Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইমাম বুখারি রহ. এর ঠিকানায়

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

সমরকন্দের ইমাম বুখারি কমপ্লেক্সে প্রবেশের সাথে সাথে এর পরিচ্ছন্নতায় যে কেউ মুগ্ধ হতে বাধ্য। শুধু ইমামের নয়, বোখারা সমরকন্দের প্রতিটি দর্শনীয় স্থানে এমন ঝকঝকে তকতকে ভাব। আর বুযুর্গদের স্থানগুলোতে তো অন্যরকম পবিত্রতা। স্বতন্ত্র শান। চোখে পড়ল ভবন ও সড়কের মাঝে মাঝে বাগানগুলোর সযত্ন চর্চিত চেহারার ওপর। কয়েকজন নারী ও পুরুষ শ্রমিক লম্বা লম্বা কাঠ ও বাঁশের ঝাড়ু, বেলচা নিয়ে ঝরা পাতা পরিষ্কারে ব্যস্ত। এসব আবার গাড়িতে করে ঠেলে বাইরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

লোকজন লোহা ও কাঠের তৈরি সুন্দর কারুকার্য খচিত বেঞ্চিতে বসে। শিশুরা ছোটাছুটি করছে সারা আঙ্গিনা জুড়ে। একটু পরপর ঝরাপাতা সরিয়ে নিচ্ছে কর্মীরা। উজবেক সুন্দর ও শালীন পোষাকে কর্মিদের বেশ শোভনীয় মনে হয়। দলে দলে মানুষ বেড়াতে আসছে। আসছে ইমাম বুখারির অবস্থানে। মুসলিমরা নামাজ পড়ছে। জিয়ারত করছে। অন্য ধর্মের পর্যটকরা ঘুরছে, দেখছে, ভাবছে, নোট নিচ্ছে, ছবি তুলছে।

প্রথমে আমরা জামাতে আসরের নামাজ পড়ি। এরপর ইমাম সাহেব ও তত্ত্বাবধায়কগণ সাথে করে নিয়ে যান মাকবারায়। কমপ্লেক্সের স্টাফ ফটোগ্রাফাররা গোটা পথের চলা, জিয়ারত ও মুনাজাতের চিত্রগ্রহণ করে। উজবেক পর্যটন বিভাগের লোকেরাও ছবি নেয়। সমরকন্দ শহরের আল-হাদিস ইনষ্টিটিউটের ছাত্র শিক্ষকরা সব সময় সংঘ দেন। হাদিস শাস্ত্র ও ইমাম বুখারি সম্পর্কে তারা অনেক কিছু শুনতে চান।

দু’তিন জন ছাত্র যারা হাদিস পড়ার জন্য নানা অঞ্চল থেকে সমরকন্দে এসেছে, তারা হাদিসের দু’একটি ক্লাস করতে এবং নানা উস্তাদ থেকে প্রাপ্ত আমার হাদিসের সনদসূত্র লাভ করে নিজেদের প্রাপ্তি ও প্রাগ্রসরতাকে সমৃদ্ধ করতে চায়। সূর্যাস্তের আগে আগে সব আনুষ্ঠানিকতা সমাপ্ত হয়। ফেরার পথে বাগানের ফুলের কেয়ারি ঘেরা বিশ্রামস্থলে কেন জানি স্থানীয় কিছু লোক ছোট বাচ্চাদের সাথে করে আমাদের ঘিরে ধরে। তাদের রেওয়াজ অনুযায়ী আমাকে এসব শিশুর জন্য দোয়া করতে হয়। মাথায় হাত বুলিয়ে ফুঁ দিতে হয়।

গাড়িতে ওঠার পর আল-হাদিস ইনষ্টিটিউটের এক শিক্ষক তার দুই বাচ্চাকে এনে, তারা বড় আলেম হওয়ার জন্য বিশেষভাবে দোয়া চান। তাদেরও ফুঁ দিতে হয়। সফরসঙ্গীদের দু’জন খেয়াল করে এই শিশু দু’টির হাতে উজবেক কিছু টাকা তুলে দেন। টাকাকে তারা বলে ‘সোম।’ অঙ্কও অনেক বড়। একশ ডলার ভাঙালে কমবেশি ১৮ লাখ সোম পাওয়া যায়। বাংলাদেশি টাকায় যার মান কম বেশি ৮ হাজার ৫০০ টাকা। বাচ্চা দু’টোকে খুব সামান্যই গিফট করা হয়েছে। লজেন্স খাওয়া পরিমাণ। সোম দেওয়া হয়েছিল, বিশ বিশ ৪০ হাজার।

আমাদের এক সাথী মজা করে বলতেন, কোনো এক জায়গায় ঘুরতে গিয়ে পাবলিক টয়লেটে তিনি পেশাব করেছেন ৫ হাজার সোম দিয়ে। একজন একটি টুপি কিনেছেন ৭০ হাজার সোমের। কিছু কেনাকাটা করা হয়নি। শুধু একটি গরম শেরওয়ানি টাইপ জোব্বা নিজের জন্য কিনেছি ১৫ লাখ সোমে। গোটা সফরে নগদ টাকা বহন করিনি। প্রয়োজনে দু’শ ডলার ভাঙিয়ে ৩৫ লাখ উজবেক টাকা নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছি। দরকারে ভেঙেছি। দান করেছি। তবে, দশ হাজারের নিচে নোট ছিল না। বলতে ও শুনতে ভালোই লেগেছে। নিজেকে এই ১০/১৫ দিন কয়েক লাখপতি হিসেবে আবিষ্কার করে মন্দ লাগেনি। ৫/৬ শ ডলার ভাঙাতে পারলে সত্যিই কয়েকদিন কোটিপতি থাকতাম। বাংলাদেশি টাকায় যে কোটি টাকার দাম হতো বেশি হলে ৫০ হাজার টাকা।



 

Show all comments
  • তরুন সাকা চৌধুরী ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:১৪ এএম says : 0
    শুকরিয়া অনেক কিছু জানতে পারলাম।
    Total Reply(0) Reply
  • তরুন সাকা চৌধুরী ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:১৫ এএম says : 0
    ইমাম বুখারির কবর জিয়ারত করার খুবই ইচ্ছে হচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ তোফায়েল হোসেন ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:১৬ এএম says : 0
    আপনাদের সফলতা কামনা করচি।
    Total Reply(0) Reply
  • সাকা চৌধুরী ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:১৭ এএম says : 0
    হে আল্লাহ তুমি ইমাম বুখারিকে উত্তম প্রতিদান দাও।
    Total Reply(0) Reply
  • তানিয়া ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১০:০১ এএম says : 0
    হুজুরআপনি সত্যি বড় ভাগ্যবান যে, এই এসব দেখার সুযোগ পেয়েছেন
    Total Reply(0) Reply
  • নাঈম ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১০:০২ এএম says : 0
    এই ভ্রমনের সব কথাগুলো আমাদের সাথে শেয়ার করুন। এতে আমরাও কিছু জানতে পারবো
    Total Reply(0) Reply
  • রিমন ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১০:০৩ এএম says : 0
    লেখক উবায়দুর রহমান খান নদভী হুজুরকে আল্লাহ উত্তম প্রতিদান প্রদান করুক।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইমাম বুখারি

আরও পড়ুন