Inqilab Logo

বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঘন কুয়াশায় ক্ষতিগ্রস্ত বীজতলা

কুষ্টিয়া ও গাইবান্ধার ধানচাষিরা দিশেহারা

অভ্যন্তরীণ ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৮ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০২ এএম

শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশায় দেশের অন্যান্য এলাকার মত কুষ্টিয়া ও গাইবান্ধা জেলার ধান চাষিরা বীজতলা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এ বিষয়ে আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদন-
কুষ্টিয়া থেকে এস এম আলী আহসান পান্না জানান,
কুষ্টিয়ায় শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশার কারণে জেলার ৬ উপজেলার মাঠে মাঠে বোরো ধান চাষের জন্য কৃষকদের তৈরি করা বীজতলা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। টানা কয়েকদিন ধরে সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত প্রচন্ড কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহের কারণে এ ক্ষতি হয়। অনেক চাষি তাদের বীজতলার চারা নষ্ট হওয়ায় নতুন করে বীজতলা তৈরি করে ফের মাঠে বীজ ছিটিয়েছে। অনেক চাষি চারা নিয়ে দারুন উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। ধানের চারা আক্রান্ত হয়ে কোল্ডইনজুরিসহ বিভিন্ন রোগের জন্য দিন দিন হলুদ বর্ণ ধারণ করে শুকিয়ে মরে যাচ্ছে চারা। বীজতলা নষ্ট হওয়ায় কুষ্টিয়ায় বোরো আবাদের এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শঙ্কা দেখা দিবে বলে মন্তব্য করছেন কৃষিবিদরা।
সরেজমিনে জানা যায়, কুষ্টিয়া জেলার ৬ উপজেলা দৌলতপুর, মিরপুর, ভেড়ামারা, কুষ্টিয়া সদর, কুমারখালী ও খোকসা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে কুয়াশায় ও শৈত্যপ্রবাহে বোরো ধানের বীজতলার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বীজতলাগুলোর অনেক স্থানে কোনো চারাই জন্মেনি। আর যেগুলোতে একটু হয়েছে সেই চারাগুলোর পাতায় দেখা দেয় লালচে ও হলুদ রঙ। বীজতলা ভালো রাখতে পলিথিন দিয়ে ঢেকেও কাজ হচ্ছে না। সারা বছরই কৃষকরা কোনো না কোনো জাতের ধান চাষ করে থাকেন। আর তার পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে আগেই ওই ধানের চারার বীজতলা তৈরি করেন। বোরো ধান চাষের জন্য শীতের শুরু ডিস্বেবর মাসের প্রথম দিকে চাষিরা বীজতলা তৈরি শুরু করেন। কিন্তু এ বছর শুরু থেকে শীতের তীব্রতা ও কুয়াশায় বীজতলা কোল্ড ইনজুরিতে পরে। এতে জেলার বিভিন্ন স্থানে বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বীজতলা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় কৃষকদের বাড়তি টাকা খরচ করে চারা কিনে ধান চাষ করতে হবে। বীজতলা তৈরির জন্য বীজ কেনা থেকে শুরু করে অনেক খরচ। তারপর আবার বার যদি চারা কিনে চাষ করতে হয়, তাহলে কৃষকদের খরচ বেড়ে যাবে কয়েকগুন।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আইলচারা ইউনিয়নের বড় আইলচারা গ্রামের কৃষক রোকন মন্ডল জানান, তিনি দুই কাঠা জমিতে বোরো ধানের বীজতলা তৈরি করেছেন। কিন্তু শৈত্যপ্রবাহ ও কুয়াশায় এবার বীজতলা ভালো হয়নি। লাল হয়ে গেলে তিনি থিয়োভিট ¯েপ্র করেন।
এলাকার কৃষক তোতা জানান, তারা নিজেরদের জমিতে ধান চাষের জন্য বীজতলা তৈরি করেছিলেন। কিন্তু কুয়াশায় বীজতলা ভালো না হওয়ায় এবার বাজার থেকে চারা কিনে ধান চাষ করতে হবে।
কুষ্টিয়া আলামপুর ইউনিয়নের দহকোলার চাষি হাফেজ আব্দুল্লাহ জানান, টানা শ্বৈত্যপ্রবাহের কারণে বীজতলা নিয়ে খুব সমস্যায় পড়েছি। আবহাওয়া ভালো না হলে এ বছর সঠিক সময় বোরো চাষ করা সম্ভব হবে না।
জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গত বছর কুষ্টিয়াতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি বোরোর আবাদ হয়। এ বছর ৩৫ হাজার ৭ শ’ ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তাছাড়া সঠিক পরিমাণের ইউরিয়া সার অথবা জিপসাপ সার দেয়া হলে এ সমস্যা কেটে যাবে।
তিনি আরও জানান, শৈত্যপ্রবাহ ও কুয়াশা থেকে বীজতলা রক্ষায় কৃষকদের দিনের বেলা বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা এবং ১ থেকে ২ ইঞ্চি পানি দিয়ে বিকেল থেকে পুরো রাত ভিজিয়ে রেখে সকালে পানি বের করে দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এছাড়াও কৃষকদের পাশাপাশি ইউনিয়ন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সচেতন থাকতে বলা হয়েছে। যেসব স্থানে বীজতলায় সমস্যা দেখা দিয়েছে সেসব স্থানে কীটনাশক প্রয়োগের পরামর্শও দেয়া হয়েছে।
গাইবান্ধা থেকে আবেদুর রহমান স্বপন জানান, শীতের ঘন কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহে কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হতে শুরু করেছে গাইবান্ধা বিভিন্ন এলাকার ইরি-বোরোর বীজতলা। আবহাওয়া অফিস এবারের শীতে শৈত্যপ্রবাহের যে কথা বলা হছে তাতে কোল্ড ইনজুরির প্রাদুর্ভাব আরও বাড়তে পারে।
জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর গাইবান্ধা সূত্র বলেছে, জেলার সদর উপজেলা, কিছু এলাকায় ইরি-বোরোর বীজতলায় কোল্ড ইনজুরি দেখা দিয়েছে। গাইবান্ধা এবার ৭ হাজার ১শ’ ১৪ হেক্টর জমির বীজতলায় বিভিন্ন জাতের ধানের বীজ বপন করা হয়েছে। আগামী অল্প কিছু দিনের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণ জমিতে ইরি-বোরোর বীজ বপন করা হবে বলে জানা গেছে। গাইবান্ধা এবার ১ লাখ ৩০ হাজার ৬শ’ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরোর চাষ হবে। ওই পরিমাণ জমিতে ৫ লাখ ৩৯ হাজার ৬শ’ ৮০ মেট্রিকটন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তীব্র শীত ও শৈত্যপ্রবাহে বীজতলার ক্ষতি হলেও ইরি-বোরো চাষ বা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে তা কোনো প্রভাব ফেলবে না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শীত আর কুয়াশার সাথে শৈত্যপ্রবাহের কারণে বীজতলার চারাগুলো সময়মতো বেড়ে ওঠেনি। চাড়ার বয়স হলেও তা ঠিকমতো বাড়ছে না। আবার কোনো কোনো বীজতলায় ধানের বীজ বপন করলেও তা প্রয়োজনীয় রোদ ও তাপমাত্রা না থাকায় এখনও গজাতে পারেনি। বীজতলায় চারা বের হলেও তা হলুদ ও লালচে বর্ণ ধারণ করছে। এর মধ্যেও কৃষকরা সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তারা বীজ তলার নিবিড় পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সদরের ধানঘড়া এলাকার কৃষক রুহুল আমিন জানান, প্রায় দেড় মাস হতে চললো বীজতলায় ধান বুনছি কিন্তু চারা বড় হচ্ছে না। আবার ঘন কুয়াশার কারণে বীজতলার অনেক জায়গায় ধান থেকে চারা বের হয়নি। সার ছাই দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না।
কৃষি স¤প্রসারন অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মোছা. সাহেরা বানু জানান, একটানা ৭দিন মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া বিরাজমান থাকলে বীজতলার ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আমরা কৃষকদেরকে প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পরামর্শ দিতেছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ