বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
এলমে জাহের ও এলমে বাতেনের মর্যাদাবান রত্নভান্ডার সাইয়্যেদ মুফতি মোহাম্মাদ আমিমুল ইহসান রহ. ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে কলিকাতা আলীয়া মাদরাসার শিক্ষকের পদে নিযুক্ত হন।
শিক্ষাদান শিক্ষা গ্রহণের পরিধি বিস্তৃত হওয়ার ফলে কাজী পদ হতে তিনি ইস্তফা দেন এবং অধ্যাপনার কাজে গভীর মনোযোগ প্রদান করেন। তারপর ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশ বিভাগের পর পাকিস্তান ও হিন্দুস্তান নামে দু’টি রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। তখন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকার মাদরাসা-ই আলীয়া স্থানান্তরিত হয়।
তখন অন্যান্য শিক্ষকদের সাথে সাইয়্যেদ মুফতি আমিমুল ইহসান রহ. ও ঢাকায় আগমন করেন এবং ঢাকা শহরের কুলুটোলার মসজিদ সংলগ্ন বাড়ীতে বসতী স্থাপন করেন। তিনি মসজিদটির সংস্কার সাধন করেন ও তৎসঙ্গে একটি মাদরাসা স্থাপন করেন। ১৯৪৯ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার তাকে ধর্মীয় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মনোনীত করেন। ১৯৫৪ সালে তিনি ঢাকা মাদরাসা-ই আলীয়ার হেড মাওলানার পদে উন্নীত হন এবং ১৯৬৯ এর সেপ্টম্বর পর্যন্ত উক্ত পদে বহাল থাকেন। তারপর তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
১৯৬৪ সন হতে তিনি ঢাকার ‘বাইতুল মুকাররাম’ মসজিদের খতীব ও ইমামের দায়িত্ব পালন করেন। মৃত্যু পর্যন্ত তিনি এই খেদমত আঞ্জাম দিয়ে ছিলেন। মৃত্যু মুখে পতিত হওয়ার পূর্বে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তারপর ঢাকা শহরে কুলুটোলায় অবস্থিত নিজ গৃহে তিনি ১০ই শাওয়াল, ১৩৯৪ হি. মোতাবেক ২৭ শে অক্টোবর ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে ইন্তেকাল করেন। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি ছিলেন পাক-ভারত-বাংলা উপমহাদেশ তথা মুসলিম বিশ্বের একজন খ্যতনামা আলেমে দীন, স্বনামধন্য মুহাদ্দিস, ফকীহ, মুফতি ও সাইয়্যেদুল গুয়ূস। লেখা পড়া ও আধ্যাত্ম সাধনাই ছিল তার সার্বক্ষণিক কাজ। পবিত্র মক্কা ও পবিত্র শরীফ যিয়ারত কালে তার অসংখ্য গুণগ্রাহী ও আশেকানের অনুরোধে কাবা শরীফের চত্বরে ও মদীনা শরীফ মসজিদে নববীতে তিনি হাদীস শরীফের দরস প্রদান করেন।
বস্তুত লেখা-পড়া, জ্ঞান-সাধনা, রিয়াজত, মোজাহাদা এবং মোরাকাবাই ছিল মুফতি সাহেবের (রহ.) জীবনের সার্বক্ষণিক কাজ। একই সাথে কলম চালনার অভ্যাস তার মাঝে বিশেষভাবে বিদ্যমান ছিল। তিনি প্রায় ১০০ গ্রন্থের রচয়িতা বা সংকলক। অধিকাংশ পুস্তক তিনি উর্দুভাষায় লিখেছেন। আরবী ভাষায় রচিত তার কতকগুলো মূল্যবান গ্রন্থ দেশে এবং বিদেশে খ্যাতি অর্জন করেছে। তার কতিপয় মূল্যবান গ্রন্থের নাম নি¤েœ উল্লেখ করা হলো। (১) ফিকহুস সুনানে ওয়াল আছার; (২) কাওয়াঈদুল ফিকহ; (৩) আত তাশরারুফু লি আদাবিত তাসাব্বু ফি; (৪) ফাতাওয়ায়ে বারকাতিয়া; (৫) আদাবুল মুফতি; (৬) তারিখু ইলমিল ফিকহ; (৭) হাদীয়াতুল মুসাল্লিন ইত্যাদি।
মুফতি সাহেবের (রহ.) ব্যক্তিগত গ্রন্থাগারে বহু মূল্যবান কিতাব ও পাÐুলিপি সংগৃহিত হয়েছিল। স্বরচিত অপ্রকাশিত বেশ কিছু পান্লিডুপিও তার কুতুব খানায় রক্ষিত ছিল। বিশেষ করে তার চার হাজারেরও অধিক সংখ্যক হস্তলিখিত ফাতওয়ার ভাÐার বর্তমানে কি অবস্থায় আছে, তা আমরা জানি না। তবুও আমরা দৃঢ় আশা ব্যক্ত করব যে, সরকারী উদ্যোগে এ সকল ফাতওয়ার বঙ্গানুবাদ প্রকাশিত হলে বাংলা ভাষাভাষি মুসলিম জনগোষ্ঠি উপকৃত হবে, এতে কোনোই সন্দেহ নেই।
তিনি ছিলেন এত্তেবায়ে সুন্নাতের একান্ত পাবন্দ। তার কাজ কর্ম, চলাফেরা, উঠা-বসা, আচার-ব্যবহার সবকিছুতেই সুন্নাতে নববীর ঝলক বিদ্যমান ছিল। তিনি মুক্ত হস্তে দান খয়রাত করতেন। একদিনের ঘটনা, আমি তার খানকাহ্তে উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় একজন ভিখারী এই বলে রাস্তা অতিক্রম করছিল, ‘লে নাম মোহাম্মাদ কা, কাম তেরা বন যায়েগা।’ এ কথা শুনে তিনি সচকিত হয়ে উঠলেন এবং নিজের কাছে যা ছিল তা’ স্বীয় ছোট সহোদরের হাতে দিয়ে বললেন, যাও, ভিখারীকে দিয়ে এসো।
পরিশেষে আমরা আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের দরবারে এ প্রার্থনাই করছি, হে আল্লাহ, আপনি আপনার এই প্রিয় বান্দাকে কুরব ও মানযেলাতের আ’লা হতে আ’লা দারাজাত এনায়েত করুন, আমীন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।