পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নির্বাচনকে প্রভাবিত করার ষড়যন্ত্র চলছে অভিযোগ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন বলেছেন, দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়। তাই আসন্ন নির্বাচনে ধানের শীষে ভোট দেয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল শ্রেনী-পেশার মানুষ। গতকাল রোববার লালবাগ থানার বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগকালে তিনি একথা বলেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম সাদেক হোসেন খোকার বড় ছেলে ইশরাক আবেগ- আপ্লুত কন্ঠে বলেন, ‘আজকে আমার বাবা নেই। আপনারাই আমার অভিভাবক। আপনারা আমাকে দেখে রাখবেন, আপনারা আমার বাবা-মা। আপনাদের দোয়ায় আমি ইশরাক হোসেন কোন কিছুকে ভয় করব না। নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত আপনারা মাঠে থাকবেন। আপনাদের পাশে আমি আছি এবং থাকবো।
আগামী এক ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করার ষড়যন্ত্র চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আপনাদের সজাগ থাকতে হবে। কারণ এক ফেব্রুয়ারির নির্বাচন হচ্ছে ঢাকাকে ধ্বংসের কবল থেকে রক্ষা, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির একটি সুযোগ। আপনারা কোনভাবেই সেই সুযোগকে হাতছাড়া করবেন না। নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে যাবেন এবং ভোট দিবেন।
এর আগে সকাল ১০ টায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলের মহসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ ইশরাক হোসেন। মাজারে শ্রদ্ধা ও মোনাজাত শেষে আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে আজকের গণসংযোগের কর্মসূচি শুরু করেন তিনি। সেখান থেকে ছাপড়া মসজিদ, আজিমপুর কবরস্থান, জগন্নাথ সাহা রোড ও লালবাগের বিভিন্ন গণসংযোগ করেন তিনি।
এসময় অন্যদের মধ্যে বিএনপি নেতা হাবিব-উন নবী খান সোহেল, মীর শরাফত আলী সফু, কাজী আবুল বাশার, স্বেচ্ছাসেবক দলের শফিউল বারী বাবু, মোস্তাফিজুর রহমান, গোলাম সরোয়ার, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, সর্দার মোঃ নূরুজ্জামান, হারুন অর রশিদ, যুবদলের এসএম জিলানী, মোরতাজুল করিম বাদরু, রফিক শিকদার, শরিফ হোসেন, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, ওলামা দলের মাওলানা রফিকুল ইসলাম, ছাত্রদলের ইকবাল হোসেন শ্যামল, ২৪ নং ওয়ার্ডের বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী মীর আশরাফ আলী আজম, ওলামা দলের রফিকুল ইসলামসহ বিভিন্ন ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী এবং স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী গণসংযোগে অংশ নেন।
প্রচারণাকালে মেয়র নির্বাচিত হলে ঢাকাকে নিরাপদ বাসযোগ্য ও সিটি কর্পোরেশনকে দুর্নীতিমুক্ত করার ঘোষণা দেন ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনকে দুর্নীতিমুক্ত করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট ৫২ টি প্রতিষ্ঠানকে একসাথে নিয়ে কাজ করব। এজন্য শুধুমাত্র সরকারের সদিচ্ছা প্রয়োজন। নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বর্তমানে ঢাকা পৃথিবীর সবচেয়ে অবাসযোগ্য একটি শহরে পরিণত হয়েছে। এই সরকার দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থেকেও এই শহরের পরিবর্তন আনতে পারেনি। তাই একটি পরিবর্তন দরকার। এক ফেব্রুয়ারি আপনাদের ভোটের মাধ্যমে সেই পরিবর্তন সম্ভব।
সনাতন ধর্মাবলম্বিদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে বিবেচনায় নিয়ে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনকে সাধুবাদ জানান ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণের সময়ই কমিশনের উচিত ছিল হিন্দু ধর্মালম্বীদের পূজার বিষয়টা বিবেচনা করা। তাহলে নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন জনিত কারণে পরীক্ষার্থীদের বিপাকে পড়তে হত না।
‘সিল মারো ভাই সিল মারো- ধানের শীষে সিল মারো’ এই স্লোগানে মুখরিত রাজধানীর আজিমপুর এলাকা। এ সময় তার সঙ্গে থাকা বিএনপির হাজার হাজার কর্মী- সমর্থকর ‘মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই- খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’, ‘খালেদা জিয়ার সালাম নিন- ধানের শীষে ভোট দিন’, ‘হবে হবে হবে জয়- ধানের শীষের হবে জয়’ স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে তোলে পুরো এলাকা।
গণসংযোগ চলাকালে এলাকার অনেক ভোটাররা মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেনকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। এ সময় বিভিন্ন বহুতল ভবনের উপর থেকে সাধারণ ভোটাররা হোসেনকে হাত মিলিয়ে অভিনন্দন জানান। আজিমপুরের স্থানীয় চায়ের দোকানদার ওসমান গনি জানান, মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেনের বাবা সাদেক হোসেন খোকা অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন। সাদেক হোসেন খোকার প্রতি সম্মান দেখিয়ে খোকা পুত্রের ধানের শীষের প্রতীকেই ভোট দিবেন বলে জানান তিনি।
আজিমপুর এলাকার সিকসা বাজারের স্থানীয় বাসিন্দা খোকন মিয়া বলেন, বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেনের বাবা অত্যন্ত ভালো এবং ঢাকার সাবেক সফল মেয়র ছিলেন। আমরা যতদূর শুনেছি তার ছেলেও অত্যন্ত যোগ্য প্রার্থী। তাই সাদেক হোসেন খোকাকে সম্মান দেখিয়ে আমরা চাই তার ছেলে এবার মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হোক।
গণসংযোগে ফুল ছিটিয়ে অভিনন্দন : ইশরাক হোসেনের গণসংযোগ চলাকালে রাজধানীর লালবাগ এলাকায় বহুতল আবাসিক ভবনের উপর থেকে ফুল ছিটিয়ে তাকে অভিনন্দন জানান সাধারণ ভোটাররা। এ সময় ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন তাদের হাত নেড়ে শুভেচ্ছার জবাব দেন। এ সময় তার সাথে থাকা নেতাকর্মী এবং দলীয় সমর্থকরা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও ধানের শীষে ভোট চেয়ে স্লোগান দিতে থাকেন।
পোস্টার ছেঁড়া ছোটলোকি কাজ: ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বিএনপি মনোনীত মেয়র ও কাউন্সিলরদের পোস্টার লাগাতে বাঁধা দেয়া ও ছেঁড়া হচ্ছে প্রতিদিন। বিভিন্ন এলাকা থেকে এসব অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন ও থানা-পুলিশকে অবহিত করা হলেও কোন প্রতিকার মিলছে না। সকালে শান্তিনগর মোড় এলাকায় ও হাবিবুল্লাহ কলেজের সামনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন ও কাউন্সিলর আশরাফুল ইসলাম- এর ছেঁড়া পোস্টারের স্তূপ পড়ে থাকতে দেখা যায়।
ইশরাক হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, পোষ্টার ছেঁড়া ছোটলোকি কাজ। পোস্টার ছেঁড়ার মাধ্যমে আমাদেরকে জনগণের মন থেকে মুছে ফেলতে পারবে না। বিএনপি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। এই নির্বাচনে জয়লাভ করার জন্য রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের যা যা করণীয় তাই করবো। তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, জনগণ ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে। যদি নির্বাচন কমিশন ন্যুনতম সুষ্ঠু ভোট দিতে সক্ষম হয় তবে আমাদের বিজয় কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। তিনি বলেন, বিরোধী দলের প্রার্থীর পোস্টার ছেঁড়া ও তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা সৃষ্টির মাধ্যমে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন করছেন। এ বিষয়ে আমরা নির্বাচন কমিশনকে বারবার অবহিত করলেও তারা এর কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না। আমি আশা করবো একটি সুষ্ঠু নির্বাচন, জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়া ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের স্বার্থে নির্বাচন কমিশন এসব বিষয় খুব দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক-দক্ষিণ কমলাপুরে গণসংযোগ: এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক, মতিঝিল ব্যাংক কলোনি, দক্ষিণ কমলাপুর, কালভার্ট রোড, গ্যারেজ পট্টি এলাকা সহ আশেপাশের এলাকায় ধানের শীষের পক্ষে গণসংযোগ করেন ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির প্রচার সেলের প্রধান ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ। এসময় অন্যদের মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপু, কাজী রফিক, ছাত্রদলের সাবেক নেতা তারেকুজ্জামান, মিয়া হোসেন, আল-আমিন খান প্রমুখ। নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে দক্ষিণ সিটিতে মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেনের পক্ষে ব্যাপক গণসংযোগ করেন। তারা স্থানীয়দের মাঝে ধানের শীর্ষ সম্বলিত লিফলেট বিতরণ করেন এবং খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ইশরাককে ভোট দেয়ার আহ্বান জানান।
জনমত আমাদের পক্ষে- তাবিথ আউয়াল: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে বাড়ছে জনসমর্থন। রোববার বেলা ১২টায় মিরপুর বিআরটিএ এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেন ধানের শীষের প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। প্রচারণাকালে রাস্তার দু’ধারে ও বাসার জালালা, বারান্দা থেকে তাবিথের উদ্দেশ্যে অনেকেই হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। তাবিথ আউয়ালও দুই হাত তুলে হাসিমুখে মানুষের শুভেচ্ছার জবাব দেন। গণসংযোগের ফাঁকে ফাঁকে তাবিথ আওয়াল কয়েকটি পথসভায় বক্তব্য রাখেন ও কথা বলেন বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীদের সাথে। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন হিন্দু স¤প্রদায়ের জন্য ধর্মীয় আবেগ ও স্পর্শকাতর দিনে নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করেছিল। তবুও দেশবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে তারিখ পরিবর্তন করায় ধন্যবাদ। আমরা যেকোনো তারিখে নির্বাচন করতে প্রস্তুত। কারণ, জনমত আমাদের পক্ষে। জনগণ ধাণের শীষে ভোট দিতে উন্মুখ হয়ে আছেন। মিরপুর ১৩ হারম্যান কলেজের সামনে আনসার আলী নামে এক ফুসকা ব্যবসায়ী বলেন, আমরা তো ভোট দিবো। ভোট গননায় হেরফের না করলে ধানের শীষ ৭০ শতাংশ ভোট পাবে। আর অন্যরা পাবে ৩০শতাংশ।
পশ্চিম ভাষানটেক এলাকায় বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি তরান্বিত করতে ধানের শীষে ভোট চান। এ সময় সমিরন নামে এক নারী বলেন, খালেদা জিয়াকে অযথা আটকিয়ে রাখছে। খালেদার জিয়ার মুক্তি আমরাও চাই। ধানের শীষে ভোট দিবো আমরা।
এদিন মিরপুর ১৩ নং বিআরটিএ এর বিপরীত পাশে বিদ্যুৎ গলি থেকে দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে ধানের শীষের প্রচারণা শুরু করেন। এরপর কাফরুল, হারম্যান মেইনার কলেজ, কাফরুল এনএইচবি সড়ক, সবুজ উদ্যান ও ঈদগাও মাঠ, কাফরুল বাজার, শহীদ পুলিশ স্মৃতি কলেজ, মিরপুর ১৪ নং মোড়, টিনসেড মোড়, ডেন্টাল কলেজ, লালাসড়াই ভাষানটেক, জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন, মিরপুর সিআরপি, পশ্চিম ভাষানটেক বাজার, ভাষানটেক, মাটিকাটা, ইউসিবি চত্ত¡র, মানিকদি আদর্শ বিদ্যানিকেত, মানিকদি বাজার, বালুঘাটসহ বিভিন্ন জায়গায় গণসংযোগ করেন।
মিরপুর ১৩ নম্বর হারমেইন কলেজ এলাকায় গণসংযোগকালে তাবিথ আউয়াল বলেন, আমরা একটি বাসযোগ্য ঢাকা উপহার দিতে চাই নগরবাসীকে। সেখানে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। মানুষ নির্ভয়ে পথ চলতে পারবে। তিনি বলেন, এখানকার রাস্তাঘাট ও ফুটপাতের অবস্থা ভালো নয়, আমরা দায়িত্ব পেলে এসব সংস্কার করা হবে।
বিএনপির এই মেয়র প্রার্থী বলেন, যত বাধাই আসুক, আমরা শক্তিশালী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকব। ভোটারদের নির্বিঘেœ ভোট কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি আহবান জানানা তাবিথ আউয়াল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।