Inqilab Logo

শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

কারোনাআতঙ্ক সত্ত্বেও চীনারা ফিরেছে কর্মক্ষেত্রে

সাহস যোগাতে জনগণের মাঝে প্রেসিডেন্ট শি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০০ এএম

প্রাণঘাতী রোগ করোনাভাইরাসের আতঙ্কে কোটি কোটি ডলারের ক্ষতি সত্তে¡ও বন্ধ থাকার পর কলকারখানাগুলো গতকাল থেকে খুলেছে, চীনারা চান্দ্র্য নববর্ষের বর্ধিত ছুটি শেষে কাজে ফিরতে শুরু করেছেন। তাদের সাহস যোগাতে ও সতর্কতার বার্তা দিতে এদিন রাস্তায় নেমে আসেন দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। বেশ কয়েক সপ্তাহ পর গতকাল তাকে দেখা গেছে বেইজিংয়ের পার্শ্ববর্তী চাওয়াং জেলার একটি রাস্তায় জনগণের সাথে কথা বলতে, বিভিন্ন ভবনের জানালা দিয়ে উঁকি মারা লোকজনকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানাতে। তিনি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গৃহিত ব্যবস্থা প্রত্যক্ষ করেন ও চিকিৎসাকর্মীদের তাদের কর্মকান্ডের জন্য ধন্যবাদ জানান।

এর আগে গত রোববার দেশটিতে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা আগের সব দিনকে ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিষেধকবিহীন এই ভাইরাসে এদিন মারা গেছেন অন্তত ৯৭ জন। গত ৩১ ডিসেম্বর উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৯১০ জন। এর মধ্যে চীনের ভূখন্ডেই ৯০৮ এবং ফিলিপাইন ও হংকংয়ে ১ জন করে। তারা উভয়েই চীনা নাগরিক এবং সেখান থেকেই এসেছিলেন। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গত ৩০ জানুয়ারি বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এর আগেই ভাইরাসের উৎসস্থল হুবেই প্রদেশ অবরুদ্ধ ঘোষণা করেছিল চীনের কেন্দ্রীয় সরকার। ছয় কোটি বাসিন্দার প্রদেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ২৯ হাজার ৬৩১ জন। আর বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪১ হাজার ১৭১ জন।
এর মধ্যেই গতকাল থেকে কাজে ফিরতে শুরু করেছে চীনারা। দেশটির বেশ কিছু অঞ্চলে অফিস-আদালত, কল-কারখানা আংশিক চালু হয়েছে। জানুয়ারির শেষের দিকে চীনা নববর্ষের ছুটি শেষে সেগুলো আবার চালু হওয়ার কথা থাকলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় ছুটি আরও ১০ দিন বাড়ানো হয়। বর্ধিত ছুটি শেষে সোমবার থেকে আবার কর্মচাঞ্চল্য শুরু হয়েছে সেখানে।

তবে দেশটিতে এখনও অসংখ্য কর্মক্ষেত্র বন্ধ। কিছু কিছু লোক বাসায় বসেই অফিসের কাজ করছেন। দেশটির অন্যতম ব্যস্ত শহর বেইজিংয়ের রেল-মেট্রোরেলগুলো প্রায় যাত্রীশূন্য। দিনের শুরুতে রাস্তায় অল্প কিছু পথচারী দেখা গেছে, যাদের সবারই মুখে মাস্ক পরা।

গুয়াংডং, আনহুই, ঝেজিয়াং, হেলংজিয়াং, জিয়াংসু, শাংডং, হেবেই, জিয়াংজি, মধ্য মঙ্গোলিয়াসহ সাংহাই, চংকিংয়ের মতো প্রদেশ বা অঞ্চলগুলোতে ফেব্রæয়ারি মাসজুড়ে সব স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকবে।
রোবববার করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ২০০২-০৩ সালে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া সার্সকেও (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) ছাড়িয়ে গেছে। সে সময় সার্স ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বের ২৪টিরও বেশি দেশে মোট ৭৭৪ জনের মৃত্যু হয়, আক্রান্ত হয় ৮ হাজার ৯৮ জন।

এখন পর্যন্ত বিশ্বের অন্তত ২৮টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে নভেল করোনাভাইরাস। চীন ছাড়া এসব দেশ ও অঞ্চলে ৩৩০ জনের বেশি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। চীনের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আক্রান্তের সংখ্যা সিঙ্গাপুরে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৪৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন একজন বাংলাদেশিও।

সিএনবিসি জানিয়েছে, ক্রমবর্ধমান করোনভাইরাস সঙ্কট সত্তে¡ও গতকাল সকালে চীনের কারখানাগুলি আবারও চালু করা হয়েছে। অনেক কারখানা, বিশেষত প্রযুক্তি শিল্পগুলিতে ‘সঙ্কট মোডে’ পৌঁছা ব্যবসা আর বন্ধ থাকতে দেয়া যায় না। যদিও অনেক কর্মকর্তার উদ্বেগ রয়েছে যে কাজ করে ফিরলে করোনাভাইরাস সংক্রামিত ব্যক্তির সংখ্যা তাৎক্ষণিকভাবে বৃদ্ধি পাবে, যা ইতিমধ্যে উদ্বেগজনক হারে ছড়িয়ে পড়েছে।

এশিয়ার হার্ডওয়্যার এবং সোর্সিং পণ্য তৈরির বিষয়ে স্টার্ট আপগুলিকে পরামর্শ দিতে বিশেষজ্ঞ সিলিকন ভ্যালি ফার্মের প্রতিষ্ঠাতা আন্ড্রে নিউম্যান-লোরেক স্বীকার করেছেন যে, তার অনেক ক্লায়েন্ট কীভাবে করোনভাইরাস সঙ্কট তাদের ব্যবসায়ের উপর প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
উদাহরণস্বরূপ, ফেসবুক স¤প্রতি ঘোষণা করেছে যে, করোনাভাইরাস কীভাবে উৎপাদনকে প্রভাবিত করছে তার আতঙ্কে তারা তাদের ওকুলাস কোয়েস্ট ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেটগুলি শিডিউল তৈরি নাও করতে পারে। নিউমান-লোরেক যোগ করেছেন যে, কিছু সংস্থা তাদের সরবরাহের লাইনগুলি অন্য দেশে সরানোর পরিকল্পনাও করছে।

ডিএইচএল সমর্থিত লজিস্টিক রিস্ক-ম্যানেজমেন্ট সংস্থা রেসিলিয়েন্স ৩৬০০-এর ঝুঁকি বিশ্লেষক শেরিনা কামাল বলেন, সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় ইতোমধ্যে অর্থনীতিতে বিশ্বব্যাপী প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। কামাল বলেন, ‘চীনের এক অঞ্চল থেকে আগত প্রভাব একেবারেই নজিরবিহীন। ‘আমরা এর আগে কখনও দেখিনি’। সূত্র : রয়টার্স, গার্ডিয়ান।



 

Show all comments
  • Mohammed Mokibur Rahman ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১:২৭ এএম says : 0
    Deep condolences to their departed soul!
    Total Reply(0) Reply
  • MH Khan ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১:২৮ এএম says : 0
    ক‌রোনা কোথায় নি‌য়ে যা‌বে চীনা‌দের ও বি‌শ্বের অন‌্যদের সেটা একমাত্র সৃ‌স্টিকর্তা জা‌নেন।ক‌রোনা ভাইরা‌সের প্রতি‌ষেদক না অা‌বিস্কৃত হওয়া পর্যন্ত চী‌নের অ‌ধিবাসীসহ বি‌শ্বের মানব সম্প্রদায় নিরাপদ নয়।
    Total Reply(0) Reply
  • MD Shahidul Islam ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১:২৮ এএম says : 0
    হে আল্লাহ্ আপনি আমাদের সকল বালাহ্ মছিবত আজাব গজোব হইতে হেফাজত করেন আমিন
    Total Reply(0) Reply
  • জান্নাতুল নাঈম মনি ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১:২৯ এএম says : 0
    আমাদের দেশে এ ভাইরাস আসলে কি হবে তা ভাবতেই পারছি না!!! আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন, সঠিক বুঝ দান করুন
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ ওয়াহেদুল ইসলাম সেতু ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১:৩০ এএম says : 0
    আল্লাহ যেন বাংলাদেশ কে করোনা ভাইরাচ এর থেকে রক্ষা করে আমিন
    Total Reply(0) Reply
  • Robi Islam ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১:৩১ এএম says : 0
    আগে শুনতাম পাপী মরে ৭ ঘর নিয়ে। এখন দেখি চিন মরবে সারা পৃথিবী নিয়ে, কি এমন হারাম খাবার খাইলিরে ভাই আমরাও বিপদে আছি। আল্লাহ আমাদের এই বিপদ থেকে মুক্তি দান করো।
    Total Reply(0) Reply
  • Nasimahmed Ahmed ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১:৩১ এএম says : 0
    ধর্মিয় স্বাধীনতা চীনের এ দুর্যোগ মোকাবেলায় সহায়ক ভুমিকা রাখতে পারে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ