Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চিলমারীতে উচ্ছেদ অভিযান

শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম থেকে | প্রকাশের সময় : ১ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০২ এএম

চিলমারীতে চলছে উচ্ছেদ অভিযান। পুনর্বাসনের আশা নেই, নেই থাকার স্থান। এতে বাঁধের হাজারো মানুষ ঠাঁই হারিয়ে দিশাহারা। দু’চোখে ঝড়ছে শুধুই পানি। উচ্ছেদ অভিযানে ঘর ভাঙলেও যাবে কই তা নিয়ে দুঃচিন্তায় হাজার হাজার পরিবার।
জানা গেছে, কুড়িগ্রামের চিলমারীতে পানি সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা কমিটির উদ্যোগে জেলার অভ্যন্তরস্থ ছোট নদী, খাল এবং জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্প এর অধীনে বুড়িতিস্তা খাল এর অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ অভিযান ২৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু করেছেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এ উচ্ছেদ অভিযান শুরু হলেও সহায় সম্বলহীন মানুষের জন্য করা হয়নি কোনো আশ্রয়ের স্থান, পুনর্বাসনের জন্যও হাতে নেয়া হয়নি কোনো পদক্ষেপ।ফলে প্রশাসন আর বুলড্রেজার এর ভয়ে বাড়িঘর ভেঙে নিলেও রাত কাটচ্ছেন বাঁধের পাশে খোঁলা আকাশের। এতে বাঁধের মানুষেরা দিশেহারা হয়ে আর্তনাদ করছেন। ১৯৮৮ সালের মহাপ্লাবনের পরেও যারা জন্মেছেন, তারাও শুনে শুনে উপলদ্ধি করেছিল কি ভয়াবহ বন্যা ছিল সেটা। বেশকিছুদিন ধরেই ডুবেছিল সারা দেশ। সেই ৮৮’র বাংলাদেশ হারিয়ে গেছে। উন্নয়ন আর উন্নতির আলোয় বদলে গেছে অনেক কিছু, শুধু বদলায়নি কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারীসহ বিভিন্ন নদীসংলগ্ন জনপদের প্রান্তিক মানুষদের ভাগ্য। তাদের অনেকেই সেই ভয়াবহ বন্যায় আর নদী ভাঙনের শিকার হয়ে ভাসতে ভাসতে বিভিন্ন বাঁধে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন। খেটে খাওয়া নিঃস্ব এসব মানুষের এলাকা ছাড়ার সাহস হয়নি। গ্রামগঞ্জে-চরে খেটে, ধারদেনা আর এনজিওদের কিস্তি চালিয়ে কোনোমতে বেঁচে আছে তারা। এবার উন্নয়নের ঝাপটা তাদের এক অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে। বাঁধের উপর সাজানো সংসার, মাচাভরা শিম, লাউ, গরু-ছাগল আর মুরগির বাক্স নিয়ে তাদের চলে যেতে বলেছে প্রশাসন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তারা নোটিশও দিয়েছে। দ্রুত ছাড়তে বলেছে তাদের। না হলে বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলা হবে তাদের সাজানো ঘর সংসার। ভয়ে ঘর ভাঙলেও উচ্ছেদে কোথায় যাবে তারা, কোথায় পাবে মাথা গোজার ঠাঁই। উন্নয়নের ছোবলে নীল হয়ে যাওয়া এসব মানুষের কাছে কোনো উত্তর নেই। কথা বলতে পারছিলেন না বৃদ্ধা আ. মালেক। এক সন্তানকে হারিয়ে এমনিতেই রয়েছেন বাকরুদ্ধ এর উপর ভাঙতে হচ্ছে সাজানো সংসার ছাড়তে হবে একমাত্র থাকার স্থানটিও। তিনি বলেন, বাবারে নদী মোর সইগে কারি নিছে খুব কষ্ট করি বাঁধের রাস্তার সাথে ১টা ঘর করি বউ, ছাওয়া, আর নাতি নাতনির নিয়ে আছিনু। প্রশাসনের লোকজন আসি কয়া গেইছে ঘর ভাঙি না নিলে ওমরা গাড়ি দিয়ে চুরমাচার করি দিবে তাই ভাঙি নিয়েছি কিন্তু এখন কই যাইম ছাওয়ার ঘরক নিয়া। শুধু আ. মালেক নয় একই কথা বলেন স্বামী হারা আনজু বেওয়া, ছিল চিলমারীর কাঁচকোল বাঁেধর রাস্তার পাশে ১টি ছোট্ট দোকান সেখানেই ছিলেন আর সারাদিন যা বিক্রি হতো তাই দিয়ে সন্তানদের নিয়ে খেয়ে না খেয়েই দিনপার করছিলেন কিন্তু তাকেও সরিয়ে নেয়া লাগছে সব কিছু। আ. মালেক আর আনজু নয় হাজার হাজার পরিবারের কান্নায় ভারি হয়ে উঠছে বাঁধের চারপাশ। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক জানা গেছে চিলমারীতে প্রায় ২০ কি. মি. বাঁধের পাশে প্রায় ৩ হাজার ৭শ’ পরিবার রয়েছে। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন বাঁধগুলো সংস্কার ও প্রশস্ত করা হবে তাই বাঁধের পাড়ে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের বাড়িঘর সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে তাদের পুর্নবাসনের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ