দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
হযরত ইব্নে আব্বাছ (রাঃ) হতে বর্ণিত ঃ আল্লাহ্ তা’আলা ঈস (আঃ) ওহী মারফত আদেশ পাঠালেন, মোহাম্মদের প্রতি তুমি ঈমান গ্রহণ করবে এবং নিজ উম্মতকে আদেশ দিবে, তারা যেন (বর্তমানে তোমার মুখে শুনে এবং পরবর্তীতে তাঁর আবির্ভাব হলে) তাঁর প্রতি ঈমান আনে। মোহাম্মদ (সাঃ) এর বিকাশ সাধন (হচ্ছে) না হলে আদমকেই সৃষ্টি করতাম না, বেহেশ্ত ও সৃষ্টি করতাম না, দোযখ ও সৃষ্টি করতাম না।” (যোরকানী-১-৪৪) বই ঃ মীলাদে-বে-নযীর আল্লামা মুফতী মো: দুবাগী
হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তা’আলা বলেন, “হে আমার দোস্ত হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) তোমাকে সৃষ্টি করা যদি আমার উদ্দেশ্য না হ’ত তবে আমি সৃষ্টি জগত সৃষ্টি করতাম না”। হযরত সালমান ফারসী (রঃ) বর্ণনা করেছেন ঃ “একদা হযরত জিবরাঈল (আঃ) নবী করীম (সাঃ) এর নিকট এসে বললেন, আল্লাহ তা আলা সংবাদ পাঠিয়েছেন যে; ইব্রাহীম আমাকে দোস্ত বানিয়েছিলেন, আমি তা গ্রহণ করেছিলাম; কিন্তু আমি স্বয়ং আপনাকে দোস্ত বানিয়েছি। আমার নিকট আপনার চেয়ে সম্মানী কোন কিছু সৃষ্টি করিনি। আমি শপথ করে বলছি; বিশ্বজগত এবং তার মধ্যকার সবকিছু আমি এ উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছি যে, তাদের নিকট আপনার গৌরব এবং আমার নিকট আপনার মর্যাদা কতটুকু তা প্রকাশ করব। আপনার বিকাশ সাধনের ইচ্ছা যদি আমার না হ’ত তবে আমি বিশ্ব জগতকে সৃষ্টি করতাম না।” (যোরকানী-১৬৩; বুখারী)
নবী ও ওলীদের প্রতি মাওলানা রুমী (রঃ) এর ভক্তি ছিল অপরিসীম। মস্নবীতে তিনি বলেছেন ঃ মোহাম্মদের (দঃ) সঙ্গে পবিত্র প্রেম একীভূত ছিলো। এ প্রেমের দরুনই আল্লাহতায়ালা “লাওলাকা লামা খালাক্তুল আফ্লাক” (অর্থ, আপনাকে সৃষ্টি না করলে আমি কিছু সৃষ্টি করতাম না ফরমায়েছেন।” (বই ঃ মাওলানা রুমীর আত্ম দর্শন)
হযরত সেখ সাদী (রঃ) ও এ হাদীস বর্ণনা করেছেন ঃ আপনার সম্মান ও ইজ্জত বুঝে নেবার জন্য “লাওলাকা” বলা যথেষ্ট। অর্থাৎ আল্লাহ্-তায়ালা বলেছিলেন “হে হাবীব! আপনি যদি সৃষ্টি না হতেন তবে আমি কোন কিছুই সৃষ্টি করতাম না। আপনাকে সৃষ্টি করার করণেই সমস্ত বিশ্ব জগত সৃষ্টি করেছি।” (বই নূরে মোহাম্মদী (দঃ) মাওলানা কারামত আলী জৌনপুরী (রঃ))।
একদা হযরত জিব্রাঈল (আঃ) হযরত রাসূলে করীম (দঃ) এর নিকটে বর্ণনা করেন-ইয়া রাসূল্লাল্লাহ! আমি আমার জন্মের পর এক হাজার বৎসর পর্যন্ত একই ভাবে দাঁড়িয়ে ছিলাম, কিন্তু কি যে করবো, তা কিছুই স্থির করতে পারি নাই। এমন সময় আল্লাহ্-তা’য়ালা আমাকে ‘হে জিব্রাঈল! বলে ডাক দিলেন। তখন আমার নাম যে ‘জিব্রাঈল’ তা আমি বুঝতে পারলাম। আমি- ‘লাব্বায়েক-লাব্বায়েক’ বলে উত্তর দিলাম। তখন আল্লাহ্-তায়ালা বললেন; “হে জিব্রাঈল। “তুমি আমার পবিত্রতা বর্ণনা কর, আমিই তোমাকে সৃজন করেছি।” সৃষ্টি কর্তার জেকের ও প্রশংসা করতে করতে আমার যখন দশ হাজার বৎসর কেটে গেল; তখন, ‘লাওহে মাহ্ফুজে’ লিখা ঃ “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ কলেমাটি দেখে পাঠ করলাম এবং প্রতিপালকের নামের সাথে এটা কার নাম বিজড়িত রয়েছে তা চিন্তা করলাম। তখন আল্লাহর তরফ হতে প্রত্যাদেশ হ’ল - “লাওলাকা-লামা খালাক্তুল আফ্লাক” - অর্থাৎ আমি এই প্রিয় নবীকে যদি সৃষ্টি না করতাম; তাহলে কোন কিছুই সৃজন করতাম।” হযরত জিব্রাঈল বললেন- “হে আল্লাহর হাবীব! আমি, আপনার এই উচ্চ মর্যাদার কথা শুনে, আবার আমি দশ হাজার বৎসর পর্যন্ত কেবল আপনার উপর দরুদ শরীফ পড়তে থাকি। ঐ দরুদ পড়ার বরকতে আমার অন্তঃকরণ অতি সমুজ্বল হয়ে যায় এবং হৃদয়ে এক অপূর্ব শান্তি লাভ করি।” (বই ঃ মজমুয়ে ওয়াজ শরীফ; মৌ: আয্হার আলী বখ্তিয়ার।)
নিখিল সৃষ্টির মূলে যদি কোন উদ্দেশ্য নিহিত থেকে থাকে; তবে সে হচ্ছে; আল্লাহরই আত্ম প্রকাশের উদ্দেশ্য। আল্লাহ তাঁর এ সৃষ্টি লীলার মধ্যে দিয়ে নিজেকে ব্যক্ত করতে চান। আপন মহিমার অন্তলীন হয়ে থাকলে কে তাঁকে চিন্ত? শুধু স্রষ্টা থাকলেই হয় না, দ্রষ্টাও চাই, নতুবা স্রষ্টার সৃষ্টি সার্থক হবে কেন? দ্রষ্টা না থাকলে কে স্রষ্টার মহিমার গুনগান করবে?
উপযুক্ত গুণীর কদর করার জন্য তাই প্রয়োজন হয় উপযুক্ত গুণ গ্রাহীর। আর সে উপযুক্ত ও সর্বশ্রেষ্ঠ গুনগ্রাহী হলেন মোহাম্মদ বা আহ্মদ (সাঃ)।
“সে নিজেকে চিনেছে, সে তার প্রভুকে চিনেছে।” (হাদীস) আরবীতে, “মান্ আরাফা নাফস্উ ফাকাদ আরাফা রব্বাহু।” আমি তোমার নফ্সের সাথে আছি, কিন্তু তুমি দেখছ না - (সূরা ঃ জারিয়াত)
মু’মিনের হৃদয়ে আল্লাহর সিংহাসন - (হাদীস) আসমান ও যমীন আমাকে ধারণ করতে পারে না, কিন্তু মুমিনের হৃদয়ে আমার স্থান হয়। (হাদীসে কুদসী); এবং আমি (আল্লাহ) মানুষের প্রাণরগ অপেক্ষা নিকটবর্তী (সূরা ঃ ৫০-১৬) তাই মাওলানা রুমী (রঃ) বলেছেন ঃ “তুমি সত্যের সন্ধান বা খোদার অন্বেষণ কোথায় করছ?। অবসর সময়ে অন্তরের জিকির করি। যে নিজেকে চিনেছে সে তার প্রভুর পরিচয় পেয়েছে”। ইমাম (রঃ) বলেছেন, “আমাদের এ মাটির দেহে আলোর (নূর) সংযোগ না হলে নূরের জগতে ফিরে যাওয়া কষ্টকর। এ মাটির দেহের কোন দাম নেই। কয়েকদিনের জন্য এ দেহকে বাহন হিসাবে রাখা হয়েছে। এর ভিতর যে মূল্যবান আত্মা বসে আছে সেটা হলো অবিনশ্বর। সেই আত্মাকে তার স্থানে ফিরিয়ে নিয়ে যাবার দায়িত্ব আমাদের।
তাই মস্নবীতে বলা হয়েছে, “বন্ধুর দেখা পেলে মুক্তির উপায় যেন আমরা যেনে নেই। এখানে বন্ধু আল্লাহ্র ওলী বা কামেল সাধক। তাই প্রতিটি লোকের উচিৎ নিজেকে জানা।” (মোহাম্মদী ডাইরী)
এ হাদীসটি হযরত মোজাদ্দেদে আলফেসানী (রঃ) এর বিখ্যাত কিতাব “মাকতুবাদ শরীফে” স্থান পেয়েছে। “আত্ম পরিচয় না জনালে আত্মদর্শন হয় না।” কেবল বই কিতাব পড়ে ও শুনে এটা সম্ভব নয়। এটা একটা বড় কঠিন কাজ। এজন্য যোগ্য মুর্শিদ ও দরকার। কেননা আল্লাহ বলেছেন ঃ আমি গুপ্ত ধনভান্ডারে ছিলাম, আমি পরিচিত হবার জন্য সৃষ্টি জগত সৃষ্টি করলাম। তাই তো পবিত্র কোরআনে বলেছেন ঃ “তোমাদের মধ্যে যা কিছু আছে তা কি তোমরা দেখছো না? আরও বলেছেন ঃ আফাক ও আনফোসে, যা কিছু আছে তাকি তুমি দেখছো না? রাসূল (সাঃ) এর ঐ হাদীসটি বুঝার জন্য দরকার-আফ্াক ও আন্ফাস সম্বন্দে বুঝা। (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।