পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অবশেষে বহুল আলোচিত বিজিএমইএ’র ভবন সনাতন পদ্ধতিতে ভাঙার কার্যক্রম আজ বুধবার শুরু হচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ইফতেখার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকায় অবস্থিত বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কার্যক্রম আজ সকাল ১০টায় উদ্বোধন করবেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। এর আগে বিজিএমইএ ভবন ভাঙা নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছিল। সে কারণে কিছু দিন বন্ধ ছিল। এখন আর সেই জটিলতা নেই।
জানা গেছে, রাজধানীর হাতিরঝিল লেকে অবৈধভাবে নির্মিত বিজিএমইএর বহুতল ভবন ডিনামাইট ব্যবহারে ভাঙার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল, ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি ঠেকাতে ডিনামাইট বা নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে। এ কাজে সহায়তা করবে চায়না এক্সপাটরা। রাজউকের কর্মকর্তারা জানান, বিজিএমইএ ভবন ভাঙার জন্য সময় দেওয়া হবে ছয় মাস। ভবনটি ভাঙা হবে সনাতন পদ্ধতিতে। এ কাজে ব্যবহৃত হবে কিছু আধুনিক যন্ত্রপাতি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিজয় সরণির র্যাংগ্স ভবনের মতো দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি যাতে না ঘটে, সে জন্য শ্রমিকদের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার রাখতে হবে।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ভবনটি ভাঙার দরপত্র আহ্বানের পর সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ভবনটি ভাঙতে কাজ পায় সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তাদের দরপত্র ছিল এক কোটি ৭০ লাখ টাকার। সে অনুযায়ী তাদের কার্যাদেশও দেয়া হয়। কিন্তু শেষ মুহ‚র্তে এসে ভবন ভাঙার কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়ায় সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্স। যদিও শেষ মুহ‚র্তে সরে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে ১০ শতাংশ হারে টাকা কেটে নেয় রাজউক।
২০১১ সালের ৩ এপ্রিল হাইকোর্ট এক রায়ে বিজিএমইএর ভবনটিকে হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যানসারের মতো উল্লেখ করে রায় প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে সেটি ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেন। এর বিরুদ্ধে বিজিএমইএ লিভ টু আপিল করে, যা ২০১৬ সালের ২ জুন আপিল বিভাগে খারিজ হয়। পরে ভবন ছাড়তে উচ্চ আদালতের কাছে সময় চায় বিজিএমইএ। প্রথমে ছয় মাস এবং পরে সাত মাস সময় দেওয়া হয়। সর্বশেষ ২০১৮ সালে আবার এক বছর সময় বাড়ানো হয়। সে সময় ভবিষ্যতে আর সময় চাইবে না বলে মুচলেকা দেয় বিজিএমইএ। সেই সময় শেষ হয় গত বছরে ১২ এপ্রিল। এরপর ১৬ এপ্রিল বিজিএমইএ ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয় রাজউক। হাতিরঝিলে গড়ে ওঠা বিজিএমইএ ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০০৬ সালের দিকে। জলাশয়ে ভবনটি নির্মাণ করায় শুরু থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছিলেন পরিবেশবাদীরা। পরে বিষয়টি আদালতে গড়ায়।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কর্মকর্তারা জানান, ১৬ তলা বিজিএমইএ ভবন ভাঙার বিষয়ে সাত সদস্যের কার্যকরী কমিটি গঠন করা হয়। রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী ও হাতিরঝিল প্রকল্পের পরিচালক রায়হানুল ফেরদৌস গতকাল বলেন, বুধবার বিজিএমই ভবন ভাঙার কাজের সূচনা হবে। ভাঙার সময় পরিবেশগত দিক ও জানমালের নিরাপত্তার দিকটি বিশেষভাবে দেখা হবে। ভাঙার কাজে ফায়ার সার্ভিস ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞও থাকবেন। পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ভবনটি ভাঙার বিষয়ে রাজউক ২০১৮ সালে ১৭ ডিসেম্বর সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দরপত্র আহ্বান করে। সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্স, ফোরস্টার এন্টারপ্রাইজ, পি অ্যান্ড এস এন্টারপ্রাইজ, চন্দ্রপুরী এন্টারপ্রাইজ ও সামিয়া এন্টারপ্রাইজ নামের পাঁচটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেয়। এদের মধ্যে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকার সর্বোচ্চ দরদাতা হয় সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্স। তবে রাজউকের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, বিশেষ ত্রুটির কারণে সর্বোচ্চ দরদাতাকে বাদ দিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা ফোরস্টার এন্টারপ্রাইজকে ভাঙার কাজে নির্বাচিত করা হয়। চট্টগ্রামের এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রাজউককে ১ কোটি ৫৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা দেবে।
রাজউক স‚ত্রমতে, প্রথমে আধুনিক বা নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরকের মাধ্যমে (কন্ট্রোলড ডিমোলিশন) ভবনটি ভাঙার সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু ভবনটিতে কয়েক কোটি টাকার রড আছে। এ ছাড়া আছে রঙিন কাচ ও মূল্যবান বাথরুম ফিটিংস। নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরকের মাধ্যমে ভাঙা হলে ভবনের রডসহ মূল্যবান এসব সামগ্রী কাজে লাগানো যাবে না। তাই সনাতন পদ্ধতিতে ভাঙার সিদ্ধান্ত হয়। ২ লাখ ৬৬ হাজার বর্গফুটের বিজিএমইএ ভবনে তিনটি বেসরকারি ব্যাংক ও ৩৭টি প্রতিষ্ঠানেরও অফিস ছিল। বিলাসবহুল অ্যাপারেলস ক্লাবে সুইমিং পুল, ব্যায়ামাগার, রেস্তোরাঁ, সভাকক্ষ, একটি বড় আকারের মিলনায়তন ছিল।
হাতিরঝিল প্রকল্পের ম‚ল পরিকল্পনাকারী অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, সনাতন পদ্ধতিতে ভাঙা হলেও শ্রমিকদের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার রাখতেই হবে। ভাঙার সময় অবশ্যই যেন বিশেষজ্ঞ উপস্থিত থাকেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। ভবনের নকশা রাখতে হবে। যেন বিজয় সরণির র্যাংগ্স ভবনের মতো দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি না ঘটে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।