Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতের নাগরিকত্ব আইন ও নাগরিকপুঞ্জির পক্ষে দাঁড়িয়েছে আওয়ামী লীগ -রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৩:২৬ পিএম

আওয়ামী সরকার নিজ দেশের ভিন্নমতের মানুষদের কলঙ্ক লেপনের চেষ্টার দ্বারা ভারত সরকারের সর্বনাশা নাগরিকত্ব আইন এবং নাগরিকপুঞ্জি (এনআরসি) এই দুটি আইনের পক্ষে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেবরাও নিজেদের অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে বিদেশী মুরুব্বীদের প্রতিভু হয়ে তাদের কুর্ণিশ করছে। একারণে মুরুব্বীদের প্রীতিধন্য হওয়ার জন্য নিজ দেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি দলের বিরুদ্ধে মিথ্যা কলঙ্ক রটনা করতে প্রতিযোগিতায় নেমেছে। বাস্তবতা হলো-ভারতে নাগরিকত্ব আইন এবং নাগরিকপুঞ্জি (এনআরসি) দ্বারা মুসলিম খেদাও অভিযানের বিরুদ্ধে স্বয়ং ভারতের জনগণসহ বিশ্ববাসী যখন সোচ্চার তখন বিএনপি’র বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে আওয়ামী নেতারা উক্ত দুটি গণবিরোধী আইনকেই বৈধতা দান করছে। ক্ষমতা হারানোর ভয়ে ওবায়দুল কাদেররা পার্শ্ববর্তী দেশের গুরুজনদের অন্যায় কাজে সমর্থন দিলো।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকাসহ ভারতীয় পত্র-পত্রিকায় বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে দিল্লীর সম্পর্ক শীতল এবং টানাপোড়েন চলছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে। বিশ্বস্ত প্রতিবেশী দেশের সরকারের সাথে সম্ভবত: কোন কারনে অম্লমধুর বিরহ পর্ব চলছে। শেখ হাসিনার সরকারের। এতে করে প্রতিবেশীর আস্থাভাজন রাতের অন্ধকারে ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় থাকা এই অবৈধ সরকারের মাথা বিগড়ে গিয়েছে। ফলে মুরুব্বীদের তুস্ট করে শীতল সম্পর্ক উষ্ণ করতে আবোল-তাবল প্রলাপ বকা শুরু করেছে এই সরকারের মন্ত্রী ও নেতারা। নাগরিকত্ব আইন এবং নাগরিকপুঞ্জি (এনআরসি) জটিলতায় সংখ্যালঘু ভারতীয় মুসলমানদের রাষ্ট্রহীন ঘোষণার জেরে গোটা ভারত যখন বিক্ষোভে উত্তাল তখন আওয়ামী লীগ সরকার তাদের ন্যাক্কারজনকভাবে সমর্থন দিচ্ছে। সম্প্রতি ভারতীয় জনতা পার্টির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পার্লামেন্টে তাঁর বক্তব্যে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টানরা বর্তমান শেখ হাসিনা সরকারের সময় এখনো নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করার পর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব তাদের প্রতিবেশী মুরুব্বীদের সামাল দিতে দায় এড়ানোর জন্য দোষ চাপাচ্ছেন বিএনপির ওপর।
তিনি বলেন, গতকাল ওবায়দুল কাদের বলেছেন, “২০০১ সাল থেকে যে সংখ্যালঘু নির্যাতন এদেশে হয়েছে এটা কেবলমাত্র একাত্তরের বর্বরতার সাথে তুলনা হয়। বিএনপি যতোই সত্যকে চাপা দিতে চেষ্টা করুক না কেন, তখন কিভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার হয়েছে, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর। ওই অবস্থায় দেশ থেকে পালানোই ছিল স্বাভাবিক। অনেকেই জান-মালের নিরাপত্তার জন্য সেদিন পালিয়েছেন। বাংলাদেশে নির্যাতনের শিকার হয়ে যে সংখ্যালঘুরা ভারতে চলে গেছেন, তারা দেশে ফিরতে চাইলে গ্রহণ করা হবে।” ওবায়দুল কাদের এর এহেন বক্তব্য মিরজাফরের সাথেই কেবল তুলনীয়। মিরজাফররাই ভিতর থেকে বিশ্বাসঘাতকতা করে বিদেশী শক্তিকে দেশের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে সহযোগিতা করেছিল।
রিজভী বলেন, অমিত শাহ বিএনপিকে নিয়ে লোকসভায় যে মনগড়া, ভ্রান্ত এবং কাল্পনিক তথ্যের অবতারণা করেছিলেন সেটিকেই বৈধতা দিলেন ওবায়দুল কাদের সাহেব। ওবায়দুল কাদের সুর মিলিয়েছেন অমিত শাহ’র সাথে। যেমন মিরজাফর, জগৎশেঠ, রায়দুর্লভরা সুর মিলিয়েছিলেন লর্ড ক্লাইভদের সাথে। ভারতীয় আইনসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাশ করার সময় অমিত শাহ পার্লামেন্টে তাঁর বক্তব্যের একপর্যায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকারের নাম উচ্চারণ করে শিষ্টাচার বহির্ভূতভাবে সরাসরি অভিযুক্ত করে অসত্য বক্তব্য দেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, অমিত শাহ বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশে বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে সেখানে ব্যাপক হারে সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়েছে। নির্যাতনের শিকার সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় ভারতে পালিয়ে এসেছে’। এধরণের ধৃষ্টতাপূর্ণ কথা বাংলাদেশের জনগণ ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে হুমকি। অথচ ওবায়দুল কাদের নিজ দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি’কে কালিমালিপ্ত করতে অন্য দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষে সাফাই গাইলেন। ওবায়দুল কাদের বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের পক্ষে যৌক্তিকতা প্রমাণ করার জন্যই বিএনপিকে টেনে এনেছেন। এদেশের জনগণের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুমহান ঐতিহ্যকে কলঙ্কিত করলেন ওবায়দুল কাদের। দেশের গণতন্ত্রকে শুষে নিয়ে ওবায়দুল কাদেররা প্রভূদের কৃপালাভের আশায় সেই কথারই প্রতিধ্বনী করেছেন যেটি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘সাহেব-মোসাহেব’ কবিতার বাস্তব চরিত্র। সাহেব কহেন, “চমৎকার! সে চমৎকার!” মোসাহেব বলে, “চমৎকার সে হতেই হবে যে! হুজুরের মতে অমত কার’। কাদের সাহেবের বক্তব্যে অনুমিত হয়েছে যে, তারা ‘স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক’ এবং ‘সর্বোচ্চ শিখরে থাকা সোনালি অধ্যায়কে’ শাণিত করতে চান। কাদের সাহেব মুরুব্বীদের খুশী করতে বিএনপিকে নিয়ে যে আত্মবিনাশী ও দেশের সম্ভ্রমহানীকর কদর্য মিথ্যা বক্তব্য দিয়েছেন, আমি সেটির তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি। আসলে ওবায়দুল কাদের সাহেবরা ক্ষমতার মোহে অন্ধের মতো শেষ পর্যন্ত পথের সন্ধান পান না।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, দ্যর্থহীনভাবে বলছি, ২০০১ সাল কেনো, বিএনপির কোন শাসন আমলেই দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের কোন ঘটনাই ঘটেনি।
আবহমানকাল ধরে একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান থেকে শুরু করে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সরকারের সময় বরাবরই বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অক্ষুন্ন ছিল। এমনকি বাবরী মসজিদ সংকট এবং গুজরাট-দাঙ্গার সময় এবং খালেদা জিয়ার আমলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অটুট বাঁধনে কোন চিড় ধরেনি। এক কথায় বলতে গেলে বিএনপির সরকারের সময় সংখ্যালঘুদের সর্বোচ্চ স্বার্থ রক্ষিত হয়েছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রাখতে সফল হয়েছে। কেউ নির্যাতনের শিকার হয়ে কোথাও যায়নি।
আর ঠিক বিপরীত হলো আওয়ামী লীগ। সংখ্যালঘুদের ওপর আওয়ামী লীগ আমলে যত নিপীড়ন হয়েছে, তা আর কখনও হয়নি। আওয়ামী ঘরানার বুদ্ধিজীবীদের লেখাতেই তার ভুরিভুরি প্রমান রয়েছে। হোয়াইট হাউজে ১৭ জুলাই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে এক সাক্ষাতের সময় বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু অধিকার সংগঠন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহা অভিযোগ করেন তিন কোটি ৭০ লাখ সংখ্যালঘু 'নিখোঁজ' হয়েছে। পরে তিনি বিবিসিকে এক সাক্ষাতকারে জানান, অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারাকাত ২০১১ সালে এক গবেষণা করে দেখিয়েছেন, প্রতিদিন গড়ে ৬৩২ জন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোক 'হারিয়ে যাচ্ছে'। ঐ গবেষণা কাজের সাথে প্রিয়া সাহা জড়িত ছিলেন। এখনো প্রায় প্রতিদিনই প্রাত্যহিক সংবাদপত্রে সংখ্যালঘুদের বাড়ী-ঘর দখল, উচ্ছেদ বা মুর্তি ভাঙ্গার যত খবর প্রকাশিত হচ্ছে সব ঘটাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের প্রভাবশালীরা। সবকিছু জেনে দেখেও মিথ্যা প্রচারের ফেরিওয়ালা সত্যভ্রষ্ট ওবায়দুল কাদের সাহেবদের ডাহা মিথ্যা বলতে লজ্জা করে না।
রিজভী বলেন, প্রকৃতপক্ষে মিয়ানমার যেমন রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে নির্যাতনের মুখে রোহিঙ্গাদের রাষ্ট্রহীন করে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য করেছে, একইভাবে নাগরিকত্ব আইন এবং নাগরিকপুঞ্জি (এনআরসি) জটিলতায় সংখ্যালঘু ভারতীয় মুসলমানদের রাষ্ট্রহীন ঘোষণা করে জোর করে বাংলাদেশে পুশ-ইন করার প্রক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অথচ বাংলাদেশ সরকার এনআরসি বিষয়টিকে বারবার ভারতের অভ্যন্তরীণ ইস্যু আখ্যায়িত করে এড়িয়ে যাচ্ছে। বাস্তবিক অর্থে এনআরসি ইস্যুতে মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং ভারত থেকে সীমান্ত দিয়ে জোরপূর্বক ঢুকিয়ে দেওয়া সংখ্যালঘু ভারতীয় মুসলিমদের মধ্যে কোনো মৌলিক ব্যবধান নাই। এমনিতেই ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী নিয়ে বাংলাদেশ ভারাক্রান্ত। এর ওপর এনআরসির উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার তাদের ব্যর্থ পররাষ্ট্রনীতির প্রমাণ হিসেবে যেভাবে নির্বিকার রয়েছে, তা স্পষ্টত:ই আমাদের জনগণ, সার্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্রবিরোধী অবস্থান। এখন আবার বিজেপির সাথে একমত হয়েছে বাংলাদেশের দখলদার সরকার। এরা গদি রক্ষার জন্যই প্রয়োজনে দেশের বৃহত্তর স্বার্থ বিসর্জন ও দেশবিরোধী যেকোন সিদ্ধান্ত গ্রহনে প্রস্তুত থাকে।



 

Show all comments
  • ahammad ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৪:২১ পিএম says : 0
    জনাব,আপনার সাথে ১০০% সহমত পোষন করলাম।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রিজভী

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ