পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্টে ওয়ান টাইম প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহার একবছরের মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক রিট পিটিশনের শুনানি শেষে গতকাল সোমবার বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী এবং বিচারপতি দিলীরুজ্জামানের ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দেন। দেশের উপকূলীয় অঞ্চল ও হোটেল-মোটেল-রেস্টুরেন্টে ব্যাপকভাবে ওয়ানটাইম প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা)র রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত উপরোক্ত আদেশ দেন।
আদেশের পাশাপাশি প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহার বন্ধে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না-তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। এছাড়া আগামী ১ বছরের মধ্যে দেশের উপকূলীয় অঞ্চল ও হোটেল-মোটেল-রেস্টুরেন্টে ওয়ানটাইম প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহার বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া আগামী ২০২১ সালের ৫ জানুয়ারি প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার বন্ধে কী কী কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, সে সম্পর্কে বিবাদীদের জানাতে বলা হয়। রিটে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সচিব, বেসরকারি বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ প্লাস্টিক প্রোডাক্ট প্রডিউসার অ্যান্ড এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যানসহ ৮ জন বিবাদী করা হয়। আদেশের পর সংস্থার কৌঁসুলি সাঈদ আহমেদ কবির জানান, বাংলাদেশে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুসারে পলিথিন নিষিদ্ধ করার বিধান রয়েছে।
২০০২ সালে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়।
কিন্তু প্লাস্টিকের বিভিন্ন সামগ্রী যেমন কটন বাড, প্লাস্টিক বোতল, প্লেট, ব্যাগ ও ফুড, প্যাকেজিংয়ের ব্যবহার দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। দেশের ৫৪টি নদী ও উপকূলীয় অঞ্চল থেকে প্লাস্টিক বর্জ্যগুলো বঙ্গোপসাগরে ফেলা হচ্ছে। এতে পানি, মৎস্য ও সামুদ্রিক প্রাণীর মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। পরে ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতিসহ ১১টি সংগঠন একটি রিট পিটিশন করি এবং রিটে বিভিন্ন গবেষণাপত্র ও বিভিন্ন দেশে প্লাস্টিক পণ্য রোধে কার্যকর ব্যবস্থাগুলো আদালতে তুলে ধরেছি। শুনানি শেষে আদালত উপরোক্ত আদেশ দেন।
হাইকোর্টে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং সাঈদ আহমেদ কবির। সরকারপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ।
প্রসঙ্গত: পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুসারে দেশে প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তা সত্তে¡ও দেশে প্লাস্টিক বহুল ব্যবহৃত সামগ্রীর একটি। প্লাস্টিকের গামলা, বালতি, চায়ের কাপ, স্ট্র, পানির বোতল, কোমল পানীয়ের পাত্র ইত্যাদি রান্নাঘরের কোণ থেকে শুরু করে ঘর-গৃহস্থালির সব জায়গাতেই ব্যবহার হয়। এমনকি জুস কিংবা চা সরবরাহের জন্য হোটেলগুলোতে প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহৃত হয়। বাসাবাড়িতে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য রাখা বা গরম করার ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের পণ্য ব্যবহার করা হয়। অপেক্ষাকৃত সস্তা ও সহজলভ্য। বিশেষ করে ওয়ান-টাইম ইউজ প্লাস্টিক (বোতল, কাপ, প্লেট, বক্স, চামচ, স্ট্র) সামগ্রীর ব্যবহার ক্রমেই বাড়ছে। মাছ-গোশত, শাক-সবজি, ডাল, চিনি, রসগোল্লা ইত্যাদি খাদ্যদ্রব্য শোভা পাচ্ছে প্লাস্টিকের মোড়কে।
আকার ও ওজনে সুবিধাজনক হলেও প্লাস্টিকের বোতল স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তা সত্তে¡ও প্লাস্টিকের বোতলে শুধু পানি, তেল, সস, বা জুস নয়, ওষুধ পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। অবস্থা দেখে মনে হয় এটা প্লাস্টিকের যুগ। শুধু শহরেই নয়, উপকূলবর্তী সমুদ্র সৈকত ও অবকাশ যাপন কেন্দ্রগুলোতে রয়েছে ওয়ান টাইম প্লাস্টিক সামগ্রীর ব্যাপক ব্যবহার। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্লাস্টিকের পাত্রে কিছু গরম করা এবং প্লাস্টিকের বোতলে পানি পান করা ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। প্লাস্টিকের বোতলে থাকা রাসায়নিক পদার্থ খাবারের মধ্যে চলে যায়।
এটি খাবার থেকে শরীরে প্রবেশ করে। প্লাস্টিকপাত্রে খাবার গরম করলে ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান নির্গত হয়ে খাবারে প্রবেশ করে। এটি ঝুঁকি বাড়াচ্ছে ক্যান্সার, অ্যাজমা, অটিজম, হরমোনজনিত সমস্যা, গর্ভপাতসহ নানা রোগ-বালাইয়ের। শুধু স্বাস্থ্য ঝুঁকি নয়-একইসঙ্গে বায়ুদূষণ করছে। প্রাকৃতিক পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট করছে। প্লাস্টিক দ্রব্য অপচনশীল। অনেক মাছ ও সামুদ্রিক প্রাণী, সেসব প্লাস্টিক দ্রব্য ভক্ষণ করে। অনেক ক্ষেত্রে প্লাস্টিক সামগ্রী হজম করতে না পেরে সামুদ্রিক প্রাণী মারা যাচ্ছে। বিশ্বে প্রতি মিনিটে অন্তত ৫ লাখ প্লাস্টিক বোতল বিক্রি হয়। বোতলটির প্রয়োজনীয়তা শেষ হওয়া সত্তে¡ও তা ফেলে না দিয়ে অনবরত ব্যবহৃত হয়।
গবেষণার তথ্যমতে, পানি ভর্তি বোতলে প্রতি তিনদিনে প্রায় ৩ লাখ ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি হয় প্রতি বর্গ সেন্টিমিটারে। একে তো ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ, অন্যদিকে ব্যাকটেরিয়া। এসব দিক বিবেচনা করে অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের বুন্ডানন শহর কর্তৃপক্ষ ২০০৯ সালে প্লাস্টিক সামগ্রী বিপণন নিষিদ্ধ করেছে। ২০১৬ সালে মার্কিনযুক্ত রাষ্ট্রও বিভিন্ন শহরে প্লাস্টিক বোতলজাত পানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।