্টুডেন্ট ভিসায় বিদেশে গিয়ে অবৈধ হয়ে পালিয়ে পালিয়ে কাজ করছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে এক শ্রেণির প্রবাসী বাংলাদেশিরা ভিসা ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে চড়া দামে ফ্রি ভিসার নামে কর্মীদের বিদেশে নিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে। আসলে ফ্রি ভিসা বলতে কিছু নেই। এসব কর্মীরা বিদেশে গিয়ে কাজ না পেয়ে অবৈধ হয়ে যাচ্ছে। ফোরাব সভাপতি অবৈধ ভিসা ট্রেডিং বন্ধ এবং দালাল চক্রের মাধ্যমে বিদেশে গমনে নিরুৎসাহিতকরণে সরকারকে বাস্তবমুখী উদ্যোগ নেয়ার জোর দাবি জানান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।