পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতু এখন বহুমুখী দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কর্ণফুলী নদীর ওপর প্রায় শত বছর আগে নির্মিত সেতুটি জরাজীর্ণ। অনিরাপদ লক্কর-ঝক্কর সেতুতে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। ৭০০ গজ লম্বা সেতুর প্রায় পুরোটাই গর্তে ভরা। ভেঙে গেছে দুই পাশের ডেক, লোহার প্রাচীর। গর্তে যানবাহনের চাকা আটকে নিত্য যানজট হচ্ছে একমুখী এই সেতুতে। এতে মহানগরীর একাংশ ছাড়াও বোলায়খালী, পটিয়া উপজেলাসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের লাখো মানুষকে নিত্য দুর্ভোগের মুখোমুখী হতে হচ্ছে।
তিন দশকের বেশি সময় ধরে দুর্ভোগই ওই অঞ্চলের মানুষের নিত্যসঙ্গী। জোড়াতালি দিয়ে সেতুটি সচল রাখা হচ্ছে। তার উপর এই সেতুর উপর দিয়েই চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারমুখী রেল চলাচলেরও আয়োজন চলছে। সেখানে একটি নতুন সেতু নির্মাণের গণদাবি পূরণ হচ্ছে না। দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে উঠে গেলেও গুরুত্বপূর্ণ এই এলাকা একটি সেতুর অভাবে পিছিয়ে পড়ছে। থমকে গেছে দুই পাড়ের উন্নয়ন, বিনিয়োগ, নগরায়ন ও শিল্পায়ন।
গণদাবির মুখে কয়েক বছর আগে রেল কর্তৃপক্ষ সেতুটির পাশে দুই লেনের সড়ক কাম ডুয়েল-গেজ সিঙ্গেল ট্র্যাক রেল সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। এজন্য প্রকল্পের ড্রইং-ডিজাইন, বাজেট এবং মেয়াদও নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে রেল কর্তৃপক্ষের এই ডিজাইনে নদী থেকে সেতুর উচ্চতা ৭ দশমিক ৬ মিটার করলে তাতে আপত্তি জানায় অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ। তারা নদী থেকে সেতুর উচ্চতা ১২ দশমিক ২ মিটার করার পরামর্শ দেয়। তাতেই আটকে যায় নতুন সেতুর সব কার্যক্রম। নতুন করে ফিজিবিলিটি স্টাডি এবং নকশা প্রণয়ন চলছে। তবে এসব কাজ শেষ করে কবে নাগাদ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হবে তা অনিশ্চিত। যদিও স্থানীয় সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমদের প্রত্যাশা চলতি বছরেই সেতুর কাজ শুরু করা যাবে।
৯২ বছর আগে ১৯৩০ সালে ট্রেন চলাচলের জন্য সেতুটি চালু করা হয়। পরে ১৯৫৮ সালে সবরকম যানবাহন চলাচলের যোগ্য করে সেতুটির বর্তমান রূপ দেয়া হয়। বৃটিশ শাসনামলের এই সেতুটিতে রয়েছে ছয়টি ব্রিক পিলার, ১২টি স্টিলের পিলার ও ১৯টি স্প্যান। একমুখী সেতুটিতে ট্রেনের পাশাপাশি গণ ও পণ্যপরিবহনসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল করছে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহানগরী চট্টগ্রামের সাথে দক্ষিণ চট্টগ্রামের কয়েকটি এলাকার যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এই সেতুটি। গত তিন দশকে সেতুর উপর যানবাহনের চাপ কয়েকগুণ বেড়েছে। নদীর দু’পাড়েই রয়েছে শিল্প কারখানা। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এ সেতু দিয়ে চলাচল করছে।
সেতুর একপাশে গাড়ি উঠলে অন্যপাশ বন্ধ থাকে। ফলে নিত্য দীর্ঘ যানজটের ভোগান্তি চলছে। প্রায়ই সেতুর গর্তে যানবাহনের চাকা আটকা পড়ছে। তখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা দু’পাড়ে তীব্র যানজট হচ্ছে। যানবাহনের চাপে দুলতে থাকে সেতুটি। ঝুঁকি নিয়েই চলছে যানবাহন। ১৯৯১ সাল থেকে প্রতিটি নির্বাচনে প্রধান ইস্যু হয় সেখানে একটি নতুন সেতু নির্মাণের দাবি। প্রার্থীরা সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতিও দেন। তবে সে প্রতিশ্রুতি এখনো আলোর মুখ দেখেনি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সেতুর অভাবে নগরীর চান্দগাঁও, মোহরা এবং জেলার বোয়ালখালী, পটিয়াসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের একাংশের বাসিন্দারা উন্নয়ন বিনিয়োগসহ নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কর্ণফুলী সেতুর কারণে আনোয়ারা, পটিয়া, চন্দনাইশসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামে ব্যাপক উন্নয়ন চলছে। সেখানে নগরায়নের পাশাপাশি নতুন নতুন বিনিয়োগে শিল্প কারখানা গড়ে উঠছে, হচ্ছে কর্মসংস্থানের সুযোগ। কিন্তু উল্টো চিত্র বোয়ালখালীসহ এই অংশে। মহানগরীর কাছে থেকেও শুধুমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে পিছিয়ে পড়ছে এ এলাকা। অথচ এই এলাকায় উন্নয়ন বিনিয়োগের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার এমন বেহাল দশার কারণে নগরীর চান্দগাঁও, মোহরাসহ বিরাট এলাকাও অবহেলিত। সেখানে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি।
তবে বর্তমান সরকার সেখানে একটি নতুন সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। দক্ষিণ কোরিয়া ও বাংলাদেশের যৌথ অর্থায়নে এক হাজার ১৬৪ কোটি ৯৮ লাখ ৮৯ হাজার টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণের চূড়ান্ত নকশা প্রণয়ন করা হয়েছিল। ২০১৮ সালের মার্চে কাজ শুরু করে ২০২৩ সালে কাজ শেষ হওয়ার কথাও ছিল। কিন্তু ২০১৮ সালে একনেক বৈঠকে নকশায় গলদ ধরা পড়ার পর কার্যত সেই উদ্যোগ থেমে যায়।
এদিকে নতুন সেতু নির্মাণ কার্যক্রম বিলম্বিত হওয়ায় কালুরঘাট পুরাতন সেতু মেরামতের জন্য বুয়েটের দ্বারস্থ হয় রেলওয়ে। এ সেতুর উপর দিয়েই কক্সবাজারমুখী ট্রেন চলাচল করবে। এ লক্ষ্যে বিদ্যমান সেতুটি মেরামতের জন্য বুয়েটকে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পেতে আবেদন করলে তাতে বুয়েট সাড়া দেয়। ইতোমধ্যে বুয়েটের তিন সদস্যের বিশেষজ্ঞ টিমের সদস্যরা কালুরঘাট সেতু সরেজমিন পরির্দশন করে গেছেন।
বোয়ালখালী-চান্দগাঁও আসনের সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমেদ গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, কালুরঘাটে নতুন সেতু নির্মাণ চান্দগাঁও বোয়ালখালীসহ এ অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সেতু নির্মাণে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রথম নকশায় সেতুর উচ্চতা কিছুটা কম থাকায় দ্বিতীয়বারের মত ফিজিবিলিটি স্টাডি ও নকশা প্রণয়নের কাজ চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, সার্বিক অবস্থা নিয়ে আগামী সপ্তাহে সংশ্লিষ্টদের সাথে বৈঠকের কথা রয়েছে। তিনি আশাবাদী নকশা প্রণয়ন শেষ হলে খুব দ্রুত একনেকে প্রকল্পটি পাস করে এ বছরের মধ্যেই কাজ শুরু করা যাবে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সেতু) আহসান জাবির বলেন, আগামী মে মাসের মধ্যে ফিজিবিলিটি স্টাডি রিপোর্ট এবং সেইসাথে সংশোধিত নকশা আমাদের কাছে জমা দেয়ার কথা রয়েছে। প্রতিবেদন পেলেই সেটি একনেক সভায় পেশ করা হবে। অন্যদিকে সেতুটি মেরামতের জন্য বুয়েট বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেয়া হবে। পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়াও এগিয়ে চলছে। সংস্কারের মাধ্যমে সেতুর সক্ষমতা বাড়ানো হবে। সেইসাথে নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা হবে। তবে সেতুটিকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে নিয়মিতই সংস্কার কাজ চলছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।