পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করা সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, সংবিধান হচ্ছে রাষ্ট্র পরিচালনার দালিল। সংবিধান লঙ্ঘন করা মানে বঙ্গবন্ধুকে অসম্মান করা। নির্বাচন সুষ্ঠু হতে না দেয়া মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি অসম্মান করা। আমাদের দেশে গণতন্ত্র নেই, স্বাধীনতার পরিবর্তে আমরা স্বৈরতন্ত্রকে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছি। গণতন্ত্র রক্ষার জন্য মাঝে মাঝে ঝুঁকি নিতে হয়, আমাদের ঝুঁকি নিতে হবে। গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে গণফোরাম আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস ১০ জানুয়ারি ৭২, অকথিত ঘটনাবলী’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এই নেতা আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বাক্ষরিত দলিল সংবিধান বাংলাদেশের জাতীয় জাদুঘরে রাখা আছে। প্রত্যেক স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের এই দলিল দেখানো উচিত। এই স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণ কিভাবে গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তা শিক্ষার্থীদের বোঝানো উচিত।
উল্লেখ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তির পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি করাচি থেকে লন্ডন ও দিল্লি হয়ে দেশে ফেরেন। সে সময় তার সঙ্গী ছিলেন তরুণ রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী ড. কামাল হোসেন। তিনিও (ড. কামাল) পাকিস্তান কারাগারে বন্দী ছিলেন।
গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, আমার সৌভাগ্য হয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো একজন নেতার সঙ্গে কর্মী হিসেবে কাজ করার। এই বাংলাদেশ যতদিন থাকবে ততদিন বাংলার মানুষ তাকে শ্রদ্ধা করবেন। তিনি বাংলাদেশকে স্বাধীন করে জনগণকে দেশের মালিকানা হিসেবে রেখে গেছেন। সেদিনের কথা মনে করে তিনি বলেন, ১০ জানুয়ারি বিশেষ দিন। একসঙ্গে আমরা দেশে ফিরে এসেছি। আমার জন্য দিনটা আনন্দের। তিনি স্মৃতিচারণা করে বলেন, আমরা অসাধারণ এক নেতৃত্ব পেয়েছিলাম। সেই নেতৃত্বের কারণেই আমাদের স্বাধীনতা সম্ভব হয়েছিল। বাংলাদেশ যত দিন থাকবে, ওনাকে (বঙ্গবন্ধু) সবাই শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। সংবিধানের ৭ম অনুচ্ছেদে লেখা আছে দেশের মালিক জনগণ। স্বাধীন দেশে স্বৈরাচার থাকার কোনো অধিকার নেই। এই দেশের প্রতিটি জনগণ কেন তার মৌলিক অধিকার পালন করতে পারে সে কথা বঙ্গবন্ধু বলে গেছেন। তিনি কখনো অন্যায়ের ব্যাপারে আপোষ করেননি।
অতীতের স্মৃতিচারণ করে ড. কামাল হোসেন বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমরা খুবই অল্প সময়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধুকে হারিয়েছি। ১৯৭৫ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। দুঃখ লাগে, অন্যান্য দেশের জাতির জনক ২০-৩০ বছর সরকার প্রধান হিসেবে থাকেন। আমাদের দুর্ভাগ্য যে ওনাকে (বঙ্গবন্ধু) খুব কম সময়ের মধ্যে হারিয়েছি। আমাদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হলো ওনাকে বাঁচিয়ে না রাখতে পারা। বঙ্গবন্ধুকে হারানো দেশের অপ‚রণীয় ক্ষতি। এখন আমাদের অঙ্গিকার হোক তাকে যেন কখনো অমান্য করা না হয়। বঙ্গবন্ধুকে শুধু দেশের মানুষ নয় বিভিন্ন দেশের মানুষ তাকে শ্রদ্ধা করতো এবং ভালোবাসতো। আমাদের সংবিধান এবং মৌলিক অধিকারগুলো যেন সকলে অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে পারে সে ব্যাপারে আমরা সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করব।
পাকিস্তান থেকে লন্ডনে যাওয়া এবং লন্ডনের বিমানবন্দরের স্মৃতিচারণ করে ড. কামাল হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন দেশে ফিরছিলেন, লন্ডন বিমানবন্দরে তাঁকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে সম্মান জানানো হয়েছিল। ব্রিটেনের পুলিশ বঙ্গবন্ধুকে স্যালুট দিয়ে বলেছিল, ‘আপনার জন্য আমরা প্রার্থনা করেছিলাম।’ তখন বিশ্বব্যাপী বাঙালি শ্রদ্ধা ও সম্মান অর্জন করেছিল। তিনি বলেন, স্বাধীনতা মানে সব জনগণের, কোনো ব্যক্তির না। এখানে স্বৈরতন্ত্র থাকার কোনো অবকাশ নেই। নির্ভেজাল গণতন্ত্র থাকবে। জনগণের অধিকারে কোনো ঘাটতি থাকলে বোঝা যাবে বঙ্গবন্ধুর কথাকে অমান্য করা হচ্ছে। আজকের দিনে বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য এত সভা, অনুষ্ঠান হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানানোর উপায় হলো ওনার কথাগুলোকে ষোলো আনা পালন করা। জনগণের ভোটের অধিকার কেটে নিয়ে গঠিত সংসদ সার্বভৌম হিসেবে কাজ করতে পারছে কি না সেটা বুঝতে হবে।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতার গুরুত্ব উল্লেখ করে ড. কামাল বলেন, বিচারকেরা ঝুঁকি নিয়ে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন। সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে লাঞ্ছিত, অপমানিত করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি সত্য বলতে পিছপা হননি। তিনি দেশ ছেড়ে গেছেন। তার বিরুদ্ধে মামলা হওয়া লজ্জার। যাঁরা এসব করেন, তাঁদের বিবেকবোধ নেই, সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধা নেই।
আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মোকাব্বির খান, মহসিন রশীদ, জগলুল হায়দার, যুগ্ম সম্পাদক মোশতাক আহমেদ প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।