Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ছন্দপতন প্রত্যাশা আর প্রাপ্তিতে

কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে রাজশাহী

রেজাউল করিম রাজু, রাজশাহী | প্রকাশের সময় : ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন শেষ হলেও তৃনমূলে এর রেশ কাটেনি। নেতৃত্ব পাওয়া না পাওয়ার আনন্দ ও বেদনার সুর। যেখানে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব গেছে সেখানকার নেতাকর্মীরা উচ্ছ্বসিত হলেও বঞ্চিতরা ভূগছেন না পাওয়ার বেদনায়।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে বিভাগীয় নগরী রাজশাহীর প্রত্যাশা আর প্রাপ্তিতে ছন্দপতন ঘটেছে। অনেক আন্দোলন সংগ্রামের সুতিকাগার রাজশাহী। অনেক দেশবরেণ্য নেতার সৃষ্টি হয়েছে এই রাজশাহীতে। প্রত্যাশা ছিল অন্তত একটি প্রেসিডিয়াম সদস্য পদ নিশ্চিতভাবে রাজশাহী পাবে। প্রত্যাশার পারদ চড়া ছিল জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ কামারুজ্জামানের যোগ্য উত্তরসূরি দলের নিবেদিত প্রাণ ও পরিক্ষিত নেতা রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে ঘিরে। যিনি যোগ্য পিতার যোগ্য সন্তান হিসাবে পরিজন নিয়ে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় ভূমিকা রেখে চলেছেন। শুধু রাজশাহী নয় পুরো উত্তরাঞ্চলজুড়ে দলকে শক্তিশালী করতে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কেন্দ্র থেকে যখন যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তা সফলভাবে পালন করে তার যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন। লিটন ভাই হিসাবে গণমানুষের নেতাই প্রতিষ্ঠিত। এমন নিবেদিত প্রাণ নেতাকে ঘিরে কেন্দ্রের কাছে প্রত্যাশা থাকাটা অনায্য কিছু ছিল না।

প্রত্যাশার পারদ তুঙ্গে থাকলেও কেন্দ্রীয় সম্মেলনের পর তাকে মূল্যায়ন না করায় তা ফুটো বেলুনের মত চুপসে গেছে। সাধারণ নেতাকর্মীরা প্রচন্ড রকমের হতাশ ও ক্ষুব্ধ। কেন এমনটি হলো এমন প্রশ্ন সবার মুখে। কেন রাজশাহীর প্রতি এমন বিমাতাসুলভ আচরন। যদিও সান্ত¦না পুরস্কারস্বরুপ সাবেক এমপি আখতার জাহানকে সদস্য পদটি দেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত সাতটি পদ শূন্য রয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সেখানে বিবেচনা করে নেতাকর্মীদের হতাশা কিছুটা কাটাতে পারেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যেখানে বিএনপি শাসনামলে রাজশাহী সব সময় একাধিক মন্ত্রী পেয়েছে। জাতীয় পার্টির আমলেও ছিল দুজন প্রতিমন্ত্রী। সেখানে বিগত পনের বছরে আওয়ামী লীগ শাসনামলে রাজশাহীর ভাগ্যে জুটেছে একটা প্রতিমন্ত্রী।

এখনো বিএনপির কেন্দ্রে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট কবির হোসেন, সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, যুগ্ম মহাসচিবের পর এখন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হিসাবে রয়েছেন। সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, শফিকুল হক মিলন ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক। এছাড়াও বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকত, কেন্দ্রীয় সদস্য আবু সাঈদ চাঁদ ও কাজী হেনা রয়েছেন।

ওয়াকার্স পাটির সাধারণ সম্পাদকের পদটি অলংকৃত করে আছেন ফজলে হোসেন বাদশা এমপি। এমনকি জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে রয়েছেন অধ্যাপক মুজিবর রহমান। এসব নেতারা নানা প্রতিকূলতার মাঝেও দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অথচ আওয়ামী লীগের মত ঐতিহ্যবাহী দলের নেতৃত্বেও কোটাখালি। এবার সেই শূন্যতা পূরণ হবার প্রত্যাশা থাকলেও তা হয়নি। একসময় রাজশাহীর চারঘাট থেকে প্রেসিডিয়াম সদস্য হয়েছিলেন মরহুম ডা. আলাউদ্দিন। ’৯৬ সালে তিনি বিএনপিতে যোগ দিয়ে মন্ত্রী হন। তারপর থেকে আর কেউ প্রেসিডিয়াম পদটি পায়নি। পদ্মায় অনেক পানি গড়ালেও শূন্যতা পূরণ হয়নি। এবারো পদ বঞ্চিত হওয়ায় নেতাকর্মীরা প্রশ্ন তুলেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে রাজশাহীর নেতৃত্ব উপেক্ষিত কেন?
১৯৭৫ সালের মর্মান্তিক পট পরিবর্তনের পর এ অঞ্চলে বিএনপি জামায়াত জোট শেকড় গেড়ে বসে। নির্যাতনের স্টিম রোলার চলে আওয়ামী লীগের ওপর। সবকটি আসন ছিল তাদের কব্জায়। পরবর্তীতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ঘুরে দাড়ায়। প্রবীণ নেতৃত্ব বিগত হওয়ায় নতুনরা হাল ধরেন। দলকে বিপর্যস্ত অবস্থা থেকে ফিরিয়ে আনেন। তৃনমূল থেকে নগর পর্যন্ত এখন সর্বত্র আওয়ামী লীগের জয়-জয়কার। এসব নেতাকর্মীরা কেন্দ্রের কাছে প্রতিদান প্রত্যাশা করতেই পারে। তাছাড়া নতুনদের কেন্দ্রে সুযোগ না দিলে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটবে কিভাবে। বিশ্লেষণ করে দেখা যায় নেতৃত্বের ভারসাম্যে পিছিয়ে পড়ছে রাজশাহী।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ছন্দপতন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ