Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শরীয়তের দৃষ্টিতে হাদিয়া বনাম ঘুষ

কাজী সিকান্দার | প্রকাশের সময় : ২ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

মানুষের জীবন চলার ক্ষেত্রে অন্যের সাথে সম্পর্ক তৈরী হয়। কোন সম্পর্ক রক্তের। কোন সম্পর্ক আত্মার। এ সম্পর্কগুলো কখনো ভাঙ্গে কখনো বা মজবুত হয়। দৃঢ় থেকে দৃঢ় হয়। সম্পর্ক ভাঙ্গা যাবে না। যত সম্পর্ক হয় তা আরো মজবুত করতে হবে। সম্পর্কগুলো টিকিয়ে রাখতে বা আরো মজবুত করতে নিজেদের মধ্যে কিছুর আদান-প্রদান হওয়া জরুরী। দেয়া-নেয়ার মাধ্যমে সম্পর্ক সুন্দর হয়। মহব্বত বাড়ে। আল্লাহর রাসূল সা. বলেন, তোমরা পরস্পর হাদিয়ার আদান-প্রদান করো, তাহলে মহাব্বত বৃদ্ধি পাবে। (ইমাম বুখারী রচিত আদাবুল মুফরাদ, হা/৫৯৪) নিস্বার্থভাবে, বিনিময় ছাড়া, চাওয়া ব্যতীত ও সতস্ফুর্তভাবে নিজেদের মধ্যে যে আদান প্রদান হয় তাই হাদিয়া। আল্লাহ তাঅলা বলেন, তারা যদি খুশি হয়ে তোমাদেরকে দিয়ে দেয়, তাহলে তোমরা তা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ করো। (সূরা নিসা আ/৪) আল্লাহ তাআলা এখানে খুশি হয়ে দিলে তা ভোগ করার জন্য বলেছেন। এটিই হাদিয়া। হাদিয়া অল্প হলেও রাসূল সা. গ্রহণ করার জন্য বলেছেন। আল্লাহর রাসূল সা. বলেন হে মুসলিম রমণীগণ! তোমাদের প্রতিবেশীর জন্যে সামান্য উপহার বা হাদিয়াও তুচ্ছ জ্ঞান করো না। যদিও তা বকরির পায়ের খুর হয়। (বুখারী হা/২৪২৭) কারণ পূর্বেও বলা হয়েছে হাদিয়ার দ্বারা নিজেদের মধ্যে মহব্বত বাড়ে। হিংসা-বিদ্বেষ দূর হয়। যেমন রাসূল সা. বলেন, তোমরা পরস্পরে হাদিয়া বিনিয়ম করো এর দ্বারা অন্তরের সঙ্কীর্ণতা ও হিংসা-বিদ্বেষ দূর হয়ে যায়। (মুসনাদে আহমাদ হা/৯২৫০) পূর্বের আলোচনা থেকে বুঝতে পারলাম ইসলামে হাদিয়া জায়েজ বৈধ। শুধু বৈধ নয় বরং তাতে রয়েছে সাওয়াব বা পূণ্য। হাদিয়া দেয়া-নেয়া উভয়টি মুস্তাহাব বা সুন্নাত। রাসূল সা. হাদিয়া দিয়েছেন ও নিয়ছেন। রাসূল সা. এর জন্য হাদিয়া হালাল ছিল আর সদকা হারাম ছিল। পরস্পর মহব্বত সৃষ্টি হয় হাসাদ দূর হয় হাদিয়ার মাধ্যমে। তাহলে আমাদের মাঝে হাদিয়ার প্রসার ঘটাতে হবে। এ হাদিয়া বৈধ হওয়ার ক্ষেত্রে কয়েকটি শর্ত রয়েছে। (ক) যা হাদিয়া দিবে ঐ জিনিস হালাল হতে হবে। হারাম জিনিস হাদিয়া দেয়া যাবে না। (খ) হাদিয়া সম্পূর্ণ নিজের সম্মতিতে দিতে হবে। পূর্বের আলোচনা হয়েছে। রাসূল সা. বলেন, কোন মুসলিমের সম্মতি ব্যতীত সম্পদ ব্যবহার করা হালাল হবে না। (সুনানে বায়হাকী হা/১১৩২৫) এ শর্তগুলোর প্রতি লক্ষ রেখে আমরা হাদিয়া দিবো ও নিবো। সুন্নাত জিন্দা হবে। এর দ্¦ারা সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধনও আরো সৌহার্দপূর্ণ হবে।

ঘুষ

হাদিয়ার ক্ষেত্রে যদি শর্তগুলো না থাকে। তবে তা হারাম হয়ে যাবে। সুতরাং শর্তগুলো যদি থাকে তবে উভয়ের জন্য হালাল আর যদি শর্তগুলো না থাকে তবে উভয়ের জন্য হারাম। যদি দাতা বাধ্য হয় জীবন সঙ্কট মুহুর্ত বা ক্ষতি হয় তবে তখন ঐ হাদিয়া দাতার জন্য জায়েজ হবে আর গ্রহীতার জন্য হারাম হবে। হাদিয়ার ওপর পিঠে আমরা দেখতে পাই ঘুষ।

ঘুষ হারাম। সরকারী বা বেসরকারী কোন কর্মকর্তা জনগণের টাকায় বেতনভাতা গ্রহণ করে থাকেন তখন তাদের কাজের জন্য জনগণ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেয়া ঘুষ। রাসূল সা. বলেন, প্রশাসনের ব্যক্তিবর্গ হাদিয়া কবুল করলে চুরি বলে গণ্য হবে। (অর্থাৎ হারাম হবে) (মুসনাদে আহমাদ খ ৫ পৃ ৪২৪) রাসূল সা. আরো বলেন, রাজা-বাদশাদের হাদিয়া গ্রহণ করা ঘুষের অন্তর্ভুক্ত। (খতিবে বাগদাদী রচিত তালখীসুল মুতাশাবিহ খ.১ পৃ. ৩৩১) ঘুষ কাকে বলে? এতে রাসূল সা. এর অন্য হাদীস দ্বারা আরো স্পষ্ট হয়। আসাদ গোত্রের এক ব্যক্তিকে রাসূল সা. যাকাতের কাজে নিয়োগ দেন। তার নাম ছিল ইবনুল লুতাবিয়্যাহ। কাজ থেকে ফেরার পর বলল এ হচ্ছে যাকাতের সম্পদ আর এগুলো আমাকে হাদিয়া দেওয়া হয়েছে। তখন রাসূল সা. মিম্বারে ওপর দাঁড়িয়ে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণকীর্তণের পর বললেন, আমার প্রেরিত কর্মচারীর কী হল, সে বলে এটা যাকাতের সম্পদ আর এটা আমি হাদিয়াস্বরূপ পেয়েছি। সে তার বাপ-মার ঘরে বসে দেখতে পারে না তাকে হাদিয়া দেওয়া হয় কিনা? আল্লাহর কসম করে বলছি তোমাদের কেউ খেয়ানত করলে তা নিজের কাঁধে নিয়েই কেয়ামতের ময়দানে উপস্থিত হবে। উট, গরু, বা ছাগল যাই হোক সেগুলো আওয়াজ করতে থাকবে। এরপর রাসূল সা. উভয় হাত উত্তোলন করে দু’বার বললেন, হে আল্লাহ! আমি পৌঁছে দিয়েছি। হাত উত্তলনের কারণে রাসূল সা. এর বগলের শুভ্রতা আমরা দেখতে পেলাম। (বুখারী হা/৬৫৭৮, ৮৮৩)

আমাদের সামনে স্পষ্ট হলো। সরকারী বা বেসরকারী কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী তার দায়িত্ব পালনের জন্য নিয়মিত বেতন/ভাতা পাওয়া সত্ত্বেও যদি বাড়তি কিছু অবৈধ পন্থায় গ্রহণ করে তাহলে তা ঘুষ হবে। তখন বিনা সুওয়ালে দেয়া হোক বা খুশি মনে দেয়া হোক। এখন তাহলে কি নিজেদের মধ্যেও হাদিয়া দেয়া যাবে না? একজন মানুষের সাথে কয়েক ধরণের সম্পর্ক থাকে। কখনো নিজেদের মধ্যে কেউ কর্মকর্তা হয় আর অন্যজন অধিনস্ত হয়। এক্ষেত্রে যতক্ষণ প্রশাসনিক কাজে রয়েছে ততক্ষণ যে কোন অতিরিক্ত দান ঘুষ হবে। যদি প্রশাসনিক কাজে না থাকে। এবং তাদের মধ্যে পূর্ব থেকেই হাদিয়া আদান প্রদানের সম্পর্ক রয়েছে তখন পূর্বে যতটুকু হাদিয়া দিত ততটুকুই দিতে পারবে এরচেয়ে বেশি নয়। যদি পরিচয়টি এ চাকরির সুবাধে হয়েছে তবে তখন গ্রহণ করলে তা হাদিয়া হবে না বরং তা ঘুষ হবে।

সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল পদে থেকে হারাম অর্থ গ্রহণ করা হচ্ছে ঘুষ। রাসূল সা. বলেন, ঘুষ প্রদানকারী ও গ্রহণকারী উভয়ের উপরই আল্লাহর লানত (ইবনে মাজা হা/২৩১৩) এ ব্যাধি সংক্রমিতভাবে দিন দিন বাড়ছেই। ঘুষ দানকারী-প্রদানকারী এবং সহযোগীরাও সমান অপরাধী। এর জন্য সবাই সমানভাবে লানতের কবলে পড়বে। এ ঘুষ লালিত দেহের ইবাদত আল্লাহ কবুল তো করবেনই না বরং তাদের জন্য লাঞ্ছনা, আখিরাতের আগুন অপেক্ষা করছে। ইহুদীদের দুর্গতির কারণ হিসেবে আল্লাহ তাআলা বলেন, তারা ম্যিথা শ্রবণে অত্যন্ত আগ্রহশীল এবং অবৈধ (ঘুষ-সুদ) ভক্ষণে অত্যন্ত আসক্ত (আল-কুরআন ৫:৪২) আল্লাহ তাআলা অপর আয়াতে বলেন, হে নবী আপনি (আহলে কিতাবদের) অনকেকেই দেখবেন পাপে সীমালঙ্ঘনে ও অবৈধ (ঘুষ-সুদ ইত্যাদি) ভক্ষণে তৎপর। তারা যা করে নিশ্চয় তা নিকৃষ্ট (আল-কুরআন ৫ : ৬২)
সুতরাং আমাদেরকে যে কোন প্রকারেই হোক ঘুষ নেয়া ও দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে ও রাখতে হবে।

ঘুষ কি হাদিয়া?

বর্তমানে আরেক মহাদুর্যোগ শুরু হয়েছে যে, ঘুষকে আর এখন ঘুষ বলে না, কেউ তাকে হাদিয়া বলে, কেউ তাকে উপহার, উপটৌকন, সম্মানী সহ বিভিন্ন নামে গ্রহণ করছে। কেউ যুক্তি দাঁড় করাচ্ছে আমিতো তার কাছে চাই না। তাই হাদিয়া হবে। জলজ্যন্ত একটি হারাম কে এখন হারামও মনে করছে না মুসলমান। বরং তাকে হালাল করার জন্য কোরআন হাদীস ও দেশের আইনের অপব্যখ্যা করছে ও বোল পাল্টাচ্ছে। ঘুষ হারাম শব্দ পরিবর্তন করে তাকে হালাল করা যাবে না। বরং শব্দ পরিবর্তনের জন্যও রয়েছে শাস্তির ব্যবস্থা। আল্লাহ তাআলা বলেন, এরপর যালিমরা বদলে দিল যা তাদের বলা হয়েছিল। তার পরিবর্তে অন্য কথা। এ কারণে যারা যুলুম করল তাদের উপর নাযিল করালাম আকাশ হতে এক মহাশাস্তি। কারণ তারা অধর্ম-অন্যা কাজ করেছিলো। (আল-কুরআন, ২:৫৯)
যদি কেউ ঘুষকে হাদিয়া বা উপটৌকন, সম্মানী ইত্যাদি নাম দিয়ে ভক্ষণ করার ফন্দি-ফিকিরে লিপ্ত তাদের সাবধান হওয়া চাই। ইসলামে মন্দকে মন্দ বলা যথার্থ, যদিও সে মন্দে লিপ্ত। যদি হারামকে হালাল মনে করা হয় এবং হারামকে হালাল শব্দ দিয়ে নিশ্চিন্তে গ্রহণ করে তবে ঈমানের সমস্যা হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, দুর্ভোগ তাদের জন্য যারা নিজ হাতে কিতাব রচনা করে এবং তুচ্ছ মূল্য প্রাপ্তির জন্য বলে এটি আল্লাহর নিকট হতে এসেছে। তাদের হাত যা রচনা করেছে তার জন্য শাস্তি তাদের এবং যা তারা উপার্জন করে তার জন্যও শাস্তি তাদের। (আল-কুরআন ২ : ৭৯) যুগে যুগে অসাধুরা কথা পরিবর্তন করে ফায়দা লুটতে চেয়ছে। ধর্মের কথা আইনের কথা উৎসাহের কথা এক শ্রেণির অসুস্থ লোকগুলো পরিবর্তন করেছে। সেই পরিবর্তনের ধারা এখনো রয়েছে।

ভারত উপমহাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে অহিংস আন্দোলনের প্রতীক ছিলেন মহাত্মা গান্ধী। তিনি জাতিকে দুর্ণীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার করতে বলেছিলেন, ঘুষ নেয়া অন্যায়। অনেকেই কৌতুক করে বলেন সেদিন সেখানে উপস্থিত সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নাকি তা শুনেছেন এভাবে যে, ‘‘ঘুষ নেয়া অন্য আয়’’। ঘুষ-দুর্ণীতিকে নিরুৎসাহিত করতে গান্ধীর মহৎবাণী দুর্ণীতিবাজরা নিজেদের মতো করে বুঝেছেন। নিজেরা না শুধরে, বিকৃত করেছেন গান্ধীর বাণী। ঠিক এখন ঘুষ হারামকে বিকৃত করছেন হাদিয়া, সম্মানী উপটৌকন নামে। যা সবচেয়ে গর্হিত কাজ।

ঘুষের ইতিকথা :

ঘুষ এখন সমাজিক একটি বড় ধরণের ব্যাধিতে রূপান্তরিত হয়েছে। বর্তমানে দেশে বড় মহামারি আকার ধারণ করেছে। সরকার শত চেষ্টা করেও তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। অনলাইন বিডিনিউজের ২৪ ডিসেম্বরের রিপোর্ট অনুযায়ী সেদিন জনৈক পদস্থ ব্যক্তি দুর্ণীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স অবস্থান ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেছেন কিছু সত্য কথাও। অধিদফতর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে সেদিন তিনি বলেছিলেন, স্কুল পরিদর্শনে গেলে খাম রেডি থাকে। উনারা যেয়ে খেয়ে-দেয়ে খাম নিয়ে এসে রিপোর্ট করে দেন। তিনি আরো বলেন, আমার বলার সাহস নেই যে, ঘুষ খাবেন না তা অর্থহীন হবে। একজন দেশের পদস্থ ব্যক্তি এ ঘুষখোরদের কাছে কত অসহায় বোধ করলে এমন কথা বলতে পারে। দেশের যেখানে রন্দ্রে রন্দ্রে এখন ঘুষ সেখানে এক দু’জন কিইবা করার আছে? এ ঘুষের প্রচলন শুধু বর্তমানে নয় হাজার বছর আগেও ছিল। খ্রিষ্টপূর্ব মৌর্য স¤্রাট চন্দ্রগুপ্তের এক রাজ উপদেষ্টা বলেছিলেন, জিহ্বার ডগায় বিষ বা মধু থাকলে তার স্বাদ না নিয়ে নির্লিপ্ত থাকা অবাস্তব, তেমনি অসম্ভব হল সরকারের তহবিল নিয়ে যারা লেনদেন করেন, তাদের একটুকুও সরকারের সম্পদ চেখে না দেখা।

ঘুষ দুর্ণীতি যদিও হাজার বছর ধরে চলে আসছে কিন্তু ইসলাম ধর্মে এ ঘুষকে হারাম ঘোষণা করেছে। তখন থেকে মুসলিমগণ ঘুষ গ্রহণ করতেন না। এ ঘুষের প্রচলন ভারতবর্ষে আবার শুরু হয়েছে ইংরেজদের আমল থেকে। ভারতবর্ষে ঘুষ শুরু হয় তখন থেকে। একবার এক নীলক একটি কৃষকের বাড়িতে আগুন দেয়। আর ঐ আগুন নিভানোর জন্য এক কৃষক চিৎকার দেয়। এ চিৎকার কেন দিল? তাই তাকে এক কুঠিতে চার মাস বেঁধে রেখেছে। অপরদিকে পুলিশকে ঘোষ দিয়ে বশ করে রেখেছে। নীলকরা (নীল কমিশন রিপোর্ট ১৮৬১ খ্রি.) এরপর থেকে ঘুষের গতি তীব্রতার সাথে বেড়ে চলেছে। এ সম্পর্কে অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদের বলা একটি চমৎকার গল্প রয়েছে। ঘটনা ব্রিটিশ শাসনামলের, এক তরুণ ম্যাজিষ্ট্রেট বিলেত থেকে ভারতবর্ষে এসেছেন বেশিদিন হয়নি। বিচারকাজ পরিচালনা করতে গিয়ে একটু-আধটু বাংলা শিখেছেন। একদিন বিচরকাজ শেষে নিজ কক্ষে বসে আছেন। হঠাৎ চাপরাশি হন্তদন্ত হয়ে তার রুমে ঢুকলেন। কোনরকম বিরতি না দিয়েই ম্যাজিস্ট্রেটকে বললেন, ‘হুজুর মিস্টার নাজির ইজ ইটিং ঘুষ। বিচারক মহাশয় বিপাকে পড়লেন। ঘুষ শব্দের অর্থ কী জানেন না তিনি। চাপরাশিও ইংরেজি কম বোঝেন। তাই কী আর করা। এ অবস্থায় ঘুষের অর্থ বোঝাতে চাপরাশি বিচারক মহাশয়কে সরাসরি নাজিরের রুমে নিয়ে গেলেন। বিচারক নাজিরের রুমে ঢুকে দেখেন টেবিলের উপর এক কাঁদি পাকা কলা। এই কলার কাঁদিই ঘুষ হিসেবে দেয়া হয়েছে নাজিরকে। সেখান থেকেই কলা ছিঁড়ে মুখে পুরেছেন নাজির। এ অবস্থায় তরুণ বিচারক বুঝলেন, কলা’কেই মনে হয় ‘ঘুষ’ বলা হয়। কিছুদিন আগে তিনি এ ফলটি খেয়েছেনও। খুবই সুস্বাদু লেগেছে তার কাছে। জেনেছেন এর পুষ্টিগুণও। তাই তরুণ ম্যাজিস্ট্রেট মনে করলেন ‘কলার’ প্রতিশব্দ ঘুষ। আর সেই বোধ থেকেই বললেন, ওহ, আই থিংক সামথিং রং। বাট ইউ আর ইটিং ঘুষ। ঘুষ ইজ গুড ফর হেলথ, এভরিবডি মাস্ট ইট ঘুষ। ঘটনাটি থেকে কয়েকটি জিনিস স্পষ্ট হয় এক ঘুষ আদান-প্রদানের প্রচলন ইংরেজদের থেকে তার নতুনভাবে বিস্তার হয় ভারতবর্ষে। আর এখন ভারত উপমহাদেশে ইংরেজদের শিখানো শিক্ষার সাথে তাদের ঘুষের প্রথাও চলছে দেদার। সেদিন তরুণ ম্যাজিস্ট্রেট ঘুষ না বুঝে বলেছিল, ঘুষ ইজ গুড ফর হেলফ। আজ ঘুষ বাস্তব জীবনের অংশই করে নিয়েছে জনগণ তাদের গুড হেলথের জন্য। এ ঘুষ যদি এভাবে চলতে থাকে তবে ভবিষ্যতে সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো ভেঙ্গে যাবে একদিন। আর এ পাপের লানতে ধ্বংস হবে জাতি। যা আল্লাহ পূর্বেকার জাতিদের সাথে করেছেন।

প্রতিকার

আমাদের আল্লাহর আযাব ও লানত থেকে বাঁচতে হবে। না হয় দুনিয়া ও আখেরাত দু’টি নষ্ট হবে নিশ্চিত। তাই ঘুষ সহ সকল অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। বর্তমানে যে মহামারি চলছে তা থেকে বাচতে হলে কয়েকটি পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। (চলবে)

 



 

Show all comments
  • SHAMSUL HOQUE SIKDER ৮ জানুয়ারি, ২০২১, ৫:০৩ পিএম says : 0
    বাজারে টাকা তুলে কবর জীয়ারত করে শেষে সেই টাকায় ক্ষরিত কৃত খাবার খাওয়া কি জায়েজ
    Total Reply(0) Reply
  • SHAMSUL HOQUE SIKDER ৮ জানুয়ারি, ২০২১, ৫:০৩ পিএম says : 0
    বাজারে টাকা তুলে কবর জীয়ারত করে শেষে সেই টাকায় ক্ষরিত কৃত খাবার খাওয়া কি জায়েজ
    Total Reply(0) Reply
  • মেছবাহ উদ্দিন ২৯ নভেম্বর, ২০২১, ৯:০৬ এএম says : 0
    উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছি দীর্ধদিন। প্রকাশনা থেকে প্রতিবছর হাদিয়ার নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের বিশাল অর্থ প্রদান করে দেশের প্রায় সবকয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। দৈনিক ইনকিলাবের এ লেখা তাদের জন্য যোগ্য উদাহরণ, প্রমাণ ও উপস্থাপন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ