দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
পূর্ব প্রকাশিতের পর
সাইয়্যিদুল মুরসালিন, শাফিউল মুযনবিন, খাতামুননাবিয়্যিন, মাহ্বুবে রাব্বুল আলামিন হযরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা করেন, “আনা মাদিনাতুল ইলমে ওয়া আলীয়্যুন বাবুহা” অর্থাৎ আমি জ্ঞানের শহর আর আলী তার প্রবেশ দ্বার। সুবহানাল্লাহ্। হযরত আলী (রা:) সম্পর্কে আল্লাহর হাবীব বলেন, হযরত হারুন আলাইহিস সালাম যেমন মুসা আলাইহিস সালামের ভাই, আলী আমার তেমন ভাই। অর্থাৎ দ্বিন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বণী ইসরাইলের বিখ্যাত নবী ও রাসুল হযরত মুসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর কাছে দোয়া চেয়ে তার বড় ভাইকে নবী হিসেবে কবুল করিয়ে নেন, আর মহানবী যেহেতু খাতামুন্নাবী, তাই তাঁর পরবর্তীতে কারো নবী হওয়ার সুযোগ নেই। তবে বেলায়াতের দরজা কুরআনুল কারিম উঠে যাওয়ার আগ পর্যন্ত খোলা থাকবে। নবুয়্যত হলো এমন একটি মাধ্যম যার জন্য আসমানি দলিলের প্রয়োজন হয়, আর বেলায়াত হলো এমন একটি মাধ্যম যার জন্য আসমানি কিতাব বা সহিফা নাযিলের বাধ্য-বাধকতা নেই। হযরত আলী রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর জন্ম হয় পবিত্র কা’বা শরীফের ভেতরে। সম্পূর্ণ পুত-পবিত্র অবস্থায় তাঁর মা তাঁকে প্রসব করে সর্ব প্রথম যার হাতে তুলে দেন, তিনি রাহ্মাতুল্লিল আলামিন। যেহেতু কা’বা শরীফের ভেতরে তাঁর জন্ম হয় সেই সুবাদে ইবলিশ শয়তানের যাবতীয় কু-দৃষ্টি হতে মুক্ত থেকে হযরত আলী (রা:) দুনিয়ায় আগমন করেন। আল্লাহর হাবীবের এলানে নবুয়্যতের পর সর্ব প্রথম যিনি ইসলাম গ্রহণ করেন তিনি উম্মুল মুমিনিন মা খাদিজাতুল কুবরা রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা। আর দ্বিতীয় ব্যক্তি হযরত আলী রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। তাঁকে কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহুও বলা হয় অর্থাৎ সম্মানিত চেহারা বা মুখমন্ডলের অধিকারী। এই উপাধি আর একজন সাহাবীর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। তিনি হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। তাঁদের উভয়ের ক্ষেত্রে এই উপাধি লাভের হেতু, তাঁরা জীবনে কখনও আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো এবাদত করেননি। হযরত আবু বকর (রা:) মহানবীর বাল্য বন্ধু, তিনি ছোটবেলা থেকেই আল্লাহর হাবীবকে ভালোবাসতেন। আইয়্যামে জাহেলিয়াতের যুগেও তিনি কখনও কোন মূর্তি বা দেব দেবীর পুজা-অর্চনা করেননি। আর হযরত আলী কাররা মাল্লাহু ওয়াজহাহু যেহেতু না-বালক বয়সেই ইসলাম গ্রহণ করেন সেহেতু গোটা জীবনে তাঁর দ্বারা একটি সগীরা গুনাহও সংঘঠিত হয়নি। আল্লাহর হাবীব তাঁদের উভয়কেই অত্যন্ত বেশী ভালোবাসতেন। তার একটি উদাহরণ দিচ্ছি। মহানবীর নবুয়তী জীবনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হচ্ছে পবিত্র মাদিনাতুল মুনাওয়ারায় হিজরত। নবুওতের তের বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই মহান আল্লাহপাকের নির্দেশে মহানবী মদিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেন। হিজরতের ঐতিহাসিক ঘটনার সাথে যেই দুইজন সাহাবীর নাম ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখা আছে, তাঁরা হলেন সাইয়্যেদেনা আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু এবং সাইয়্যেদেনা সিদ্দিকে আকবর রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। মহানবী হিজরতের পূর্বে কাফেরদের আমানত হযরত আলী রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে বুঝিয়ে দিয়ে বলেন, তুমি আমার বিছানায় আমার চাদর মুড়ে শুয়ে থাকবে। সকাল বেলা প্রত্যেকের আমানত যথাযথভাবে বুঝিয়ে দিয়ে মদিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিবে। আল্লাহর হাবীব এই কথাগুলো যখন বলতে ছিলেন তখন তিনি গৃহবন্দী ছিলেন এবং চতুর্দিকে খোলা তলোয়ার নিয়ে কাফেররা উন্মাদের মত মহানবীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার অপেক্ষায় ছিলো। আল্লাহর হাবীব তাদের সামনে দিয়ে বেরিয়ে গেলেন, কিন্তুু তারা কিছুই দেখলো না। অপর দিকে হযরত আলী রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ভালো করেই জানতেন, কাফেররা আল্লাহর হাবীবের একটি চুলও স্পর্শ করতে পারবে না। পাঠকগণ হয়ত ভাবছেন আল্লার হাবীবকে না পেয়ে কাফেররা হয়ত হযরত আলী রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, তাঁকে শহীদ করে দিবে। হ্যাঁ খালি চোখে দেখলে এমনটাই হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তুু হযরত আলী রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বেলায়াতের শীর্ষ ব্যক্তি তাই তাঁর চর্ম চক্ষু এবং অন্তর চক্ষু এতটাই প্রশারিত ছিলো যে, আল্লাহর হাবীবের বিছানায় আল্লাহর হাবীবের চাদর জড়িয়ে এমনভাবে শুয়ে থাকেন যেন দেখে মনে হয় স্বয়ং আল্লাহর হাবীব শুয়ে আছেন। পরবর্তীতে যখন হযরত আলী রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে জিজ্ঞেস করা হয় আপনি কি ভীত সন্ত্রস্ত ছিলেন? জবাবে হযরত আলী (রা:) বলেন, আমার জীবনের সবচাইতে আরামদায়ক ঘুম ছিলো হিজরতের রাতের ঘুম। কেননা আল্লাহর হাবীব যখন আমাকে বলেছিলেন, কাফেরদের আমানত বুঝিয়ে দিয়ে তুমি মদিনায় চলে আসবে, তখনই আমি বুঝে ছিলাম পৃথিবীর সমস্ত কাফের একত্রিত হয়েও আমার কিছুই করতে পারবেনা, তাই আমি নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে যাই। অপর দিকে হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু গারে সুরে ইতিহাসের এক নির্মম পরীক্ষায় অবতীর্ণ বিষাক্ত সাপের অনবরত আঘাতে সিদ্দিকে আকবরের গোটা দেহ নীল বর্ণ ধারণ করে, আল্লাহর হাবীব তাঁর উরুতে বিশ্রাম নিচ্ছেন বলে সিদ্দিকে আকবর বিন্দুমাত্র নড়াচড়া না করে নিরবে সাপের আঘাত সহ্য করে যাচ্ছেন। প্রশ্ন হলো কেন? হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু জানতেন আল্লাহর হাবীব ঘুমিয়ে আছেন তাই তিনি তার ব্যথা বুঝতে পারছেন না। কিন্তুু যার নির্দেশে আমরা এই গুহায় আশ্রয় নিয়েছি তিনি তো জাগ্রত আছেন। সুতরাং তিনি যদি না চাইতেন তবে বিষাক্ত সাপ কেন একটি পিপড়াও আমাকে কামড়াতে পারতো না। সংগত কারণে তিনি বুঝে নিয়েছিলেন এটা আল্লাহর হাবীবের সঙ্গী হিসেবে টিকে থাকার একটি পরীক্ষা মাত্র। অসহ্য যন্ত্রনার এক পর্যায়ে সিদ্দিকে আকবরের চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি মহানবীর পবিত্র মুখমন্ডলে পতিত হলে সাথে সাথে আল্লাহর হাবীবের ঘুম ভেঙ্গে যায়। আল্লাহর হাবীব বলেন, তোমার কি হয়েছে? ঘটনার বর্ণনা শুনে তিনি অত্যন্ত ব্যথিত হন। কেননা তিনি তো রাহমাতুল্লিল আলামিন। মহানবী তাঁর পবিত্র জবানের লালা মোবারক সিদ্দিকে আকবরের ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দেওয়ার সাথে সাথে সমস্ত বিষক্রিয়া শুধু অকার্যকরই হয়নি শরীরের যাবতীয় দূর্বলতা দূর হয়ে তিনি পূর্বের চেয়ে আরো বেশী শক্তিশালী হয়ে যান। ক্ষতস্থানে লালা মোবারক লাগার কারণে মহানবীর পবিত্র নূর সিদ্দিকে আকবরের রক্তের শিরা-উপশিরায় পৌছে যায়। এ কারণেই সিদ্দিকে আকবরের খেলাফতের সময় যখন যাকাত দিতে অস্বিকারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বয়ং ফারুকে আযম রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু দ্বিধান্নিত হয়ে যান। তখন সিদ্দিকে আকবর রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত ওমর ফারুক রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর দাড়ি মোবারক ধরে তিরস্কার করে বলেছিলেন, যদি কেউ যাকাত অস্বিকারকারীদের বিরুদ্ধে না দাঁড়ায় আমি একাই তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করবো। সিদ্দিক আকবর (রা:) তাঁর সমগ্র জীবনে মহানবীর জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন তার পরিপ্রেক্ষিতে মহানবী বলেছেন, দ্বীনের সাথে আমাকে যারা সহযোগীতা করেছে আমি তাদের সবার প্রতিদান দুনিয়াতে পূর্ণ করে দিয়েছি শুধুমাত্র সিদ্দিকে আকবর ছাড়া, সিদ্দিকে আকবরের প্রতিদান স্বয়ং আল্লাহ্পাক প্রদান করবেন সুবহানাল্লাহ্। এখন প্রশ্ন হলো তিনি আল্লাহ্ পাকের কাছে কি চাইতে পারেন? এক কথায় উত্তর উম্মতে মোহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিঃশর্ত মুক্তি। একই দাবী নিয়ে মা ফাতেমাতুজ্জাহ্রা আলাইহাস সালাম এবং কারবালার বাহাত্তর জন শহীদ-বদর, ওহুদ, খন্দক ছাড়াও আল্লাহর হাবীবের উপস্থিতিতে সাতাইশটি যুদ্ধের সকল শহীদগণ এবং ইমাম মাহদী আলাইহিস সালামের সহযোদ্ধাসহ সকল শহীদগণ অনুরূপ দাবী তুলবেন। কেননা দুনিয়াতে যাঁরা আল্লাহর হাবীবকে ভালোবাসেন আখেরাতে তাঁরা মহানবীর সন্তুষ্টির জন্য কি পরিমাণ পেরেশান থাকবেন তা লিখে বুঝানো যাবে না।
হযরত আলী (রা:) যেহেতু বেলায়াতের শীর্ষ ব্যক্তি তাই তাঁকে আল্লাহ্পাক বহুমূখী ইলম দান করেছেন। কিন্তুু অত্যন্ত দু:খের সাথে বলতে হচ্ছে, হযরত ওমর ফারুক রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর শাহাদাতের পর হযরত ওসমান গণী রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর সরলতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে উমাইয়া বংশের উচ্চা ভিলাসি লোকজন শুধুমাত্র রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য হযরত আলী (রা:) এবং তাঁর বংশধরের বিরুদ্ধে নানান ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। বিষয়টি পরিষ্কার হয় তখন, যখন হযরত হাসান বসরি রহমাতুল্লাহ্ আলাইকে প্রশ্ন করা হয়, আপনি তো সাহাবী নন অথচ পয়ত্রিশটি হাদিস আপনি মহানবী আল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন কিভাবে? উত্তরে ইমাম হাসান বসরি রহমাতুল্লাহ্ আলাই বলেছেন, হ্যাঁ আমি পয়ত্রিশটি হাদিস সরাসরি আল্লাহর হাবীবের বরাতে বর্ণনা করেছি একটি হেকমতের কারণে, কেননা ঐ সময় উমাইয়া শাসকরা হযরত আলী রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর নাম যেই মুখে উচ্চারণ করতো, তাকেই হত্যা করা হতো। তাই আলী (রা:) থেকে আমি যে সকল হাদিস জানতে পেরেছি শুধু ঐ হাদিস সমূহ আমার পক্ষ থেকে বর্ণনা করেছি। এবার ভেবে দেখুন, যাঁর ইলমের প্রশংসা যাঁর বিরত্বের প্রশংসা, যাঁর তাকওয়া পরহেযগারীর প্রশংসা স্বয়ং আল্লাহ্ এবং তাঁর হাবীব করেছেন তাঁর লিখিত কিতাব তাঁর সংরক্ষিত হাদিসের কিতাব খুঁজে খুঁজে বের করে উমাইয়া শাসকরা আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে। আল্লাহর হাবীব ঘোষণা করেছেন, বণী ইসরাঈলের উম্মতরা বাহাত্তর দলে বিভক্ত ছিলো আর আমার উম্মতরা তেহাত্তর দলে বিভক্ত হবে। সাহাবীগনের মধ্যে থেকে জানতে চাওয়া হলো, তাহলে আমরা কোন দলের অনুসরণ করব। উত্তরে মহানবী বললেন, আমার, আমার চার খলিফা এবং ইমাম মাহদী আলাইহিস সালামের অনুসারীরাই মূলত সঠিক দলের অন্তর্ভূক্ত।
এখন পাঠকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে হযরত আলী রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু চার খলিফার মধ্যে সর্বশেষ খলিফা, তাহলে তিনি কিভাবে ইলম আমল এবং মর্যাদায় সর্বশ্রেষ্ঠ? এই প্রশ্নের সহজ উত্তর হলো আমাদের মহানবী সম্মানিত সকল নবী রাসুলগনের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ একথা সবাই একবাক্যে স্বীকার করবে কিন্তুু দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা সবার শেষে। আর সে জন্যেই আরবি, বাংলা এবং ইংরেজিতে একটি বাক্য বহুল প্রচলিত- সব ভালো তার, শেষ ভালো যার। আল্লাহর হাবীবের ২৩ বৎসর নবুয়তি জীবনে প্রতিটি ঘটনার সাথে কোন না কোন ভাবে হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহুর সংশ্লিষ্টতা ছিলো যেমন হুদায়বিয়ার সন্ধির লেখক ছিলেন হযরত আলী (রা:)। যখন লেখা শেষ করে আলী (রা:) মুসলমানদের নেতা হিসেবে মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লার লিখলেন, কাফেররা তখন তীব্র বিরোধিতা করতে লাগল এই বলে, আমরা যদি মুহাম্মদকে রাসুল বলে মেনে নেই তাহলে তো সন্ধির প্রয়োজন পড়ে না। আল্লাহর হাবীব বললেন তাহলে তোমরা কি লিখতে চাও? তারা বলল মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ। মহানবী বললেন, ঠিক আছে আলী তুমি মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ কেটে দাও। হযরত আলী (রা:) বললেন, আপনার জন্য জীবন কুরবান করতে পারি কিন্তু এই কাজটি করতে পারবো না। সেদিন শুধু আলী (রা:) ই নয় ১৪শত সাহাবীর কেউ আল্লার হাবীবের এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারে নি। সবার এক কথা আমরা শহিদ হব তবু কাফেরদের এই অন্যায় দাবি জীবন থাকতে মেনে নেবো না। আল্লাহর হাবীব নিজের হাতে রাসুলুল্লাহ শব্দটি মুছে দিলেন এবং মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ লেখার নির্দেশ দিলেন। সৃষ্টির শুরু থেকে কেয়ামত পর্যন্ত এটাই প্রথম এবং শেষ নিদর্শন যে, কোন রাসুল তার নিজের হাতে আল্লাহ প্রদত্ত পরিচয় মুছে দিয়ে পিতৃ পরিচয়ে নিজেকে উপস্থাপন করেন। আল্লাহু আকবার কাবীরা। শুধুমাত্র এই একটি ঘটনাই হযরত আলী (রা:) হযরত ওমর (রা:) এমন কি হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা:) বুঝতে সক্ষম হননি। কিন্তুু উম্মুল মু’মিনিন মা আয়শা (রা:) ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন। আল্লার হাবীবকে অনুরোধ করেছিলেন এহরাম খুলে ফেরার জন্য মহানবী এহরাম খুলে যখন সাহাবিদের সামনে হাজির হলেন, তখন সাহাবীগণ একে একে সবাই এহরাম খুলে ফেললেন। অতঃপর মহান আল্লাহপাক তাঁর হাবিবের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে আয়াত নাজিল করলেন, “ইন্না ফাতাহ্নালাকা ফাতহাম্মুবিনা”
খয়বরের যুদ্ধে মুসলমানগণ প্রান-পণ যুদ্ধ করেও প্রতিপক্ষের কামুস দূর্গ দখল করতে পারছিলো না। মহানবী ঘোষণা করলেন, আগামীকাল যুদ্ধের ঝান্ডা তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হবে যিনি আল্লাহর ও তাঁর রাসুলের নিকট সবচাইতে বেশী প্রিয়। হযরত ওমর (রা:) পরবর্তিতে বলেছিলেন, আমি সারারাত ঘুমাতে পরিনি, এই কৌতুহলের জন্য যে, কে সেই সৌভাগ্যবান ব্যক্তি? পরের দিন আল্লাহ হাবীব যুদ্ধের ঝান্ডা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহুর হাতে তুলে দেন এবং পরবর্তী ঘটনা সবাই জানেন। কোন এক যুদ্ধে হযরত আলী (রা:) মারাত্মক আহত হন কাফেরের নিক্ষিপ্ত তীর তাঁর পা ভেদ করে এমন ভাবে আটকে যায়, কোন অবস্থাতেই তা ছাড়ানো সম্ভব হচ্ছিলো না। মহানবী বললেন, আলী তুমি নামাজে দাঁড়িয়ে যাও! হযরত আলী নামাজে দাঁড়িয়ে গেলেন কয়েক জন সাহাবী তীরটি আলী রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর পায়ের মাংস ছিড়ে বের করে নিয়ে এলেন অথচ তিনি কোন ধরনের ব্যথা অনুভব করলেন না। সুবহানাল্লাহ! নামাজ শেষে দেখেন তাঁর পা তীর মুক্ত । তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো আপনি কি কিছুই টের পাননি? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, না। এখন হয়ত কারো মনে প্রশ্ন জাগতে পারে রক্তস্নাত ব্যক্তিকে নামাজ পড়ার নির্দেশ দেওয়া কি জায়েজ? উত্তরে বলবো মহানবীর উপস্থিতিতে তাঁর কোন নির্দেশ কে না জায়েয মনে করা মানে কাফের হয়ে যাওয়া।
আমরা সাহাবীদের জীবনি থেকে জানতে পেরেছি, এক সাহাবী তাঁর নিজের বাগানে নামাজে দন্ডায়মান ছিলেন। এমন সময় একটি পাখি বাগানে প্রবেশ করে। গাছ পালার ঘনত্বের কারনে পাখিটি বের হওয়ার রাস্তা না পেয়ে এদিক সেদিক ছুটোছুটি শুরু করে এতে করে সাহাবীর নামাজের মনযোগে ব্যঘাত ঘটে। সাহাবী মনে করেন, এই বাগানই তাকে নামাজের ব্যঘাত ঘটিয়েছে তাই সাথে সাথে বাগানটি আল্লাহ রাস্থায় দান করে দেন। সুবহানাল্লাহ! এই ঘটনার দ্বারা আমরা বুঝতে পেলাম দুনিয়ার কোন সম্পদ সেটা যত মূল্যবানই হোক সাহাবীদের সামনে তা তুচ্ছ। কিন্তুু নামাজের একাগ্রতায় হযরত আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু যেই দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন, তা ইতিহাসে অনন্য। কোন এক যুদ্ধে হযরত আলী (রা:) এক কাফেরের বুকের উপর বসে তার শিরোচ্ছেদ করার পূর্ব মুহুর্তে কাফেরটি তাঁর পবিত্র মুখমন্ডলে থুথু নিক্ষেপ করে। সাথে সাথে আলী (রা:) তাকে ছেড়ে দেন। লোকটি অবাক হয়ে প্রশ্ন করে কি ব্যাপার তুমি আমাকে ছেড়ে দিলে কেন? উত্তরে আলী (রা:) বললেন, তুমি আল্লাহর দুশমন, আমি আল্লাহর সন্তুুষ্টির জন্য তোমাকে হত্যা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তুু যখন তুমি আমার মুখে থুথু ছুড়লে তখন তোমার প্রতি আমার ব্যক্তিগত ক্রোধ চলে আসে ঐ। অবস্থায় আমি যদি তোমাকে হত্যা করতাম, তাহলে কেয়ামতের ময়দানে আমাকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হতো। এই ঘটনার মাধ্যমে হযরত আলী রাযিআল্লাহু তায়লা আনহুর আল্লাহভীতি এবং তাসাউফের জগতের প্রধান ইমাম হিসেবে দেখতে পাই। তাঁর ইলমের গভীরতা সম্পর্কে সাহাবাকেরামগণ সর্বাধিক অবগত ছিলেন। আল্লাহর হাবীব বলেছেন, আমার পরে কেউ নবী হবে না, যদি হতো তবে ওমর হতো। হযরত ওমর (রা:)-এর শাসন আমলে হযরত আলী (রা:) কে তিনি সমগ্র আলমে ইসলামের প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করেন। কারণ শরিয়ত, মারফত, হাকিকত তথা ইলমের যত শাখা-প্রশাখা সেটা প্রকাশ্য অথবা অপ্রকাশ্য যাই হোক উম্মতে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মধ্যে হযরত আলী রাযিয়াল্লাহু তায়লা আনহুই সার্বোচ্চ ইলমের অধিকারী। তাই তো একদিন হযরত ওমর (রা:) তাঁর শাসন আমলে কোন এক ঘটনাকে কেন্দ্র করে বলেছিলেন, লাও লা আলীউন লাহালাকা ওমর অর্থাৎ আজ যদি আলী না থাকত তাহলে ওমর ধ্বংস হয়ে যেত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।