পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হিন্দুত্ববাদী ভারত প্রতিষ্ঠার জন্যে দেশটির সরকার বাংলাদেশ ও বিএনপিকে নিয়ে মিথ্যাচার করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ভারত তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার লক্ষে বাংলাদেশ ও বিএনপির কাঁধে বন্দুক রেখে মিথ্যাচারের মাধ্যমে সম্পূর্ণ শিষ্টাচার বহির্ভূতভাবে এই অঞ্চলের রাজনীতিকে একটি অুসস্থ পরিবেশের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এদেশের বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকারের কথা এড়িয়ে গিয়ে ইচ্ছাপ্রণোদিতভাবে বিএনপির মতো একটি একটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে বিষোদগার করায় এটি প্রমাণিত হয় যে, বর্তমান ভারত সরকার তার সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য বাংলাদেশের জনগণের পরিবর্তে নতজানু আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে বেশি আগ্রহী।
রোববার (২২ ডিসেম্বর) বিকেলে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ভারতের লোকসভা সদ্য পাস হওয়া নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন সম্পর্কে দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ভারতের এনআরসি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের নির্বিকার ভূমিকা ‘দেশের জনগণ, সার্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্র বিরোধী অবস্থান বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, নাগরিকত্ব সংশোধন আইনকে অগণতান্ত্রিক, বৈষম্যমূলক, অসাংবিধানিক, মানবতাবিরোধী আখ্যায়িত করে সারা ভারতে এখন প্রতিবাদ চলছে। কোথাও কোথাও এই প্রতিবাদ সহিংসতা রূপ নিয়েছে। কেবলমাত্র সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়কে টার্গেট করেই এই আইন প্রণীত হয়েছে আজ জনমনে বিশ্বাস স্থাপিত হয়েছে। আসামের গোয়াল পাড়ায় ইতোমধ্যেই ডিটেশন সেন্টার নির্মান করা হয়েছে। সারা ভারতে আরো অনেক ডিটেশন সেন্টার নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এমনিতেই ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী নিয়ে বাংলাদেশ ভারাক্রান্ত। এর ওপর এনআরসির উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার তাদের ব্যর্থ পররাষ্ট্রনীতির প্রমাণ হিসেবে যেভাবে নির্বিকার রয়েছে, তা স্পষ্টতেই আমাদের জনগণ, সার্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্র বিরোধী অবস্থান।
সরকারের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার যতোই এনআরসিকে ভারতের অভ্যন্তরীন বিষয় বলে সাফাই গাইতে থাকুক না কেনো সম্প্রতি বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে গোপনে এবং কখনো বা খোলামেলাভাবে বাংলা ভাষাভাষী মুসলিমদের বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পুশ ইন চলছে। যার বিরুদ্ধে খোদ ভারতেই প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের পাশাপাশি বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে মিয়ানমার যেমন রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে নির্যাতনের মুখে রোহিঙ্গাদের স্টেটলেস করে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য করেছে, একইভাবে নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসি জটিলতায় সংখ্যালঘু ভারতীয় মুসলিমদের স্টেটলেস ঘোষণা করে জোর করে বাংলাদেশে পুশ-ইন করার প্রক্রিয়া আমরা লক্ষ্য করছি। বাস্তবিক অর্থে এনআরসি ইস্যুতে মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং ভারত থেকে সীমান্ত দিয়ে জোরপূর্বক ঢুকিয়ে দেয়া সংখ্যালঘু ভারতীয় মুসলিমদের মধ্যে কোনো মৌলিক ব্যবধান নাই।
অমিত শাহের বক্তব্য প্রত্যাহার দাবি:
বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন নিয়ে বিএনপিকে দোষারোপ করে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ এবং বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রাবীশ কুমারের বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বিএনপি দৃঢ়ভাবে মনে করে যে, বিজেপি সভাপতি ও ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মূখপাত্র রাবীশ কুমার উভয়ের বক্তব্যই দুঃখজনকভাবে অসত্য, অপব্যাখ্যামূলক, একপাক্ষিক, বৈষম্যমূলক, বিভ্রান্তিকর এবং চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। তাদের বক্তব্য আমরা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখান করছি। একই সঙ্গে আমরা আশা করি, দুই দেশের জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে বাংলাদেশ ও বিএনপি সম্পর্কে ভারতীয় পার্লামেন্টে যে অসত্য বক্তব্য দেয়া হয়েছে, ভারত সরকার তা অবিলম্বে প্রত্যাহার করে নেবেন এবং ভবিষ্যতে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতার লক্ষ্যে এই ধরনের বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য প্রদানে বিরত থাকবেন।
সংখ্যালঘুদের বিষয়ে বাংলাদেশ ও বিএনপির অবস্থান তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ঐতিহ্যগতভাবে একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান থেকে শুরু করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সরকারের সময় বরাবরই বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অক্ষুন্ন ছিলো। এমনকি বাবরী মসজিদ সংকট এবং গুজরাট-দাঙ্গার সময়ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আমলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় ছিলো। এককথায় বলতে গেলে বিএনপি সব আমলেই তার সরকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রাখতে সফল হয়েছে।
লোকসভায় অমিত শাহের বক্তব্য প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সারাবিশ্বের দৃষ্টি যখন নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ও এনআরসি উদ্ভুত চলমান সংঘাতের উপর নিবদ্ধ, যখন জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে শুরু করে প্রভাবশালী দেশগুলো ভারতের বির্তকিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে নিন্দা জানাচ্ছে, ঠিক এমন সময়ে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশকে একটি সংখ্যালঘু নির্যাতনকারী রাষ্ট্রের লেভেল এঁটে দেয়ার একটি সুদুরপ্রসারী ভয়াবহ প্রভাব রয়েছে কিনা সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। এই মিথ্যাচারের কারণে একদিকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি শুধু ক্ষুন্নই নয়, বরং ভবিষ্যতে এটি বাংলাদেশ ও তার নাগরিকদের নিরাপত্তাজনিত উৎকন্ঠার কারণও হয়ে উঠতে পারে।
তিনি বলেন, কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কাছে বাংলাদেশের নাগরিক প্রিয়া সাহা নিজ দেশে সংখ্যালঘু নিপীড়নের যে নালিশ করছে যা, বাংলাদেশের আপামর জনগণকে বিক্ষুব্ধ করেছে, প্রধানমন্ত্রী যার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তার সব কিছুর সাথেই ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের একটি যোগসূত্র পাওয়া যায়।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।