Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বোয়ালমারীতে গণকবর সংরক্ষণের দাবি

বোয়ালমারী (ফরিদপুর) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

মহান বিজয়ের ৪৮ বছরেও ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে অবস্থিত দু’টি গণকবর চরম অবহেলা, অযতœ অবমাননায় অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। গণকবর সংরক্ষণে সরকারি একটি বরাদ্দ এলেও জমি অধিগ্রহণ না করায় সেটি বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। ফেরত যেতে পারে বরাদ্দকৃত অর্থ।
বোয়ালমারী পৌর সদরের কলেজ রোডস্থ গণকবরটির ওপর গড়ে উঠেছে বসতবাড়ি। মালিকানা শর্তে বধ্যভূমিটির ওপর বাড়ি নির্মাণকালীন শহীদদের যেসব হাড়, মাথার খুলি ওঠে আছে সেগুলো সংগ্রহ করে সর্বশেষ যে স্থানে ফের সমাহিত করে সেখানেও শহীদরা শুয়ে আছে চরম অবমাননাকর পরিবেশে। কবরটির প্রাচীর ঘেঁষেই নির্মাণ করা হয়েছে এক লাগোয়া তিনটি শৌচাগার। বছরে একদিন শহীদদের ফুল দিয়ে স্মরণ করা হলেও সারা বছরই অবমাননার স্বীকার হচ্ছেন স্বাধীনতা যুদ্ধে শাহাদত বরণ করা নাম না জানা অসংখ্য শহীদ। গণকবরটির কোন প্রাচীর না থাকায় সারা বছরই গরু-ছাগলের অবাধ বিচরণ শহীদ বেদীসহ পুরো এলাকাটায় ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। একই অবস্থা বিরাজ করছে উপজেলার ঘোষপুর ইউনিয়নের গোহাইলবাড়ি বাজারে অবস্থিত গণকবরটিও। গণকবরটি স্থানীয়দের চরম উদাসিনতা আর অবহেলায় এখন প্রায় নিশ্চিহ্নের পথে। রাজাকার ও পাক বাহিনীর নির্মম হত্যাযজ্ঞের শিকার দশজন শহীদের গণকবরটি চরম অবহেলা, অযতœ, অবমাননায় এখন ঝোপঝাড় ঘেরা শৌচাগারের ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। মহান স্বাধীনতার যুদ্ধের প্রথম দিকেই ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে রাজাকার কোটন বাহিনী ও পাক হানাদারদের হাতে নির্মমভাবে শহীদ হন দশ জন সাধারণ নাগরিক। উপজেলা সদর থেকে ১৬ কিলোমিটার দুরে ঘোষপুর ইউনিয়নের গোহাইলবাড়ি বাজার। ১৯৭১ সালের ২২ মে হাটবারের দিন চালানো হয় নির্মম হত্যাযজ্ঞ। সেদিন সবে জমতে শুরু করেছে হাট। হাটুরিয়াদের আনাগোনা আর দোকানিরা বসেছে পশরা মেলে, এমন সময় তৎকালীন সংসদ সদস্য এম এ ওয়াহিদ টেপু মিয়ার ছেলে, আলবদর প্রধান, কুখ্যাত রাজাকার কোটন মিয়ার আহবানে জিপে পাকা-হানাদার বাহিনীর একটি কনভয় প্রবেশ করে হাটটিতে। সাধারণ মানুষ কিছু বুঝে উঠার আগেই রাজাকারদের ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনির সাথে গর্জে ওঠে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর স্বয়ংক্রিয় রাইফেল।
হানাদারদের এলোপাতাড়ি গুলিতে হাটের মধ্যেই লুটিয়ে পড়ে নারায়ন কুÐু, নিতাই কুÐু, তেল বিক্রেতা জহুরুল হক, হাশেম কাজী। মুহূর্তে খালি হয়ে যায় হাটটি। তারপর হিন্দু অধ্যুষিত বাজারটিতে বেছে বেছে হিন্দু বাড়িতে আক্রমণ চালানো হয়। হত্যা করা হয় জীবন চন্দ্র দাশ, হরিপদ মÐলকে। বয়সের ভারে নূজ্যু ৯০ বছরের বৃদ্ধা কালীতারা কুÐুও নির্মম হত্যাযজ্ঞের হাত থেকে বাদ পড়ে না। বিছানায় শয্যাশায়ী কালীতারা কুÐুকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে অত্যাচার হত্যা করে ও বসতঘরসহ আগুনে পুড়িয়ে দেয়। হত্যা করা হয় ৬০ বছর বয়সী বৃদ্ধা যশোদা রানী কুÐুকেও। গ্রামের সমস্ত বাড়িঘরে চালানো হয় লুটপাট আর অগ্নিসংযোগ। হানাদার বাহিনী লুটপাট শেষে ফিরে গেলে স্থানীয়রা শহীদদের মৃত দেহগুলো কোনমতে গর্ত খুঁড়ে সমাহিত করে।
প্রত্যক্ষদর্শীর অভাবে অনেকটাই নিশ্চিহেৃর পথে গণকবরটি।স্বাধীনতার ৪৮ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও স্বীকৃতি মেলেনি এই শহীদদের। তাদের স্মরণে নির্মিত হয়নি কোন স্মৃতিস্তম্ভ বরং গণকবরটির পাশ ঘেষে নির্মাণ করা হয়েছে একটি শৌচাগার। যা শহিদের জন্য অবমাননাকর। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের গোহাইলবাড়ি হত্যাযজ্ঞের শহীদদের স্মৃতি সংরক্ষণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণে দাবি জানিয়েছেন যুদ্ধকালিন সময়ের উত্তর বোয়ালমারীর কমান্ডার ও ঘোষপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান গোহাইলবাড়ি গ্রামের মো. আলাউদ্দিন মিয়া।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, গণকবরের স্থানে লাইব্রেরী, মিউজিয়াম ও স্মৃতি ফলক নির্মাণের জন্য ৪৩ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ করার কাজটি প্রক্রিয়াধীন আছে। অধিগ্রহণ হইলেই মূল কাজটি শুরু করা যেত।
বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ঝোটন চন্দ বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়ে পৌর সদরের গণকবরটি তিনি পরিদর্শন করেছেন এবং বাড়ির মালিককে শৌচাগারটি সরিয়ে নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ