Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৫ অক্টােবর ২০২৪, ৩০ আশ্বিন ১৪৩১, ১১ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিশ্বময় ইসলামের জাগরণ - রমজান ও তাকওয়া : একটি পর্যালোচনা

প্রকাশের সময় : ৩০ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মোঃ মিজানুর রহমান
রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস মাহে রমজান। এ মাসের একটি ফরজ অন্য মাসের সত্তরটি ফরজের সমান এবং একটি নফল অন্য মাসের একটি ফরজের সমান। এ মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। জান্নাতের একটি দরজার নাম হচ্ছে আর-রাইয়ান। কিয়ামত দিবসে শুধু রোজাদাররাই এ দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। তাদের প্রবেশের পর দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। আর কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। আল্লাহপাক বলেছেন, রোজা আমার জন্য আর আমিই এর প্রতিদান দেব। এ মাস থেকে যদি আমরা সত্যিকার অর্থে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত পেতে চাই, তাহলে আল্লাহপাক কেন রোজার মাসকে এত রহমত, মাহাত্ম্য ও ফজিলতপূর্ণ করলেন, অর্থাৎ রোজা রাখার আসল উদ্দেশ্যটা কি সে সম্পর্কে আমাদের জানা দরকার। কেন আল্লাহতায়ালা আমাদের জন্য রোজা ফরজ করলেন? উপবাস করে পুরো এক মাস রোজা রাখার মতো একটি কঠিন কাজ আমাদের ওপর কেন চাপিয়ে দিলেন বা ফরজ করে দিলেন।
রোজার উদ্দেশ্য সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা ঘোষণা করেছেন, ‘ইয়া আইয়্যু হাল্লাজীনা আমানু কুতিবা আলাইকুমুছছিয়াম, ক্বামা কুতিবা আলাল্লাজীনা মিন ক্বাবলিকুম লায়াল্লাকুম তাত্বাকুন।” অর্থাৎ তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধান দেয়া হলো, যেমনিভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করে দেয়া হয়েছিল, এতে আশা করা যায় যে, তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারবে, তাহলে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ভাষায় রোজার উদ্দেশ্যটা অত্যন্ত স্পষ্ট অর্থাৎ তাকওয়া অর্জন। তাহলে এ মাস হলো তাকওয়া অর্জনের প্রশিক্ষণের মাস বা মুত্তাকী হওয়ার মাস। তবে আল্লাহতায়ালার ভাষার ভঙ্গিতে এটাও বোঝা যাচ্ছে সে, এ তাকওয়া রোজাদারেরা ঢালাওভাবে সবাই অর্জন করতে পারবে না। রোজাদারদের মধ্যে কেউ কেউ পারবে। যেমনিভাবে কোরআনে সুরা বাক্বারায় বলা হয়েছে, “ইহা সেই কিতাব, যাহার মধ্যে কোনো সন্দেহ নাই এবং ইহা মোত্তাকীদের জন্য হেদায়েত”। যেমন মনে করুন একটা ঘরে যথেষ্ট পরিমাণ আলো আছে তথাপি কোন অন্ধ বা দৃষ্টিহীন লোক কিন্তু ঘরের কোথায় কি রাখা আছে তা দেখতে পারবে না। শুধু চোখ যাদের আছে একমাত্র তারাই দেখতে পারবে। তাহলে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ঘোষণায় পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে তাকওয়াও সবাই অর্জন করতে পারবে না। তবে কিছু লোক অবশ্যই পারবেন।
তাহলে এখন তাকওয়া কাকে বলে এবং এটা কি জিনিস তা জানা দরকার। এক কথায় তাকওয়া হলো আল্লাহভীতি অর্থাৎ আল্লাহর হুকুম আহকামগুলো যথাযথভাবে পালন করা আর নিষিদ্ধ কাজগুলো থেকে পুরোপুরি বিরত থাকা। আর একটু সরল ভাষায় যদি বলতে হয় তাহলে তাকওয়ার সংজ্ঞা এভাবে দেয়া যায় যে, তাকওয়া হচ্ছে এমন একটি অনুভূতি বা অবস্থার নাম যার মাধ্যমে একজন মানুষ ফজরের আজান শুনে ঘুম থেকে ওঠা নিয়ে আবার ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত যে যত কাজ করবে, যত মোয়ামেলা করবে, এমনকি এক কদম পা ফেলতে গিয়েও যদি চিন্তা করে সে, তার পা ফেলাটা আল্লাহর হুকুমত হচ্ছে? না কি তাতে আল্লাহর হুকুম লঙ্ঘিত হচ্ছে?Ñ এভাবে চিন্তা করে সর্বাবস্থায় চলার যে অনুভূতি বা অবস্থা, তাকেই সাধারণ ভাষায় তাকওয়া বলা যায়। একদা হযরত ওমর (রা.) আল্লাহর রাসূলের সাহাবি হযরত ওবাই ইবনে কাবকে জিজ্ঞেস করলেন, হে কাব, তুমি জান তাকওয়া কি? তখন হযরত উবাই ইবনে কাব তাকওয়ার একটি সুন্দর সংজ্ঞা দিয়েছিলেন, তা হলো কাঁটাযুক্ত সরু পথ দিয়ে চলতে গেলে একটি লোক যেভাবে তার জামাকাপড় বাঁচিয়ে চলবে, এই সতর্কতার সাথে চলার নামই হচ্ছে তাকওয়া। তাহলে এ কথা স্পষ্ট যে, তাকওয়া মানে নিছক লম্বা টুপি, লম্বা দাড়ি কিংবা লম্বা কোর্তার নাম নয়। কোনো অসামাজিক কাজ দেখে মাথায় রোমালের ঘোমটা দিয়ে এড়িয়ে চলে যাওয়ার নাম নয়। এখন প্রশ্ন আসে, এ তাকওয়ার ওপর মহান আল্লাহপাক কেন এত গুরুত্ব বা জোর দিলেন।
তাকওয়ার অধিকারী লোকদের মাধ্যমে মহান আল্লাহপাক কী করতে চান? এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালার উদ্দেশ্যটা কি? সে উদ্দেশ্য সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের অন্য জায়গায় আল্লাহ বলেন, তোমাদের মধ্যে যখন এমন একদল লোক হয়ে যাবে, যারা হবে সৎকর্মশীল, ইমানদার ও যোগ্য তখন আমি তোমাদেরকে দুনিয়ার খেলাফত দান করব। তাহলে এখানেও আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য অত্যন্ত স্পষ্ট অর্থাৎ আল্লাহর উদ্দেশ্য হচ্ছে সৎ ও ইমানদার লোকদের মাধ্যমে তথা তাকওয়াবান লোকদের মাধ্যমে খেলাফতের দায়িত্ব পালন করানো। কারণ শেষ নবীর পর আর কোনো নবী রাসূল দুনিয়াতে আসবে না। কাজেই আল্লাহ সেহেতু মানুষকে খেলাফতের দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছেন তাই মানুষকেই এই নবীওয়ালা কাজটি করতে হবে। আর এ কাজ করার জন্য তাদের অবশ্যই উপরোক্ত গুণগুলো যথা সততা, ইমান ও যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। আর এ গুণসমূহ একমাত্র রোজাই তৈরি করতে পারে। (চলবে)



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিশ্বময় ইসলামের জাগরণ - রমজান ও তাকওয়া : একটি পর্যালোচনা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ