Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ভর্তি না করানোর অভিযোগ

ইব্রাহিম মেডিক্যাল কলেজ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

সঠিক কাগজপত্র দিলে এখনও ভর্তির সুযোগ আছে প্রিন্সিপাল
ফারাহ কানওয়াল সামিহা। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে তিনি একজন। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। মেধাক্রম অনুসারে সরকারি মেডিকেল কলেজে সুযোগ না পেলেও বেসরকারি যেকোন মেডিকেল কলেজে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছেন। তাছাড়া পরিবারিক সূত্রে রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিশেষ সুযোগ। এসব বিবেচনায় নিয়ে রাজধানীর ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ আবেদন করেন তিনি। নিয়মানুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা কোটার তিনটি আসনের একটির জন্য ভর্তি কমিটি তাকে নির্বাচিত করে। কিন্তু তারপরও কলেজ কর্তৃপক্ষ তাকে ভর্তি করতে নানা টালবাহানা করেÑ এমন অভিযোগ শিক্ষার্থীর পরিবারের।

মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজের নির্বাচিত প্রার্থীদের তালিকায় দেখা যায়, প্রথমে যাকে রাখা হয়েছে তার মেরিট পয়েন্ট ৫৫৫১, দ্বিতীয় শিক্ষার্থীর মেরিট পয়েন্ট ৫৭১১ এবং তৃতীয় শিক্ষার্থীর (সামিহা) মেরিট পয়েন্ট ৭০২৫। এছাড়া অপেক্ষমান তালিকায় যারা রয়েছে তাদের মেরিট পয়েন্ট যথাক্রমে ৮১৭০, ৮৩১৬ এবং ৯২০৮। অর্থাৎ এই মেডিকেল কলেজে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় তিনটি আসনের বিপরীতে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত প্রার্থী হিসাবে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার কথা সামিহার। তাই ভর্তির নির্ধারিত টাকাও জামা দেন তিনি।

পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভর্তি না করানোর কারণ হিসাবে কলেজ কর্তৃপক্ষ মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রনালয়ের গেজেট না থাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে সনদপত্র, লাল মুক্তিবার্তায় অর্ন্তভূক্তি এমনকি বর্তমান মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রীর প্রত্যয়নপত্র থাকলেও সেগুলো আমলে নিতে নারাজ কলেজ কর্তৃপক্ষ। এসব প্রামনপত্রের পরেও গেজেট ছাড়া ভর্তি নয় বলে জানিয়ে দেন তারা। অথচ গেজেটে অর্ন্তভূক্তির প্রক্রিয়াটি সাময়িক ভাবে বন্ধ রয়েছে।

২০১৮ সালের ৫ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের যুগ্মসচিব (গেজেট, সনদ ও প্রত্যয়ন) মো. সলিমুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক স্মারকে বলা হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ, ভর্তি ও পিআরএল সংক্রান্ত বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রমানসমূহ যাচাইপূর্বক প্রতায়ন কার্যক্রম দ্রুত ও সহজতর করার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ে প্রকাশিত প্রমাণক (লাল মুক্তিবার্তা/ভারতীয় তালিকা/গেজেট) এর আলোকে মন্ত্রনালয় থেকে স্মারক পরিপত্র জারি করা হয়েছে। যা বাস্তবায়নে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা রয়েছে। সূত্রের আলোকে ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তালিকা অনুসারেই চাকরিতে নিয়োগসহ অন্যান্য সুবিধাদি প্রাপ্য হবেন। সনদ ও গেজেটের প্রয়োজন হবে না।

তবে মন্ত্রনালয়ের এসব নির্দেশ মানতে নারাজ ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। ফলে সামিহা চলতি ডিসেম্বরের ২ তারিখ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বরাবর একটি আবেদন করেন। যেখানে তিনি তার দাদা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুর রশীদ, লাল মুক্তিবার্তা নং ১০৫০৫০৫৬৮ উল্লেখ করে মেডিকেল কলেজে ভর্তিতে সমস্যার কথা তুলে ধরেন। পাশাপাশি তিনি মন্ত্রীকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানান। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেলন হক সামিহাকে ভর্তি করতে কলেজের প্রিন্সিপাল বরাবর সুপারিশ করেন। কিন্তু এসব সুপারিশ গ্রাহ্য করেনি কলেজ কর্তৃপক্ষ।

সামিহার বাবা মো. কামরানুর রশিদ তুহিন বলেন, কলেজের আবেদন পত্রের সঙ্গে মন্ত্রনালয় থেকে সত্যায়িত লাল মুক্তিবার্তার কপি, ২০০১ সলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রদত্ত্ব সনদপত্র (নং -৩৮৫৭১) এবং ২০০০ সালে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল প্রদত্ত্ব প্রত্যয়নপত্র জমা দেয়া হয়। এসবের পরও তারা টালবাহান করতে থাকে। কলেজের এ ধরনের আচরনের একপর্যায়ে মুক্তিযদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের একজন পদস্থ কর্মকর্তা টেলিফোনে কলেজের প্রিন্সিপালকে গেজেট প্রদান সাময়িক বন্ধ আছে বলেও জানান। কিন্তু তারা কোন কথা কানে তোলেন নি। তুহিন জানান, বিশিষ্ট বামপন্থী নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক পঙ্কজ ভট্টাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি প্রফেসর ডা. শহিদুল্লাহ শিকদার প্রমুখ তার বাবার সহযোদ্ধা ছিলেন। তারও এ বিষয়ে প্রিন্সিপালকে নিশ্চিত করেছেনে যে, তারা একই সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন। এতো কিছুর পরেও বিষয়টি আমলে না নিয়ে বিজয়ের মাসে একজন সুপরিচিত মুক্তিযোদ্ধার নাতিকে ভর্তি না করে ফিরিয়ে দিল ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ।

ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল প্রফেসর ডা. নাজমা হক বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে গেজেট ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা কোটায় শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে না। তাই আমরা তাদের কাছে গেজেট চেয়েছি। তবে মন্ত্রনালয়ের যেহেতু একটি নির্দেশনা আছে লাল মুক্তিবার্তায় নাম থাকলে তিনি অবশ্যই মুক্তিযোদ্ধা। তাই আমরা তাদের বলেছি, তারা যেন ওয়েবসাইট থেকে তাদের পাতাটি বের করে দেখায়। কারণ আমরা ওয়েবসাইটে ওই নামের কোন মুক্তিযোদ্ধা পাইনি। অভিভাবকরা ওয়েবসাইটে নাম দেখাতে পারলে ওই শিক্ষার্থীর ভর্তির সুযোগ এখনও আছে বলে উল্লেখ করেন ডা. নাজমা হক। একই সঙ্গে তিনি বলেন, কলেজ মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিশেষ সুযোগেই ওই শিক্ষার্থীর নাম ভর্তির জন্য নির্বাচিত করেছে। কিন্তু সঠিক কাগজপত্র না পেলে আমাদের কি করার আছে।

শিক্ষার্থীর বাবা মো. কামরানুর রশিদ তুহিন বলেন, আমরা সব প্রমানপত্র ওয়েবসাইট থেকে বের করে তদের কাছে জমা দিয়েছি। মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তারা সেগুলো মিলিয়ে দেখে সত্যায়িত করে দিয়েছে। কিন্তু তারা খুজে পাচ্ছেনা না এটা হাস্যকর বক্তব্য।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক ও গ্রন্থকার রীতা ভৌমিক বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ ঢাকা ও এর আশপাশে যারা যুদ্ধ করেছেন তাদের কাছে অত্যন্ত সুপরিচিত। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তাকে নিয়ে অসংখ্য গ্রন্থনা রয়েছে। অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে তিনি ভারতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, নিরাপদ আশ্রয় দিয়েছেন। তারমতো একজন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সন্দেহ প্রকাশের শামিল।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভর্তি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ