Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গোদাগাড়ীতে সরিষা ফুলের সমারোহ

মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌমাছি

মো. হায়দার আলী, গোদাগাড়ী (রাজশাহী) | প্রকাশের সময় : ১ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০৩ এএম

গোদাগাড়ী উপজেলায় মাঠে মাঠে সারি সারি সরিষা ক্ষেতে ভরে গেছে হলুদ ফুলে। মাঠে নয়না ভিরাম দৃশ্যের অবতারণা হচ্ছে। দেখে দর্শনার্থী ও কৃষকের মন ভরে যাচ্ছে। অনুকূল আবহাওয়া, সময়মত সার সেচ দেয়ায় বাম্পার ফলন আশা করছেন এলাকার কৃষক।
উপজেলা কৃষি সম্পসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গোদাগাড়ী উপজেলা ১৮৪ দশমিক ৮৭ বর্গমাইল। আবাদি জমির পরিমান ৩৫ লাখ ৭শ হেক্টর , বøকের সংখ্যা ২৭। গত বছর গোদাগাড়ীতে সরিষা আবাদ হয়েছিল ৪ হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে। এ বছর হচ্ছে ৬ হাজার ২০০ হেক্টর। আগে এ সময়ে কৃষক জমি পতিত রাখতেন। জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে ধানে সেচ, সার, কীটনাশক বেশি লাগায় উৎপাদন খরচ বেশি হয়। তাই কৃষককে সরিষা চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এখন নিজেদের অর্থনৈতিক প্রয়োজনে তারা জমিকে ভাল ভাবেই কাজে লাগাচ্ছেন। সরিষা আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে যা বর্তমান বাজারে ভোজ্য তেলের ঘাটতি পূরণ করবে। সরিষার খৈল গবাদিপশু ও মাছের উৎকৃষ্ট খাবার। গোদাগাড়ীতে জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে কৃষকের ফসল চাষে ভিন্নতা এসেছে। কৃষকের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, সরিষা চাষে খরচ কম, সময় এবং সেচ কম লাগে, দাম বেশি পাওয়ায় সরিষা চাষে কৃষক আগ্রহী বেশি হচ্ছে।
গোদাগাড়ী পৌর এলাকার সরিষা চাষী সামসুল ইসলাম বলেন, আমাদের এলাকায় আমন ধান ঘরে তোলার পর এবং ইরি বোরো ধান লাগানোর পূর্ব পর্যন্ত যেসব জমি পতিত কিংবা অনাবাদি পড়ে থাকে ওইসব জমিতে সাধারণত বোনাস ফসল হিসেবে উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় সরিষা চাষ করে কৃষক বেশ লাভবান হচ্ছে। উপÑসহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো. নূরুল ইসলাম বলেন, আমার এলাকায় অনেক কৃষক বিনাচাষে সরিষা উৎপাদন করছেন। মাত্র ৭০/৮০ দিনে কৃষক সরিষা ঘরে তুলতে পারেন। উৎপাদন খরচ কম হওয়া, সার, সেচ কম লাগায় এবং আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় কৃষক বেশ ভালই ফলন আশা করছেন। তিনি আরও বলেন, বিনা চাষে সরিষা উৎপাদন করার জন্য আমন ধান কাটার ১০/১৫ দিন পূর্বে জমিতে সরিষা বীজ ছিটিয়ে দেয়া হয়। প্রতি বিঘা জমিতে ১০ কেজি ইউরিয়া সার, ৫ কেজি পটাশ এবং বেশি কূয়াশার হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য একবার ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয় এবং সরিষা ক্ষেতে রোগ বালাই কম হয়। গত বছর বিজয় নগর মৌজায় কৃষক বিনা চাষে সরিষা করে বিঘাপ্রতি ৩ থেকে সাড়ে তিন মন সরিষা উৎপাদন করেন। প্রতিমন সরিষা ২৭শ থেকে ২৮শ টাকা দাম পেয়েছিল। উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের বিজয়নগরের কৃষক মো. শফিকুল ইসলাম (৩৫) বলেন, এ বছর ৪ বিঘা জমিতে বিনাচাষে সরিষা আবাদ করেছি। সরিষায় ফুল ভালই ধরেছে। আশা করি বাম্পার ফলন পাব ইনশা আল্লাহ। বিনাচাষে সরিষা উৎপাদনে জমি চাষ খরচ লাগে না, সার ও সেচ খরচ কম লাগায় উৎপাদন খরচ কম হয় বলে দিনে দিনে এ পদ্ধতিতে সরিষা চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উপজেলার মাঠে মাঠে সরেজমিনে দেখা যাচ্ছে হলদে-সোনালী সরিষা ফুলের সমারোহ। সরিষার ফুলে ফুলে মৌমাছি মধু সংগ্রহে ব্যস্ত। মধু সংগ্রহের সময় মৌমাছির গায়ে লাগা ফুলের পরাগরেণু স্ত্রী ফুলে বসে পরাগায়নে সাহায্য করে থাকে। এ যে সরিষা ফুল ও মৌমাছির অপূর্ব সম্পর্ক। উপজেলার কাপাশিয়া পাড়া বিলে এক শ্রেণীর মধু ব্যবসায়ী মৌমাছি সরিষা ক্ষেতে নিয়ে গিয়ে মধু সংগ্রহ করছেন। তারা সারা বছরে যে মধু বিক্রি করে থাকেন তার বেশি অংশই সরিষা মৌসুমে সংগ্রহ করে থাকেন বলে এ প্রতিবেদককে জানান। সরিষা ফুল থেকে সংগ্রহিত মধু বেশ সুস্বাদু ও মিষ্টি এবং গ্রাহকদের চাহিদাও বেশি। গোদাগাড়ীতে যেসব জাতের সরিষা চাষ করা হয়েছে তার মধ্যে উপশী জাতের টরি-৭, বারি-৯ বারি-১৪, বারি-১৫ এবং দেশি জাতের সরিষাও রয়েছে। গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি স¤প্রসারণ অফিসের এক কর্মকর্তা বলেন, এবছর আবহাওয়া অনুকুল থাকায় সরিষা চাষ ভাল হয়েছে, ফলনও ভাল পাবে, বিশেষ করে বারি-১৪, বারি-১৫ জাতের সরিষার বাম্পার ফলন আশা করা যাচ্ছে। সরিষার গাছ ও ভূষি জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বাসুদেবপুরের বিল চড়াই এবং দামকুড়ায় ২শ মৌমাছির বাক্র দেয়া আছে ফলে মধু উৎপাদন হচ্ছে এবং পরাগায়নে সহায়তা করায় সরিষার উৎপাদন ভাল হবে ।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, গোদাগাড়ী উপজেলার মাটি আবহাওয়া সরিষা চাষের জন্য বেশ উপযোগী, কৃষকের মাঝে দিন দিন সরিষা চাষে আগ্রহ বাড়ছে, তারা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ