Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কেরানীগঞ্জের হিজলতলায় তিনটি কারখানা সিলগালা

আতঙ্ক কাটেনি

কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

ঢাকার কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা ইউনিয়নের চুনকুটিয়া হিজলতলা আবাসিক এলাকায় তিনটি কারখানা সিলগালা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। কারখানা তিনটির মধ্যে দুইটি হচ্ছে ডায়িং অ্যান্ড ওয়াশিং কারখানা এবং অপরটি হচ্ছে প্যাকেজিং ফুয়েল পেপার কারখানা।
গতকাল দুপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারখানা তিনটিকে সিলগালা করা হয়। কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অমিত দেবনাথ ও কেরানীগঞ্জ রাজস্ব সার্কেল সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কামরুল হাসান সোহেল ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারখানা তিনটি সিলগালা করার আদেশ প্রদান করেন। সিলগালা করা কারখানা তিনটি আগুনে পুড়ে যাওয়া প্লাস্টিক কারখানাটির পাশেই অবস্থিত।
এদিকে সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকা জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান আগুনে পুড়ে যাওয়া প্রাইম প্লাস্টিক কারখানাটি পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি বলেন, আবাসিক এলাকায় কোন ধরনের কারখানা থাকতে পারবে না। কেরানীগঞ্জের রোহিতপুর ইউনিয়নে বিসিক শিল্প নগরী রয়েছে। তার পাশেই অর্থনৈতিক জোন গড়ে তোলা হচ্ছে। আবাসিক এলাকায় যেসব কারখানা আছে সেগুলোকে এসব জায়গায় স্থানান্তর করা হবে। এই অবৈধ কারখানায় কিভাবে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত দেবনাথ, কেরানীগঞ্জ রাজস্ব সার্কেল সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) কামরুল হাসান সোহেল, কেরানীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।
অপরদিকে এখনো আতঙ্ক কাটেনি হিজলতলাবাসীর। কারখানার পাশের বাড়ির আগুনে পুড়ে নিহত আলমগীর হোসেন আলমের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। আলমের ভাই জাহাঙ্গীর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মালিক নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করলেও তাদের বাড়িতে শোকের মাতম থামছে না। তার অপর ভাই আব্দুর রাজ্জাক আগুনে পুড়ে এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে আছে।
আগুনে পুড়ে যাওয়া প্রাইম প্লাস্টিক কারখানার ধ্বংসস্তুপের চারপাশে কয়েক হাজার লোকের বসবাস। তারা এখনও চরম আতঙ্কে রয়েছে। পুড়ে যাওয়া কারখানাটির পাশেই ওই আবাসিক এলাকায় ৩/৪টি ডায়িং অ্যান্ড ওয়াশিং কারখানাসহ আরো বেশ কয়েকটি বিভিন্ন কারখানা রয়েছে।
হিজলতলার বাসিন্দা মো. টুটুল জানান, তাদের গ্রামটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। এখানে ৩/৪টি ডায়িং অ্যান্ড ওয়াশিং কারখানা রয়েছে। এসব কারাখানায় বিভিন্ন এসিড ও ক্যামিকেল দিয়ে দিনে রাতে কাজ করা হয়। এতে এসব কারখানা থেকে বিষাক্ত গ্যাস বাহির হয়ে এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। এছাড়া ওইসব কারখানায় বিশাল আকারে বয়লার মেশিনে কাপড়-চোপড় ওয়াশ করা হয়। এসব ওয়াশিং মেশিন যেকোন সময় বিস্ফোরিত হতে পারে। বারবার মালিকদের কারখানাগুলো অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার জন্য বলা হলেও তারা কোন কর্ণপাত করেননি।
জনৈক মজিবর রহমানের ডায়িং অ্যান্ড ওয়াশিং কারখানার পাশের বাড়ির বাসিন্দা আশারন বিবি জানান, ডায়িং কারখানার দেয়ালের সাথে তাদের বসবাসের ঘরটি। কারখানাটি চালু হলে দেয়াল উত্তপ্ত হয়ে তাদের বাড়ির ঘরগুলো গরম হয়ে যায়। এই কারখানার বয়লার মেশিন যদি কোন কারণে বিস্ফোরিত হয় তাহলে আশপাশের বাড়িঘর পুড়ে যাবে এবং কোন মানুষের প্রাঁণে বেঁচে থাকার উপায় থাকবে না।
গ্রামের বাসিন্দা আ. মালেক জানান, তাদের এলাকায় এসব অবৈধ কারখানা গড়ে ওঠায় তারা ঠিকমতো গ্যাস ও বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না। এসব কারখানায় কিভাবে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়েছে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে নানা প্রশ্ন ছুড়ে দেন তারা।
হাজী আব্দুল মজিদ জানান, পুড়ে যাওয়া কারখানার পাশেই তার চারতলা বাড়িটি। কোন রকমে তার বাড়িটি আগুন থেকে রক্ষা পেয়েছে। হিজলতলা গ্রামবাসীদের একটাই দাবি তাদের এলাকায় কোন কারখানা থাকতে পারবে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কারখানা

২৩ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ