Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

টেক ব্যাক আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন তারেক রহমান -রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২১ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:২৪ পিএম

মাতৃভূমির ভৌগোলিক স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, টেক ব্যাক আন্দোলনে রাজপথে নেমে আসার যে ডাক তারেক রহমান দিয়েছেন তাতে দল মত নির্বিশেষে দেশপ্রেমিক প্রতিটি মানুষকে এক কাতারে এসে সাড়া দিতে ও সকলকে সক্রিয় শরিক হতে উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি। এই ভয়াবহ দু:সময়ে গোটা জাতির মুলমন্ত্র হোক ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’। সংশপ্তক আন্দোলনের মুল শ্লোগান হোক ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, তারেক রহমান সাহেব ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ আন্দোলনের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, স্বাধীন দেশের নাগরিকরা নিজ দেশেই এখন যেন পরাধীন। শুধু পরাধীনই নয়, আরো উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, এখন ধীরে ধীরে দেশের ভৌগোলিক স্বাধীনতাও হুমকির মুখে ফেলে দেয়া হয়েছে। প্রায় প্রতিদিন সীমান্তে বাংলাদেশের নাগরিকদের পাখির মতো গুলী করে হত্যা করা হচ্ছে, গত ২০ দিনে ১০ জন, এক বছরে ৫০ এর অধিক এবং গত দশ বছরে প্রায় ৩৫০ জন নিরীহ বাংলাদেশীকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে গুলি করে হত্যা করেছে বিএসএফ। নানা অজুহাতে ভারত থেকে পুশ ব্যাক চলছে, বাংলাদেশের প্রদিবাদ করার সাহস নেই। বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের নামোল্লেখ করে ভারত বিতর্কিত নাগরিকপঞ্জী আইন পাশ করার ফলে বাংলাদেশে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সুতরাং এটি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় ভেবে চুপ করে থাকার সুযোগ নেই। তারপরও ভয়াবহ বিপদের এই সত্য কথাটি বাংলাদেশের মেরুদন্ডহীন নিশিরাতের সরকার সাহস করে বলতে পারছেনা। প্রতিবাদ করতে পারছে না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ তিস্তা চুক্তি করতে ব্যর্থ হচ্ছে অথচ বছরের পর বছর ধরে ফেনী নদীর পানি নিচ্ছে ভারত। বাংলাদেশের নিজেদের অধিকারের পক্ষে কথা বলার সাহস নেই। কারণ বাংলাদেশের নিশিরাতের সরকার নতজানু পররাষ্ট্রনীতিতে বিশ্বাসী। বিমানবন্দর তৈরির অজুহাতে বাংলাদেশের জমি দখল করতে চায় ভারত অথচ বাংলাদেশের কোনো প্রতিবাদ নেই। পররাষ্ট্রনীতি হওয়া উচিৎ পারস্পরিক স্বার্থ ও মর্যাদার ভিত্তিতে অথচ বাংলাদেশ নির্লজ্জভাবে চালু করেছে স্বামী-স্ত্রীর কূটনীতি। বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বাংলাদেশীরা নির্যাতিত হচ্ছে, লাঞ্ছিত হচ্ছে, সহায় সম্বলহীন অবস্থায় বিদেশ থেকে দেশে ফিরতে বাধ্য হচ্ছে, অথচ কিছুই করতে পারছেনা সরকার। পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে ভারত বাংলাদেশের কাছে প্রস্তাব করেছে, পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়াই একটি ‘বিশেষ পাশ ইস্যুর মাধ্যমে ৪৮ অথবা ৭২ ঘন্টার জন্য ভারতীয় নাগরিকদেরকে বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগ দেয়ার জন্য। এ ধরণের পরিকল্পনা হবে বাংলাদেশের চরম স্বার্থ বিরোধী এবং স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি।
রিজভী বলেন, তারেক রহমান বলেছেন, ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ আন্দোলন শুধুমাত্র বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার আন্দোলন নয়, এই আন্দোলন মাতৃভূমির স্বাধীনতা রক্ষার আন্দোলন, জনগণের বাংলাদেশ জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার আন্দোলন। গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, বাক ও ব্যক্তিস্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। এখনই বাংলাদেশের স্বার্থের পক্ষে দলমত ভুলে সকলে না দাঁড়ালে অস্তিত্ব সংকটে পড়বে দেশ। তখন আর কিছু করার থাকবে না। দেশ, জাতি ও মাতৃভূমির স্বাধীনতা হরণের এই ক্রান্তিকালে দূর থেকে সমালোচনা পরিত্যাগ করে বিএনপির সাথে রাজপথের আন্দোলনে শরিক না হলে নিশিরাতের সরকারের দ্বারা আগামীতে সকলের জন্য ভয়াবহ ও করুণ পরিনতি অপেক্ষা করছে উল্লেখ করে তারেক রহমান যা বলেছেন তা প্রণিধানযোগ্য।
বিএনপির এই নেতা বলেন, তিনি বলেছেন, দুর থেকে নিরাপদে বসে সমালোচনা করা যায়। যারা সমালোচনা করছেন আপনাদের যদি দেশের ও স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের এই ক্রান্তিকালে পাশে না পাই তবে সম্মানের সাথে জানাতে চাই কয়দিন পর আপনাদের কথা বলার অধিকারও থাকবে না। এখনো নিশিরাতের সরকারের জেল জুলুম হয়রানি উপেক্ষা করেও বিএনপি এবং বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাই দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে সক্রিয়। বিএনপির পাশে থেকে প্রত্যেকটি সচেতন মহল ও সমালোচকদেরকে আন্দোলনে রাজপথে থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। বিএনপিসহ বাংলাদেশের পক্ষের সকল শক্তিকে এই আন্দোলনর জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয়ার উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি। সকলের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমেই সুসংহত হবে দেশের সার্বভৌমত্ব। মুক্ত হবেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। পুনরুদ্ধার হবে গণতন্ত্র। প্রতিষ্ঠিত হবে বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা। নিশ্চিত হবে গণমাধ্যম ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের প্রাণ দেশনেত্রীকে বিনা চিকিৎসায় কারারুদ্ধ রেখে শেখ হাসিনা যে হত্যার ষড়যন্ত্র করছেন তা আজ আর দেশবাসীর জানতে বাকি নেই। তাঁর জামিনে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সরাসরি বাধা দেয়া হচ্ছে। ডিজিটাল ডাকাতির এবং লুটপাটের অপর নাম ইভিএম মন্তব্য করে রিজভী বলেন, প্রতিবেশি ভারতের চেয়ে ১১ গুন বেশি টাকায় দুর্নীতির মাধ্যমে ইভিএম ক্রয় করে জনগণের উপর জোর করে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। ইভিএম ব্যবহারের মুল লক্ষ্য অর্থ লুটপাট এবং বর্তমান ভোট ডাকাত সরকারের লোকদেরকে জনপ্রতিনিধি বানানো। তারেক রহমান ইভিএম নিয়ে এই ভয়াবহ পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেছেন, নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের ভোটে চুরির সহযোগী। নির্বাচন কমিশন জনগণের কাছে এখন একটি হাসি-তামাশার প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। তাদের কাজ হলো একদিকে রাতের অন্ধকারে ভোট ডাকাতি অন্যদিকে সারাবিশ্বে বাতিল হয়ে যাওয়া ভোট চুরির ডিজিটাল যন্ত্র ইভিএম কেনার নাম করে শত শত কোটি টাকা লুটপাট।
তিনি বলেন, জাতীয় কিংবা স্থানীয় নির্বাচনে যেভাবে বিএনপিকে হারিয়ে দেয়া হচ্ছে, এটা আসলে বিএনপির-ই হার নয়, বরং দেশের মানুষকে হারিয়ে দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশকে হারিয়ে দেয়া হচ্ছে। কারণ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি হেরে গেলে সেটি হতো বিএনপির হার। বিএনপি কিংবা প্রতিপক্ষকে যেভাবে হারানো হচ্ছে, এর বিরুদ্ধে সবাই রাজপথে না নামলে আগামী দিনগুলোতে নিরাপদ দূরত্বে থাকলেও কারো মুখ খোলার সুযোগ রাখবেনা নিশিরাতের এই অবৈধ সরকার।



 

Show all comments
  • আবদুল কাইয়ুম শেখ ২১ জানুয়ারি, ২০২০, ১০:৫৪ পিএম says : 0
    কথাগুলো সত্য ও বাস্তব। কিন্তু চিন্তাশীলদের বোধোদয় ঘটবে কী?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রিজভী

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ