Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ পাচ্ছে না স্বজনরা -রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ জানুয়ারি, ২০২০, ৬:৫০ পিএম

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে স্বজনরা সাক্ষাৎ করতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, প্রায় ৩১ দিন পর গত ১৬ ডিসেম্বর দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথে তাঁর স্বজনদের সাক্ষাতের অনুমতি দেয়া হয়েছিল। ইতোমধ্যে ১৯ দিন অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পরও দেশনেত্রীর নিকট স্বজনদেরকে সাক্ষাতের সুযোগ দেয়া হয়নি। এ বিষয়ে কারাকর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে অনুরোধ করার পরও এখনও পর্যন্ত অনুমতি দেয়া হয়নি। সরকারের নেক নজরে থাকার জন্য কারাকর্তৃপক্ষ দেশনেত্রীর আত্মীয়স্বজনদের দেখা করতে দিচ্ছেন না। এটি কর্তৃত্ববাদী শাসনের চরম বহি:প্রকাশ।

শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, এই সরকার আইন, আদালত ও বিচারাঙ্গনকে নিজেদের কব্জায় নিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার ন্যায়বিচার পাবার অধিকার হরণ করে নানা কায়দায় নির্যাতনের বিভিষিকা অব্যাহত রেখেছে। কারাবন্দী বেগম জিয়ার সাথে তাঁর পরিবার-পরিজনদের দেখা করতে না দেয়া কারাবিধির শুধু চরম লঙ্ঘনই নয়, বরং এটি একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবিশ্বাস্য উত্থানের চরম নজীর।
তিনি বলেন, গত ২৭ ডিসেম্বর দেশনেত্রীর আপন বোন বেগম সেলিমা ইসলাম, পুত্রবধু শর্মিলা রহমান, নাতনি জাহিয়া রহমান, নাতী শামীন ইসলাম, রাখীন ইসলাম ও নাতনী আরিবা ইসলামকে দেশনেত্রীর সাথে সাক্ষাতের জন্য কারাকর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত আবেদন করা হয়েছিল, কিন্তু কারাকর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোন কর্ণপাত করেনি। দেশনেত্রীর প্রতি সরকারের এই আচরণ শুধু দেশী নয় আন্তর্জাতিক আইনেরও লঙ্ঘন। এমনিতেই তিনি গুরুতর অসুস্থ, এই মূহুর্তে নিকটজনরা বেগম জিয়ার সাথে দেখা করলে তিনি মানসিক শান্তি পাবেন। অথচ অগণতান্ত্রিক সরকার মানসিক শান্তির সেই সুযোগটুকুও বেগম জিয়াকে দিতে চায় না। বেগম খালেদা জিয়ার মানবাধিকার কেড়ে নিয়েছে সরকার।
রিজভী বলেন, আমরা বারবার বলেছি-দেশনেত্রীর নামে মামলা এবং সাজা দেয়া সম্পূর্ণরুপে প্রতিহিংসার বহি:প্রকাশ। সাজা দেয়ার জন্য দেশনেত্রীর বিরুদ্ধে সাজানো মামলা দেয়া হয়েছে। উদ্দেশ্য হচ্ছে-নির্জন ও অস্বাস্থ্যকর কীট পতঙ্গ ভরা কারাকক্ষে থাকতে বাধ্য করে তাঁর পছন্দমতো বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ না দিয়ে ধীরে ধীরে তাঁকে নি:শেষ করে একদলীয় দু:শাসনকে নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ করা।
বিএনপির এই নেতা বলেন, বিগত ১১ বছর ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক লুট হলো, শেয়ার মার্কেট লুট হলো, রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাংকগুলো হরিলুট হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। লুটের কারণে দেশের অর্থনৈতিক সেক্টর একেবারে ভেঙ্গে পড়েছে। উচ্চ আদালতের দ্বারা প্রমাণিত বেসিক ব্যাংকের অবৈধ নিয়োগ ও লুটের সাথে সরকারের লোকেরা জড়িত। চারিদিকে দুর্নীতির মহাসমারোহ চললেও তাদের বিরুদ্ধে কোন মামলাও হয়নি কিংবা কোন সাজাও হয়নি। বালিশ কান্ড, পর্দা কান্ড, মেডিকেল যন্ত্রপাতি ও বই কান্ড এমন কোন কান্ড নেই যা বর্তমান সরকারের আমলে ঘটেনি। আর ক্যাসিনো কান্ড, জুয়া কান্ড ও টাকার খনি কান্ড তো রুপকথার কাহিনীকেও হার মানিয়েছে। অথচ সরকার চোরকে চুরি করতে বলে নিজেরা সততার পুজারী সাজছেন। আওয়ামী লীগের টপ টু বটম অর্থাৎ জাতীয় থেকে ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত নেতাকর্মীদের কাড়ি কাড়ি টাকা, বিলাসবহুল গাড়ি এবং দুবাই ও মালেশিয়াতে সেকেন্ড হোম রয়েছে। নিজেদের এই সমস্ত কালিমা ঢাকতেই নির্দোষ বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে কথিত দুর্নীতির মামলা সাজিয়ে তাঁকে কারাবন্দী করে রাখা হয়েছে। ভয়ঙ্কর খুনী, সন্ত্রাসী এবং ফাঁসির দন্ডের আসামীরা অহরহ জামিন পাচ্ছে এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমাও পেয়ে যাচ্ছে-কারণ তারা ক্ষমতাসীনদের ঘনিষ্ঠ, অথচ যিনি সম্পূর্ণ নির্দোষ এবং বারবার যিনি স্বৈরাচারের অন্ধকার খাঁচা থেকে গণতন্ত্রকে মুক্ত করেছেন সেই বেগম জিয়াকে অন্ধকার কারাগারে আটকিয়ে রেখে জামিন দেয়া হচ্ছে না।
বেগম জিয়ার অস্তিত্বই যেন সরকারের কাছে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপজ্জনক মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বেগম জিয়া সবচেয়ে জনপ্রিয় ও গণতন্ত্রের প্রশ্নে আপোষহীন। সরকারের যতোই অবৈধ কর্মকান্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে ততোই বেগম জিয়া ও গণতন্ত্রের প্রতি তাদের ভয় বাড়ছে। তাই গত মিডনাইট নির্বাচনের পর বেগম জিয়ার প্রতি তাদের আগ্রাসী অসহিষ্ণুতা প্রবল হয়ে উঠেছে। বেগম জিয়ার সেই অধিকারটুকু নেই যে অধিকারটুকু একজন সাধারণ বন্দীদের রয়েছে। সাধারণ বন্দীদের ৭ দিন পরপর সাক্ষাতের সুযোগ রয়েছে, কিন্তু দেশনেত্রীর সেই সুযোগ নেই। নাৎসী দু:শাসনের তামসীক প্রভাব খাটিয়ে বেগম জিয়াকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন অসহনীয় করার জন্য তাঁর রক্তসম্পর্কের নিকটাত্মীয়দের দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না। অসুস্থ দাদীকে দেখার জন্য সদ্য বিদেশ থেকে ছুটে এসে দেখা না পাওয়ায় শিশু-কিশোর নাতী-নাতনীদের বুকফাটা কান্নার আহাজারি আকাশে বাতাসে ধ্বণিত হলেও সরকারের পাষাণ হৃদয়ে তা বিন্দুমাত্রা আঁচড় কাটেনি। তাদের কষ্ট-বেদনা ও দীর্ঘশ্বাসে গোটা জাতি ব্যথিত হলেও সরকার ও কারাকর্তৃপক্ষের তাতে কোন যায় আসে না। দেশনেত্রী এই সরকারের চরম নির্যাতনের শিকার, তিনি স্বামীকে হারিয়েছেন, এই সরকার ও সরকারের দোসরদের নির্যাতনে ছোট ছেলেকে হারিয়েছেন, বড় ছেলে নির্যাতন-নিপীড়ণে বিদেশে চিকিৎসাধীন থাকলেও তাঁর বিরুদ্ধে সরকারী স্টিমরোলার চলছে। কিন্তু বেগম জিয়ার নাতি-নাতনিদের অশ্রুতে কি দেশের মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করে না ? ক্ষুদ্ধ ও ব্যথিত জনগণ গুমরে গুমরে দিন কাটালেও যেকোন মূহুর্তে এর উদগীরণ ঘটবেই। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যখন কারাগারে বন্দী ছিলেন তখন কারাকর্তৃপক্ষ তাঁর কত আবদারই পূরণ করেছে, তা সারাজাতি জানে। অথচ কারাবিধি অনুযায়ী প্রাপ্য সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন বেগম জিয়া। আমি এই মূহুর্তে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথে তাঁর স্বজনদের সাক্ষাতের সুযোগ দিতে জোর আহবান জানাচ্ছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রিজভী

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ