পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘পেঁয়াজের মার খাইতে চাই না। রোজার সময় দুই লাখ টন অতিরিক্ত পেঁয়াজ প্রয়োজন হয়। আমাদেরকে পেঁয়াজ আমদানি করতে হবে। আমাদের কোনো পথ নেই। ভারত যদি ওপেন করে দেয়, আমরা ওয়ে-আউট করবো যে আপনাদের কী পরিমাণ লোকসান হচ্ছে। একটাই দোহাই আপনাদের কাছে, রাতারাতি বড়লোক হওয়া যাবে না, রাতারাতি ভাগ্য পরিবর্তন করা যাবে না। রমজান মাসটাকে স্পেশাল কনসিডার করবেন, এটাই আমাদের আবেদন। পেঁয়াজ আমদানি করবই, পেঁয়াজের মাইর আমরা খাব না।’
আসন্ন রমজান মাসকে সামনে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুদ, সরবরাহ, আমদানি, মূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে গতকাল আমদারিনকারক, ব্যবসায়ী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী এসব মন্তব্য করেন।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, রোজার মাসে যেন লজিক্যাল হই, রজমানে সহনীয় লাভ করবেন। আজ বাজার (দর) কী আছে এটা এক ঘণ্টার মধ্যে বের করা যায়। পরের স্টেপগুলোর দাম সবার সঙ্গে আলোচনা করে আমরা বেঁধে দিতে চাই। রিটেইলে ১০ টাকা লাভে ছাড়তে বলেছেন, রাজি হয়ে গেছি, ২০ টাকা বেড়ে গেলে ভোক্তা (ভ্রাম্যমাণ আদালত) না পাঠিয়ে কী করব? বুঝতে পারছেন কথাটা ভাই?’
টিপু মুন্সী বলেন, মন্ত্রণালয়ের তথ্য-উপাত্তের সমন্বয় নেই। সঠিক তথ্য না পেলে কখনোই বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। কৃষি থেকে চাহিদার কোনো ফিডব্যাক পাই না। চাহিদা ঠিক কত, সেটি না জানালে আমদানি হবে কীভাবে?
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, রমজান সামনে রেখে আমাদের পেঁয়াজ আমদানি করতেই হবে। আমি আশা করছি ব্যবসায়ীরা নীতি-নৈতিকতার সঙ্গে ব্যবসা করবে। রাতারাতি বড়লোক হওয়ার ভাবনা পরিত্যাগ করে রমজানে সহনীয় বা সহায়তার মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে। টিপু মুন্সী বলেন, সরকারের তরফ থেকে লোকসান হলেও পেঁয়াজ নিয়ে আর সমস্যা হতে দেব না। আমরা নিজেরা উদ্যোগী হয়ে প্রচুর পেঁয়াজ আমদানি করবো। ব্যবসায়ীরাও পেঁয়াজ আমদানি করবেন। ভারত থেকেও পেঁয়াজ আসবে। সেক্ষেত্রে আমরা টোটাল প্রাইজিং সিস্টেমটা দেখবো। যাতে কোনো ব্যবসায়ী লোকসানে না পড়ে। ব্যবসায়ীদের লোকসান ঠেকাতে যা যা করণীয় সব করা হবে। তাই আপনারা পেঁয়াজ আনেন, আমি আপনাদের সঙ্গে আছি। একটি বিষয় শুধু মাথায় রাখবেন, নৈতিকভাবে রমজান মাসে ব্যবসা করবেন।
বানিজ্যমন্ত্রী আরো বলেন, আমরা এ বছরটা মুজিববর্ষ হিসেবে পালন করবো। আর সামনের বছরটি বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তি বা সুবর্ণজয়ন্তী। তাই এ বছরটাতে সবাই সতর্ক থাকতে চাই। সবাই মিলে আমাদের সমস্যাগুলো সমাধান করার চেষ্টা করবো। আমি মন্ত্রী হয়েছি বটে, কিন্তু আমি যেহেতু ব্যবসায়ী তাই তাদের সমস্যাটা বুঝি। তাই আমার কথা-বার্তায় ব্যবসায়ীদের প্রতি টান লক্ষ্য করে অনেকই। তাই বলছি আপনারা একটু লজিক্যাল হন। ব্যবসায় লাভ একটু কম করেন। আমরা সমস্যাগুলো নিয়ে সব মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সহযোগী মনোভাব নিয়ে কাজ করবো।
দেশে পেঁয়াজের বাজার অস্বাভাবিক বেড়ে গেলে পরিস্থিতিতে বাজার সামাল দিতে মাঠে নামে ভ্রাম্যমাণ আদালত। সেই সময়ের কথা মনে করিয়ে দিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, ১২ ঘণ্টার মধ্যে দামটা দ্বিগুণ করে ফেললেন কেন? ২৯ সেপ্টেম্বর তারিখ (ভারত রপ্তানি) বন্ধ করল, ৩০ তারিখ সকাল বেলা (দাম) দ্বিগুণ কেন হল? নৈতিকতার বিষয়টা এখানে আছে। আমার কাছে এ প্রশ্নের উত্তর নেই।
সে সময় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযান কেন চালাতে হয়েছিল, সেই ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, যেখানে দ্বিগুণ লাভ করছেন সেখানে দরকার ভোক্তা (অধিকার অধিদপ্তরের অভিযান)। আমার কোনো দায় পড়ে নাই যে আপনাদের ওপর আঘাত হানব। আমাকে ক্লেইম করা হয়েছে-‘আপনি ব্যবসায়ী বলে বেশি ফেভার করছেন ব্যবসায়ীদের, আপনি আরো শক্ত হতে পারতেন, কঠোর হতে পারতেন।’
আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে চার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দুই লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসন্ন রমজানের আগে সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, এস আলম গ্রুপের মাধ্যমে দেড় লাখ টন এবং টিসিবির মাধ্যমে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। বড় গ্রুপের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি আমদানিকারকদেরও পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত থাকবে। তাদের যদি কোনো সমস্যা হয়, সেক্ষেত্রে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, মানুষকে শান্তি ও স্বস্তিতে রাখতে হবে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে জোরাজুরি করে কোনো লাভ হবে না। তারা লাভ করুক, তবে সেটা হতে হবে সহনীয় মাত্রায়। বাজারে গুজব রটিয়ে যাতে আতঙ্ক না ছড়ায়, সেই বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। তিনি বলেন, সভায় সিদ্ধান্ত হয়, চাহিদা যাই হোক, দুই লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতেই হবে। তাই নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসন্ন রমজানের আগেই চারটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দুই লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হবে।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, পেঁয়াজ দিয়ে একেবারে লাভবান হয়ে যাবে, তা কিন্তু নয়। এর আগে তারা যে দামে পেঁয়াজ এনেছে, সেই দামেই আমাদের দিয়েছে। তবে এবার তাদের বলেছি, মিনিমাম পাঁচ থেকে ছয় টাকা লাভ করতে। সরকার ব্যবসা করে না। আমাদের কাজ হলো ব্যবসায়ীদের সাহায্য করা। সুতরাং নতুন বছর আমাদের ভালো যাক, রমজান মাস যাতে ভালো যায় সেই কামনা করছি।
শ্যামবাজারের পেঁয়াজ আমদানিকারক মো. আবদুল মাজেদ বলেন, পেঁয়াজ নিয়ে ভবিষ্যতে আবারও সর্তক হবার প্রয়োজন আছে। পেঁয়াজের ঘাটতির জন্য গত সপ্তাহে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দাম বেড়ে গেছে। বৃষ্টি হলেই পেঁয়াজ নিয়ে বেশি সমস্যা তৈরি হয়।
মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা বলেন, চিনি, ভোজ্যতেলে ভ্যাট-ট্যাক্স কমিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে। আদা, রসুন, ডাল, চিনির কোনো ঘাটতি নেই। তবে ডলারের দাম বেড়ে যাবে, ভোক্তাদেরও কমদামে পণ্য দিতে হবে, আবার ভ্যাট-ট্যাক্সও বেশি দিতে হবে, এ ত্রিমুখী নীতি থেকে সরকারকে বেড়িয়ে আসতে হবে। তা নাহলে আমরা ক্ষদ্র ব্যবসায়ীরা বাঁচবো না। আমরা শতভাগ নির্ভরশীল সিটি, মেঘনা, এস আলম গ্রুপের মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠানের ওপর।
এফবিসিসিআই’র প্রতিনিধিরা জানান, পণ্যের দাম বাড়ার মূল কারণ সমন্বয়হীনতা। খাদ্য, অর্থ, কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে ব্যাপক সমন্বয়হীনতা রয়েছে। এখানে আগে সমন্বয় আনতে হবে। বানিজ্য মন্ত্রণালয় বাজার মনিটরিং করে থাকে। দেশের ৬৪টি জেলায় তাদের মনিটরিং টিম কাজ করে। তারা শুধু ক্রাইসিস হলেই বেশি কাজ করে। এজন্য তাদের আরও একটিভ করতে হবে। পাশাপাশি জেলা পর্যায়ের চেম্বারগুলোকে টিমের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে পারলে আরও ভালো হতো।
প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান মফিজুল ইসলাম বলেন, আমাদের উৎপাদন ও সাপ্লাই চেইনের সমন্বয় থাকতে হবে। সঠিক তথ্য না থাকলে কোনো কাজ সুষ্ঠুভাবে করা যায় না। তাই মন্ত্রনালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয় এনে পলিসিগত কোনো সমস্যা থাকলে ব্যবসায়ীদের নিয়ে আলোচনা করে সমাধান করতে হবে। আর আশা করছি ব্যবসায়ীরা রমজানে নীতি-নৈতিকতা বজায় রাখবে। তাহলেই আমরা রমজানে ন্যায্য মূল্যে পণ্য সরবরাহ করতে পারবো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।