Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

সরকার দেশকে ভারতের ডাম্পিং গ্রাউন্ড বানাতে সহযোগিতা করছে

সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশকে ভারতের ডাম্পিং গ্রাউন্ড বানাতে সহযোগিতা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবদুল মোমেন বলেছেন, ভারত থেকে বাংলাদেশে কেউ আসলে তারা যদি বাংলাদেশের নাগরিক না হন তাদের ফেরত পাঠানো হবে’। এর মাধ্যমে প্রমাণ হয় যে, ভারত থেকে বাংলাদেশে পুশ ইন হচ্ছে। সরকার এটা স্বীকার করে নিচ্ছে। ভারত বিতর্কিত নাগরিকত্ব বিল পাস করে বাংলাদেশকে একটা ডাম্পিং স্টেশন বানাতে চায়। যেভাবে মিয়ানমার থেকে ১১ লাখ রোহিঙ্গা এসে বাংলাদেশকে অনিশ্চয়তার মাঝে ফেলেছে। আর এক্ষেত্রে ভারতকে সহযোগিতা করছে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার।

গতকাল (বৃহস্পতিবার) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ভারতের বিতর্কিত ‘নাগরিক সংশোধনী আইন (সিএএ) ও এনআরসি’ সংকট নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সকল দেশের শান্তিপ্রিয় মানুষসহ, জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বের বিবেকবান মানুষেরা চরমভাবে উৎকন্ঠিত। বিশেষ করে, ভারত ও বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের সকল ধর্ম, বর্ণ, মত ও পথের মানুষ এ আইনের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে সরব প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে। এমনকি, পরিস্থিতির গুরুত্ব উপলব্ধি করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্প্রতি ‘দিল্লির রামলীলা ময়দানে’ প্রকাশ্য জনসভায় ‘নাগরিক সংশোধনী আইন (সিএএ) ও এনআরসি’ ইস্যুতে ভারতের জনগণের ক্ষোভ ও উৎকন্ঠা দূরীভূত করতে নমনীয় মনোভাব প্রকাশ করছেন। ঠিক এরকম পরিস্থিতিতে, ওবায়দুল কাদের ‘’বাংলাদেশ ও বিএনপি’’ সম্পর্কে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের পার্লামেন্টে দেয়া মিথ্যা, উদ্দেশ্যমূলক, ভিত্তিহীন ও ধর্মীয় বিভক্তি সৃষ্টিকারী বক্তব্যের পক্ষে অত্যন্ত নির্লজ্জভাবে অবস্থান গ্রহণ করেছেন। তিনি অমিত শাহের বক্তব্যের পক্ষে অবস্থান নিতে গিয়ে সমগ্র জাতিকে স্তম্ভিত ও ক্ষুব্ধ করেছেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ওবায়দুল কাদের অমিত শাহের সমর্থনে বলেছেন “ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যেটা বলেছেন বাংলাদেশের বাস্তবতায় এটা কি অসত্য? মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা দ্ব্যার্থহীন এবং অত্যন্ত সুস্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, ওবায়দুল কাদের, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং ভারতের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র রাবীশ কুমার বাংলাদেশ, বিএনপি এবং বেগম খালেদা জিয়ার সরকার সম্পর্কে যে বক্তব্য রেখেছেন তা সর্বৈব, মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বৈষম্যমূলক, ধর্মীয় বিভক্তি সৃষ্টিকারী এবং তা দুদেশের (আওয়ামীলীগ ও বিজেপি) অভ্যন্তরীন রাজনীতিতে সংকীর্ণ সুবিধা লাভের ঘৃণ্য কৌশলমাত্র। আপনি (ওবায়দুল কাদের) এবং দেশের স্বার্থবিরোধী আপনার অবৈধ সরকার অমিত শাহের বক্তব্যের পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে সুস্পষ্টভাবে শুধুমাত্র এদেশের মানুষের স্বার্থবিরোধী অবস্থান গ্রহণ করেননি, একইসাথে বিতর্কিত ‘ নাগরিক সংশোধনী আইন(সিএএ) ও এনআরসি’র ফলে ক্ষতিগ্রস্ত সকল নীরিহ সাধারণ ভারতীয় মানুষের স্বার্থহানিকর ঘৃণ্য সহযোগীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শেখ মুজিব সরকার ও শেখ হাসিনা সরকারের সময়কালকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, একটি গণবিরোধী, ভোটারবিহীন এবং দখলদার সরকার অবৈধ ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখতে কতটা নির্লজ্জ, হিতাহিতজ্ঞানশূন্য ও ক্ষমতালিপ্সু হতে পারে অমিত শাহের বক্তব্যকে সমর্থন করতে গিয়ে নিজেদের আদর্শিক পিতা শেখ মুজিব সরকারের সময়কালকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেও যে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেন না, ওবায়দুল কাদেরের অবস্থান সেটাই প্রমাণ করে। কারণ, ভারতের পার্লামেন্টে যে বিতর্কিত বক্তব্য দিয়েছেন অমিত শাহ সেখানে শুধুমাত্র বিএনপি সময়কালকেই নয়, শেখ মুজিবের ৭১ পরবর্তী সরকার এবং বর্তমান অবৈধ সরকারকেও সরাসরি অভিযুক্ত করেছেন। অমিত শাহের বক্তব্যই তার সুস্পষ্ট প্রমাণ। যেখানে তিনি বলেন, স্পিকার, সে দেশে কিন্তু নরসংহার থামেনি - একাত্তরের পরও বেছে বেছে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের ঘটনা ঘটেই চলেছে”।

তিনি বলেন, অমিত শাহের বক্তব্যকে সত্য বলে ধরে নিয়ে ওবায়দুল কাদের স্বীকার করে নিয়েছেন যে, “১৯৭১ সালের পরে শেখ মুজিব সরকার এবং বর্তমান অবৈধ শেখ হাসিনার সরকারের আমলেও সংখ্যালঘু নির্যাতন থামেনি বলে যে বক্তব্য অমিত শাহ ভারতের পার্লামেন্টে রেখেছেন, তা তিনি এবং শেখ হাসিনার অবৈধ সরকার মেনে নিয়েছেন”।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে দেশের স্বার্থবিরোধী কাজের মাধ্যমে বিদেশী প্রভুকে খুশী করাকে বিএনপি দেশদ্রোহীতার শামিল বলে গণ্য করে। অথচ ওবায়দুল কাদেরের সাম্প্রতিক বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে ভারত-তোষণনীতির এক ঘৃণ্য আখ্যানমাত্র। এর মাধ্যমে তিনি সুস্পষ্টভাবে বিএনপির ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দেশপ্রেম বিবর্জিত প্রতিহিংসার রাজনীতি চরিতার্থ করার অপচেষ্টা চালিয়েছেন। ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য কোনো বিচারেই বাংলাদেশের মানুষ গ্রহণ বা সমর্থন করতে পারে না। বস্তুতঃ অমিত শাহের প্রদত্ত বিএনপি ও বাংলাদেশবিরোধী বক্তব্যকে নিরংকুশভাবে সমর্থন করে ওবায়দুল কাদের ভারত সরকারের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র রাবীশ কুমারের বর্ধিত দায়িত্ব পালন করেছেন মাত্র।

বাংলাদেশকে টার্গেট করে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন করা হয়েছে অভিযোগ করে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ সন্নিহিত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের ১৯ লাখ নাগরিককে এনআরসি’র মাধ্যমে নাগরিকহীন ঘোষণা করা হয়েছে। জাতীয় নাগরিকপঞ্জী বা এনআরসি’র মাধ্যমে নাগরিকহীন ঘোষণা করার বিজেপি নেতৃত্বাধীন ভারত সরকারের পরবর্তী টার্গেট বাংলাদেশের বৃহত্তম সীমান্তবর্তী (২ হাজার ২৬২ কিলোমিটার) রাজ্য পশ্চিমবাংলা। ভারতের ‘নাগরিক সংশোধনী আইন (সিএএ) ও এনআরসির’ মাধ্যমে অবধারিত ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কখনোই এদেশের মানুষের স্বার্থে অবস্থান গ্রহণ করে না। ওবায়দুল কাদেরের সাম্প্রতিক বক্তব্য ও অবৈধ শেখ হাসিনার সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীদের বক্তব্যে এটাই প্রমাণিত হয় যে, ভারতকে খুশী করতে বাংলাদেশের ৪ হাজার ১৫৬ কিলোমিটার বিশাল সীমান্ত এলাকা অধীর আগ্রহে “নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) ও এনআরসির’’ ফলে নাগরিকহীন মানুষদের স্বাগত জানাতে বর্তমান নতজানু সরকার সদা প্রস্তুত। ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যে পরিষ্কার ক্ষমতাকে অবৈধভাবে টিকিয়ে রাখতে, তারা এদেশের সমগ্র জনগণের স্বার্থকে বিদেশী প্রভুদের কাছে বিক্রি করতেও পিছপা হবেন না।

বিএনপি সরকারের সময়ে সম্প্রীতির কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি ও বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সরকার যখনই রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্বে ছিলো তখন সর্বতঃ সকল ধর্মের মানুষের মাঝে সম্প্রীতি রক্ষায় সচেষ্ট এবং সফল ছিলো। ভারতের গুজরাট দাঙ্গা ও বাবরী মসজিদ সংকটকালীন সময়কার ঘটনা এর সুস্পষ্ট উদাহরণ। অথচ, শেখ হাসিনার ১৯৯৬-২০০১ এবং ২০০৯-২০১৯ সময়কালের এই ১৫ বছরে রামু, নাসিরনগর, নাটোরের বড়াইগ্রাম,ঠাকুরগাও, যশোরের মালোপাড়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যেসকল ঘটনা ঘটেছে তার প্রতিটির সাথেই আওয়ামীলীগের সংশ্লিষ্টতা বহুলভাবে প্রচারিত। এমনকি, গত ১০ বছরে আওয়ামী লীগের বহু এমপি, মন্ত্রীদের নাম গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, যারা বিভিন্নভাবে সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি দখল করেছে।

এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন প্রমুখ।

 

 



 

Show all comments
  • Miah Muhammad Adel ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৮:০৪ এএম says : 0
    What Mamata does not do, the Al that sacrifices the country's interests a lot does.
    Total Reply(0) Reply
  • HOSSAIN ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৮:৫১ এএম says : 0
    Who knows that already how many indians illegally, and legally entered in the Bangladesh through the borders, and custom-immigrations.
    Total Reply(0) Reply
  • HOSSAIN ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৮:৫২ এএম says : 0
    Who knows that already how many indians illegally, and legally entered in the Bangladesh through the borders, and custom-immigrations.
    Total Reply(0) Reply
  • HOSSAIN ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৮:৫২ এএম says : 0
    Who knows that already how many indians illegally, and legally entered in the Bangladesh through the borders, and custom-immigrations.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মির্জা ফখরুল

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ