দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
আফতাব চৌধুরী
ইসলামী প্রতিটি বিধানই নারী-পুরুষের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য এবং সমান গুরুত্বপূর্ণ। সওয়াবের ক্ষেত্রেও নারী-পুরুষের ক্ষেত্রে কোনো রকমের ভেদাভেদ করা হবে না। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেছেনÑ ‘বিশ্বাসী হয়ে পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে কেউ সৎকর্ম করবে তাকে আমি নিশ্চই আনন্দপূর্ণ জীবন দান করব। আর তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার তাদের দান করব।’ অন্যত্র তিনি ইরশাদ করেন, ‘আমি তোমাদের মধ্যে কোনো কর্মনিষ্ঠ পুরুষ বা নারীর কর্ম বিফল করি না।’ (সূরা আল ইমরান, আয়াত ১৯৫)
মাহে রমজানে সিয়াম সাধন পাশাপাশি অন্যান্য এবাদতের ক্ষেত্রেও নারী-পুরুষের সমান গুরুত্ব এবং সমান মর্যাদা। এ বিষয়টি আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে লক্ষ রাখতে হবে। বিশেষ করে মাহে রমজানের অন্যতম অনুষঙ্গ খতমে। তারাবির জামাতেও শর্তসাপেক্ষে নারীরা অংশগ্রহণ করতে পারেন। খতমে তারাবির জামাতে তাদের অংশগ্রহণের জন্য মসজিদগুলোতেও তাদের বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। যেসব এলাকার মসজিদে এসব ব্যবস্থা নেই অথবা নারীরা যদি রাতের বেলা মসজিদে গিয়ে খতমে তারাবির জামাতে অংশগ্রহণ করতে নিরাপদ ও স্বস্তি বোধ না-করেন, সেক্ষেত্রে তারা নিজেরা মিলে মহল্লায় বা পাড়ায় পৃথক খতমে তারাবির জামাতের ব্যবস্থা করে নিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে এই জামাতে যদি কোনো পুরুষ ইমামতি করেন তবে তাকে অবশ্যই পর্দার আড়ালে থেকে নামাজ পরিচালনা করতে হবে। সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, বাড়ি বাড়ি অথবা মহল্লায় মহল্লায় রমজান মাসে নারীদের জন্য খতমে তারাবির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় এবং এসব জামাতে প্রচুর নারী অংশগ্রহণ করেন। তবে বর্তমানে মহিলারা তারাবির জন্য মসজিদে বা বিভিন্ন বাড়িতে ফিৎনার কারণে না যাওয়াটাই সঠিক।
রোজাদার ব্যক্তিদের মাহে রমজানের শেষ ১০ দিনে একটি বিশেষ এবাদত এতেকাফের প্রতি রাসূল (সা.) বিশেষভাবে উৎসাহিত করেছেন। এতেকাফের নিয়ম হচ্ছে, রমজান মাসের শেষ ১০ দিন দুনিয়ার সব রকমের কাজকর্ম পরিত্যাগ করে এবাদতের নিয়তে মসজিদে অবস্থান করা। হযরত আয়েশা (রা.) বলেন নবী করিম (সা.) বরাবরই মাহে রমজানের শেষ ১০ দিন এতেকাফ করতেন, যে পর্যন্ত না আল্লাহতায়ালা তাকে ওয়াফাত দান করেছেন। তার ওয়াফাতের পর তার বিবিগণও এতেকাফ করেছেন। (মুয়াত্তাইন) সে যেন ওই দিনের ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে গেল, যেদিন সে প্রথম পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয়েছিল। মাহে রমজানের এই ফজিলতপূর্ণ এবাদত থেকে নারীরাও যাতে বঞ্চিত না হন, সে লক্ষ্যে তাদের জন্য বাড়িতেই এতেকাফের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কোনো নারী এতেকাফে অংশগ্রহণ করতে চাইলে তারা ঘরের নিরিবিলি এক কোণে চাদর বা কাপড় টাঙিয়ে শেষ ১০ দিন এতেকাফ করতে পারেন। এতে তারা পুরুষদের মতো মসজিদে গিয়ে এতেকাফের সমান সওয়াবের অধিকারী হবেন। যাদের ১০ দিন এতেকাফ করার মতো অবসর সময় নেই, তারা তিন দিন অথবা অন্তত এক দিনও এতেকাফ করতে পারেন এবং সে এতেকাফ হবে নফল। নারী-পুরুষ মর্যাদার দিক দিয়ে পরস্পর সমান হলেও নারীদের কিছু দৈহিক স্বাতন্ত্র্য রয়েছে। বিশেষ করে প্রাপ্তবয়স্ক নারীর ক্ষেত্রে মাসের নির্দিষ্ট একটা সময় এমন অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়, যেটিকে বলা হয় ঋতুকাল বা পিরিয়ড, যা পুরুষের ক্ষেত্রে ঘটে না। এই সময়কালে নারীর জন্য পৃথক বিধান প্রযোজ্য। এ সময় তাদের জন্য নামাজ মাফ করা হয়েছে। তবে মাহে রমজানের ঋতুকালে নারীরা রোজা রাখতে পারবেন না, তারা রোজা মাসের পর অন্য যে কোনো সময় একটি রোজার পরিবর্তে একটি রোজা এভাবে রোজাগুলোর কাজা আদায় করে নেবেন। অনেক নারীই রোজার মাসে গর্ভবতী থাকেন, মা হন অথবা রোজার মাসে তাদের সন্তানদের বুকের দুধ পান করাতে হয়। এ ক্ষেত্রে সেই নারীর জন্য রোজার বিধান শিথিলযোগ্য। রোজা রেখে সন্তানকে বুকের দুধ পান করালে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। রমজান মাসে আমরা অনেকেই আমাদের বাড়িতে মা-বোনদের এবাদতের প্রতি তেমন গুরুত্ব দিই না। রমজান মাসে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গৃহকর্ত্রীকে নানা পদের ইফতারি ও সেহরির খাবার প্রস্তুতের জন্য অধিকাংশ সময়ই রান্নাঘরে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। আমাদের সবার খাবার জোগাড় করতে গিয়ে তাদের পক্ষে বাড়তি এবাদত করার অবসরই হয়ে ওঠে না। বিষয়টি আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে অনুধাবন করা উচিত। আমাদের উচিত অন্য মাসের চেয়ে রমজান মাসে খাবারের পদ কমিয়ে দেওয়া এবং রান্না ও অন্যান্য গৃহস্থালি কাজে তাদেরকে সাহায্য করা। যাতে এই বরকতপূর্ণ মাসে আমাদের মা-বোনেরাও এবাদতের জন্য একটু অবসর বের করে নিতে পারেন। রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, “আত্মসমর্পণকারী পুরুষ ও নারী, বিশ্বাসী পুরুষ ও নারী, অনুগত পুরুষ ও নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও নারী, নম্র পুরুষ ও নারী, দানশীল পুরুষ ও নারী, রোজা পালনকারী পুরুষ ও নারী, আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও নারী এদের জন্য তো আল্লাহ ক্ষমা ও মহাপ্রতিদান রেখেছেন। এই মহাপ্রতিদান থেকে নারীদের বঞ্চিত রাখা কোনোভাবেই উচিত নয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।