রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
কাঁচামালের অভাব ও প্লাস্টিকের মাদুর বাজারে আসায় চরম সংকটে পড়েছে সাতক্ষীরার মাদুর শিল্প। এছাড়া, উৎপাদিত পন্যের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় জীবিকার তাগিদে অনেকে এ পেশা ছেড়ে চলে গেছেন অন্য পেশায়। অথচ দুই দশক আগেও সাতক্ষীরার মাদুর শিল্প ছিলো রমরমা। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এই জেলার মাদুর দেশের বিভিন্ন এলাকাতে সরবরাহ করা হতো।
সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার তেতুলিয়া গ্রাম। দুই দশক আগেও এ গ্রামের ৯০ শতাংশ পরিবারই মাদুর উৎপাদন করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। বর্তমানে মাদুর উৎপাদন করেন হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার। তাদের একজন গোবিন্দ মন্ডল (৫৫)। তিনি বলেন, এখন আর আগের মতো লাভ হয় না মাদুর তৈরি করে। শুধু বংশ পরম্পরার কারনে পেশাটি এখনো ধরে রেখেছেন তিনি। তিনি বলেন, মাদুর উৎপাদনে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত মেলে (এক ধরণের ঘাস) ঠিকমত পাওয়া যায় না। যত সামান্য যা পাওয়া যায় তার দাম অনেক বেশি। তিনি বলেন, এক জোড়া বড় সাইজের মাদুর তৈরি করতে খরচ হয় ৫০০ টাকা। আর বাজারে বিক্রি হয় ৬০০ টাকা। সারা দিনে দুই জোড়া অর্থাৎ চারটি মাদুর উৎপাদন করলে ২০০ টাকা লাভ হয়, তা দিয়ে সংসার নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
একই উপজেলার যদুয়ারডাঙ্গী গ্রামের তারা পদ মন্ডল (৬০) জানান, চার পুরুষ ধরে মাদুর উৎপাদন করে আসছেন তারা। কয়েক বছর আগেও মাদুর উৎপাদন করে খুলনার পাইকগাছা, ডুমুরিয়া ও কয়রা মোকামে বিক্রি করা হতো। এলাকায় ব্যাপক হারে চাষ করা হতো মেলে। বর্তমানে মেলে চাষ না হওয়ায় মাদুর উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি বলেন, আগে সপ্তাহে ২০০ থেকে ২৫০ জোড়া মাদুর তৈরি হতো, বর্তমানে সপ্তাহ জুড়ে ৮ থেকে ১০ টি মাদুর তৈরি হচ্ছে। ফলে মেলে সংকটরে কারনে এ শিল্প প্রায় বিলুপ্তির পথে। তিনি আরো বলেন, টিকে থাকতে এ গ্রামের অনেক মানুষ এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছে। তাদের মধ্যে কেউ জেলার বাইরে ইটভাটায়, কেউ বা সাতক্ষীরা শহরে ভ্যান চালায়, আবার কেউ কামলা খাটছে।
সাতক্ষীরা সুলতানপুর বড় বাজারের পাইকারী মাদুর ব্যবসায়ী কওছার আলী জানান, তিন দশক ধরে তিনি মাদুরের ব্যবসা করেন। স্থানীয় ভাবে উৎপাদিত মাদুর কিনে তা জেলার বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করেন। এখন প্রতি জোড়া মাদুর আকার ভেদে ৩০০ থেকে ৬৫০ পর্যন্ত টাকা দরে বিক্রি করেন। কিšুÍ প্লাস্টিক মাদুর বাজারে আসার কারনে মেলে মাদুরের চাহিদা কিছুটা কমে গেছে। তিনি বলেন, একটি মাঝারী আকারের প্লাস্টিক মাদুর বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা, সেখানে একটি মেলে মাদুরের দাম ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। যে কারনে মেলে মাদুর উৎপাদন করে তেমন লাভ হচ্ছে না।
সাতক্ষীরা শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি নাসিম ফারুক খান মিঠু বলেন, সাতক্ষীরার মাদুর শিল্প ঐতিহ্যবহন করে। এখানকার হাতে বুনন মাদুর দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হতো। কিন্তু বর্তমান এই শিল্প চরম সংকটে পড়েছে। এই পেশার সাথে জড়িয়ে যারা জীবিকা নির্বাহ করতেন আজ তারা খুবই মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন। এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে সরকারের এগিয়ে আসতে হবে। যদি তাদের ঋন সহায়তা লাগে তাহলে সে ব্যবস্থা করতে হবে, তা না হলে অতিস্বত্তর সাতক্ষীরা থেকে এ শিল্প বিলুপ্তি হয়ে যাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।