পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
টানা দশ বছরের বেশি সময় সড়কের অবস্থা বেহাল। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ এখানে আসে না। বেচাকেনা বলতে কিছুই নেই। সংসারের খরচ আর সন্তানের পড়ালেখা চালিয়ে নিতে ছয় গন্ডা জমি বিক্রি করে দিয়েছি। ব্যবসা ছেড়ে যেতেও পারছি না। এভাবে কষ্টের কথা জানালেন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের মালিক শাহাদাত হোসেন।
‘ইলেক্ট্রনিক্স প্লাজার’ মালিক মোহাম্মদ সুমন বলেন, ভবনটি নিজের তাই ভাড়া দিতে হয় না, তা নাহলে অনেক আগে ব্যবসা গুটিয়ে এলাকা ছাড়তে হতো। সড়কে টানা অচলাবস্থায় ক্রেতা নেই। শাহাদাত হোসেন আর মোহাম্মদ সুমনের মতো চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাট, সিঅ্যান্ডবি, কাপ্তাই রাস্তার মাথা হয়ে কালুরঘাট সড়কের দুপাশের কয়েক হাজার ব্যবসায়ীর অবস্থা এখন নাজুক। সড়কের আশপাশের ১৫ লক্ষাধিক বাসিন্দা নিত্যদুর্ভোগ আর বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন।
বিগত ২০১০ সালে কর্ণফুলী সেতুতে যানবাহন চলাচল শুরু হলে এ সড়কটি অবহেলিত হয়ে পড়ে। বহুল আলোচিত বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার নির্মাণ এবং এরপর ২০১৬ সালে চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্ণফুলী ও মদুনাঘাট পানি শোধনাগার প্রকল্পের পাইপ লাইন স্থাপনের জন্য খোঁড়াখুুঁড়িতে মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক দীর্ঘদিন অচল হয়ে আছে। তার আগে সড়ক সংস্কারের অভাবে আরও কয়েক বছর প্রায় অচল ছিলো।
দক্ষিণ চট্টগ্রামের বোয়ালখালীসহ উত্তর চট্টগ্রামের বিশাল এলাকার সাথে বন্দরনগরী এবং দক্ষিণ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবানের যোগাযোগের সেতুবন্ধন এ সড়কের আশপাশে রয়েছে অসংখ্য শিল্পকারখানা। কালুরঘাট শিল্পাঞ্চল ছাড়াও আছে সরকারি-বেসরকারি কল-কারখানা, স্কুল, কলেজ, মাদরাসা। চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা ছাড়াও আশপাশের এলাকায় গড়ে উঠেছে অনেক আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন। চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-চুয়েটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদেরও যন্ত্রণায় এ সড়ক পাড়ি দিতে হচ্ছে।
নানা জটিলতা কাটিয়ে দীর্ঘদিন পর ৭১ কোটি টাকায় সড়ক সংস্কারে কাজ শুরু করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। কাজে বেশ গতিও আছে। তবে একই সড়কে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএ’র পানিবদ্ধতা নিরসনে মেগাপ্রকল্পের কাজও চলছে। দুই সংস্থার কাজে সমন্বয় না ঘটলে সংস্কার কাজ ব্যাহত এবং জনদুর্ভোগ প্রলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
গত ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনে উপ-নির্বাচনে এ সড়ক সংস্কারের বিষয়টি ছিলো অন্যতম ইস্যু। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির দুই প্রার্থী নির্বাচিত হলে দ্রæত সড়ক সংস্কারের ওয়াদা করেন। এ প্রসঙ্গে এ আসনে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, নির্বাচনী অঙ্গিকার পালনে আমি কাজ শুরু করেছি। সড়ক সংস্কার করছে সিটি কর্পোরেশন, মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সাথে আমি কথা বলেছি এবং নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখছি। মেয়র আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন দ্রæত কাজ শেষ হবে।
সড়ক ঘুরে দেখা যায়, বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার থেকে সড়কের একাংশে কিছুটা সংস্কার করে যানবাহন চলাচল করছে। চার লেনের সড়কের বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার থেকে পুরাতন চান্দগাঁও থানা পর্যন্ত একপাশে চলছে সিডিএ’র মেগাপ্রকল্পের কাজ। সড়কের পাশে বড় নালার সংস্কার ও রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ চলছে। সড়কজুড়ে রাখা হয়েছে ইট, বালু, মাটি ও পিলার। ফলে এ অংশে সংস্কার কাজ বন্ধ আছে। বন্ধ সড়কের পাশের ভবনগুলো দৃশ্যত পরিত্যক্ত ভবনের রূপ নিয়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্রেতাদের নেই আনাগোনা। বাসাবাড়ির ভাড়াটেদের অনেকে বাসা ছেড়ে গেছেন। সড়কের অন্য অংশে যানবাহন চলাচল করছে। তাতে তীব্র যানজট সেখানে স্থায়ী হয়ে গেছে। সড়কের বন্ধ অংশের পাশে বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল। সেখান থেকে দক্ষিণ চট্টগ্রামে ১৯টি রুটে বাস, মিনিবাস চলাচল করে। সড়কের একপাশ বন্ধ থাকায় টার্মিনাল থেকে আসা যাওয়ার পথে বাসগুলোকে তীব্রজটের মুখে পড়তে হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, সকাল এবং বিকালে যানজট কয়েক কিলোমিটার এলাকায় বিস্তৃত হচ্ছে। এর প্রভাবে কালুরঘাট থেকে বহদ্দারহাট হয়ে মুরাদপুর পর্যন্ত যানজট হচ্ছে। সড়কে উড়ছে ধুলাবালি। আশপাশের ভবন, দোকানপাটসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ধুলাবালির আস্তর জমে আছে। সড়কের পাশে স্বাধীনতা পার্কটিতে নেই কোন কোলাহল। দুর্ভোগের কারণে কেউ ওই পার্কমুখী হচ্ছে না। আবাসিক এলাকায় বাসিন্দাদের নিত্যদুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক-উত্তর) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ ইনকিলাবকে বলেন, দীর্ঘদিন সড়কের একপাশ বন্ধ থাকায় যানবাহনের চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। একটু এদিক সেদিক হলেই যানজট তীব্র আকার ধারণ করছে। এলাকার পরিবেশও দূষিত হয়ে পড়ায় লোকজনকে চরম দুর্ভোগের মুখোমুখী হতে হচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়েও অমানবিক পরিশ্রম করছে। যারা উন্নয়ন কাজ করছেন তারা একটু সচেতন হলে এসব দূষণ এড়িয়ে পরিবেশটা আরও সুন্দর করা যায় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সড়ক সংস্কার কাজ দ্রæত এগিয়ে চলছে জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু সালেহ ইনকিলাবকে বলেন, আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে সড়কে আর কোন ধুলা থাকবে না। প্রাথমিক কার্পেটিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে। প্রায় ছয় কিলোমিটার সড়ক ১২টি লটে ভাগ করে ১২জন ঠিকাদারকে দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। নগরীর পোর্ট কানেকটিং সড়ক ও আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে একক ঠিকাদারের বদলে বেশি ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সবাই সমানতালে কাজ করছে, ইতোমধ্যে ৬০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। সিডিএ’র মেগাপ্রকল্পের কাজের জন্য সড়কের একাংশে কাজ করা যাচ্ছে না স্বীকার করে তিনি বলেন, আমরা তাদের সাথে কথা বলেছি, আশা করি সমন্বয়ের মাধ্যমে দ্রæত কাজ শেষ করা যাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।